somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারো কারো শরীর অক্ষম হলেও মন অক্ষম নয়

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কারো কারো শরীর অক্ষম হলেও মন অক্ষম নয় তেমনি দেখা যাচ্ছে স্বপ্নছোঁয়ার অদম্য ইচ্ছা ও শক্তি নিয়েই এগিয়ে চলেছেন এবার নড়াইলেরও পাঁচ প্রতিবন্ধী এসএসসি পরীক্ষার্থী। তদের কেউ শারীরিকভাবে পুরোপুরি সক্ষম না হলেও তারা থেমে যাননি। স্বপ্ন তাদের বিশাল আকাশছোঁয়া। তাদের কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কেউ হাটতে পারেন না কারোর দুই হাতও অপূর্ণ। এমন অদম্য পাঁচ শিক্ষার্থী এই বছর নড়াইলের তিনটি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।


এ হলো লিমা যে হাটতে অক্ষম তাই মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে এসেছেন লিমা
মায়ের কোলে চড়ে এসে পরীক্ষার হলে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন লিমা খাতুন। সে নড়াইলের জুড়ালিয়া জেবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী। লিমা জানিয়েছেন তার ইচ্ছা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হওয়া ও তার শিক্ষকতা করার ইচ্ছা। তার মা পান্না বেগম বলেছেন পরীক্ষার দিন লিমাকে কোলে করে নিয়ে পরীক্ষাকক্ষে বসিয়ে দিয়ে আসি এবং শেষ হলে আবার কোলে করে বাইরে নিয়ে যাই। জন্মগত ভাবেই হাত পায়ে শক্তি নেই আমার সন্তান লিমার।তিনি আরও জানিয়েছেন তিন বছর বয়সে লিমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। স্বামীর ভিটেবাড়ি নড়াইলের রতডাঙ্গা গ্রাম ছেড়ে প্রতিবন্ধী লিমাকে নিয়ে বাবার বাড়ি অর্থাৎ লিমার নানা বাড়ি জুড়ালিয়া মহাজন গ্রামে চলে আসেন। নেমে পড়ি এক কাল জয়ী জীবনযুদ্ধে। সেই থেকে হাঁস মুরগি পালন করে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি লিমার লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি।


আদরীর অপূর্ণ হাত তবুও অবিরাম লিখে যায় আদরী
নড়াইলের পলাইডাঙ্গা গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী আদরী খানম। দরিদ্র সংসারে কুপির আলোতে লেখাপড়া করে মিরাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এই বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আদরী। প্রায় পাঁচ ইঞ্চি অপূর্ণ জন্মগত থেকে হাত দিয়ে অবিরাম লিখে যায় আদরী। আদরীর ইচ্ছা আছে সাংবাদিক হওয়ার।আদরী বলেছে আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। সাংবাদিক হয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে ভালো খবর লিখতে চাই। ভালো খবর জানাতে চাই। তবে আদরীর বাবা ইকবাল মিনা জানিয়েছেন লেখাপড়া প্রতি যথেষ্ট মন থাকা সত্ত্বেও অর্থাভাবে মেয়েকে লেখাপড়ার খরচসহ সবকিছু ঠিকমত দিতে পারিনি। দিনমজুর করে ছয়জনের সংসার চালাচ্ছি। আদরী ছাড়াও ছোট ছেলে রাকিব মিনা লেখাপড়া করছে চতুর্থ শ্রেণিতে। ভিটেবাড়িতে আট শতক জমি ছাড়া তাদের আর কোনো জমিজমা নেই।


দৃষ্টিহীন তবুও থেমে নেই সাইফুল এগিয়ে চলছেন অবিরত । দৃষ্টিশক্তি না থাকায় রাইটারের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতায়।সাইফুল জানিয়েছে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন এক খেলার সাথীর সাথে মাথায় আঘাত পেয়ে তার চোখে সমস্যা হয়। তারপর অনেক চিকিৎসা করিয়েও দুই চোখ ভালো হয়নি তার।তিনি আরো বলেছেন রাইটার মুবারক হোসেনের প্রশ্ন শুনে উত্তর বলে দিচ্ছে সে। আর মুবারক তার পরীক্ষার খাতায় লিখে যাচ্ছে। লেখাপড়া শেষ করে বড় কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছা তার।সাইফুল তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী। তার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার নোয়াপাড়া গ্রামে। বাবা মা এবং তিন ভাইয়ের সংসার তাদের। বাবা মোহাম্মদ হোসেন আলফাডাঙ্গা বাজারের মুদি দোকানী। বড় ভাই তানভীর ইসলাম রুবেল অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী এবং ছোট ভাই ফজলে রাব্বি শাহেদ প্রথম শ্রেণির ছাত্র।


ডান হাতে সমর্থ নন তাই চলছে লিটনের বাম হাত । আর জন্ম থেকেই ডান হাত অপূর্ণ তাই বাম হাতে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছেন লিটন
জন্মগতভাবে ডানহাত অপূর্ণ ছয় ইঞ্চি হলেও বাম হাত দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন দরিদ্র পরিবারের পিতৃহীন সন্তান লিটন মজুমদার।জন্মের তিন মাস পরেই তার বাবা একটি দুর্ঘটনায় মারা যান। লিটন এবং তার মাতা উর্মিলা মজুমদার অন্যের জমিতে কাজ করে সংসারের খরচ চালান এবং তার পাশাপাশি লিটনে পড়ার খরচও চালান। চরমালিডাঙ্গা গ্রামের বিদ্যুৎ বিশ্বাসের ভিটায় বসবাস করেন তারা। লিটন জুড়ালিয়া জেবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিচ্ছেন।


ডান চোখ দৃষ্টিহীন মিতা কিন্তু বাম চোখ তো আছে ।ডান চোখে দেখতে পান না মিতা। তাই বাম চোখের আলোয় চালিয়ে যাচ্ছেন মিতা তার পড়াশোনা
সাত বছর বয়সে খেলতে গিয়ে আহত হন ডান চোখের দৃষ্টি হারান নড়াইলের মুলিয়া গ্রামের মিতা বিশ্বাস। তবুও জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছে মিতা। মুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এই বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মিতা।দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিতা জানিয়েছেন তার ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়ার।মিতার মা ঝুনু বিশ্বাস বলেছেন সাত বছর বয়সে খেলতে গিয়ে মাটিতে পড়ে চোখে আঘাত পায় মিতা। বাংলাদেশসহ ভারতে অনেক চিকিৎসা করিয়েও ভালো হয়নি তার চোখ। মিতার বাবা চিত্ত বিশ্বাস কৃষি কাজ করেন। ছোট বোন সেতু পঞ্চম এবং ভাই চিন্ময় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।এই ব্যাপারে নড়াইলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন ডিপিওডির সাবেক পরিচালক ছাব্বির হোসেন বলেছেন জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলা পাঁচ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবো বলে আশা করছি।

তাদের সকলের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা থাকলো ।

তথ্যসূত্রঃ অনলাইন ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দিশ হারা

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২

তোয়াত্তন আ`‌রে কেন লা‌গে?
গম লা‌গে না হম লা‌গে?
রাই‌ক্কো আ‌রে হোন ভা‌গে
ফেট ফু‌রে না রাগ জা‌গে?

তোয়া‌রে আত্তন গম লা‌গে
ছটফড়াই আর ডর জাগে
ছেত গরি হইলজা ফাড়ি
হইবানি হোন মর আগে।

হোন হতার হোন ইশারা
ন'বুঝি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাদ্য পন্যের মান নিয়ন্ত্রন

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১২

মশলা প্রস্তুতকারী কিছু ভারতীয় সংস্থার মশলায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গিয়েছে।সম্প্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেন্টার ফর ফুড সেফটি’। সংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় বাজারে জনপ্রিয় বেশ কিছু সংস্থার মশলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×