somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা গল্প

০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের দিনটা অনেক সুন্দর।

সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গার পরই এ কথাটা মনে হল আমার। চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম এরকম মনে হওয়ার কারণ কি। কোন কারন খুঁজে পেলাম না। দিনটা অন্য সব দিনের মতই মনে হল আমার। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। মোটামুটি সাড়ে ছটা/ সাতটা বাজে। ঢাকা শহর সবেমাত্র তার কর্মব্যস্ত রূপ ধারণ করতে শুরু করেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষে গিজগিজ করতে শুরু করবে রাস্তাগুলো।প্রতিদিন এ সময়েই আমার ঘুম ভাঙ্গে। আজকের একমাত্র ব্যতিক্রম আমার মন বলছে আজকের দিনটা অনেক সুন্দর।

উঠে পড়লাম। হিসেব অনুযায়ী বাবার এখন বাথ্রুমে থাকার কথা। বের হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়তে হবে। বেকার যুবকের বাবারা সবসময়ই তাদের ছেলেদের খোঁচা ও উপদেশ দিতে পছন্দ করেন। সকাল সকাল খোঁচা ব উপদেশ কোনটাই শোনার ইচ্ছা আমার নেই। সুতরাং বেরিয়ে পড়া, বাবা অফিসে গেলে আবার বাসায় ফিরে আসলেই হবে।

বাসা থেকে একটু দূরে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। দোকানী আমাকে চিনে, দেখেই চা বানাতে শুরু করল। একটা সিগারেটও এগিয়ে দিল।

সিগারেট ধরিয়ে রাস্তার দিকে তাকালাম। কত কর্মব্যস্ত মানুষ! প্রথম প্রথম এদের দেখে হালকা মন খারাপ হত। এখন ব্যাপারটা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।

"মামা, চা নেন।"

দোকানীর ছেলে চা এগিয়ে দিল। নিলাম। হঠাৎ মনে হল আমি পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যার কোন কাজ নেই। এই এতটুকু বাচ্চা ছেলেরও কাজ আছে। বাবা আর ছেলে মিলে দোকান দিয়ে বসেছে। দোকানে দিনে ব্যবসা করে, রাতে ঘুমায়। কত সুন্দর জীবনযাত্রা। সিদ্ধান্ত নিলাম, যা করেই হোক, এ কর্মব্যস্ত মানবগোষ্ঠীর অংশ আমার হতেই হবে।

বেলা হয়ে এসেছে। এখন বাসায় যাওয়া যায়। বাসায় গিয়েই খবরের কাগজ খুলে বসলাম। অনেকদিন পর আবার অনেক উৎসাহে চাকরীর খবর পড়তে লাগলাম। পড়াই সার হল। আমার যোগ্য চাকরী একটাও নেই। বা বলা উচিৎ, আমি একটা চাকরীরও যোগ্য নই। হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

আমার ঘুম ভাঙ্গল দুপুরবেলা। দেখি মা চিৎকার করছে।

খাওয়া নাই, দাওয়া নাই খালি ঘুম। আমার ঘরে এসব চলবে না।

ঘর ছেড়ে চলে যেতে বললেই তো চলে যাই।

বাহ! আবার মুখের ওপর কথা? এতই যখন মুরোদ তখন একটা চাকরী পাওয়া যায় না কেন?

ভাববাচ্যের কথাবার্তা আমার খুবই অসহ্য। উঠে বাথ্রুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলাম। শাওয়ারের শব্দে মায়ের আর কথাগুলো চাপা পড়ে গেল। বের হয়ে দেখি মা নামায পড়ছে। মায়ের নামায খুবই দীর্ঘ হয়, এই ফাঁকে আমি দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। সেরে নিয়েই আবার ঘুম। এবার ঘরের দরজা লাগিয়ে। যাতে কেউ বিরক্ত করতে না পারে।

ঘুম ভাঙ্গল সন্ধ্যায়। ঘড়ি দেখলাম। সাড়ে সাতটা বাজে। একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা যেতে পারে। লেকের পাড়ে এসময় বেকারদের একটা দল আড্ডা দেয়। ওখানেই যাত্রা স্থির করলাম।

সাড়ে দশটা পর্যন্ত ওখানেই কাটালাম। প্রথমে কিছুক্ষণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওইয়া মেয়েদের দেহের অবয়ব নিয়ে আলোচনা চলল, এরপর আলোচনা চলে গেল একজনের বাসার জানালা দিয়ে অন্যের বাসার বেডরুমে রাতে কি দেখা যায় তার দিকে। এসব আলোচনা যে আমার খুব ভালো লাগত তা নয়, কিন্তু এখানে আড্ডা দিয়ে আমি মনের মাঝে একরকম জোর খুঁজে পেতাম। আমি একা নই, আমার মত আরো অনেকে আছে।

বাসায় ফিরতে গিয়ে দেখি পকেট খালি। অগত্যা হেঁটেই যাত্রা শুরু করলাম। এসময় আবার এদিকটা বেশ নির্জন থাকে। হঠাৎ আমারই বয়সী কয়েকজনামাকে ঘিরে ধরল। বুঝলাম কি হতে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে লেতাগোছের একজন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

বাসায় যাচ্ছি।

তা ভাই এ রাস্তা দিয়ে যাবেন আর আমাদের ট্যাক্স দিবে না, তা কি হয়?

হয় না?

