আমাদের প্রিয় সামহোয়্যার ইন ব্লগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং ব্লগারদের আনন্দমুখর বিচরণে ব্লগ আবার ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসছে। বাংলা ভাষাভাষী সকলের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর হয় না।
কিন্তু পুরোপুরি মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ অভিযোগে ব্লগ বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, একমাত্র তারাই জানেন এটা কত কঠিন কাজ ছিল। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এষ্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়লাভ করা প্রায় অসম্ভব কাজ ছিল। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ব্লগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও এমডি সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা। গত আট মাস যাবত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অকুতোভয় এই মহিয়সী নারী বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। এ ছাড়া ব্লগের প্রতিষ্ঠালগ্ন (২০০৫) থেকে নানারকম প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কখনো হার মানেননি তিনি।
ব্লগের প্রতি বিরূপ মনোভাব, অপপ্রচার, জঙ্গিদের হুমকি ধামকি ইত্যাদি অসংখ্য সমস্যা ছিল তাঁর সামনে। এককভাবে ব্লগের ব্যয় বহন করা, ফেসবুকের দাপট এসব তো ছিলই। কিন্তু তারপরেও তিনি তাঁর বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও কৌশলী নীতি নির্ধারণের দ্বারা সামহোয়্যার ইন ব্লগকে দেশে বিদেশে অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে এবং বাংলা ভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার কারণে জানা ম্যাডামের স্বামীর ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য।
এসব তথ্য অনেক ব্লগার বন্ধুরাই জানেন। এবার আসুন অজানা জানাকে আমরা কিছুটা জানার চেষ্টা করি।
১) জানা ম্যাডামের জন্ম উত্তরবঙ্গের নিলফামারী জেলায়। কিন্তু তাঁর ছোটবেলা কেটেছে খুলনায়। তাঁর স্কুলের লেখাপড়া সেখানেই।
২) খুব ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা যান। তাঁর মা ও পিতৃতুল্য বড় ভাইকে অবলম্বন করে তিনি বড় হতে থাকেন।
৩) তাঁর মা ছিলেন দৃঢ় মানসিক শক্তির অধিকারী একজন মহিলা। জানা ম্যাডামের ঋজু চরিত্রের উত্তরাধিকার সম্ভবত মায়ের থেকে পাওয়া। মায়ের কাছেই তাঁর লেখাপড়ায় হাতে খড়ি। তাঁর ‘জানা’ নামটি মায়েরই দেওয়া, যার অর্থ ‘গহীন অরণ্য’।
৪) ছোটবেলায় জানা ম্যাডাম একবার রাজশাহীতে বেড়াতে গিয়ে টমটম (এক ঘোড়ার যাত্রীবাহী গাড়ি) দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন। মা ভাইবোনদের সাথে রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তাল পদ্মা নদীও তাকে আকর্ষণ করে।
৫) খুব ছোটবেলায় তাঁর ক্লাসের একটি মেয়ে একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি কী?
বয়স খুব কম থাকায় জানা ম্যাডাম তার প্রশ্নটি বুঝতে পারেননি। ভেবেছিলেন মেয়েটি বোধহয় তাঁর নাম জিজ্ঞেস করছে। তিনি সরল মনে উত্তর দিয়েছিলেন, আমি জানা। মেয়েটি হেসে ফেলে বলেছিল, ওটা তো তোমার নাম। কিন্তু তুমি কী? তাদের প্রশ্নোত্তর শুনে ক্লাসের অন্যান্য মেয়ে ও শিক্ষকও হাসছিলেন।
জানা ম্যাডাম বিভ্রান্ত হয়ে যান। মন খারাপ করে বাসায় ফিরে মাকে সব খুলে বলেন। মা বুঝতে পারেন প্রশ্নটা কী ছিল। তিনি মেয়েকে উত্তর শিখিয়ে দেন। পরদিন ক্লাসে জানা ম্যাডাম ঐ শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্রীদের সামনে প্রশ্নকর্তা মেয়েটিকে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, আমি মানুষ।
শিক্ষক জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই উত্তর তোমাকে কে বলে দিয়েছে? জানা ম্যাডাম বলেছিলেন, আমার মা।
৬) জানা ম্যাডাম প্রথম দিকে গ্রামীন ফোনে কয়েক বছর চাকরি করেছেন।
৭) আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে, জানা ম্যাডাম অত্যন্ত ভালো গাইতে পারেন। আমি তাঁর গাওয়া একটি রবীন্দ্রসংগীতের অংশ বিশেষ শুনেছি। চমৎকার সুরেলা কণ্ঠ ও গায়কী।
সূত্রঃ ১) মাছরাঙা টিভি চ্যানেল
২) উইকিপিডিয়া
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫০