গতবছরের কোন একসময় প্রাইমেরি স্কুলের হালিম স্যারের সাথে হঠাৎ দেখা গাড়িতে। সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেই আমাকে চিনতে পারলেন। আমি খুব অবাক হলাম এটা দেখে যে উনি আমার নামও মনে রেখেছেন। আজকের কথা নয়, প্রায় ১৬ বছর আগে প্রাইমেরিতে পড়েছি।
হালিম স্যারকে যমদূত এর মতো ভয় পেতাম। এমন মারধর করতেন, বাড়িতে এসে শুতে-বসতে পর্যন্ত পারতাম না। সারা শরীর ফুলে কলাগাছ হয়ে যেত। এমনও হয়েছে ফোলা জায়গায় আবারও বেত্রাঘাত। যাকে বলে মরার ওপর খাড়ার ঘা!
গ্রামের স্কুল তো। প্লে-কেজি পড়া হয় নি। ইমিডিয়েট বড়বোন ওপরের ক্লাসে পড়ত। আমি তার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তার সাথেই স্কুলে যাওয়া, খুব অল্প বয়সেই স্কুলে ভর্তি হওয়া। যদিও কথাবার্তা বলতে পারতাম না ঠিকমতো। তোতলামি স্বভাবও ছিল।
একবার আমাকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে নামিয়ে দেওয়া হলো, প্রচুর মারধরও করা হলো। আব্বাকে নিয়ে স্কুলে গেলাম। হালিম স্যার আবার আব্বারও শিক্ষক ছিলেন, যদিও উনি পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান নি। যাহোক, আব্বা স্যারকে রিকোয়েস্ট করলেন আমাকে যেন ওপরের ক্লাসে তুলে দেওয়া হয়। আমি যে পড়া ঠিকই বলি, উনারা যে বুঝতে পারেন না; এটা বোঝাতে সক্ষম হলেন।
চতুর্থ শ্রেণিতে হালিম স্যার "পরিবেশ পরিচিতি সমাজ" পড়াতেন, এখন সাবজেক্টটার নাম "বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়"। একগাদা পড়া দিয়ে দিতেন, পরদিন মুখস্থ বলতে হতো, না পারলে শরীরের ওপর তুফান বয়ে যেত। মনে মনে স্যারকে যে কত অভিশাপ দিয়েছি, তাঁর মৃত্যু কামনা করেছি! একবার লাল বাগের কেল্লা পড়া দিয়েছিলেন; বলেছিলেন, লালবাগের কেল্লা যা করে আল্লাহ্। পড়া মনে হয় পারি নি। মার খেয়েছিলাম খুব।
পঞ্চম শ্রেণিতে যখন উঠলাম, তোতলামো কিছুটা কমলো। সব টিচারের প্রিয় হয়ে উঠলাম। পড়ালেখায় খুব ভালো করতে লাগলাম। মনে পড়ে বাংলায় রেকর্ড পরিমাণ নাম্বার পেয়েছিলাম।
হালিম স্যার আর স্কুলে নেই, অবসরে আছেন অনেকবছর হলো। উনার কথা খুব মনে পড়ে। যেখানেই থাকুন,ভালো থাকুন। তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:০৪