somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের বাচ্চাকাচ্চা

১০ ই আগস্ট, ২০১০ ভোর ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকেই খালি জিনিসপত্র পালতে ইচ্ছা করত। জিনিসপত্র মানে কুকুর, বিড়াল, পাখি, ঘরের ভিতর ছোটখাট পশুপাখি যা আঁটে। আম্মার কাছে অনেকবার কুকুর, মুরগি পালার বায়না করলে প্রত্যেকবার গু পরিষ্কার করার ভয় দেখায়ে উৎসাহ নষ্ট করে দিত। শেষমেষ বুয়েটে থাকতে এক রুমমেটের পাল্লায় পড়ে কাঁটাবন মার্কেটে ঘুরাঘুরি শুরু, তারপর একটা পিচ্চি জার দিয়ে শুরু করে একসময় বিশাল দুইটা অ্যাকুয়ারিয়াম ট্যাঙ্ক। একগাদা মাছ পেলেপুষে বড় করে তারপর যখন দেশ ছাড়ার টাইম হল, মন খারাপ করে সবগুলা আবার কাঁটাবনে বেচে দিয়ে আসলাম।

আম্রিকা এসেও অ্যাকুয়ারিয়ামের ধান্ধা পিছ ছাড়ে নাই। গ্র্যাজুয়েট ছাত্রের নিজের পেট চালাতেই টানাটানি, তার উপর কাটাবনের ২০ টাকায় জোড়া প্লাটি মাছের বদলে ৫ ডলারে একটা মাছ কিনে পোষানো সম্ভব না। গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মত বাসার সামনেই একটা অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকান, সেখানে Finding Nemo এর ট্যাঙ্ক সাজানো।

আম্রিকা এসে আরেকটা যে ঝামেলায় পড়লাম তা হল, দেশী খাবার পাইনা। নেতানো কাঁচামরিচ কিনতে হয় ইন্ডিয়ান দোকান থেকে, বিশাল দাম দিয়ে, দুইদিন পরে পঁচা শুরু করে। পুঁইশাক এত প্রিয়, লোকাল চাইনিজ মার্কেটে মাঝেমাঝে পাওয়া যায় মাঝেমাঝে, তাও টাটকা না। আশেপাশের বাঙ্গালিরা বুদ্ধি দিল, “খাইবা, তো গাছ লাগায়া খাও”।

ভাল বুদ্ধি! আরেকজনের থেকে দুইটা মরিচের চারা ধার নিয়ে টবে লাগাইলাম। এই দেশে গাছ পালা সহজ। টব পাওয়া যায়, সার মিশানো মাটি পাওয়া যায়, টবে ভরে বিচি পুঁতে দিলে বা চারা লাগাইলে আর রেগুলার পানি দিলে হ্যাপা শেষ। মরিচ গাছে সুন্দর সুন্দর ফুল হয়, তারপর ঝাল মরিচ। আহা! ফ্রেশ ঝাল কাঁচামরিচ।

অ্যাকুয়ারিয়াম বাদ দিয়ে এখন মাথায় খালি গাছই ঘুরে। সুন্দর একটা বারান্দা আছে। বউয়ের গাছপালা নিয়ে ভাল জ্ঞান আছে। বারান্দাটা দেখতে দেখতে ভরে ফেললাম গাছ দিয়ে। টব যোগাড় করার আরো সহজ বুদ্ধি পেলাম। ৫/৬ ডলার টব না কিনে এখন ১ ডলারের দোকান (ডলার ট্রি, ডলার জেনারেল) থেকে ১ ডলারের বালতি কিনে তলায় ছিদ্র করে দিলেই হয়।





মরিচ গাছ। দোকান থেকে যে মরিচগুলা খেয়ে বেশ ঝাল মনে হয়েছে, বিচি রেখে দিয়ে মার্চ মাসেই লাগালাম, প্রতিদিন একটা দুটা নতুন মরিচ হচ্ছে। তেমন যত্ন লাগে না, রেগুলার পানি দিলেই হয়, মাঝেমাঝে খেয়াল রাখা লাগে Aphid হয় নাকি, হলে ওষুধ দিয়ে দেই। মূল তেমন ছড়ায় না, ১০ ইঞ্চি ডায়া, ৮ ইঞ্চি ডিপ টবে দুইটা লাগানো যায়।



মরিচের ফুল খুব সুন্দর, ছোট্ট সাদা ৫টা পাপড়ি, মাঝখানে ৫টা কাল বা কালচে নীল পুংকেশর।



