somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ একটা সত্য গল্পের বয়ান

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বিকেলে নামিরার সাথে দখা হবে। নামিরার সবচেয়ে বড় অভিযোগ আমি তাকে কখনো ফুল কিনে দিই না। দিই না ব্যপারটা একেবারে সেরকম না। যতবার ফুল কিনে দিই, নামিরা বলার পরে দিই। আগে থেকে কিনে নেয়ার কথা আমার মনে থাকে না। নামিরা বলে, নিজে থেকে কিনে না দিলে কোন ফুলের কোন মান থাকে না। এই নিয়ে ছোট বড় মাঝারি সব ধরনে ঝগড়া হয়ে গেছে। আমি আগের মতই আছি। যাচ্ছিলাম চেরাগী পাহাড় থেকে নিউমার্কেটের দিকে। নজরুল স্কোয়ার আসতেই মনে হল চেরাগী পাহাড়ের ওখান থেকে তো ফুল কিনতে পারতাম।

রাস্তা ফাঁকা শুক্রবার দুপুরের রাস্তা। জুম্মার নামাজের পর রাস্তা আরো বেশি ফাঁকা থাকে। সুতরাং ঘুরে গিয়ে ফুল কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ইউ টার্ন নেয়ার জন্য গাড়ি স্লো করেছি, কোত্থেকে এক লোক উদয় হয়ে বাঁ পাশের লুকিং গ্লাস টা কট করে ভেঙে নিল। গ্লাস চোরেরা গ্লাস ভাংগাকে মোটামুটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই নিয়ে তৃতীয় বার গাড়ির গ্লাস ভাঙল। আগের দুইবার ছিল অগোচরে। একবার নিউ মার্কেটে পাঁচ মিনিটের জন্য গাড়িটা রেখে ভেতরে গেছি আর আসছি, এসেই দেখি লুকিং গ্লাস টা নাই। পরের বার চকবাজারে। কিছুই করার নেই পকেটের গচ্ছা দেয়া ছাড়া। কিন্তু এইবার শালারে পাইছি সামনে। হার্ড ব্রেক কষে যখন নামলাম তখনো দেখি লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। এই ক্ষেত্রে সাধারনত যা হয় নিমিষেই তারা পগার পার হয়ে যায় ( পগার পার জিনিসটা কি তা অবশ্য আমি জানিনা)। এই রকম হাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমিও যেন কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে গেলাম। সে দৌড় দিলে আমিও পিছু পিছু দৌড় দিয়ে তাকে ধরতাম, কিন্তু যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাতে কি করি! নিজেকে সামলে নিয়ে কলার চেপে ধরে টেনে হিঁচড়ে এনে গাড়িতে ঢোকালাম। সে বেশ নির্বিকার। গাড়িতে ঢোকানোর সময় বা টেনে আনার সময় কোন বাধা দেয়নি। গাড়িতে এমন ভাবে বসল যেন তাকে আমি লিফট দিচ্ছি। লোকটার দিকে ভালকরে তাকালাম এবার। টেকো মাথা। ভদ্র চেহারা, নাকের আগায় একটা দাগ আছে। খোঁচা খোঁচা তিন চার দিনের দাঁড়ি। গায়ে ফতুয়া। বুকের বোতাম খোলা। কিন্তু তার ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয় নি।

বনিকে ফোন দিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি আমাদের বাসার গেটে আসতে, সাথে বিটুকেও নিয়ে আসতে হবে। আমাদের যাবতীয় কর্মকান্ডের অপারেশন মাস্টার বিটু। শুক্রবারের রাস্তা, সুতরাং নিমিষেই নিয়ে বাসার গেটে পৌঁছে গেলাম। বনি আর বিটু রেডিই ছিল, ‘ব্যাপার কি?’

সংক্ষেপে বললাম ব্যাপার কি? বিটু বলল, মামাকে ছাদে নিয়ে চল। কিন্তু লোকটা এখনো নির্বিকার। চেহারার দিকে তাকালে মনে হয় যে আমাদের কর্মকান্ডে সে বেশ মজা পাচ্ছে। বনি তাকে কলার চেপে ধরে টানতে টানতে গাড়ি থেকে নামাল। দুগালে ঠাস ঠাস কয়েকটা বসিয়ে দিল। আমি বললাম, এখন থাক। ছাদে নিয়ে চল।
বনি আর বিটুর পরিকল্পনা হল ছাদে মুখ বেঁধে আচ্ছা মত বানানো। এর আগেও এ ধরনের অপারেশন আমরা ছাদেই করেছি। আমরা বলতে আসলে বলি আর বিটুই। মারামারি করার মত অত বেশি সাহস আমার নেই। অপারেশন আসলে বনি আর বিটুর। তারা মারামারি করে ঈদের আনন্দ পায়। শিকার ধরে এনে দিয়েছি আমার কাজ শেষ। সত্যি বলতে আমি যে ধরে আনতে পেরেছি এটাই বেশ। ছাদের নেয়ার জন্য কোন জোরজারি করা লাগেনি। নিজের মত স্বচ্ছন্দে ছাদে উঠে গেল।
ছাদে এসে লোকটা লুকিং গ্লাসটা খাওয়া শুরু করল। আমরা যেভাবে বার্গার খাই ঠিক সেভাবে। খাওয়ার সময় মুড়ি খাওয়ার মত কুড়মুড় আওয়াজ হচ্ছিল। খাওয়া শেষে লোকটা বলল, একটু পানি খাওয়ান। গলায় আটকে গেছে মনে হয়। আপনারা যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন, নজর লাগছে কিনা কে জানে। বিটু মারবে কি, নিজেই গিয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে এল। পানি খেয়ে লোকটা বলল, বাথরুমে যাব। বাথরুমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ। আমি বাসায় বাথরুমে নিয়ে গেলাম। এতক্ষন পরে বনি বলল, জিনিস একখান। ওস্তাদ আদমি। কওয়া দরকার ফ্লাশ যাতে না করে। গ্লাস খাওয়ার পরে হাগামুতা কেমন হয় তা দেখা দরকার। তার কথাতে আমরা কেন জানি কেউই হাসলাম না।

এই দিকে নামিরা ফোন দিচ্ছে বারবার। আমি বের হলে সে রেডি হবে। বার বার শাসাচ্ছে দেরি করলে ফাইনাল বোঝাপোড়া হবে আজকে। বিটু আমাকে ধমক দিল, হারামজাদা এইসময় পিরীতি না করলে হয় না! কিন্তু বনির ওস্তাদ আদমির তো বাথরুম থেকে বের হওয়ার কোন নাম নাই। আমরা ডাকাডাকি করলাম, ধরজা ধাক্কা দিলাম। কোন সাড়া নাই। শেষে মিস্ত্রী ডেকে দরজা ভাঙলাম।

দরজা ভেঙে দেখি ভিতরে কেউ নাই। কেউ ছিল, সে চিহ্নও নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×