রাঙামাটি জেলার লংগদু থানার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা আটরকছড়া ইউনিয়নের উল্টাছড়ি নামক গ্রামের একটি ছোট্ট শিশু, মাত্র চতুর্থ শ্রেণীতে পডতো, সেই হিসেবে আমার সন্তানদের চেয়েও ছোট ক্লাসে পড়তো! কোন পত্রিকায় তার বয়স লিখেছে ৯, কোনটায় ১১।
ধর্ষকের নাম ইব্রাহীম এলাহী। আগেকার নাম কাঞ্চন কুমার বিশ্বাস। বাড়ি যশোর জেলায়, লংগদুর ইয়ারিংছড়া এলাকায় মুসলিম মেয়ে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। বয়স ৩০।
সুজাতা তার ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে একটু দূরে জঙ্গলে যায় তাদের গরু আনতে, তাকে দেখতে পেয়ে ইব্রাহীম জঙ্গলের ভিতরে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। না তাতেও ভোগ লিপ্সা মেটেনি, আরো কিছু পৈশাচিক আনন্দের বাকী ছিল তখনো। তাই ধর্ষণের পরে গলা কেটে, শরীরের নানা অংশে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে ছোট্ট মেয়েটিকে হত্যা করেছে।
চোখ বন্ধ করে চিত্রটা একবার দেখার চেষ্টা করলাম, আমার মেয়ের চেয়ে কম বয়সি একটা শিশুকে আমার কাছাকাছি বয়সী কেউ এতো নির্মম আচরন করলো... ঐ ছোট্ট মেয়েটির তখন কেমন লাগছিল?! শিউরে উঠেছি ভীষণভাবে, আতংকিত! আমার মেয়েটার যদি কখনো আল্লাহ না করুন এমন কিছু ঘটে আমি মা কি করবো তখন? পাগল হয়ে যাব তো মনে হয়!
এই শিশুটার বাবা-মার কেমন লাগছে?
ঘটনাটি ঘটেছিল এই মে মাসেরই ৯ তারিখে। ছোট ভাইটি পালিয়ে এসে গ্রামের মানুষদের খবর দিলে তারা ইব্রাহীমকে মাইনী এলাকা দিয়ে পলায়নরত অবস্থায় আটক করে। এরপর পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে সুজাতার লাশ উদ্ধার করে। ওই দিন লংগদু থানায় বাদবি ৩০২ ধারায় ইবওাহীম এলাহীকে আসামি করে (মামলা নং-১, তাং-০৯/০৫/১২) হয়।
এলাকার সবাই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সবাই নানারকম বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।
এই ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক ধর্ষনের অভিযোগ আছে।ইতিপূর্বে সে ২০১১ সালের ১৫ জুন লংগদুর ওই এলাকার আদিবাসী সাধন বিকাশ চাকমার মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী বিশাখা চাকমাকে (১২) ধর্ষণ করে বলে স্থানীয়রা জানায়। দেখা যাচ্ছে ঐ মেয়েটিও শিশু ছিল। তার মানে ইব্রাহীমের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তার নারীশিশুর প্রতি আলাদা আকর্ষণ আছে!
তখন নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। মামলায় ইব্রাহীমকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তি ছাড়াই সে মাস দেড়েক আগে জামিনে ছাড়া পায়।
আর জামিন পেয়েই বীরদর্পে আবারো ধর্ষণ এবং হত্যা করে। কেউ কেউ বলছেন এটা সে প্রতিশোধ নিতে করেছে। কিন্তু কার উপর ক্ষোভ, কার উপর প্রতিশোধ! ঐ ছোট্ট শিশুটিই তার প্রতিশোধ নেবার ক্ষেত্র?!
মাননীয় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইব্রাহীমকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেন। আজ ২১শে মে। এতোদিনে রিমান্ড শেষ হয়ে গেছে আশা করি। রিমান্ড থেকে কি তথ্য বেরিয়ে এলো তা আর জানা নেই। পত্রিকায় সেরকম কিছু চোখে পড়লো না।
ঘাতক ইব্রাহীম এলাহীর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে ১৩ই মে রোববার প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এক স্মারকলিপি প্রেরণ করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলার সভাপতি কনিকা বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক শিউলী চাঁপা চাকমা।
এদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখা এক স্মারকলিপিতে সুজাতা চাকমার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে।
লংগদুর মানুষেরা ইব্রাহীমের দ্রুতবিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে এখনো আন্দোলন করে যাচ্ছে।
আসুন আমরা সবাই তাদের এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করি এবং লংগদুবাসীর সাথে সাথে আমরাও ইব্রাহীমের দ্রুতবিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সূত্রসমূহ:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://bartalive24.com/details.php?id=7343
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১২ রাত ১২:৩৬