somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হত্যার নেপথ্যে চার দেশ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে বিদেশি হত্যার নেপথ্যে ইন্ধন জুগিয়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী চার দেশ। সরকার পতনের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব জাল বিস্তারের মাধ্যমে ওই হত্যাকা- সংঘটন করে। বাংলাদেশের পার্শ¦বর্তী শক্তিশালী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র তথ্যটি জানিয়েছে।
ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টির মূল পরিকল্পনায় ছিল উত্তর আমেরিকার একটি দেশ। ওই দেশটি নিরাপত্তা ইস্যুতে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সহযোগিতা করে দীর্ঘদিনের মিত্র ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি দেশ, উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম দেশ এবং ওশেনীয় অঞ্চলের শক্তিশালী রাষ্ট্র।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারকে চাপে ফেলতে সরকারবিরোধীদের সহায়তায় দেশকে অস্থিতিশীল করতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রথমে ইতালি এবং পরে জাপানের নাগরিককে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক স্বার্থে ও চক্রান্তে সহযোগিতা করে দেশি অংশীদাররা এবং নিজ-নিজ দেশের গোষ্ঠীস্বার্থে এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় ওই চার দেশ। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাসের ব্লকসংশ্লিষ্ট কাজ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমার, চিনের মতো দেশগুলোর কাছাকাছি অবস্থানে থেকে নজরদারি করার অনেক দিনের ইচ্ছা উত্তর আমেরিকার দেশটির। কাজটি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দেশটির শীর্ষ কর্তারা। কোনো রাষ্ট্রস্বার্থ না থাকলেও মিত্রস্বার্থ দেখার জন্য ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে উত্তর ইউরোপের এবং ওশেনীয় অঞ্চলের দেশ দুটি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণকাজে আনকূল্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ষড়যন্ত্রে জড়ায় উত্তর আমেরিকার দেশটি।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে বাংলাদেশে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে খেলতে আসতে না করে ওই চার দেশের একটি, এরপর গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় খুন হন ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা এবং পরে ৩ অক্টোবর জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে একই কায়দায় খুন করা হয়। ফলে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা করা হয় বাংলাদেশকে।
ইতালীয় নাগরিক হত্যার সময় জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে দেশে ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা করা হয় জাতিসংঘ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর দিন। পরপর ইউরোপ এবং এশিয়ার দুটি দেশের নাগরিক হত্যার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে বাংলাদেশ। ওই সময়ের ঘটনা ঘেঁটে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে যখন দোটানায়, ঠিক তখনই গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজারকে হত্যা করা হয়। এর তিনদিন পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর বাতিল করে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা এবং ইতালি বাংলাদেশ ভ্রমণের বিষয়ে ওই দেশের নাগরিকদের প্রতি সতর্কতা জারি করে। কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয় ঢাকার আমেরিকান ক্লাব, স্কুল এবং ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কমিউনিটির বার্ষিক গ্লিটার পার্টি। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পরপরই দুটি হত্যাকা-েরই ‘দায় স্বীকার’ করে খবর দিয়েছিল ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ নামের একটি ওয়েবসাইট। ওই সময় দেশি এবং আন্তর্জাতিক মহলে রব ওঠে, বাংলাদেশে আইএসের সন্ত্রাসীরাই এসব করছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অস্বীকার করা হয়েছে আইএসের অস্তিত্বের প্রসঙ্গে এবং দুটি খুন একই পরিকল্পনা থেকে করা হয়েছিল বলেও জানানো হয়।
বিদেশি হত্যাকা-ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গত বছরের ৪ অক্টোবর গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করার জন্য ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এর পেছনে নিশ্চয় একটা উদ্দেশ্য আছে। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন হতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হত্যাকা- দুটির পর ২৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সী উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বিদেশি নাগরিক হত্যা ও হোসেনী দালানে বোমা হামলার ঘটনা একসূত্রে গাথা। দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব ঘটানো হচ্ছে। এর দুদিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি হত্যাকা-ে আলাদা ব্যক্তিরা থাকলেও কারণ একই। বিদেশি হত্যাকা- আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র। আমাদের দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে চায় ষড়যন্ত্রকারীরা। দুই হত্যাকা-ের পরিকল্পনা একই জায়গা থেকে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পার্শ্ববর্তী দেশের ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং এর সঙ্গে দেশীয় ষড়যন্ত্রের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রীকে। ওই সূত্রে আরও জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ধারণা করেন, দশম জাতীয় সংসদের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশে যেভাবে টানা কয়েক মাস আগুন-সন্ত্রাস চালানো হয়, গত বছর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষেও একইভাবে বিদেশি হত্যাকা- চালানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু ওই সময়ই নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তায় ফ্রান্সের ৬টি স্থানে একযোগে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়, পুরো বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে ফ্রান্স। সন্ত্রাসী হামলার কয়েকদিন পর ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর লিডারস ফোরামে অংশ নিতে তিন দিনের সফরে ফ্রান্স যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে ফ্রান্স সফর বাতিল করেন প্রধানমন্ত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, মূলত পশ্চিমা বিশ্বেও যে নিরাপত্তার সংকট দেখা দিতে পারে, এই বিষয়টি পশ্চিমা মোড়লদের বোঝানোর জন্য ফ্রান্স সফর বাতিল করেন শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বাংলাদেশে বিদেশি দুই নাগরিক হত্যাকা-ের ঘটনা আন্তর্জাতিক এবং দেশি ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশ এগুলো উদ্ঘাটন করেছে। দেশের অভ্যন্তরে এই টার্গেট কিলিং দুটোয় যারা জড়িত ছিল তাদের আটক এবং আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।http://www.dainikamadershomoy.com/2016/02/07/72164.php
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×