somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার নাম 'ময়লাপোতা'! নাম শুনেই বোঝা যায় কোন এক কালে বাকি শহরের যত সব ময়লা-আবর্জনা ওখানে এনে পোতা হোত। ওই এলাকার মানুষ স্থানের নামে আদি ঐতিহ্য বজায় রেখেছে - এটা অবশ্য একটা ভাল দিক।

মার ওই বন্ধুর পরিবারটি বেশ সৌখিন। তাঁর বাবা খুব নামী-দামী মানুষ, নাম বললেই ব্লগের অর্ধেক মানুষ চিনে ফেলবে; তাই নাম পরিচয় উহ্য থাকুক। তাঁর বাবা আট ভাই-বোনের বড়। যেমন শিক্ষিত তেমন গুনী- এইসা তেজী ও একগুঁয়ে। তাঁর কথায় একরকম পুরো পরিবারের বাঘে-মহিষে একঘাটে জল খায়। ওদের তিনতলা বাড়ি- বাড়ির ছাদে সৌখিন বাগান করা হয়েছে, শুরুটা হয়েছিল সেই বছর বিশেক আগে। তখন সৌখিন বাগান নিয়ে বেশ বড় রকমের একটা উত্তেজনা ছিল। তবে এই ঘটনাটা ১২/১৩ বছর আগের।
চায়না থেকে চায়নিজ কমলা খেয়ে এসে তাঁর বড় ভাই এর গল্প শুনে আমার বন্ধু ঢাকার বৃক্ষ মেলা থেকে একটা চায়নিজ (ম্যান্ডারিন) কমলালেবুর চারা কিনে নিয়ে ময়লাপোতার ছাদে নিয়ে রোপন করল। এই খবর সেদিনই ময়লাপোতা থেকে ঝালকাঠি ওর নানার বাড়ি হয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট আর স্টুর্টগার্ডের অলিগলি হয়ে ভ্যাঙ্কুভার তক এই খবর ফেসবুক আর ম্যাসেঞ্জার মারফর পৌছে গেল! তাদের নানা-দাদা বাড়ির সবাই ছোট বড় খবর নিয়েও রমরমা উত্তেজনা নিয়ে থাকে সবসময়। মানুষ এত আবেগ উত্তেজনা সারাক্ষন ধরে রাখে কেমনে এইটা আমাদের মাথাতেই আসত না কখনো।
কমলা লেবুর গাছ বড় হচ্ছে আর তাঁর নিয়মিত আপডেট চলে যাচ্ছে সবখানে।
প্রথম যখন ফুলের কুড়ি থেকে ফল হল তখন তা দেখে দেশে গিয়ে আমার বন্ধু উত্তেজনায় প্রায় কেঁদেই ফেলল। শতাধিক এঙ্গেল থেকে ছবি আর ভিডিও করে সবাইকে শেয়ার করেও উত্তেজনা যেন প্রশমিত হচ্ছিল না।
এমনিতেই ওর মা বাবা আর ভাবি সকাল বিকাল ওই গাছের বিশেষ যত্ন আত্মি করে প্রতিদিন। ফল আসার পরে সেটা যেন বেড়ে গেল কয়েকগুন! ফল একটু একটু করে বড় হচ্ছে আর চারিদেকে সবার উত্তেজনা বাড়ছে। ঢাকার বাজারে তখনো চায়নার কমলা আসেনি-তাই আশে পাশের কেউ বেড়াতে আসলেই তাঁকে বিশেষভাবে ওই গাছ প্রদর্শন করানো হয়।
প্রতিটা দর্শনার্থীই দারুণ আপ্লুত হয়, অবাক বিস্ময়ে গাছ আর ফল দ্যাখে।
কমলালেবু বড় হয়ে একসময় হলদে রাঙ্গা হয়। প্রতিদিন ময়লাপোতার বাসা থেকে বন্ধুর ভাবি ছবি তুলে আপডেট দিচ্ছে। বন্ধু ঢাকায় বসে ভীষন এক্সাইটেড। সাতটা মাত্র কমলালেবু গাছে আছে- শতাধিক আত্মীয়স্বজনের মাঝে এইগুলো কেমনে ভাগ হবে এই নিয়ে দিনরাত ফোনে আর ম্যাসেঞ্জারে আলোচনা চলে। এছাড়া ওদের বন্ধুবান্ধবও কম নয়। নিজেদের কমলা খাওয়া ভাগ্যে হয় কি না আল্লা জানে- কোন দিকে কে গোস্যা করে বলা মুশকিল। অবস্থা এমন বেগতিক যে, ওর বড় ভাই পরামর্শ দিল; চায়না থেকে দুইমন কমলা এনে বিলিয়ে দিতে।
ওদিকে কমলালেবুর একেবারে কমলা রঙ ধরেছে-দু-চারদিনের মধ্যেই সেটা খাওয়া যাবে মনে হচ্ছে। আমার বন্ধুর উত্তেজনা এমন যেন মঙ্গলগ্রহে প্রথম কমলার ফলন হচ্ছে!
এমন দিনে ফজরের নামাজের পরে ওর মায়ের ফোন। ঘুম চোখে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আর্ত কন্ঠে মায়ের চিৎকার, কমলাতো সব চোরে নিয়ে গেছে!!!
এ যেন মৃত্যু সংবাদের থেকেও ভয়াবহ দুঃসংবাদ। সঙ্গে সঙ্গে এই ভয়াবহ দুঃসংবাদ ময়লা পোতা থেকে ঝালকাঠি হয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট আর স্টুর্টগার্ডের অলিগলি হয়ে ভ্যাঙ্কুভার তক ফেসবুক আর ম্যাসেঞ্জার মারফত পৌছে গেল! চারিদিকে শোকের ঢল।