আমার তো মনে হয় হয়না। ক্যাশপাত্তি বাইর করেন।

ক্যাশপাত্তি তো কিছুই নাই।

মোবাইল? মোবাইল আছে না?

ছিল, কিছুদিন আগে আপ্নাদেরই কিছু জ্ঞাতিভাই তা নেই করে দিয়েছে।

ঠাশশ শব্দের প্রচণ্ড এক চড়ে আমার মাথা ঘুরিয়ে উঠল। নেতা বলল, মার শালারে। এরপর কিল চড় লাথি ঘুষির বৃষ্টি শুরু হল আমার ওপর। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলাম।

দলটা চলে যাওয়ার পরও দশ্মিনিট আমি মাটিতেই পড়ে থাকলাম। এরপর অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম। মুখের ভিতর কোন একজায়গায় কেটে গিয়েছে। রক্তের নোনতা স্বাদ লাগছে। কানের কাছে হাত দিয়ে দেখি ওখানেও কেটেছে। রক্ত লেগে আছে। ওই অবস্থাতেই বাসার দিকে হাঁটতে থাকলাম। আগে বাসায় যাওয়া, তারপর অন্য কাজ।

বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি এসময় পিছন থেকে একটা ডাক শুনে থমকে দাঁড়ালাম।

মামা কই যান?

দেখি সকালের সেই বাচ্চা ছেলেটা।

বাসায় যাচ্ছি।

মামার অবস্থাতো খারাপ। সারা শইল্যে রক্ত। আপ্নে একটু বসেন। ধুইয়া দেই। আমার লগে পানি আছে।

বসলাম। ছেলেটা যত্নের সাথে আমার ক্ষত মুছতে থাকল। আমার মনে হল, ছেলেটার মন কত সুন্দর। মানুষের জন্য কত মমতা। তারপরেই মনে হল, এ সুন্দর মন আসুন্দর মানুষদের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়ে যাবে। বেশিদিন লাগবে না।

হঠাৎ আমার ভিতর কি জানি একটা হয়ে গেল। আমার মনে হল আমি আমার কাজ খুঁজে পেয়েছি। এ ছেলেটার সুন্দর মনকে আমি কলূষিত হতে দেব না, কিছুতেই না।

অনেক কষ্ট করেছিস, একটু জিরিয়ে নে।

ছেলেটা আমার পাশে বসে পড়ল।

দেখতো ওদিকে আলোর মত কি দেখা যায়?

কই মামা আমিতো কিছুই দেহি না।

ভালো করে দেখ, দেখতে পাবি। আশার আলো।

ছেলেটা অধীর আগ্রহে একচিলতে আশার আলোর খোঁজে তাকিয়ে থাকল। আমার সমস্ত দেহে তখন অদ্ভুত একটা শিহরণ। পাশ থেকে একটা বড় ইট তুলে নিলাম। ছেলেটা তখনও তাকিয়ে আছে। সজোরে ইট দিয়ে ছেলেটার মাথায় আঘাত করলাম। অস্ফুট একটা শব্দ করে ছেলেটা মাটিতে পড়ে গেল। মাথা ফেটে গেছে। রক্ত পড়ছে। নাড়ি দেখলাম। মারা গেছে ছেলেটা।

অবর্ণনীয় আনন্দে মনটা ভরে গেল আমার। একটা সুন্দর মঙ্কে কলূষিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছি আমি। ইটটাকে ছুড়ে নর্দমায় ফেলে দিলাম। চলে যাব, এস্ময় মনে হল এই মহান কাজের একটা স্মৃতিচিহ্ন নিজের কাছে রাখা দরকার। রাস্তায় একটু খুঁজতেই একটা ময়লা ব্লেড পেলাম। সেটা দিয়ে ছেলেটার একটা চোখ উপড়ে ফেললাম। একটু কষ্ট হল, কিন্তু চোখটা আক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা গেল। রাস্তা থেকে একটা কাগজ তুলে চোখটা মুড়িয়ে নিলাম। ব্লেডটা পকেটে রাখলাম। এরপর বাসার দিকে হাঁটা দিলাম। একটু আগের মার খাওয়ার কোন অনুভূতিই নেই মনে। শুধু অনাবিল প্রশান্তি।

বাসায় ঢুকে কেউ লক্ষ্য করার আগেই একটা প্লাস্টিকের গ্লাসে পানি ভরে নিজের ঘরে ঢুকলাম। হাত থেকে চোখটা নিয়ে গ্লাসে রাখলাম। গ্লাসটাকে আমার আলমারীর এককোণে রেখে তালা লাগিয়ে দিলাম।

ঘর থেকে বের হতেই মার সাথে দেখ। মা সম্ভবত আমাকে কিছু কড়া কথা শোনাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, আমার অবস্থা দেখে দমে গেলেন।

ছিনতাইকারীর হাতে পড়েছিলাম, কিছু না পেয়ে মার দিয়েছে।

গোসল করে নে, স্যাভলন লাগিয়ে দিব।

স্যাভলন আমার ঘরে রেখে দাও। আমি লাগিয়ে নিব।

অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলাম।গোসলের পর ক্ষতগুলোতে যত্ন করে স্যাভ্লন লাগালাম। এরপর পেটপুরে ভাত খেলাম। ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও মনের মধ্যে সেই শান্তির ভাবটা রয়ে গেছে। আমি আর বেকার নই। একটা মহান কাজের দায়িত্ব নিয়েছি আমি। কোন নিষ্পাপ মনকে আমি কলূষিত হতে দেব না। কিছুতেই না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×