ভাল কিন্তু দেশে ডিভিডিতে পাওয়া যায় না: ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া ড. স্ট্রেঞ্জলাভ অর: হাউ আই লার্নড টু স্টপ ওরিং অ্যান্ড লাভ দ্য বম্ব। শীতল যুদ্ধ দিয়ে স্টানলি কুবরিকের এই ছবিটি যে কোনো তালিকায়ই উপরের দিকে রয়েছে। আবার চার্লি চাপলিন ছাড়াও যেন কোনো তালিকা হওয়ার জো নেই। তার মডার্ন টাইমস (১৯৩৬) ও সিটি লাইটস (১৯৩১) সেরকই আরো দুটি ছবি। মন্টি পাইথন সিরিজের ছবিগুলোকে ব্রিটিশরা সেরা ছবির অন্যতম বলে মনে করেন। বিশেষ করে চ্যানেল ফোর ৫০টি সেরা ছবির যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে এক নম্বরেই রয়েছে মন্টি পাইথনস লাইফ অব ব্রায়ান ছবিটি, মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৯ সালে।
কমেডি ছবিরও রয়েছে নানান রকমভেদ। কিছু ছবি আছে যেখানে মূল চরিত্র ভিন্ন এক পরিবেশে পরে একের পর হাস্যকর ঘটনা ঘটাতে থাকেন। এই ঘরানার সেরা ছবি সম্ভবত ডাস্টিন হফম্যানের টুটসি ও টম হ্যাঙ্কস এর বিগ। ইদানীং জনপ্রিয় প্যারোডি-কমেডি। এই তালিকার সেরা ছবি জেমস বন্ডকে ব্যাঙ্গ করে তৈরি অস্টিন পাওয়ার সিরিজের ছবিগুলো। এছাড়াও রয়েছে স্ক্যারি মুভি সিরিজ। ভালবাসা, সম্পর্ক, যৌনতা-এসব নিয়েও তৈরি হচ্ছে অসংখ্য কমেডি। এই তালিকায় সেরা আমেরিকান পাই সিরিজ। আরেকটি জনপ্রিয় ঘরানা হচ্ছে রোমান্টিক কমেডি। ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট, হোয়েন হ্যারি মিট স্যালি এবং উডি এলেনের অ্যানি হল-সেরা রোমান্টিক কমেডির সেরা উদাহরণ। আবার অ্যাকশন কমেডি দেখতে চাইলে আছে রাশ আওয়ার, বেভারলি হিলস কপ ও মিডনাইট রান। এয়ারপ্লেন কিংবা বিটলজুসের মতো ছবিকেও অনায়াসে রাখা যায় সেরা কমেডি ছবির তালিকায়। আবার নটি প্রফেসরসহ জেরি লুইসের অনেক ছবি, পিটার সেলার্সের পিঙ্ক প্যান্থার সিরিজ, এডি মার্ফির কামিং টু অ্যামেরিকা, রবিন উইলিয়ামস-এর মিসেস ডাউটফেয়ার, জেন ফন্ডার নাইন-টু-ফাইভ, জিম ক্যারি লায়ার লায়ার, এগুলো ভাল কমেডি ছবির উদাহরণ।
সেরা পাঁচ কমেডি বাছাইতে সমস্যা আছেই। যেমন উডি অ্যালেনের অ্যানি হল ছাড়া কোনো তালিকাই সম্ভব না। আবার এই ছবিকে সেরা রোমান্টিক ছবির তালিকায়ও রাখা যাবে। একই অবস্থা মেগ রায়ানের হ্যারি মিট স্যালির েেত্রও। আবার ডাস্টিন হফম্যানের টুটসি কিংবা গ্রাজুয়েট নিয়েও একই সমস্যা। এই ছবিগুলোকে কেবল কমেডি বলাটা অন্যায় হবে। তালিকা তৈরির সময় নিছক কমেডি ছবিগুলোকেই বিবেচনায় আনা হয়েছে। তবে অ্যানি হলকে কিছুতেই এড়ানো গেল না।
১। সাম লাইক ইট হট: জেরি-আমি কখনো সন্তানের জš§ দিতে পারবো না
ওসগুড-কোনো সমস্যা নেই, আমরা দত্তক নেবো
জেরি-আমার পে বিয়ে করা সম্ভব না
ওসগুড- কোনো সমস্যা নেই, বিয়ে না করেও একসঙ্গে থাকা যায়
মেয়েদের ছদ্মবেস খুলে ফেলে জেরি-তুমি বুঝছো না ওসগুড, আমি একজন পুরুষ,
ওসগুড- ওয়েল, পৃথিবীতে কেউই সম্পূর্ণ নয় (নোবডি ইজ পারফেক্ট)।
এটা হচ্ছে সাম লাইক ইট হটের একেবারেই শেষ দৃশ্য। মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে, সাদাকালো। অভিনয়ে মেরিলিন মনরো, জ্যাক লেমন ও টনি কার্টিস। উঠতি দুই গায়ক ও বাদক জেরি ও জো দেখে ফেলে একটা খুনের দৃশ্য। মাফিয়াদের ভয়ে মেয়ে সেজে তারা ভিড়ে যায় মেয়েদের এক সঙ্গীত গ্র“পের সঙ্গে। দলের মূল গায়িকা সুগার কেইন বা মেরিলিন মনরো।
