(লাল বৃত্তের মাঝে ঘাসের উপর পড়ে থাকা খাবার যা পাগলটি খাচ্ছিল।)
-----------------------------------------------------
খেতে ইচ্ছা করছে না তবুও খেতে হচ্ছে। একটু পরপর দাওয়াত কর্তৃপক্ষ খোজ নিচ্ছে। ভাই, আরেকটু গোস্ত দেই?- দই মিষ্টি? রোষ্ট দেবো? কত প্রস্তাব! আমার মন চাইছে না। তবুও কিঞ্চিৎ খেলাম।
ধন্যবাদ দিয়ে খাওয়া-দাওয়ার মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ফেলে রাখা উচ্চিষ্টের পাশে একটা লোক ঘাসের উপর থেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে খাচ্ছে! থমকে দাঁড়ালাম।
ক্ষুধার্ত অন্নহীন এক আদম সন্তানের উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে খাওয়ার এ দৃশ্য আমাকে প্রচণ্ড রকম ধাক্কা দিল। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলো। চোখ বেয়ে অশ্রুর প্লাবনে আমি কেঁদে ফেললাম। হায়! পাশেই শত শত সামর্থবান লোক! যাদের জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে। ঠিক কয়েক গজ দূরেই আরেকটি বিচ্ছিন্ন মানবতা অপমানিত হচ্ছে।
দ্রুত পায়ে আয়োজকদের মূল ব্যবস্থাপনায়। কোন কথা না বলে একটি প্লেট নিলাম। বিরিয়ানি, ইচ্ছামত গোস্ত,ডাল,মুরগি দিয়ে প্লেটটা ভরে দিলাম। নিয়ে এসে পাগলের সামনে দিলাম। হাত ধরে খানার প্লেটের ঠিক গোস্তটায় লাগিয়ে দিলাম। আরো লাগবে কি না জিজ্ঞাস করলাম। পাগলা উত্তর দিলো না। শুধু তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমিও তাকালাম আল্লাহ তাআলার এই সুন্দর সৃষ্টির দিকে। আর হৃদয়ে আঁকলাম অবিবেচক এই সমাজের প্রতচ্ছবি।
চলে আসছিলাম। হৃদয়ে যেন শীতল এক পরশ অনুভব করলাম। তৃপ্তির দোল খেয়ে গেল আমার অন্তরে। খেয়ে যতটুকু তৃপ্তি পাই নি তার চেয়ে অনেক বেশি তৃপ্তি নিয়ে দাওয়াত বাড়ি থেকে ফিরলাম।
আমরা সবাই আলীশান ইমারত বানানোতে ব্যাস্ত , আমার পাশ্বের বাড়ীর মানুষটি অর্ধাহারে অনাহারে ধুকে ধুকে মরছে সেই খবর কি আমরা রাখছি ?
আমার সন্তান একবার যদি বলে খেতে ভাল লাগেনা বা খেতে রুচি হয়না বা এইটা খাবনা অন্যটা খাবো ।
সাথে সাথে আমরা ব্যাস্ত হয়ে পড়ি ডাক্তার বা ছেলের রুচি সম্মত খাবার সংগ্রহের জন্য ।
অথচ ওদের জন্য আমার মন একটুও কাঁদেনা ।
আসুন এই সব অসহায় মানুষের পার্শ্বে সহযোগীতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসি ।
মনে রাখবেন ভোগে নয় ত্যাগের মধ্যে সুখ আর আনন্দ ।কি দিয়ে এই ভঙ্গুর সমাজের উদাহরণ টানব। এই সমাজে যে, অন্যায়, অত্যাচার আর অসামণ্জস্যতা। নেই কোন বিবেকী মানুষ। যেখানে মানুষ হারিয়েছে তার মনুষত্য। আল্লাহ কি আমাদের মাফ করবেন? জানি না আমরা এমন পর্যায়ে চলে যে, মহান প্রভুর কাছে মাফ চাইতেও ভয় লাগে। এত অন্যায় অবিচার কি তিনি মাফ করবেন? তার পরেও বলি আল্লাহ মাফ করে দাও। চির জীবন যেন আর্ত-মানবতার কাজে নিজেকে নিয়োগ রাখতে পারি।
উফ্...! অবাক পৃথিবীর নিয়ম। সমাজের তেলা মাথার সমাদরের যেন শেষ নেই। আমাদের কতই
না কমল চরিত্র, আমরা লাখ টাকায়
নিজেদের দু টাকার শখ পূরণ করতেও
দিধাবোধ করিনা। আর গরিবের ন্যায্যমূল্য
দশ টাকায় দু টাকা বেশী চাইলেই যেন
আমার মূল চরিত্র কে বিকে দেই গরিবের গালে চড় কষে দিয়ে। আমরা পারিও বটে।
আমাদের বিবেকের আদালতটা এখন
এদেশের আদালতের মতই কু-সজ্জিত.।
হযরত ওমর ( রা: ) বলেছিলেন,নীল নদের তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায় কেয়ামতের ময়দানে আমাকে এর জন্য আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।" আজ দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় সমাজের এলিটদের বিদেশী কুত্তাগুলোর জন্য ভিআইপি রুম আর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। আর এক ্রেণীর জন্য রয়েছে খোলা ডাস্টবিনের উ্ছিস্ট খা্বার। হায়রে সমাজ ব্যবস্থা।