ন্ধুর বাপের শুরু হোল ব্যাপক হুমকি ধামকি- তিনি ডিসি এসপিকে জড়ো করে ফেললেন। সবাই ফোনে স্যার স্যার বলে ভীষন দুঃখ প্রকাশ করে চারিদিকে খোঁজ দ্যা সার্চ শুরু করে দিল। ওসি তাঁর দল-বল নিয়ে এলাকা রেকি করেও গেল।
অনেক অনুসন্ধান করে পুরো ময়লাপোতায় সেই চায়নিজ কমলা লেবুর খোঁজ আর পাওয়া যায়নি সেদিন।

*** পরদিন ফজরের নামাজের পরে বন্ধুর মা ফের ছাদে উঠেছে অভ্যাস মত একটু মর্নিং ওয়াক আর ছাদ বাগানটা দেখার জন্য। আজ তাঁর মনটা বেজায় খারাপ। ছেলেটা এত সখ করে কমলা লেবুর গাছ লাগালো- কত সপ্ন ছিল, একটা কোয়া লেবুও খেতে পারল না। মন খারাপ করে বাগানে হাটতে হাটতে হঠাত তাঁর নজর গেল ছাদের কার্নিশে বলের মত কি যেন লাইন ধরে সাজিয়ে রাখা। কাছে যেতেই দেখেন, সেই চায়নিজ কমলা একটা খেয়ে ছয়খানা চোরে মায়া করে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। আহারে কি দরদী চোর- খুশীতে তাঁর চোখে জল এসে গেল। কমলাগুলো কুড়িয়ে আনতে গিয়ে দেখেন একটা কমলার নীচে ছোট্ট একটা চিরকুট।

সেই চিরকুটে লেখা ছিল,
"কোন শালার ছাওয়াল এই কমলার গাছ লাগাইছে ..."

আমার সেই বন্ধু মারফত জানা গেছে, ওই কমলা যে টক ছিল-দুনিয়াতে নাকি এমন টক লেবুর জন্ম হয় নাই।

মার সেই বন্ধুর বড় ভাই, ওকে ফোন করে বলেছিল-
"এ-ই শোন তুই কিন্তু ভুল কইরেও কইস না যে, তুই এই কমলার চারা আনিছিস। আব্বা সকাল থেকি আমারে কয়েকবার জিজ্ঞেস করিছে। আমি কইছি, চায়নার বাঙ্গাদেশী এম্বাসেডর আমার বন্ধু পাঠাইছিল মনে হয়। সে কিন্তু বিরাট খ্যাপা। তুই আনিছিলি শুনলি তোরে বাড়িতে আসা বন্ধ করি দিবিনে।"
***

ছবিঃ ২০০৮ সালে চায়নার কুনমিং থেকে তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×