মোটা দাগের কোনো ভারামো নেই এই ছবিতে। সংলাপ এই ছবির আসল সম্পদ। সেরা ছবির যে কোনো তালিকায় থাকবেই সাম লাইক ইট হট। ছবির শেষ যে সংলাপ সেটিও সর্বকালের অন্যতম সেরা সংলাপ হিসাবেও বিখ্যাত।
২। অ্যানি হল: অ্যানি হল ধারা বদলের ছবি। অস্কারে ১৯৭৭ সালের সেরা এই ছবিটি অভিনেতা-পরিচালক উডি অ্যালেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। বিশ্বের সেরা ছবি বা সেরা কমেডি-কোনো তালিকা থেকেই অ্যানি হলকে বাদ দেওয়া সম্ভব না। উডি অ্যালেন নিজেও মনে করেন অ্যানি হল তার জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’।
আলভি (উডি অ্যালেন) ও অ্যানির (ডায়ানা কিটন) সম্পর্ক, ভালবাসা ও বন্ধুত্বের ছবি অ্যানি হল। সংলাপ, সূক্ষ্ম কৌতুক, গতানুগতিকার বাইরে নির্মাণ ও অভিনয় অ্যানি হলকে সর্বকালের সেরা ছবির একটি করে তুলেছে। ভিন্ন ভিন্ন বয়সে দেখা হয় আলভি ও অ্যানির। দেখা হওয়ার প্রতিটি সিকোয়েন্সই উপভোগ্য। একসময় অ্যানি মনে করে আলভি আর তার মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। তারা আলাদা হয়। আলভির উপলব্ধি হয় ভালবাসা ও বন্ধুত্বে নানা ধরণের দুঃখ কষ্ট থাকলেও তা মানুষের জন্য প্রয়োজন।
৩। এ ফিস কলড ওয়ান্ডা: যারা শুধুই হাসতে চান তাদের জন্য এই ছবি। সমালোচকরা পছন্দ করলেও সব সময় বক্স অফিসের আনুকল্য মেলে না। এ ফিস কলড ওয়ান্ডা দুটোই পেয়েছে। এমনকি এই ছবি থেকে সেরা সহ-অভিনেতার অস্কারও জিতে নেয় কেভিন কেইন। ছবিতে আরো আছে জেমি লি কার্টিস।
একদল হিরা চোরের কাহিনী এ ফিস কলড ওয়ান্ডা। প্রতিটি চরিত্রে কান্ডকারখানা দেখে হাসতে বাধ্য হবেন সবাই। সেরা কমেডি ছবির যে কোনো তালিকায় থাকবেই এ ফিস কলড ওয়ান্ডার নাম।
৪। দেয়ার ইজ সামথিং অ্যাবাউট মেরি: ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির পরিচালক ফেয়ারলি ব্রাদার্স, পিটার ফেয়ারলি ও ববি ফেয়ারলি। ক্যামেরুন ডায়াজ, বেন স্টিলার ও ম্যাট ডিলন ছবির মূল ভূমিকায়। সেরা কমেডি ছবির যতোগুলো তালিকা হয়েছে সবগুলোতেই আছে দেয়ার ইজ সামথিং অ্যাবাউট মেরি। বিখ্যাত ‘হেয়ার জেল’ দৃশ্য ছবিটিকে সবসময়েই আলোচনার মধ্যে রাখবে।
স্কুল জীবনের স্বপ্নের কন্যা মেরির সন্ধানে টেড বা স্টিলার। খুঁজে পেতে সাহায্য নেয় গোয়েন্দা প্যাটের (ম্যাট ডিলন)। খুঁজে পেয়ে নিজেই প্রেমে পড়ে যায় মেরির। শুরু হয় একে অপরকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা। এক সময় তারা টের পায় মেরিকে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় তারা দুজনই নয়, আছে আরো অনেকে। সমালোচকরা যেমন পছন্দ করেছেন এই ছবি, বক্স অফিস সাফল্যও বিশাল।
৫। প্লেনস, ট্রেনস অ্যান্ড অটোমোবাইলস: ১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির আগে স্টিভ মার্টিন ছিল মাঝারি জনপ্রিয়তার একজন অভিনেতা। এই ছবি তাকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দেয়। এখনো দাপটের সঙ্গে বিভিন্ন কমেডিতে অভিনয় করে যাচ্ছেন স্টিভ মার্টিন। ছবিতে আরো আছেন জন কেন্ডি।
থ্যাংকস গিভিং ডে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে ফিরে যাচ্ছেন স্টিভ, পথে জুটে গেলেন জন। তাদের সেই ঘরে ফেরার গল্পই প্লেনস, ট্রেনস অ্যান্ড অটোমোবাইলস। কখনো প্লেনে, কখনো ট্রেনে এবং কখনো ক্যাবে-বিপত্তির শেষ নেই। মজার মজার ঘটনা ঘটতে থাকে দুজনের জীবনে। জন ক্যান্ডি বিপত্তি আরো বাড়িয়ে দেয় নানা ধরনের কান্ড ঘটিয়ে।
(প্রথম আলোতে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫১