জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় পার করছি এখন আলহামদুলিল্লাহ্। তবু ভবিষ্যতের ভয় আমার এক একটি দিন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। না পারছি এই ভয় থেকে মুক্ত হতে না পারছি এখনকার সুন্দর সময়টাকে উপভোগ করতে। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনে নিশ্চয়ই কোন বড় পাপ করেছি যার শাস্তিস্বরূপ আমাকে এভাবে দিন কাটাতে হচ্ছে।
গত এক বছরের বেশী সময় ধরে ব্লগ থেকে দূরে আছি। খুব ভালোবাসার এই জায়গাটা মিস করেছি অনেকদিন। কিন্তু নানা রকম ঝামেলায় দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছি এক রকম। ব্লগে কিছু মানুষ আমাকে ভালোবেসে মনে করেছেন তাই আজ এই হাজিরামুলক পোস্ট দিতে এলাম।
২০১৪ এর শেষের থেকে ব্লগে আমার অনুপস্থিতি শুরু হয়। ব্লগে আমার শেষ পোস্ট ২০১৪ এর ২৬ অক্টোবর। ২০১৪ এর অক্টোবরে নতুন বাসায় উঠি। আমার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল বড় এক বাসায় থাকবো আর তা মনের মত করে সাজাবো। নতুন বাসায় উঠে আমার সে স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ হয়। সময়টা আরও সুন্দর হয় তখন আমার নতুন সন্তান আগমনের নিশ্চয়তা পেয়ে। শুরু হয় তার জন্য প্রতীক্ষা। এবার প্রেগন্যন্সির শুরু থেকেই একটি সমস্যা শুরু হয়। প্রথমবার মা হওয়ার সময় আমি যেখানে পুরো ৮ মাস অফিস করতে পেরেছি সেখানে এবার আমি ৬ মাসের বেশী অফিস করতে পারিনি কারন আমার বাবুটার ওজন বাড়ছিলনা। তাই এপ্রিলের ১৪ তারিখ থেকেই আমি একরকম গৃহবন্দিনি হয়ে দিন পার করা শুরু করলাম। রেগুলার অফিস করা আমি, ছুটির দিনেও ঘরে না থাকা আমি টানা ঘরে বসে থাকতে থাকতে অনেক ডিপ্রেসড হয়ে গেলাম। সাথে ঘর গৃহস্থালি বিষয়ক অন্যান্য ঝামেলাতো ছিলই। তবে এই বাসায় থাকার পুরো সময়টা যে ব্যপারটা সবচেয়ে বেশী উপভোগ করেছি তা ছিল মাতৃত্ব। আমার বড় মেয়ে ঈশিত্বর সাড়ে ছয় মাস বয়সের পর থেকে চাকরীতে আবার জয়েন করার ফলে ওর অনেক পরিবর্তন প্রথমেই আমার দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এবার এই ছুটিতে থাকার সময়টা এক একটি দিন আমি আমার মেয়েটার আবেগীয় অনেক পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি। আর বুঝতে পেরেছি আমার মেয়েটা আমাকে কতটা মিস করেছে। আমার দীর্ঘ সময় ছুটিতে থাকায় সবচেয়ে বেশী খুশি হয়েছে আমার ঈশিত্ব। জুনের ১৮ তারিখে আমি আরেকটি কন্যার মা হই। প্রেগন্যন্সির সময়টাতে অনেকের অনেক রকম সমস্যা দেখা যায়। আল্লাহ্র রহমতে আমি দু’বার মা হয়েছি আমার খাওয়া বা ঘুমের কোন রকম কোন সমস্যা হয়নি। আমার ছোট মেয়ের নাম রেখেছি ইরহা।
ইরহা হওয়ার এক মাসের মধ্যে আমাকে কয়েকবার ফলোআপে যেতে হয় ডাক্তারের কাছে। তখন দুটো বাচ্চা নিয়ে রিকশায় বৃষ্টির মধ্যে যাওয়া আসা খুব কষ্টের একটা ব্যাপার ছিল। মাঝে ২/৩ দিন ট্যাক্সি নিয়ে গিয়েছি, প্রতিদিন বিল এসেছে ৫০০ টাকার উপরে। পথ ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে কলাবাগান এতটুকু। তাই আমার জামাই গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নিজেদের যেখানে যা জমানো ছিল সাথে আরও কিছু টাকা ধার করে সে গাড়ি কিনে ফেলে, যা আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বেশ বড় একটি ঘটনা তাই শেয়ার করলাম।
এবার ভয়ের ব্যপারটা শেয়ার করি। ব্লগে যে ভাইয়া বা আপুরা আমাকে জানেন বা আমার আগের লেখা পড়েছেন তারা হয়ত বুঝতে পারছেন আমার ভয় কি নিয়ে। যারা আগে আমার লেখা পড়েননি তাদের জন্য জানাচ্ছি – আমার ঈশিত্ব আর ইরহার বাবার কিডনি ড্যামেজড হয়ে গিয়েছে দুটোই, ২০১৩ সালে মার্চে ধরা পড়ে বিষয়টা। ঐ বছরেই ওর ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন হয়। আল্লাহ্র রহমতে সে এখন ভালো আছে। তবে ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন যাদের হয় তাদের সব সময় খুব সাবধানে থাকতে হয়। যে কোন একটা ভাইরাস বা ইনফেকশন এট্যাক করলেই শেষ, কারন এদের ইমিঊন সিস্টেম খুব কম করে রাখা হয়, যাতে নতুন কিডনি রিজেক্টেড না হয়। ওর অপারেশনের আগে আমরা যার মাধ্যমে জানতে পারি যে দেশে এত ভালো চিকিৎসা সম্ভব তিনি ছিলেন আমার স্বামীর এক কলিগ। ওনার স্বামীর অপারেশন হয়েছিল তার কিছুদিন আগেই মানে ২০১৩ এর মার্চে। ২০১৫ এর অক্টোবরে সেই ভাইয়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারপর থেকে আমার এই ভয় বাড়তে থাকে। ভাইয়ার মেয়েটা আমার ঈশিত্বর চেয়ে ছোট। কিভাবে বড় হবে মেয়েটা বাবা ছাড়া? কেমন হবে ওর পৃথিবী?
ইরহা এখন চেহারা চেনে আর পরিচিত মুখ দেখলে অনেক মিষ্টি একটা হাসি দেয় মাশাআল্লাহ। ইরহার হাসিমাখা মুখের দিকে যখন তাকাই মাঝে মাঝে আমার বুকটা হা হা করে ওঠে এই ভেবে যে আমার এই ছোট পাখীটা কতদিন তার বাবাকে পাবে। আর ঈশিত্বর তো পুরো পৃথিবী জুড়েই তার বাবা। তাই ভয় হয় ওর জন্যও। এসব চিন্তায় ভালো লাগেনা কিছুই। সবকিছু থেকে গুটিয়ে রাখি নিজেকে। কোন রকম আনন্দ করতে ভয় হয়। শুধু মনে হয় আমার এই সুদিন খুব ক্ষণস্থায়ী। যেকোন সময় আমার এই সুন্দর পৃথিবী ভেঙ্গে যাবে আর তখন আমার আর আমাদের কি হবে তা ভেবে দিশেহারা হয়ে যাই আমি।
দোয়া করবেন সবাই আমাদের জন্য। নতুন বছর ভালো কাটুক সবার এই দোয়া করি।
আমাদের ঈশিত্ব আর ইরহা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