somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিংগাপুর রহস্য-২

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১/
আমার প্রথম সিংগাপুর রহস্যের কথা নিশ্চয়ই কারো মনে নেই। মনে থাকার কথাও না।

তবে মনে করতে চাইলে, এই লিংকে গিয়ে পড়ে আসা যেতে পাারে।

অবশ্য না পড়লেও কোন সমস্যা নাই।


২/
প্রথমবার সিংগাপুর যাবার প্রায় আড়াই বছর পর আবার সিংগাপুরে যাবার সুযোগ হল।

প্রথমবার যেইসব বিড়ম্বনার "শিকার" হয়েছিলাম, সেটা এড়াতেই এবার হাতে বেশ খানিকটা সময় রেখে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম। আমার গন্তব্য মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুর KLIA এয়ারপোর্টের LCCT টার্মিনাল। সেখান থেকেই আমি সিংগাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য উড়াল  দিব।


৩/
এবার কোন ঝামেলা ছাড়াই বেশ সকালে এয়ারপোর্টে পৌছালাম।

চেক-ইন আর ইমিগ্রেশান পার হলাম কোন সমস্যা ছাড়াই। চেক-ইন কাউন্টারে একটা বাড়তি ব্যাগ দিলাম। এজন্য বাড়তি কিছু টাকা পে করা লাগল। কিন্তু ভাব দেখিয়ে চেক-ইন কাউন্টারের মেয়েটিকে বললাম, "তোমরা কি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা নাও?"

কাউন্টারের মেয়েটা মিষ্টি হেসে বলল, "না স্যার, আমরা শুধু ক্যাশ টাকা নেই"।

আমিও মিষ্টি হেসে বললাম, "ডলার নাকি রিঙ্গিত ক্যাশ হিসাবে নাও?" 

মেয়েটা বলল, "দুইটাই নেই স্যার।" 

আমি মানিব্যাগ থেকে কিছু রিঙ্গিত বের করে টাকা পে করলাম। আমি অবশ্য এটাই চাচ্ছিলাম। কারণ মানিব্যাগটা "ডলার" দিয়ে যেভাবে ফুলে আছে তাতে মেয়েটা বুঝবে এই ছেলের যেমন ক্রেডিট কার্ড আছে, তেমনি মানিম্যাগে সেইরকম ক্যাশ টাকাও আছে। আবার এই ছেলে ডলারেও যেমন বিজনেস করতে পারে, তেমনি রিঙ্গিতেও সে স্মার্ট। আহা, না জানি সে কোন দেশের সাত সাগর তেরো নদী পার করে আসা এক স্মার্ট তরুণ! মেয়েরা এইসব খুব ভালো বুঝতে পারে, এইটা আমি বেশ ভালোই বুঝি। তাই নিজেকে খুব "হ্যান্ডসাম" আর "ম্যানলি' বলে মনে হচ্ছিল।

কিন্তু আমার যা কপাল!

এবারো ঝামেলা লাগল প্লেনে উঠার একটু আগেই।


৪/
প্লেনে উঠার আগে সবাইকে মেটাল ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে যেতে হয়। তাই আমাকেও মেটাল ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে যেতে হবে।

ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে যাবার জন্য প্রায় বিশজন মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। লাইনে দাঁড়িয়ে দেখলাম মেটাল ডিটেক্টরের পাশে ইমিগ্রেশন পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সবার উপর চরম তল্লাশী চালাচ্ছে।

এক ভারতীয়কে প্রায় দশবার মেটাল ডিটেক্টরের নীচ যেতে হল। সে যতবারই মেটাল ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে যায়, ততবারই মেশিনে "প্যাঁ-পুঁ" শব্দ করতে থাকে। সে তার পকেট থেকে মোবাইল, চাবি, পয়সা-পাতি সব বের করার পরেও মেশিনের "প্যাঁ-পুঁ" শব্দ আর থামেনা। অবশেষে সে যখন জুতা-মোজা সব খুলে মেশিনের নীচ দিয়ে গেল, তখন মেশিনটা শান্ত হল। পরে বোঝা গেল, সেই ভারতীয় তার জুতার সোলে পেরেক লাগিয়ে রেখেছিল, কারণ তার জুতার সোলটা নাকি খুলে আসছিলো।

এরপরে এক পাকিস্তানীকে তো প্রায় দিগম্বর করে ফেলা হল। কারণ, সেই একই। সে যতবারই মেশিনের নীচ দিয়ে যায়, ততবারই মেশিনে "প্যাঁ-পুঁ" শব্দ হতে থাকে। অবশেষে, ইমিগ্রেশন পুলিশের ছেলেটা তার জাঙ্গিয়ার ভিতর থেকে একটা ডলারের বান্ডিল বের করল। বান্ডিলের টাকাগুলো স্ট্যাপলারের পিন দিয়ে বাঁধা। আর টাকার বান্ডিলটি সেফটিপিন দিয়ে জাঙ্গিয়ার সাথে আটকানো। ডলারের বান্ডিল কেন জাঙ্গিয়ার ভিতরে রাখতে হবে, সেই প্রশ্নের উওরে সে ছিল নির্বাক।

যাইহোক আমি ভাবলাম, যেহেতু আমার চেহারা খুব সুন্দর ও কিউট সেহেতু ইমিগ্রেশন পুলিশের ছেলেটা আমাকে অতটা ঘাঁটাবেনা। তাছাড়া ঐ যে বললাম না, নিজেকে খুব "হ্যান্ডসাম" আর "ম্যানলি" লাগছিল। ভাবলাম, চেহারা সুন্দর ও কিউট আর সেইসাথে "হ্যান্ডসাম" ও "ম্যানলি" হবার কারণে ইমিগ্রেশন পুলিশের মেয়েটা আমাকে একটু "রগড়" দিতে পারে। ব্যাপার না। আমি এইসবে বেশ ভালোই অভ্যস্ত। সুন্দর চেহারা হবার কারণে তো এই জীবনে আর কম মেয়ের "রগড়" খাইনি! হায়রে ভালো চেহারার যে কেন এত জ্বালা, সেটা যার চেহারা আমার মতন সুন্দর ও কিউট না, সে ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা। যাইহোক, মেটাল ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে যাবার জন্য আমার পালা এসে গেল।

গেলাম মেটাল ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে। মেশিনটি আবার "প্যাঁ-পুঁ" শব্দ করা শুরু করে দিল। কাউন্টারে ইমিগ্রেশন পুলিশের ছেলেটা বলল, "মোবাইল, মানিব্যাগ, চাবি বের করে আবার মেটাল ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে আস"। সব বের করে আবার মেটাল ডিটেক্টরের নীচ দিয়ে গেলাম।

এবারো ডিটেক্টরটা "প্যাঁ-পুঁ" শব্দ শুরু করে দিল। এবার ইমিগ্রেশন পুলিশের মেয়েটা বলল "গলায় চেন অথবা অন্য কোথাও মেটাল থাকলে খুলে ফেল।"

আমি বললাম, "নাই"। সেইসাথে একটু রসিকতা করে এটাও বললাম "আমি জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করি, তাই আমার পুরা বডিটাই একটা মেটাল "লৌহদণ্ড"-এর মত শক্তপোক্ত। হয়ত আমার পুরা শরীরটাকেই একটা "লৌহদন্ড" ভেবে এই ডিটেক্টরটা "প্যাঁ প্যুঁ" শব্দ করতেছে। বুঝইতো এইসব, হে হে ...।"

মেয়েটা কিন্তু আমার রসিকতার "র"-ও বুঝলনা। বরং চোখ দুটো সরু করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, "তোমার বেল্ট খুল।"

এটা শুনে একটা ধাক্কার মত খেলাম।

আমার দিগম্বর হতেও সমস্যা নাই, কিন্তু বেল্ট খুলতে বিশেষ সমস্যা আছে।

কারণ, আমার বেল্টের যে অবস্থা, সেটা মিউজিয়ামে রাখার মত এক দর্শণীয় বস্তুতে রুপান্তরিত হয়েছে বহু আগেই। সেটা ছিঁড়ে-বিঁড়ে একেবারে ছারখার। কিন্তু সেটা নিয়ে আমাকে কখনো মাথা ঘামাতে হয় নাই। কারণ, আমি সবসময় শার্ট বা টি-শার্ট পড়ি প্যান্টের ভিতরে না গুঁজে। তাই কেউ কখনো আমার বেল্টের বেহাল দশ দেখতে পায়নি। আর আমিও কখনো বেল্টের এই করুণ দশা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। তাই কোনমতে থতমত খেয়ে মেয়েটাকে বললাম, "বেল্টটা না খুললে হয় না?"

মেয়েটা রাগত স্বরে বলল, "না হয় না। তোমাকে অবশ্যই বেল্ট খুলতে হবে। আমার সামনে দিয়ে চোরাচালানি হবে এটা কখনোই সম্ভব না।"

আমি মুখে বললাম, "ওকে ওকে", কিন্তু মনে মনে বললাম " হে ধরনী, তুমি দ্বিধা হও। আমি বেল্ট সহ তোমার ভিতর ঢুকে যাই।"

কিন্তু ধরণী দ্বিধা হলনা, কাউন্টারের মেয়েটারও মন গললনা। তাই আমাকে বেল্টটা খুলে একটা বাস্কেটে রাখতে হল।

বেল্টের বেহাল অবস্থা দেখে রাগত মেয়েটাও এবার হেসে দিল। হাসি চেপে বলল, "স্টুডেন্ট নাকি?"

রাগ করে গাল ফুলিয়ে বললাম, "হ্যাঁ"।

সে বলল, "আগে বলবানা এটা! নাও, এইবার এই দর্শণীয় বেল্টটা পড়ে ফেল। তোমার আর কিছু করা লাগবেনা।"

আমি অভিমান নিয়ে বললাম, "এই বেল্ট আমি আর পড়বনা। এটা ছিঁড়ে গেছে।"

"তাহলে আগে কেন পড়ছিলে?" মেয়েটা হেসে দিল। আমার মনের অবস্থা মেয়েটা ভালোই বুঝতে পারছে।

আমি খুব ভাব নিয়ে মেয়েটাকে দেখিয়ে বেল্টটা একটা বিনে ফেলে দিলাম। কেন বেল্টটা ফেলে দিলাম, সেটা আমি নিজেও জানিনা। আমার মাথা কখন কিভাবে কাজ করে, মাঝে মাঝে আমি নিজেও বুঝিনা। কিন্তু আমার প্যান্টটা ছিলো বেশ ঢিলা। বেল্ট ফেলে দেবার পরে বুঝলাম, আমাকে প্রতি তিরিশ সেকেন্ড পরপর প্যান্টটাকে টেনে জায়গামত তুলতে হবে। আর এইভাবে কোন "ইমার্জেন্সী সিচুয়েশনে" বেশিক্ষণ ভালোভাবে থাকা যাবেনা এটা বুঝতে আমার দশ সেকেন্ডও সময় লাগলনা।

ঠিক করলাম, সিংগাপুর গিয়েই প্রথমে একটা ভালো বেল্ট কিনব।


৪/
প্লেনে উঠে একটা ধাক্কা খেলাম। পুরা প্লেনে শুটকি মাছের গন্ধ। এয়ার হোস্টেস আর কেবিন ক্রুরা কিছুক্ষণ পরপর এয়ার ফ্রেশনার দিয়ে শুটকি মাছের গন্ধ ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করছে।

জানালার পাশে সিট পেলাম। তাই আকাশের বেশ কিছু ছবি তোলা হল।


মালয়শিয়ার আকাশ


৫/ 
প্লেন কোন ঝামেলা ছাড়াই সকাল দশটার দিকে সিংগাপুরে ল্যান্ড করল।


চাঙ্গি এয়ারপোর্ট, সিংগাপুর


সিংগাপুরে ইমিগ্রেশান পার হলাম মাত্র ষাট সেকেন্ডের মধ্য। কিন্তু সমসময় প্যান্ট হাত দিয়ে টেনে উপরে তুলতে হচ্ছে। কোনমতে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে চাঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই বেল্ট কেনার জন্য দোকান খোঁজা শুরু করলাম। পেয়েও গেলাম একটা দোকান। দোকানের মালিক এক পাকিস্তানি মহিলা। সেই মহিলাটি আমাকে অনেকগুলা বেল্ট দেখালো। একটা বেল্ট পছন্দ করে দাম জিজ্ঞেস করাতে সে বলল "সাঁইত্রিশ ডলার"।

আমি বললাম "দিয়ে দাও একখান।"

আমার কোমরের মাপ নেয়ার সময় মহিলা জিজ্ঞেস করল, "কি করা হয়?"

বললাম, "ছাত্র।"

মহিলা বলল, "আমি ভদ্র মানুষের সাথে ভদ্র ব্যবহার করি। তুমি যেহেতু কোন দরদাম করো নাই, তাই তুমি ভদ্র। তোমার বিশ ডলার দিলেই চলবে।"

এই প্রথম আমার খটকা লাগল। মানে, এখানেও দরাদরি চলে নাকি? মহিলা নিজে থেকেই প্রায় সতেরো ডলার দাম কমাচ্ছে এর মানে এই বেল্টের দাম আরো অনেক কম। পুরাই মেজাজ খারাপ অবস্থা। কোনমতে মহিলাকে পয়সা দিয়ে বেল্ট হাতে নিয়েই বের হয়ে পড়লাম।

এবার গন্তব্য হোটেল খোঁজা।


৬/
প্রথমেই ঠিক করলাম আমার যেইখানে ট্রেনিং তার আশেপাশেই কোন হোটেলে থাকব। সেইমত MRT-তে চেপে রওয়ানাও দিলাম। গন্তব্য চাইনিজ গার্ডেন।

চাইনিজ গার্ডেন জায়গাটি বাগানের মতই সুন্দর। একটা ছোট্ট শহরের ছাপ আছে জায়গাটিতে। কিন্তু অনেক খুঁজেও সেখানে কোন হোটেল পেলাম না। কিন্তু দুই বাংলাদেশির দেখা পেলাম। তারা জানালো এই এলাকা পুরাই আবাসিক। তাই সেখানে কোন হোটেল নেই। তারা আমাকে মুস্তফা নামে একটা জায়গার কথা বলল যেটা কিনা মূলত সিংগাপুরে বাংলাদেশিদের আস্তানা।


চাইনিজ গার্ডেন


৬/
মুস্তফাতে গিয়ে চোখ পুরাই চড়কগাছে।

MRT স্টেশন থেকে বের হওয়া মাত্রই সামনে দিয়ে একটা লরি হুশ করে চলে গেল। পুরা লরিতে একটা মডেলের ছবি আঁকা। তিনি আর কেউ নন, আমাদের বাংলাদেশের চিত্র নায়িকা মৌসুমি। আরেকটু সামনে এগুতেই চোখে পড়ল, অগ্রণী ব্যাংক, অবকাশ রেস্টুরেন্ট, মোহাম্মাদী রেস্টুরেন্ট, ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্ট, দেশী সেলুন আরো যত হাবিজাবি। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আমি সিংগাপুরে না, ঢাকার মগবাজারে অবস্থান করছি।

মুস্তফাতে অবকাশ রেস্টুরেন্টের আরেকটু সামনে এগুতেই অসম্ভব রকমের ছোট হাফপ্যান্ট পরা এক চাইনিজ তরুণী আমার হাতে একটা লিফলেট ধরিয়ে দিল। লিফলেটে পরিস্কার বাংলাতে লিখাঃ
অর্শ্ব, পাইলস, গেজ
নিজের যৌবণ নিয়ে বিব্রত। 
ব্লা ব্লা ব্লা ...  ব্লা ব্লা ব্লা ... ব্লা ব্লা ব্লা ... 
ডাক্তারের নাম ও ঠিকানা
(নামটা আবার চাইনিজ)

এই কাগজের একটা কপি আমার কাছে ছিলো। কিন্তু কাগজটা পরে হারিয়ে গেছে।


মুস্তফাতে ঘুরাঘুরি


মুস্তফার পথে পথে


৭/
যাইহোক, মুস্তফাতে একটা হোটেল পেয়ে কোনমতে ঢুকে পড়লাম। তখন সময় গড়িয়ে প্রায় দুপুর হয়ে গেছে।

