- কোথায় যাচ্ছিস বাবা?
- কোথাও যাবনা মা,একটু এদিকেই ঘুরে আসি।
- টিউশনিতে যাবিনা?
- হ্যা মা দেখছি কি করা যায়।
- রাতে একটু তাড়াতাড়ি ফিরিস,তোর বাবার
প্রেশার বেড়েছে,
- ওষুধ দাওনি বাবাকে?
- ওষুধ শেষ হয়ে গেছে,আসার সময় দুইদিনের ওষুধ নিয়ে আসিস যদি
পারিস, তর বাবার হাত একেবারে খালি, এ মাসের টাকাটা এখনো হাতে লাগেনি।
- আচ্ছা মা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো রাজু
পিছন থেকে মা ডাকছেন প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে যা রাজু,
প্রেসক্রিপশন দিয়ে কি হবে? দুইদিন
পর পর ওষুধ কিনতে কিনতে সবকটি ওষুধের নাম তার মুকস্ত।
.
ওষুধের নাম মনে আসতেই তার মনে পড়লো পকেটে কি টাকা আছে?
হাত দিয়ে দেখলো দুইশ টাকা আছে, বাবার ওষুধ ১৬০ টাকা আর বাকি
৪০ টাকা দিয়ে তিন চার দিন খুব করে চলা যায়
তার, কারণ সে বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায়
বিড়ি সিগারেট খায়না,
এতক্ষনে সিমুদের বাড়ি চলে আসলো রাজু,
কলিংবেল দুইবার চাপা লাগলো, এসব বড় বড়
বাড়িতে দুইবার কলিংবেল চাপা এসব খুব বেশী
না, সিমু দরজা খুলে চমকিয়ে দেয়ার মত বলল
স্যার আপনি? -সিমু।
কেন পড়বেনা আজ? - রাজু।
আব্বু আপনাকে বলেননি? আজ থেকে আমার
নতুন টিচার আসবেন, - সিমু।
না বলেননি তো! - রাজু।
আচ্ছা আপনি অন্যদিন এসে আপনার টাকাটা
নিয়ে নিবেন। - সিমু।
কিন্তু মাস তো এখনো শেষ হয়নি! - রাজু।
সমস্যা নাই,আমি আব্বুকে বলে টাকা নিয়ে নিব,
আপনি এসে নিয়ে যায়েন, আর হ্যা অন্যকোথাও
টিউশন দেখেন, - সিমু।
.
রাজু বাকরুদ্ধের মত সিমুর সামনে দাঁড়িয়েছিল,
কোন কথা বলার শক্তি তার ছিলনা, কি হয়ত
সিমুর বাবা আরো ভাল টিচার পেয়েছেন! হয়ত
এই কমবয়সী টিচার উনার ভাল লাগেনি উনার
মেয়ের জন্য, হয়ত কোন ব্যাপারে উনি সন্দিহান।
মানুষ এত সন্দেহ করতে পারে কিভাবে?
সন্দেহের জন্মটা কোথায়? নাকি আমার মত
নিম্নমধ্যবিত্তদের প্রতি সন্দেহ করা উনাদের রুচি!
ভাবতে ভাবতে রাস্তায় নেমে এলো রাজু।
গন্তব্যের শেষ নেই, যতক্ষণনা জীবনের ইতি,
.
হঠাৎ মনে পড়লো আজ ৫ এপ্রিল, শিউলির
জন্মদিন আজ, অনেকদিন হল শিউলির সাথে
দেখা হয়নি, কথা হয়েছিল পরশু শিউলি কল
দিয়ে জন্মদিনের কথা জানিয়েছিল,
গত জন্মদিনে হাতে টাকা ছিলনা তাই জন্মদিনে
কোন গিফট দিতে না পারায় শিউলির সামনে
যাওয়া হয়নি, এ নিয়ে অনেকদিন কথা বলেনি
রাজুর সাথে, যাবে কিভাবে? অনার্স শেষ করে
রাস্তায় ঘুরছে বেকার, একবছর হল কোন চাকরি
পায়নি, টিউশানি করে মাস্টার্সের খরচ চালানো
হচ্ছে, বাবা রিটায়ার্ড হয়েছেন একবছর।
পেনশনের টাকা কখনো সময়মত আসেনা,
কখনো বা আসেইনা, যার উপর তার পরিবার
নির্ভর করে পুরো মাস, আর বাবার অসুখ তো
দিন বদিন বেড়েই চলছে, একমাত্র ছেলে অনার্স
পাস করে বেকার, বাবা ভেবেছিলেন বুড়ো বয়সে
ছেলে উনাকে খাওয়াবে, হয়নি বাবার ইচ্ছাপূরণ।
.
কলিংবেল চাপতেই শিউলি বেড়িয়ে এলো,
রাজু সারপ্রাইজ দেয়ার অপেক্ষা না করে দুইটা
ক্যাডবেরি আর গুচ্ছ লাল গোলাপ শিউলির হাতে ধরিয়ে দিল, শুভ জন্মদিন বলার সময় তার
নাই, আর এমনিতেই শিউলির বাবা রাত আটটায়
দুইজনকে ছাদে দেখলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে
ছাড়বেন উনি যে রাগী মানুষ।
আসি কাল কলেজ গেইটে দেখা হবে, জন্মদিনের
অনেক শুভেচ্ছা রইলো এই বলে বেড়িয়ে এলো।
বাবার ওষুধের কথা মনে পড়লো, কি কি জানি
ওষুধের নাম? হতাশ হৃদয়ে দরজা ধাক্কা দিল
রাজু, মা একদমে বললেন তর বাবার অসুখ
বেড়েছে, কই ওষুধ এনেছিস? তাড়াতাড়ি দে তো
বাবা, রাজু এখনো বাকরুদ্ধ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