somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টরন্টো কথন

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ থেকে টরন্টো আসার পর থেকেই টরন্টোর অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখব বলে ভাবছিলাম। সময়ের অভাবে পারিনি। আজ একটু চেষ্টা করে দেখি।

টরন্টো আসার পর প্রথম কাজ ছিল একটা মোবাইল কানেকশন নেয়া। এখানে বড় সার্ভিস প্রোভাইডার হচ্ছে রজারস আর বেল। টেলাস নামেও একটা প্রোভাইডার আছে। এদের নেটওয়ার্ক ভালো। সবখানে পাবেন। কিন্তু সম্মিলিতভাবে এই তিনটা কোম্পানির নাম ROB US (ROGERS BELL TELUS) অর্থাৎ এই তিন কোম্পানি মিলে গ্রাহকদের পয়সা ডাকাতি করে। এদের সংযোগ নিলেই এই নামকরণের সার্থকতা খু্ঁজে পাবেন।

অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে ফাইডো, ভার্জিন মোবাইল, উইন্ড, মোবিলিসিটি, পাবলিক মোবাইল ও কুডো। এদের মধ্যে ফাইডো আর ভার্জিন এর নেটওয়ার্ক মোটামুটি ভালো তবে খরচ 'রব-আস' চেয়ে কম হলেও অন্যদের চেয়ে বেশি।

এখানে এসে অনেকেই যেটা করেন তাহলো, সবচেয়ে কম খরচের মোবাইল সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করেন। সেটা অবশ্যই ভালো, তবে আমার মতে যে সংযোগ-ই নেন না কেন, তাতে ডাটা প্ল্যান নেবেন। আর কনভেনশনাল ফোন সেট না নিয়ে স্মার্টফোন নেয়ার চেষ্টা করবেন। আইফোন ফাইভ বা গ্যালাক্সি ফোর নিতে পারেন, তবে যে কোন ভাল মানের এ্যানড্রয়েড ফোন হলেও চলবে।

কেন স্মার্ট ফোন ও ডাটা প্ল্যান নেবেন ? উত্তর এক কথায়, গুগল ম্যাপস। কাজের খো্ঁজে আপনাকে টরন্টো এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন শহরে যেতে হবে। ঠিকানা খুঁজে বের করতে এবং ট্রানজিট রুট বের করতে গুগল ম্যাপের বিকল্প আপাতত আমি পাইনি। কোথাও যেতে কোন বাস বা সাবওয়ে ধরতে হবে, কত সময় লাগবে তা বের করতে এর জুড়ি নেই। বিভিন্ন ট্রানজিট এজেন্সির ডাটা এত সুন্দরভাবে এতে ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে যে ব্যবহার না করলে বুঝবেন না। আপনার সময় বাঁচাতে এটি খুবই কার্যকর।

এছাড়া আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য মোবাইল সংযোগের ক্ষেত্রে, এরা এয়ারটাইম হিসাব করে ইনকামিং ও আউটগোয়িং মিলিয়ে। কাজেই আপনি সারা মাস কাউকে ফোন না দিয়ে, শুধু রিসিভ করেই এয়ারটাইম শেষ করে ফেলতে পারবেন। আর একবার এয়ারটাইম শেষ করে অতিরিক্ত স্লটে গেলে কি হতে পারে, পরীক্ষা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আবার কিছু প‌্যাকেজ আছে লোকাল, কিছু প্রভিন্স ওয়াইড আর কিছু কানাডা ওয়াইড। লোকাল ফোনের ক্ষেত্রে আপনার শহরের বাইরে গেলেই রোমিং শুরু হয়ে যাবে। রোমিং চার্জের অভিজ্ঞতা - ঠেকে শেখার দরকার আছে ? সুতরাং ফোন সংযোগ নেবার সময় কয়েকটা কোম্পানির প‌্যাকেজ নিজে যাচাই করুন, প্রয়োজনে পরিচিত জনের সাহায্য নিন, যে এলাকায় অবস্থান করছেন সেখানে ঐ কোম্পানির কাভারেজের খোঁজ নিন।

এরপর আসা যাক ইন্টারনেট সংযোগ এর ক্ষেত্রে। এখানেও ঐ 'রব আস'। তাদের তুলনায় কম খরচে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে ইন্টারনেট সার্ভিস দেবার জন্য। এখানেও একই কথা - সংযোগ নেবার সময় কয়েকটা কোম্পানির প‌্যাকেজ নিজে যাচাই করুন, প্রয়োজনে পরিচিত জনের সাহায্য নিন, যে এলাকায় অবস্থান করছেন সেখানে ঐ কোম্পানির কাভারেজের খোঁজ নিন। আর আনলিমিটেড সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করুন। নাহলে, লিমিট পার হয়ে গেলে - বলার প্রয়োজন নেই।