রিশিপশানে দেখি একটা তামিল ছেলে একটা চাইনিজ মেয়েকে নিয়ে হোটেলে চেক-ইন করছে। কাউণ্টারের মহিলাটি ওদের জিজ্ঞেস করছে, "কতক্ষণের জন্য রুম চাই।"

চাইনিজ মেয়েটি উওর দিল "তিন ঘন্টা"। এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে আমার মাথাতে ঢুকলনা কেন ওদের তিন ঘণ্টার জন্য রুম লাগবে।

আমি হোটেলের পাওনা একদিনের জন্য মিটিয়ে রুমে ঢুকলাম। এবং রুমে ঢুকেই বিশেষভাবে টাশকিত হইলাম। অসম্ভব ছোট একটা রুম। এত ছোট রুম আমি জীবনেও দেখি নাই। রুমে কোন জানালা নাই, রুম সার্ভিসেরও কোন বালাই নাই। বিছানার চাদরের অবস্থা লন্ডভন্ড। তারচেয়ে বড় কথা, রুমে বিশ্রী একটা গন্ধ। দরজা খুলে একটা ক্লিনারকে ডেকে বললাম, রুম পরিস্কার করে দাও। সে উল্টা আমাকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি এই রুমে সারা রাত থাকবে?"

এইবার আমার মাথাতে একটা রহস্য টোকা দিয়ে গেল। বললাম, "হ্যাঁ, আমি সারা রাত থাকব।"

এটা বলার পর সেই ক্লিনার কোনমতে নামকাওয়াস্তে রুমটা একটু ঝাঁড়পুছ করে চলে গেল। খুব ক্লান্ত ছিলাম, তাই মাথাটাও খুব ঘুরছিল। কোনমতে গোসল করেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

একটু তন্দ্রামত আসার পরেই শুনতে পেলাম রুমের বাহিরে একটা লাউড স্পিকারে হোটেল কর্তৃপক্ষ ঘোষনা দিচ্ছে, "মিস্টার এন্ড্রু, তোমার সময় শেষ হয়েছে। তুমি দয়া করে রুম থেকে বের হয়ে এসো। আমি আবারো বলছি, মিস্টার এন্ড্রু তুমি দয়া করে রুম থেকে বের হয়ে এসো।"

মেজাজ খুবই খারাপ হল এমন ফালতু একটা হোটেলে উঠার কারণে।

আরো বেশি মেজাজ খারাপ হবার আগেই জুতা মোজা পরে বের হলাম নতুন হোটেলের খোঁজে। তবে ঠিক করলাম, এই এলাকাতে আর নয়। চলে এলাম অরচার্ড রোডে।

এখানে পেয়েও গেলাম একটা ভালো হোটেল। এই হোটেলের রুমে কোন গন্ধ নেই। রয়েছে প্রশস্ত ওয়াশরুম, যেটা কিনা আগের হোটেলের রুমের চেয়েও দুই গুণ বড়। বেশি টাকা খরচ হলেও শান্তি।


৮/
আমার যেখানে ট্রেনিং সেই জায়গাটির নাম ইন্টারন্যাশনাল পার্ক। জুরং MRT স্টেশন থেকে হাঁটা দুরত্বে জায়গাটি অবস্থিত। ইন্টারন্যাশনাল পার্ক জায়গাটি ছবির মতই সুন্দর।

আর ট্রেনিংটা ছিলো খুব গোছানো। খানাপিনাও ছিলো খুব উন্নত মানের। সময়টি বেশ ভালো কেটে গেল সেখানে।


ইন্টারন্যাশনাল পার্ক, জুরং


৯/
দেখতে দেখতে আমার সিংগাপুর ছাড়ার সময় হয়ে গেল।

নির্ধারিত দিনে সঠিক সময়ে চাঙ্গি এয়ারপোর্টে পৌছেও গেলাম। আমার ফ্লাইট যেহেতু রাত একটায় সেহেতু হাতে একটু সময় রেখে সন্ধ্যার পর পর এয়ারপোর্টে পৌছালাম। এবার হ্যান্ড ব্যাগ চেক-ইন করার সময় কাউন্টারের ছেলেটা বলল, "ব্যাগে কি কোন লিকুইড আছে?"

আমি জানি আমার হ্যান্ড ব্যাগে একটা লোশন আর দুইটা বডি স্প্রের বোতল আছে। মালয়শিয়া থেকে আসার সময়ও এই দুইটা জিনিস ব্যাগে ছিল। কিন্তু মালয়শিয়ার এয়ারপোর্ট আমার বেল্ট নিয়ে মাথা ঘামালেও ব্যাগের লিকুইড নিয়ে মাথা ঘামায় নাই। সেই ভরসাতেই বললাম, "নাই"। যদিও জানি যে ১৫০ ml এর বেশি লিকুইড হ্যান্ড ব্যাগে বহন করা নিষিদ্ধ। কাউণ্টারের ছেলেটা বলল, "কিন্তু আমি তো স্ক্রিনে লিকুইড দেখতে পাচ্ছি। তুমি ব্যাগ খোল।"

কি আর করা। ব্যাগ খুললাম। ব্যাগ থেকে লোশনটা বের করে বললাম, "ও মাই গড। এটা এখানে কিভাবে আসল? নির্ঘাত আমার বউ এটা করছে।" যদিও তখন আমার বউ ছিলো না। তারপরে বললাম, "আমি খুবই দুঃখিত।"

কাউন্টারের ছেলেটা বলল, "ব্যাপার না। আর কিছু নাই তো।"

বললাম, "নাই।"

ছেলেটা বলল, "আমি কিন্তু আরো দুইটা বোতল দেখতে পাচ্ছি। বের করো ওইগুলা।"

কি আর করা। বডি স্প্রে গুলো বের করে আবার আকাশ থেকে পড়লাম, বললাম "ও মাই গড। কে ঢুকালো এইগুলা? নির্ঘাত আমার বউ করছে।"

ছেলেটা বলল, "ব্যাপার না। তুমি কি কর?"

বললাম, "ছাত্র।"

"বাংলাদেশি ছেলেরা আবার ছাত্রও হয়। আমি জানতাম না। আমি তো ভাবতাম সবাই ওয়ার্কার।" ছেলেটা বলে।

আমি বললাম, "বাংলাদেশি ছেলেরা নোবেল প্রাইজও পায়। নাসা, গুগোল, মাইক্রোসফটে কাজ করে। বাংলাদেশের ছেলেরা বিশ্বকাপ খেলে। কিন্তু তুমি এইসব জানো না। কারণ, তুমি বাংলাদেশের সেইসব ছেলেদের নিয়ে কাজ করোনা। তুমি কাজ কর খালি বাংলাদেশের ওয়ার্কার নিয়ে। তাই তুমি খালি বাংলাদেশের ওয়ার্কারই চিনো। আর তোমাদের সিংগাপুর এত ঐশ্বর্য নিয়েও তো কোনদিন একটা নোবেল প্রাইজ পেলনা, একটা বিশ্বকাপও খেলতে পারলনা।"

ছেলেটা আমার কথা শুনে হেসে দিল, সেই সাথে আমিও।


১০/
মধ্যরাত পার হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। প্লেনে বোর্ডিং-এর জন্য লাউঞ্জে বসে ছিলাম। সেইখানে Hot Chick মুভিটা দেখাচ্ছিল। খুবই স্থুল রসিকতার মুভি। মুভি দেখতে দেখতে একটা ছেলের দিকে চোখ গেলো। অসম্ভব সুন্দর এক শ্বেতাংগ যুবক। ওর কোলে মাথা দিয়ে কাঁদছে একজন।

সেই একজন হল আফ্রিকান এক কালো যুবক।

অদূরে কয়েকটা মালয়শিয়ান লেডিবয়, আর তাদের কিছু ছেলে-মেয়ে বন্ধু-বান্ধব বসে আছে। ওরা সবাই কার্পেটের উপর বসে একটা গোল চক্র তৈরী করছে। লেডিবয়গুলো চক্রের মাঝে বসে ওদেরকে নাচের বিভিন্ন মুদ্রা দেখাছে। এইটাও খুব স্থূল রসিকতা।

ভাবলাম, এইটাই জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:০৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×