আসলে। সরাসরি হুমকি না পাওয়ার আগে এতটা বুঝতে পারিনি যে হুমকি পাওয়ার পর কেমন লাগে নিজের মনে। হ্যাঁ, এটা ঠিক এর আগে অনেক হুমকি পেয়েছি। কিন্তু সে সময় মোবাইলে না হয় ফেসবুকে অথবা মেইলে। কিন্তু এই প্রথম হুমকি পেয়েছি প্রকাশ্যে সরাসরি। তাহলে আসল ঘটনায় আসি। আজ থেকে তিন দিন আগের ঘটনা এটি। অফিস থেকে এ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে অমুক স্কুলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে। আমিও গেলাম। বেশ ভালোই তথ্য সংগ্রহ করছি। হঠাৎ আমার এক বছরের জুনিয়র কিছু ছাত্রলীগ শিবির পোলাপাইন আমাকে ডাক দিলো। আমিও গেলাম। ঐ দলের নেতা সে এক সময় শিবির করত। এখন ছাত্রলীগ করে।
নেতা: ভাইয়া শুনেছি আপনি নাকি কোনো ধর্ম বিশ্বাস করেন না?
আমি: কে বলেছে তোমাদের?
নেতা সহ অন্যরাও: আমরা শুনেছি।
আমি: দেখ এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
সবাই: এটা কেমন ব্যক্তিগত ব্যাপার। যে আল্লহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন সে আল্লাহ কে আপনি বিশ্বাস করেন না।
আমি: ভাই তোমাদের সাথে আমি জগড়া করবো না। আমার সোজা কথা হচ্ছে, আমার বিশ্বাস হয় না, তাই আমি করি না। আর আমি তোমাদের কোনো ক্ষতিও করছি না। তোমরা পালন কর তোমাদের ধর্ম। আমি করছি আমার বিশ্বাস।
সবাই: এই শালারপুত তুই কি কইছোস? মাদারির ছোদ তোর সাথে এতক্ষণ ভালো করে কথা বলছি এটা তোর সু ভাগ্য।
আমি: দেখ তোমরা গালিগালাছ করিয়ো না।
অন্য একজন: গালালির কি দেখেছিস তুই? এমন মারা মারমু তোর ঘুষ্ঠির নাম ভুলে যাবি।
ওহ হ্যাঁ, এরি মধ্যে আমার চৌদ্দ গৌষ্ঠর নাম নিয়ে ওরা শুরু করেছে ওয়াজ মাহফিল।
এক জন আমার হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে নিলো। আরেক জন্য আমাকে নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিলো।
আমি কোনো ভাবে তাদের কে বুঝাতে পারছি না যে আমি কোনো অন্যায় করছি না। আমি আমার বিশ্বাস নিয়ে আছি।
ওরা বলল, তুই একটা মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করার পরও আল্লাহ বিশ্বাস করস না।
তুই তো জাহান্নামের আগুনে পুড়বি।
আমি বললাম, আমি জাহান্নামে গেলে সাথে কি তোমরা জাবে?
কেন যাব?
তুই একাই যাবি?
তো আমি শুধু একা জাহান্নামে গেলে তোমাদের সমস্যা কোথায় সেটা তো আমি বুঝতে ছিনা। আর আমি তো ফেসবুক বা অন্য কোথাও ধর্মের বিরুদ্ধে লিখছি না। এটা ঠিক আজ থেকে ৬ মাস আগেও ধর্মে বিরুদ্ধে লিখছি কিন্তু এখন নয়।
না তুই ধর্মের বিরুদ্ধে লিখছ না লিখবি সেটা কোনো ব্যাপার নয়, তুই তো মানস না। আল্লারে।
ওহ আল্লাহ আমরা এখন কি করবো? এই কাফেরের বাচ্ছারে কি আমরা জবাই করে দিবো।
আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।
হঠাৎ পেছন থেকে লোক জন আসতে শুরু করলে ওরা সবাই পালিয়ে যায়। আর বলে যায় তুই যদি ইসলাম না মানস ধর্মে বিশ্বাসি না হস তাহলে তোকেও অভিজিৎদের মত শেষ করে দিবে।
এই ঘটনা প্রায় লোকের কানে গিয়ে পৌঁছেছে এতি মধ্যে।
আমিও এখন খুব বিপদে আছি। বন্ধু বান্ধব অনেকে জানতো। এখন সবাই জানে। অনেকে আমার সাথে কথা বলছে না। অনেকে আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে।
আমার একমাত্র প্রেমিকা সেও আমাকে ওকে আর না কল দিতে বলেছে।
শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে গেলে ডায়েরি করতে পুলিশ ও দেশ ছেড়ে দিতে বলেছে।
কিন্তু আমি দেশ ছাড়বো কেন? আমি তো অন্যায় কিছু করছি না। শুধু সত্যি কথা বলছি।
আর অনেক দিন ধরে আমি সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে লেখালেখিও বন্ধ করে দিয়েছি। দিয়েছি লাইক বা কমেন্ট করা। প্রায় নিজের মনে মনে বিশ্বাস করার মধ্যে নিজেকে নিয়ে এসেছি। শুধু প্রব্লেম না হয়। তবুও সমস্যা হচ্ছে। এদিক দিয়ে আমার গ্রামের বাড়িতেও হুমকি দিচ্ছে।
আর সবচেয়ে বেশি মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে আমার সম্পাদক সাহেব কে। কারণ তিনি এটা জানার পরও আমাকে ওনার পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। কেন আমাকে বের করে দিচ্ছে না।
আজ দুইদিনে প্রায় ১০টির অধিক কল এসেছে অচেনা নাম্বার থেকে। সে নাম্বারগুলো থেকে ও মন্দ ভাষায় গালাগাল করছে । আর হুমকি তো দিয়ে যাচ্ছেই অনরগল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫২