somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা, গল্পটা তোমার জন্য।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাল রাত তখন কত হবে জানিনা, হয়ত এগারটা বা বারোটা বাজে; ঘরে বসে একটা মুভি দেখছিলাম। হঠাত ছোটঘরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলাম। কি মুশকিল! একে তো একশন মুভি, তার উপর ক্ল্যাইম্যাক্সে পৌছে গেছি। এই অবস্থায়… … … ! ধ্যাত্তেরি, ভাল্লাগেনা।
দু খোপের সাতাশে বন্দের ঘর; এক ঘর দাদা-বৌদির জন্য, অন্যঘরে বাবা মা শোয়। আমি বাড়ী এলে বাবা-মা বারান্দায় ঘুমায়।
আমি বিছানা থেকে নেমে চুপি চুপি চাবী টা নিয়ে বাইরের দরজার তালা খুললাম, এতই নিঃশব্দে যে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। খুট করে সামান্য শব্দ হয়েছে কি হয়নি, আমার ঘুমন্ত পিতাশ্রী ঠিক ধরে ফেললেন। বিড়ী সিগারেট যে আমি খাইনা, তিনি সেটা ভাল করেই জানেন। সুতরাং, আমি অত রাতে কি কাজে বাইরে যাচ্ছি, তা অনুমান সাধ্য। অথচ, তার জিজ্ঞাস করা চাই ই চাই,আমি কোথায় যাচ্ছি!
ধুরো, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। একুশ বছর পাড়ি দিচ্ছি আমি, এখন ও এই কোশ্চেন করতে হবে? এতটুকু স্বাধীনতা যদি থাকতো আমার! ধুর ছাই, ভাল্লাগে না আর.........। মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ হয় বাবার উপর, এইটুকুনি বুদ্ধি শুদ্ধি যদি থাকতো! ছেলেরা বড় হলে একটু ছাড় দিতে হয় , এটা কে বুঝাবে তাদের...
বাবাকে জবাবদিহি করে বাইরে বেরুলাম আমি। আহ, কি ঠাণ্ডা! মনটা জুড়িয়ে যায়। কারবার সেরে হাতমুখ ধুয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে বারান্দা ক্রস ঘরে ঢূকব, চোখ পড়ল বাপাশে মশারীর ভিতর। প্রকান্ড একটা শিশুর মত বাবা ঘুমিয়ে আছে কুন্ডুলী পাকিয়ে।
আমি স্থাণুবৎ দড়িয়ে পড়লাম। দশ বছর আগের দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে উঠলো আমার। আমি বাবা আর মা একসাথে ঘুমাতাম তখন। খাটের একপাশে বাবা আর একপাশে মা, মাঝখানে আমি। অতি শান্তশিষ্ট আমি ঘুমের ঘোরে যাতে গড়াতে গড়াতে পপাত ধরনীতল না যাই, তাই জন্য এ ব্যবস্থা।
বরাবর বাবা ন্যাওটা আমি। তখনও বাবা ঠিক এমন ভাবে ঘুমাতো; কাত হয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে। এভাবে ঘুমালে বুকের কাছে কোলের ওখানে একটা গর্তের মতন জায়গা তৈরি হয়। বিছানার উপর খানিক গড়াগড়ি করে আমি সুড়ুত করে ঢুকে যেতাম ওখানে। বাবা তখন তার হাতটা আমার গায়ের উপর রাখতো আড়াআড়িভাবে। ব্যাস আমার মনে হত দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আর আরামের জায়গায় আমি পৌছে গেছি।
বাবার কোলের ভেতর শুয়ে গল্প শোনা ছিল আমার নিত্যদিনের অভ্যেস। বাবার গল্পের ঝুড়ি ছিল বিশাল, হরেক রকম গল্প তাতে। বাঘ-সিংহ, রক্ষস-খোক্কস, পিঠে গাছের গল্প, ঝিনুক-কুমারীর গল্প; এমন হাজার রকম রত্ন ছিলা তার ঝুলিতে। এক এক করে বাবা বের করতো তার সেই আশ্চর্য সম্পদ। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম তার সেই রুপকথার গল্প । মাঝে মাঝেবাবা ভুতের গল্পও বলত। আমার ভারী ভয় করতো তখন। বাইরে তাকাতেই পারতাম না। বাবার শরীরের ভেতর আরো সেধিয়ে যেতাম। বাবার শরীরের গন্ধ আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখতো, ভয়গুলো আর আমার কাছেই ঘেষতে পারতো না।
বাবার শোয়ার ভঙ্গিমা দেখে আমার কি জানি কি হল জানিনা। আলগোছে মশারী উচু করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বাবা মনে হয় একটু অবাক হল, জিজ্ঞাস করলো কি হইসে রে। কিছু না বলে আমি চুপচাপ বাবা আর মায়ের মধ্যিখানে অল্প একটূ ফাকা জায়গা আছে ওখানে শুয়ে পড়লাম। বাবা কি বুঝলো কে জানে! তার বাম হাতের উপর আমার মাথা টা নিয়ে গায়ের উপর হাতটা দিল, জিজ্ঞাস করলো কি হইছে খোকা। এক অসহনীয় আনন্দের আতিশয্যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাবার কোলের ভেতর ক্রমশ গুটীয়ে যেতে যেতে অস্ফুট গলায় বলালাম, আমি তোমায় ভালবাসি বাবা......। অনেক.........অনেক বেশি............।
বাবা কি বুঝলো কে জানে, কালি তার শক্তিশালী হাত দুটো দিয়ে আমাকে তার কোলের কাছে টেনে নিল। আজ থেকে দশ বা পনের বছর আগে ছোট্ট অমিত কে যেভাবে বাইরের আধার থেকে লুকিয়ে রাখতো নিজের শরীরে, ঠিক সেইভাবে। বাবার শরীরের গন্ধ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আমায়। আমি তলিয়ে যেতে লাগলাম ক্রমশ...........................।কাল রাত তখন কত হবে জানিনা, হয়ত এগারটা বা বারোটা বাজে; ঘরে বসে একটা মুভি দেখছিলাম। হঠাত ছোটঘরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলাম। কি মুশকিল! একে তো একশন মুভি, তার উপর ক্ল্যাইম্যাক্সে পৌছে গেছি। এই অবস্থায়… … … ! ধ্যাত্তেরি, ভাল্লাগেনা।
দু খোপের সাতাশে বন্দের ঘর; এক ঘর দাদা-বৌদির জন্য, অন্যঘরে বাবা মা শোয়। আমি বাড়ী এলে বাবা-মা বারান্দায় ঘুমায়।
আমি বিছানা থেকে নেমে চুপি চুপি চাবী টা নিয়ে বাইরের দরজার তালা খুললাম, এতই নিঃশব্দে যে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। খুট করে সামান্য শব্দ হয়েছে কি হয়নি, আমার ঘুমন্ত পিতাশ্রী ঠিক ধরে ফেললেন। বিড়ী সিগারেট যে আমি খাইনা, তিনি সেটা ভাল করেই জানেন। সুতরাং, আমি অত রাতে কি কাজে বাইরে যাচ্ছি, তা অনুমান সাধ্য। অথচ, তার জিজ্ঞাস করা চাই ই চাই,আমি কোথায় যাচ্ছি!
ধুরো, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। একুশ বছর পাড়ি দিচ্ছি আমি, এখন ও এই কোশ্চেন করতে হবে? এতটুকু স্বাধীনতা যদি থাকতো আমার! ধুর ছাই, ভাল্লাগে না আর.........। মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ হয় বাবার উপর, এইটুকুনি বুদ্ধি শুদ্ধি যদি থাকতো! ছেলেরা বড় হলে একটু ছাড় দিতে হয় , এটা কে বুঝাবে তাদের...
বাবাকে জবাবদিহি করে বাইরে বেরুলাম আমি। আহ, কি ঠাণ্ডা! মনটা জুড়িয়ে যায়। কারবার সেরে হাতমুখ ধুয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে বারান্দা ক্রস ঘরে ঢূকব, চোখ পড়ল বাপাশে মশারীর ভিতর। প্রকান্ড একটা শিশুর মত বাবা ঘুমিয়ে আছে কুন্ডুলী পাকিয়ে।
আমি স্থাণুবৎ দড়িয়ে পড়লাম। দশ বছর আগের দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে উঠলো আমার। আমি বাবা আর মা একসাথে ঘুমাতাম তখন। খাটের একপাশে বাবা আর একপাশে মা, মাঝখানে আমি। অতি শান্তশিষ্ট আমি ঘুমের ঘোরে যাতে গড়াতে গড়াতে পপাত ধরনীতল না যাই, তাই জন্য এ ব্যবস্থা।
বরাবর বাবা ন্যাওটা আমি। তখনও বাবা ঠিক এমন ভাবে ঘুমাতো; কাত হয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে। এভাবে ঘুমালে বুকের কাছে কোলের ওখানে একটা গর্তের মতন জায়গা তৈরি হয়। বিছানার উপর খানিক গড়াগড়ি করে আমি সুড়ুত করে ঢুকে যেতাম ওখানে। বাবা তখন তার হাতটা আমার গায়ের উপর রাখতো আড়াআড়িভাবে। ব্যাস আমার মনে হত দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আর আরামের জায়গায় আমি পৌছে গেছি।
বাবার কোলের ভেতর শুয়ে গল্প শোনা ছিল আমার নিত্যদিনের অভ্যেস। বাবার গল্পের ঝুড়ি ছিল বিশাল, হরেক রকম গল্প তাতে। বাঘ-সিংহ, রক্ষস-খোক্কস, পিঠে গাছের গল্প, ঝিনুক-কুমারীর গল্প; এমন হাজার রকম রত্ন ছিলা তার ঝুলিতে। এক এক করে বাবা বের করতো তার সেই আশ্চর্য সম্পদ। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম তার সেই রুপকথার গল্প । মাঝে মাঝেবাবা ভুতের গল্পও বলত। আমার ভারী ভয় করতো তখন। বাইরে তাকাতেই পারতাম না। বাবার শরীরের ভেতর আরো সেধিয়ে যেতাম। বাবার শরীরের গন্ধ আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখতো, ভয়গুলো আর আমার কাছেই ঘেষতে পারতো না।
বাবার শোয়ার ভঙ্গিমা দেখে আমার কি জানি কি হল জানিনা। আলগোছে মশারী উচু করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বাবা মনে হয় একটু অবাক হল, জিজ্ঞাস করলো কি হইসে রে। কিছু না বলে আমি চুপচাপ বাবা আর মায়ের মধ্যিখানে অল্প একটূ ফাকা জায়গা আছে ওখানে শুয়ে পড়লাম। বাবা কি বুঝলো কে জানে! তার বাম হাতের উপর আমার মাথা টা নিয়ে গায়ের উপর হাতটা দিল, জিজ্ঞাস করলো কি হইছে খোকা। এক অসহনীয় আনন্দের আতিশয্যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাবার কোলের ভেতর ক্রমশ গুটীয়ে যেতে যেতে অস্ফুট গলায় বলালাম, আমি তোমায় ভালবাসি বাবা......। অনেক.........অনেক বেশি............।
বাবা কি বুঝলো কে জানে, কালি তার শক্তিশালী হাত দুটো দিয়ে আমাকে তার কোলের কাছে টেনে নিল। আজ থেকে দশ বা পনের বছর আগে ছোট্ট অমিত কে যেভাবে বাইরের আধার থেকে লুকিয়ে রাখতো নিজের শরীরে, ঠিক সেইভাবে। বাবার শরীরের গন্ধ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আমায়। আমি তলিয়ে যেতে লাগলাম ক্রমশ...........................।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×