ফুটবল কিংবা যেকোন খেলা দেখতে দেখতে আমরা নিজেরাই কোচ হয়ে যাই অনেক সময়। এটা করলো কেন..... ওভাবে করলে ভালো হত.... এইখানে একজন থাকলে গোল হতো.... ইশ! ডিফেন্সের ভুলে একটা গোল খেলো.... ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের প্রায় অনেকের মনেই কোচসত্বা(!) বিদ্যমান আছে। খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ হঠাৎ করে সেটা জেগে ওঠে। আর এবার তো ফুটবল বিশ্বকাপ! স্বাভাবিকভাবেই স্বাভাবিকের তুলনায় সেটা একটু বেশিই জেগে উঠবে।
আমিও এর ব্যতিক্রম নই।
ইংল্যান্ডের খেলা দেখতে দেখতেই এটা বেশি করে জেগে ওঠেছিলো। ফ্যাবিও ক্যাপেলোকে ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলাতে দেখেই সেটা আরও বেশি আকার ধারণ করেছিলো। ৪-৪-২ কোন ব্যাপার না, যদি সেটা ডায়মন্ড হয়। মানে, ৪ ডিফেন্ডারের সামনে একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, দুইজন উইংগার আর একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। কিন্তু ক্যাপেলো সেটা করেননি। তিনি যেটা করেছেন, সেটা হলো.... অতি সাধারণ ৪-৪-২। একটি সারিতে ৪ জন ডিফেন্ডার, ৪ জন মিডফিল্ডার এবং ২ জন ষ্ট্রাইকার। যেটা গত ১৫+ বছর যাবৎ আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। তার ওপর ইংলিশ ফুটবল কাউন্টার অ্যাটাকে অভ্যস্ত না। তারা অভ্যস্ত উইং প্লে'তে। সেটাই তাদের সাফল্যের মন্ত্র। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলাগুলোতেও ৪-৪-২ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে সেটা একটু ভিন্নভাবে। রাইট এবং লেফট মিডফিল্ডারকে একটু সামনে খেলানো হয়। উইংগার হিসেবেই অনেকটা। কিন্তু ক্যাপেলো সেটা করেননি। তাঁর দলে যথেষ্ট খেলোয়াড় ছিলো।
ভাবতে ভাবতেই একটা ফর্মেশন মাথায় জন্ম নিয়েছিলো। বার্সেলোনার ফর্মেশনের সাথে কিছুটা মিল আছে। তবে ভিন্ন। এটার কোন নাম আমি এখনও দিতে পারিনি। ৪-১-৪-১ হতে পারে। আবার ৪-১-২-২-১ হওয়াও বিচিত্র নয়। আবার যে কেউ এটাকে ৪-৫-১ বলেও ধরে নিতে পারেন। কাজেই নাম নাই'ই বা থাকুক।
এই হচ্ছে আমার আবিষ্কৃত সেই কুখ্যাত ফর্মেশন।
এটায় কিছু সমস্যাও আছে অবশ্য!
প্রথমেই ধরি, ৪ জন ডিফেন্ডার। কিন্তু আমি অ্যাটাকিং ফুল ব্যাক বেশি প্রেফার করি। আমার চিন্তা অনুসারে, সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার দুইজন সর্বদা নিজেদের এরিয়াতেই থাকবেন। মানে, মাঝমাঠের এইপাশে। অ্যাটাকিং এ আশা করি ৭ জনই যথেষ্ট? তাহলে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার দুইজনের এখানে থাকাটা কোন সমস্যাই নয়। সমস্যাটা হলো, নিজেদেরও অ্যাটাক করার ঝোঁক মাথায় চেপে বসা। এটা প্রায় সবারই হয়।
যাকগে, রাইট এবং লেফট উইংব্যাক ফাঁকা রাইট এবং লেফট উইং মিডফিল্ডারের নিচের জায়গাটুকু ভরাট করবে। এই সময়টা তারা দৌড়ের ওপরই থাকবে। তবে বেশিদূর যেতে হবে না। বিপদের আশংকা নেই মনে হলে তারা সরাসরি অ্যাটাকেও অংশ নিতে পারেন।
এবার একদম মাঝমাঠে রয়েছেন একজন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার কিংবা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডিং মিডফিল্ডার। তাকেও মোটামুটি ভালোই দায়িত্ব পালন করতে হবে। বল ঠিকঠাকমতো পাস দিতে হবে। আবার প্রতিপক্ষ আক্রমণে এলে তার কাজ হবে শুরুতে সেইটা ফেরানোর চেষ্টা করা। এটাও বর্তমানে প্রচলিত আছে। তার সামনে রয়েছেন দুইজন মিডফিল্ডার। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বলা যেতে পারে। যদি কাউন্টার অ্যাটাকের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে তারা দুইজন রয়েছেন। তারা নিজেরাই উঠে যেতে পারেন আরো ওপরে। অন্যথায় একজন উঠে গিয়ে সামনে থাকা একমাত্র ষ্ট্রাইকারকে সহযোগিতা করবেন। রাইট এবং লেফট উইং মিডফিল্ডারের দায়িত্ব স্পষ্ট। আমার ফর্মেশন অনুযায়ী তাদের সাথে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দুইজনের যোগাযোগ খুবই সহজ হওয়ার কথা। কাউন্টার অ্যাটাকের কোন উপায় না থাকলে তাদের দিকে বল দিয়ে দিলে তারাই ভালো ক্রস দিতে পারবেন। তাদের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকতে হবে রাইট এবং লেফট ব্যাকদেরও। উল্লেখ্য, আমার ফর্মেশনে ষ্ট্রাইকারের কাজ শুধুই ষ্ট্রাইকারের মত। বল ঠিকঠাকমতো পাস দেওয়ার দায়িত্ব মিডফিল্ডার ৫ জনের। ষ্ট্রাইকার বল পেলেই ঠিকঠাকমতো ফিনিশিঙের চিন্তা। তবে তাকে সহযোগিতা করার জন্য তো একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার উপরে উঠে আসবেনই। তাহলে তো হয়েই গেলো!
অবশ্য যত সহজে কথাগুলো বললাম, এতটা সহজ হবে না। আমার চিন্তানুসারে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার দুইজনের জায়গা ছেড়ে নড়া পুরো হারাম। কিন্তু বর্তমানকালে সেটা হয় না।
যাকগে, এটার সাথে ইংল্যান্ড দলের কথা কেন টানলাম?
ফ্যাবিও ক্যাপেলো প্রতিটি ম্যাচেই ষ্টিভেন জেরার্ড এবং ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে একসাথে খেলিয়েছেন। যাতে তিনি জেরার্ডকে বানিয়ে দিয়েছিলেন রাইট মিডফিল্ডার। জেরার্ড যেটাতে সম্পূর্ণরূপে অনভ্যস্ত। আমি যেটা করেছি, সেটাতে জেরার্ড এবং ল্যাম্পার্ড উভয়কেই একসাথে নির্দ্দিধায় খেলানো যেত। এবার তাহলে বলি, কার কি পজিশন ভেবেছি আমি।
প্রথমেই ডিফেন্ডার ৪ জন। রিও ফার্ডিনান্ডকে এক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন। যেহেতু তিনি ছিলেন না, সেহেতু ম্যাথিউ আপসনই যথেষ্ট।
গোলকিপার হিসেবে আমি বেছে নেবো জো হার্টকে। রাইট উইংব্যাক হবেন গ্লেন জনসন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার দুজন হলেন জন টেরি এবং ম্যাথিউ আপসন। লেফট উইংব্যাক অ্যাশলি কোল। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হবেন গ্যারেথ ব্যারি কিংবা মাইকেল ক্যারিক। দুই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের একজন হবেন ষ্টিভেন জেরার্ড এবং অপরজন হবেন ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। রাইট উইং মিডফিল্ডার হবেন অ্যারন লেনন কিংবা জেমস মিলনার। লেফট উইং মিডফিল্ডারের দায়িত্ব পালন করবেন জো কোল। এবং সর্বশেষে একমাত্র ষ্ট্রাইকার হিসেবে থাকবেন ওয়েইন রুনি।
এই হচ্ছে আমার ভাবনা। অন্যান্য দলগুলো নিয়েও মাথায় চিন্তা খেলেছিলো। কিন্তু অতটা ভাবিনি, যতটা ভেবেছি ইংল্যান্ডকে নিয়ে।
যাকগে, মনের ভাব প্রকাশ করলাম। নিজেকে পণ্ডিত মনে করি না কখনো। তবে যা মনে আসে, তাই বলে ফেলি। আপনাদেরকেই এই অত্যাচারটা করলাম।
কেমন লাগলো, বলবেন আশা করি?
পোষ্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:১১