পুদিনা গাছ। গতবছর আরেকজনের বাগান থেকে মরিচের চারা আনার সময় সাথে করে একটা ছোট্ট ডাল চলে এসেছিল মূলে পেঁচায়ে। ফেলে দিতে গিয়েও বউয়ের কথা শুনে একটা টবে লাগায়ে ফেললাম। বাড়তে বাড়তে এখন টব ভরে গেছে। যথেষ্ট শক্ত প্রাণ এইটার, মাটি শুকিয়ে একদম শক্ত না হলেই হল। পুদিনার গন্ধে পোকাও ধরে নাই এই পর্যন্ত। মোটামুটি ছড়ানো একটা গামলায় লাগালেই হয়।



Kroger এ ২ ডলারে একবার ধনিয়ার চারা পেয়ে কিনে আনলাম। ডালে ধনিয়া দিলে ভালই লাগে। রেগুলার পানি আর একটু খেয়াল রাখা লাগে যেন কড়া রোদে না পড়ে। পোকা ধরে না সহজে।



পুঁইশাক। গুড়া চিংড়ি টাটকা পুঁইশাকের ঝোলে বহুদিন খাইতে পারিনাই এই দেশে এসে। কয়েকদিন আগে একজনের থেকে ছোট্ট চারা নিয়ে লাগালাম। বৃষ্টির দিন পেয়ে ভালই বড় হয়েছে এই দুই সপ্তায়। আজকালের মধ্যে তুলব। পুদিনার মত এটারও টবের depth লাগে না, শুধু ছড়ানো হলেই হয়।



স্টারগেজার লিলি। ওয়ালমার্ট থেকে কেনা। বিশাল বিশাল ফুল, রোদ পড়লে ঝলমল করে একদম। বাল্ব টাইপের গাছ। ফুল দিয়েই মরে যায়। মাটির নিচে বাল্ব থাকে, সেখান থেকেই পরের বছর শীত শেষে আবার গাছ হয়। বাল্ব থেকেই আস্তে আস্তে গাছ ছড়ায়।



জিনিয়া। পালা বেশ সহজ। ৬ইঞ্চি ডিপ, ৬ইঞ্চি ডায়ার একটা টবে ২/৩টা গাছ লাগানো যায়। গাছ ভরে ফুল আসলে খুব সুন্দর লাগে, প্রজাপতি, মৌমাছি ঘুরঘুর করতে থাকে আশেপাশে।





গোল্ডেন বল ক্যাকটাস। এইটার বাংলা নাম আছে নাকি জানিনা। গুতুমগাতুম চেহারার একটা সবুজ বল, গায়ে ঘন করে হলুদ রঙের কাঁটা, রোদ পড়লে সোনালী আভা ছড়ায়। জায়গা পেলে ৪/৫ ইঞ্চি পর্যন্ত ডায়া হয়, লম্বায় ২ফিট পর্যন্তও বাড়ে, পানি এক সপ্তাহে একবার দিলেই হয়। সুখী একটা ক্যাকটাস প্রায়ই মাথায় দুইতিনটা উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুল ফুটিয়ে হাসতে থাকে।



টমেটো গাছ দেশে থাকতে যা দেখতাম, তার তুলনায় এইখানে বিশাল বড় হয়। এক বিকালে এক দোকান থেকে মৃতপ্রায় ৮টা পিচ্চি চারা ফেলে দেওয়ার সময় কুড়িয়ে নিয়ে আসলাম। বড় দুইটা টবে ফ্রেশ পটিং মিক্স (সার মিশানো মাটি) ভরে ৪টা করে লাগালাম। এখন বড় হয়ে কোমরসমান হয়েছে। পানি দেওয়ার সময় পাতাগুলা ভিজে খুব সুন্দর একটা গন্ধ ছাড়ে। বেশ দেরী করে লাগিয়েছি বলে এখনও কলি আসে নাই।



সিম গাছ। দেড় সপ্তাহ আগে বিচি লাগালাম। তরতর করে বড় হচ্ছে। (পিনহুইলটা বউয়ের শখে কেনা :) )



মানি ট্রি। বাংলা নাম জানিনা। ড্রয়িংরুম সাজানোর গাছ, আপাতত বারান্দায় বড় হচ্ছে।

গাছের ভূতে ভালই পেয়েছে আমাদের। পরের বছর কি কি লাগাব এখনই ঠিক করছি। ডিসেম্বরে দেশে গিয়ে বিচি নিয়ে আসব। লেবুগাছ লাগাব ভাবছি বড় একটা টব কিনে। আপাতত আমাদের এই বাচ্চাকাচ্চা গুলোর বড় হওয়া দেখি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ ভোর ৪:৫৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×