somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাকরি দেওয়ার ছলে বানাত ক্রীতদাস’মালয়েশিয়ায় ক্যাসিনো খুলে থেকে মানুষ পাচারের ব্যবসা কবীরের!

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরেও সোমবার সকালে দুঃস্বপ্নের রেশ যেন কাটছিল না হুগলির পাণ্ডুয়ার যুবক সঞ্জয় মল্লিকের। মালয়েশিয়ার কুচিং বিমানবন্দর থেকে বিমান ছাড়ার আগে পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে ফিরবেন বলে ভরসা পাচ্ছিলেন না তিনি।
বেশি টাকা রোজগারের আশায় মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেখান থেকে বেশি টাকার বদলে ফিরলেন শিউরে ওঠা এক অভিজ্ঞতা নিয়ে
এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ম্যানপাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থাকে প্রায় ৯০ হাজার টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশের কুচিংয়ে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতে যান তিনি। এ দিন তিনি বলেন, “বিমানবন্দরে নামার পরেই পাসপোর্ট হাতে ধরিয়ে আমাদের ছবি তোলা হয়। একে তো ভাষা বুঝতে পারতাম না। তার পর আমাদের কাছে কোনও নথিপত্রও ছিল না। পুলিশ বিদেশি বলে ধরে নিয়ে যেতে পারেঞ্জয়ের কথায়, “মালয়েশিয়ার মুদ্রায় প্রতিদিন ৯০ রিঙ্গিত দিত ওরা। ভারতীয় টাকায় প্রায় ১৬০০ টাকা। কিন্তু টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবীরের লোকজন অর্ধেক টাকা কেড়ে নিত
তবে ওই পাচারকারীরা ফেরার। সঞ্জয়ের দাবি, কবীর হোসেন দুবাইতে পালিয়ে গিয়েছে। ওখানেই রয়েছে গোটা পাচার চক্রের মাথা। কবীরের এ রাজ্যে ব্যবসা সামলায় তাঁর শ্যালক। মালয়েশিয়াতেই তাঁর ক্যাসিনো ব্যবসা।
বিবার সন্ধে থেকে ফোনে দফায় দফায় হুমকি ও পাল্টা হুমকি চলে কলকাতা ও মালয়েশিয়ার মধ্যে। একদিকে ন্যাশনাল অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং কমিটির (এনএটিসি) ন্যাশনাল চেয়ারম্যান শেখ জিন্নার আলি, অন্য দিকে একঝাঁক বাঙালি তরুণকে মধ্যযুগীয় দাসদের মতো ব্যবহার করা এক চিনা ব্যবসায়ী। শেেষ স্নায়ুর যুদ্ধে পরাজিত চিনা প্রৌঢ় পান্ডুয়ার সঞ্জয় মল্লিককে পৌঁছে দিতে বাধ্য হন বিমানবন্দরে। দমদমে নামার কিছু পরেই সঞ্জয় ‘এই সময়’-কে শোনালেন আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ার কাহিনি
কর্মী নই, ক্রীতদাস
বনগাঁর কাছের ‘রোহন ইন্টারন্যাশনাল’ নামে সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম যখন, তখন শুনেছিলাম মালয়েশিয়ার স্কাইমাস্টার নামের সংস্থার কাজ করতে পাঠানো হচ্ছে আমাদের। গিয়ে দেখলাম, ওই সংস্থার অফিস কুয়ালালামপুরে। আমাদের কাজ করানো হল কুচিং নামের একটা শহরে। কিছুদিন পর গোটা ব্যাপারটা পরিষ্কার হল। কলকাতা থেকে আমাদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার ব্যবসায়ীদের বিক্রি করে দিয়েছে রোহান ইন্টারন্যাশনালের মালিক কবির হোসেন মণ্ডল। যে কিনেছে আমাদের, সে আর এক জনকে বেচে দিল। এই মালিক নিজের মতো কাজ করাবে। পছন্দ না হলে এ আবার বেচে দেবে অন্য কারও কাছে। এ ভাবেই চলতে থাকবে।
নাম নয়, শুধুই নম্বর
ওখানে আমার মতো যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কোনও নাম নেই। প্রথম দিন সবাইকে এক একটা হেলমেট আর সেফটি জ্যাকেট দেওয়া হল। তাতে যে নম্বর লেখা রয়েছে সেটাই আমার পরিচয়। আমি ৬০ নম্বরের হেলমেট আর জ্যাকেট পেয়েছিলাম। সেই থেকে ওখানে আমাকে ‘নাম্বার-সিক্সটি’ বা শুধুই ‘সিক্সটি’ বলে ডাকা হত। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা খাটাত ওরা। ৩৬টা লোহার রড, প্রতিটার ওজন ৭০ কিলোগ্রাম করে। এক ঘণ্টার মধ্যে তুলতে হবে নির্মীয়মাণ বহুতলে। কাজ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝলাম এটা অসম্ভব। দাঁড়াতে পারছিলাম না। হঠাৎ পিঠে এসে পড়ল হেলমেটের বাড়ি। ঘুরে দাঁড়াতেই লাথি। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে ওভারশিয়ার বলে উঠল, ‘ব্লাডি --
বেচাল দেখলেই ...
একদিন থাকতে না পেরে বলেই ফেললাম, ‘ফিরে যেতে চাই।’ এর পর থেকেই ওদের আচরণ বদলে গেল। যে ঘরে আমাদের বন্ধ করে রাখা হত, সেই ঘরের জানলা দিয়ে কিংবা আসতে যেতে আমাদের ‘পাহারাদাররা’ বিশেষ ইঙ্গিত করতে শুরু করল। গলার আড়াআড়ি হাত চালিয়ে নলি কেটে দেওয়ার ইঙ্গিত।
চিকিৎসা নেই, শয্যাশায়ী বহু
বহুতলে কাজ করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল বনগাঁর জুলফিকর। ক্রমাগত পাথর ভাঙা ড্রিল মেশিন চালিয়ে অসহ্য কোমরের যন্ত্রণায় ভুগছে বলাগড়ের অমিত বিশ্বাস। আমারও সারা গায়ে র৵াশ। তবে আমাদের চিকিৎসা করিয়ে ‘অনর্থক’ খরচ করতে চায় না ওরা।
বেচে দিত ইন্দোনেশিয়ায়
একদিন গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হল এক জায়গায়। যেখানে থাকতাম সেখান থেকে অনেকটা দূর। দেখলাম সমুদ্রের ধারে একটা ছোট শহরে এসেছি। কিছুটা দূরে একটা দ্বীপ। জঙ্গলে ঢাকা। বলা হল, ওই দ্বীপটা ইন্দোনেশিয়ার অংশ। শুনলাম, আমাকে ইন্দোনেশিয়ার এক কন্ট্রাক্টরের কাছে বেচে দেওয়ার কথা হচ্ছে। স্থানীয় একজন বলল, ঘোর জঙ্গলে কেবল লাইন পাতার কাজ। বুঝলাম, একবার মালয়েশিয়া থেকে বেরোলে আর দেশে ফিরতে হবে না। তখনই একজন ন্যাশনাল অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং কমিটির কথা বলল। ভিডিয়ো ক্লিপিংসে নিজেদের দশার কথা জানালাম এনএটিসি-কে।
ওই দু’ঘণ্টা জীবনে ভুলব না
এনএটিসি-কে আমাদের অবস্থার কথা জানিয়ে যে ভিডিয়ো পাঠিয়েছিলাম, সেটা যে কলকাতার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে সেটা জানতাম না। কিন্তু, এনএটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। রবিবার সন্ধেয় হঠাৎ আমাদের ঘরে ঢুকল আমাদের কন্ট্রাক্টর। সংবাদমাধমে কেন খবর বেরিয়ে তা জানতে চেয়ে মারধর শুরু করল। সেই সময় আমিও কলকাতায় এনএটিসি-র চেয়ারম্যান শেখ জিন্নার আলিকে ফোন করলাম। ওদের মতলব ছিল আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু, অন্য দিকে জিন্নার আলি ক্রমাগত ওই চিনা কন্ট্রাক্টরকে হুমকি দিচ্ছিলেন আমাকে বিমানবন্দরে বা ভারতীয় দূতাবাসে পৌঁছে না দিলে ভারত সরকার ময়দানে নামবে।
জিন্নার এবং আরও কয়েকটি সংস্থা মালয়েশীয় পুলিশ এবং ভারতীয় দূতাবাসকে সমস্ত ঘটনা জানান। সঞ্জয় বলেন, “রবিবার বিকেলে ওরা আমাকে শ্রমিকদের ব্যারাক থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে আনে। আমি প্রথমে যেতে চাইনি। কারণ আমাদের তিনটি ছেলে অক্টোবর মাস থেকে নিখোঁজ। আমাদের সন্দেহ, ওরা ওই তিনজনকে খুন করে দেহ গুম করে দিয়েছে।” তাঁর দাবি, পুলিশের ভয়ে ওরা তাঁকে বিমানবন্দরে ছেড়ে দিয়ে যায়। জিন্নার তাঁকে টিকিট পাঠালে সোমবার তিনি ফিরে আসেন। সঞ্জয়ের দাবি, এখনও অনেকে একই ভাবে
রোহন ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্য
কর্মী বাবু মণ্ডল বলেন, ‘আমরা বাইরে পাঠানোর সময় জানিয়ে দিই, তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ফিরতে গেলে জরিমানা-বাবদ কিছু অর্থ দিয়ে ফিরতে হবে। অনেকেই তা-ই করেন। কোনও কন্ট্রাক্টর মারধর করেছেন কি না, সেটা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব। আগে কেউ এমন অভিযোগ করেননি।’
এনএটিসি যা বলছে
সংস্থার ন্যাশনাল চেয়ারম্যান শেখ জিন্নার আলি বলেছেন, ‘মালয়েশিয়ার যে র৵াকেটের কথা আমরা জেনেছি, ওই র৵াকেটের মাথা সিম নামে এক চিনা ব্যবসায়ী। সে ফ্রান্সিস ও মাইকেল নামে দুই সহযোগীর সঙ্গে ভারতীয় শ্রমিক কিনে নিজের কাজে লাগায়। অন্য কোনও ব্যবসায়ীর কাছে বেচেও দেয়। আমরা এখনও পর্যন্ত জেনেছি, সঞ্জয়কে অন্তত ১০ লক্ষ টাকায় বেচে দেওয়া হচ্ছিল ইন্দোনেশিয়ায়।’
তিনি এ দিন ভবানী ভবনে সিআইডি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কাছ থেকে সূত্র পেয়ে বারাসতে এবং বিরাটির কয়েক জায়গায় হানা দেয় সিআইডি। তবে ওই পাচারকারীরা ফেরার। সঞ্জয়ের দাবি, কবীর হোসেন দুবাইতে পালিয়ে গিয়েছে। ওখানেই রয়েছে গোটা পাচার চক্রের মাথা। কবীরের এ রাজ্যে ব্যবসা সামলায় তাঁর শ্যালক। মালয়েশিয়াতেই তাঁর ক্যাসিনো ব্যবসা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×