somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামু ব্লগারদের মতে আমজনতার টাকা-পয়সা কোথায় বিনিয়োগ করা যুক্তিসঙ্গত?

২১ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জানি আমার কিছু বন্ধু এখন আমার দিকে তেড়ে আসবেন। বলবেন, দেখুন সাহেব দুনিয়া জোড়া করুনার ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই শুরু হলো ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দাম সর্বোচ্চ, দেশে-বিদেশে মুদ্রাস্ফীতি, আমাদের দেশের ব্যাবসায়ীরা তো আরো এককাঠি সরেস, দ্রব্য মূল্যের বাজারে আগুন! দেশের যা অবস্থা মানুষ তো সংসার চালাতেই হিমসিম খাচ্ছে, আর আপনি আসছেন বিনিয়োগ কোথায় করবেন তাই জানতে। হ্যা, তাও তো ঠিক, টাকাই যদি না জমাতে পারি তাহলে আবার বিনিয়োগের কথা চিন্তা করে ঘুম নষ্ট করা কেন? ওদিকে আবার নোরা ফাতেহির অনুষ্ঠান দেখতে ১৫০০০. ০০ (পনেরো হাজার) টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে মানুষের লম্বা লাইন, এজন্যই বোধ হয় "কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ" কথাটির একচ্ছত্র স্বত্ব শুধু আমাদেরই। যাই হোক "ধান ভানতে শিবের গীত" গেয়ে লাভ নাই।

শুনেছি পিপীলিকা নাকি খুবই সঞ্চয়ী প্রাণী, এরা নাকি শীতের আগেই ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখে। তাই আমাদের জ্ঞানী ব্যাক্তিরা আমাদেরকে পিপীলিকার কাছ থেকে সঞ্চয়ী হওয়ার শিক্ষা নেয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন। সে যাই হোক, যাদের অনেক ধন-সম্পদ আর টাকা-কড়ি আছে তাদের সঞ্চয় প্রবণতা কেমন তা আমার খুব একটা জানা নাই। কারন, পয়সা ওয়ালা লোকদের সাথে আমার কদাচিৎ সাক্ষাৎ ঘটলেও সঞ্চয় নিয়ে কখনো তাদের কারো সাথে আমার কস্মিনকালেও কোনো কথা-বার্তা হয় নাই। তবে, যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত তাদের মধ্যে যে সঞ্চয় প্রবণতা প্রবল তা আমি অভিজ্ঞতা থেকেই জানি এবং মানি। আমি এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যারা ডালভাত খেয়ে অথবা একবেলা কম করে খেয়ে হলেও ভবিষ্যত বিপদ-আপদের কথা চিন্তা করে দশ টাকা ইনকাম করলে অন্ততঃ একটা টাকা সঞ্চয় করে রাখেন। আবার এমন দু-একজনকে চিনি যারা সঞ্চয় তো দূর কি বাত, সারাজীবন ধার-কর্জের উপর থাকা মনে হয় তাদের কাছে একটা নেশার মতো ব্যাপার।

আমার আজকের আলোচ্য বিষয় আমজনতার টাকা-পয়সা কোথায় বিনিয়োগ করা যুক্তিসঙ্গত? আগে সাধারণ চাকুরিজীবীদের কমপক্ষে একটা ডিপিএস থাকতো, অনেকের বেশিও থাকতো। তারপর ডিপিএস ম্যাচিউরড হলে সেটা ভাঙিয়ে মেয়াদান্তে প্রাপ্ত টাকা কেউ এফডিআর করতেন, কেউ সঞ্চয় পত্র কিনতেন আবার কেউবা আবার পোস্ট অফিস এ মেয়াদি আমানত রাখতেন। এগুলোই মোটামোটি সাধারণের কাছে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এখন মনে হয় পরিবর্তিত বাস্তবতায় একটু একটু করে লোকজন তাদের সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ এর ধরণে পরিবর্তন আনতে একরকম বাধ্যই হচ্ছেন বা হবেন।

ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ব্যাপারে বাজারে প্রতিদিন কে বা করা যেন নিত্য নতুন গুজব ছড়িয়েই যাচ্ছেন, কেউ বলছেন ব্যাংক সব দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, কেউ বলছেন ব্যাংকে টাকা রাখলে ভবিষ্যতে যত টাকাই থাকুক এক লাখের বেশি ফেরত পাওয়া যাবে না। আরো কত কি? যার যা মনে আসতেছে ইচ্ছে মতো বলেই যাচ্ছেন। যদিও বাস্তবে এমন কোনো কিছুই ঘটছে না বা নিকট ভবিষ্যতেও ঘটার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে হয়না। ব্যাতিক্রমী কিছু ঘটনা সব দেশেই থাকে সেগুলোকে তো আর উদাহরণ হিসেবে আনা যায় না।

তবে হ্যা ব্যাংকে টাকা রাখলে কিন্তু সত্যিই কমে যায়! কিভাবে?? উত্তরটাও আজকাল অনেকেরই জানা। ধরুন, করিম সাহেব ব্যাংকে একলক্ষ টাকা জমা রাখলেন। এক বছর পরে তিনি মুনাফা সহ পেলেন এক লক্ষ্য দশ হাজার টাকা (যদিও বাস্তবে আরও কম পাবেন হয়তো) । এখন প্রশ্ন হলো আজকে করিম সাহেব এক লক্ষ্য টাকায় যে পরিমান পণ্য (চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ইট, বালু, রড, সিমেন্ট, সোনা, রূপা যে কোনো পণ্যই হোক না কেন) কিনতে পারতেন এক বছর পর এক লক্ষ্য দশ হাজার টাকায় সেই পরিমান পণ্য করিম সাহেব কিনতে পারবেন কি? পারবেন না। বিগত অন্তত চল্লিশ বছরে আমরা মুদ্রাস্ফীতির এমনই খেলা দেখে আসছি। তবে ইদানিং যেন বিষয়টি আরও প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। ব্যাংকের মুনাফার হার বেধে দেয়ার কারনেও বিষয়টি হয়তো দ্রুত ত্বরান্বিত হয়ে থাকতে পারে। তাহলে করিম সাহেব যদি ব্যাংকেই টাকা রেখে দেন তাহলে আস্তে আস্তে কমতে থাকবে এটা যে কেউই অনুমান করতে পারেন, এটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়া লাগে না।

সুতরাং, এ ব্যাপারে সবাই একমত হবেন যে ব্যাংকে যদি টাকা রাখা হয় তাহলে গ্রোস এমাউন্ট বাড়ে কিন্তু নিট এমাউন্ট প্রায় নিশ্চিত ভাবেই কমে যায়। এটা এখনো সবার কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার যদি নাও হয়ে থাকে তবে টর্চ জ্বালিয়ে একটু দেখে নিবেন প্লিজ। অনেকে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারনে সচেতন ভাবেই সুদ পরিহার করতে চান।

তাহলে করিম সাহেব এতো কষ্ট করে যে টাকা গুলো জমালেন ভবিষ্যতের জন্য, তার কি হবে??? কেউ বলবেন সোনা কিনে রাখুন, সোনার দাম যে সব সময় বাড়বেই তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? আবার সোনা যে কিনবেন তা আসল না নকল সে এক প্রশ্ন। ধরে নিলাম আসলটাই কিনলেন কিন্তু আপনার কাছে সোনা আছে মানেই আপনার বিপদ বেড়ে গেল। কেউ বলবেন ডলার কিনুন, ব্যাক্তি পর্যায়ে বিদেশী মুদ্রা কিনে রাখার অনুমতি আপনাকে কে দিয়েছে? কেউ বলবেন গবাদি পশু কিনে পালন করুন, সেই সুযোগ কয়জনের আছে? কেউ বলবেন শেয়ার মার্কেটে যান, কিনলেই লাভ, করিম সাহেব বলেন মাফ চাই দোয়াও চাই, এটা সবার জন্য নয়। কেউ বলবেন ক্রিপ্টো কারেন্সি কিনেন, এটার ঝুঁকি আরো বেশি, আর ক্রিপ্টো এদেশে বৈধ নয়। আমার কাছে একজন পরামর্শ চেয়েছিলেন আমি তাকে বলেছিলাম জমি কিনে রাখেন, সবাই যদি জমি কিনতে যায় তাহলে বেচবে কে? ?? ???

***এটা একটা উম্মুক্ত আলোচনা মূলক পোস্ট সকল সহ ব্লগারদের সুচিন্তিত মতামত আশা করছি। ***
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১১
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×