somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিষ্টি মেয়ের গল্প

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সাড়ে আটটা। মিষ্টি মেয়েটার জন্য এই সময়টা হলো আদুরে ঘুমের সময়। কিন্তু সে আজ আদুরে ঘুমকে উপেক্ষা করে গোসল সেরে এখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গোছগাছ সেরে নিতে হবে। প্রতিদিনের মতো আজও আম্মু বকা দিচ্ছে! তবে আজ আম্মুর চেয়ে যেন তারই তাড়া বেশি। এই দিনটার জন্য সে আজীবন অপেক্ষা করে আসছে। আজ যে তার বিয়ে, বোকা ছেলেটার সঙ্গেই। এতটা আনন্দ আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ে না। বাড়িতে ধুমধাম বাদ্যবাজনা না বাজলেও মনের মধ্যে ঠিকই বাজছে।
আচ্ছা, এত খুশি লাগার কারণ কী! শুধুই কি পাগলটাকে পাচ্ছি তাই! নাহ, আরও একটা কারণ আছে। সেটা হলো আজকের পরের জীবনটা হবে সম্পূর্ণ নতুন। বৈচিত্র্য আর রহস্যে ভরা এক জীবন!
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে এগুলোই ভাবছে মিষ্টি মেয়ে। এ ছাড়া আর কীই-বা করবে। হাতে কোনোই কাজ নেই। ১০টার দিকে বরপক্ষ আসবে। পারিবারিকভাবে বিয়ের পর্ব সেরে দুপুর থেকে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বোকা ছেলেটা নাকি নিজেই পছন্দ করে কিনে পাঠিয়েছে। কী সুন্দর! কদিন ধরে ওর সঙ্গে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এসব ব্যস্ততার মধ্যে কারোরই সময় হচ্ছে না।
এক কাজ করলে কেমন হয়! এখনই ফোন করি ওকে। কে জানে, ও হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছে! এখনো ঘুমানো, না! তোমার ব্যবস্থা করছি দাঁড়াও।
দোতলায় নিজ ঘরে বসেই কাজের মেয়েকে দিয়ে ডাক পাঠাল তার ভাইটাকে।
২.
জনাব বোকা ছেলে এখনো ঘুমাচ্ছে। শান্তির ঘুম। বহুদিন পর এই একটা রাত সে দুঃস্বপ্ন ছাড়া পার করল। এটাই তার জন্য যথেষ্ট। যদিও ঘুমের ঘোরে, কিন্তু তার চারপাশে ঘটে যাওয়া সবকিছুই সে আঁচ করতে পারছে। এমন আবছা ঘুমের মজাই আলাদা। নাহ, এইবার ওঠা লাগে। আলসেমির মাঝেও এক চোখ খুলল ছেলেটা। পাশে রাখা মোবাইলে পাঁচটা মিসড কল! তার হবু বউয়ের বাবা ফোন দিয়েছিলেন!
—এত সকালে! কী মনে করে! ওদের কোনো সমস্যা হলো না তো!
তড়িঘড়ি করে উঠে বসল সে। চিন্তায় বুক কাঁপছে তার। সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠল ওর ফোন। কাঁপা গলায় সে বলল, ‘স্লামালিকুম আব্বা।’
‘বাবাধন, এখনো ঘুমাও নাকি!’
‘নাআআ! ইয়ে মানে, এই তো উঠলাম আর কি...’
‘বলছি কি, বিয়ে তো এখনো হয়নি, তা তুমি আব্বা বলে ডাকলা কেন?’
‘ওহহো সরি আঙ্কেল। আর ভুল হবে না।’
‘হে হে, ঠিক আছে, অবশ্য আর ভুল করার সুযোগও পাবা না।...
‘জি জি, তা ঠিক।’
ফোনের ওপ্রান্ত থেকে মেয়েলি চাপা হাসির শব্দ শুনতে পেল ছেলেটা।
কিছু একটা তো গড়বড় আছেই। মনে মনে ভাবল সে।
‘আচ্ছা আব্বা আপনার পাশে কি আপনার মেয়ে?’
এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল দুজনেই।
‘দে দে ফোনটা আমাকে দে।’
ফোনটা নিল মেয়েটা। ছেলেটা ভাবছে হচ্ছেটা কী!
‘এই তুমি আব্বার গলা চেন না ভালো কথা, কিন্তু আমার ভাইটার গলা ভুলে গেলে কিভাবে!’
আবারও হেসে উঠল মেয়েটা।
‘সব সময় এ রকম ফাজলামি করো ঠিক আছে, তাই বলে আজকেও!’
‘কেন বেবি! আজকের দিনটা কি খুব স্পেশাল?’
‘নাহ। রাখলাম।’
‘রাগ করলা! আরে শুনো...’
আর কিছু বলার আগেই লাইনটা কেটে গেল। মেয়েটা আর ফোন দিতে গেল না। যাই ঘটে যাক, অভিমানী ছেলেটা আগামী এক ঘণ্টা আর ফোন ধরবে না।
৩.
এখন রাত সাড়ে এগারোটা। সারা দিন ঘোরের মধ্যে থাকার পর, মিষ্টি মেয়েটা আর বোকা ছেলেটা এখন বেশ খানিকটা স্বাভাবিক। এখন তারা পৃথিবীর প্রাচীনতম মানব-মানবী। আজ তাদের স্বর্গীয় আবেগটা পরিণত হবে অতি পার্থিব একটা চাহিদায়! মিষ্টি মেয়েটা আর বোকা ছেলেটা এখন অন্ধকার ঘরে একই বিছানায়! দুজনেই তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। আদৌ হবে কি না বোঝা যাচ্ছে না।
‘ওগো শুনছ!’
‘হুম।’
‘বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।’
‘হুম।’
‘বাজ পড়বে নাকি!’
‘হুম।’
‘বাজ পড়লে খুব ভয় পাই আমি।’
‘হুম।’
বোকা ছেলেটা এখনো উদাসীন। মিষ্টি মেয়েটা না পেরে নিজেই ওর হাতটা ধরে নিজের কাঁধের পর এনে ছেড়ে দিল।
‘আমাকে আজ কেমন দেখাচ্ছিল?’
‘এই তো ভালোই।’
‘ভালোই মানে! ঠিক করে বলো।’
‘মোটামুটি।’
‘আমাকে বাজে দেখাচ্ছিল!’
পাগলি মেয়েটা ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে বোকা ছেলেটার দিকে। তার চোখ ছলছল করছে। বোকা ছেলেটা এতক্ষণে টের পেল সে কী ভুল করেছে।
‘আরে আমি তা বলিনি তো বাবু!’
ছেলেটা আবেগে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে।
‘সত্যি বলতে তোমাকে মেকআপ ছাড়াই বেশি সুন্দর লাগে। যেমনটা এখন লাগছে। প্রতিদিন সকালে উঠে আমি ঠিক এ রকমই দেখতে চাই তোমাকে। কী দেখতে পাব তো?’
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল বাইরে। আহ্লাদি মেয়েটা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে।

গল্পটা ভালো লাগল তাই বল্গে রেখে দিলাম।


সূত্রর:প্রথম আলো m.prothom-alo.com/pachmisheli/article/152773/মিষ্টি-মেয়ের-গল্প
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×