কেবল টিভির সংযোগের জন্যেও একই উপদেশ প্রযোজ্য। বাংলাদেশি ও ভারতীয় চ্যানেলের জন্য কিছু আইপি টিভি সার্ভিস আছে, যেগুলো ট্রাই করতে পারেন। রজারস বা বেলের টিভি সার্ভিস প্রথম ছয় মাসের জন্য ভাল। সপ্তম মাস থেকে এদের বিল দিতে গিয়ে আপনার টিভি বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা জাগতে পারে।

বাংলাদেশিদের একটা ভাল কমিউনিটি আছে টরন্টোর ড্যানফোর্থ ভিলেজ এরিয়ায়। সেখানে গেলে আপনার মনে হবে আপনি দেশেই আছেন। সেখানে বাংলাদেশি গ্রোসারিতে বাংলাদেশি পণ্য পাবেন। পাবেন হালাল মাংস। এছাড়া থর্ণক্লিফ এরিয়াতে ইকবাল হালাল ফুড, বাংলাদেশিদের বাজার করার আরেকটা যায়গা।

টরন্টোতে আসার পর একটু স্থির হবার পর প্রধান কাজ হচ্ছে কাজ খোঁজা। মূল টরন্টোতে কাজের একটু অভাব আছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। কাজের জন্য আপনাকে আশেপাশের শহরগুলোতে যেতে হতে পারে। এগুলোর মধ্যে মিসিসাগা, পিকারিং, ওয়াটারলু, ভন, ইটোবিকো, ব্র্যাম্পটন এই শহরগুলোতে কাজ পাওয়া তুলনামূলক সহজ টরন্টোর চাইতে।

এখানে এসে বেশিরভাগ বাংলাদেশি প্রথমেই সিকিউরিটি গার্ডের একটা কোর্স করে ফেলে। এটা করতে খরচ তুলনামূলক কম (কমবেশি ২৩০ ডলার)। লাইসেন্স পেয়ে গেলে কাজ পাওয়াও তুলনামূলক সহজ।

এখানে কাজের মজুরি নুণ্যতম ১০.২৫ ডলার প্রতি ঘন্টা। জেনারেল লেবার, সিকিউরিটি গার্ড, কফিশপের ওয়েটার, রেস্টুরেন্টের ডিশ ওয়াশার যেটাই শুরু করা যাক না কেন, এরা এই রেট বা এর কাছাকাছি রেটে শুরু করবে। এই ধরনের কাজ পেতে চাইলে বিভিন্ন এজেন্সি আছে, যাদের সাথে যোগাযোগ করলে ওরাই আপনাকে কাজ পাইয়ে দেবে। কিছু এজেন্সি আছে যারা পয়সার বিনিময়ে (২৫ থেকে ৫০ ডলার) রেজিস্ট্রেশন করে। এরা সাধারণত দ্রুত কাজ যোগার করে দেয়। তবে বিভিন্ন শিফটে কাজ করার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এদেরশিফট সাধারণত মর্ণিং (সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ৩ টা), ইভিনিং (দুপুর ৩ টা থেকে রাত ১১ টা) ও নাইট (রাত ১১ টা থেকে সকাল ৭ টা)। প্রতিষ্ঠানভেদে এই সময় কিছু পরিবর্তন হতে পারে।

আর যারা প্রফেশনাল কাজ করতে চান, তাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এখানকার একটা একাডেমিক স্বীকৃতি হলে কাজ পেতে সুবিধা হবে। এখানে সব প্রফেশনের কর্মজীবিদের জন্য এ্যাসোসিয়েশন আছে। নিজ নিজ পেশার সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে এদের সদস্যপদ নিতে পারলে চাকরি ক্ষেত্রে সুবিধা হয় বলে শুনেছি। তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। বাংলাদেশ থেকে এসেই সরাসরি ভাল চাকরি পেয়ে গেছেন, এমন অনেকেই আছেন।

এখানে খরচের ক্ষেত্রে যেটা হয়, সবকিছুর দামই ৭৫ বা ৮০ দিয়ে গুণ করা হয়ে যায়। এটা স্বাভাবিক, আমরা সবকিছুই টাকায় হিসাব করে অভ্যস্ত। আর এখানে কেউ নগদ ডলার বহন করে না (খুবই কম)। ১ ডলারের এক কাপ কফি কিনতেও এরা কার্ড ব্যবহার করে। ব্যাংক আপনি না চাইতেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দেবে। তবে এখানে একটা বিষয়ে খুবই সাবধান - কোন বিল যেন বকেয়া না পরে। আপনার ক্রেডিট প্রোফাইল যত ভাল, আপনি তত ভাল লোক। ক্রেডিট প্রোফাইল খারাপ হলে, আপনি মহাপুরুষ হলেও এদের কাছে আপনি খারাপ লোক।

আমি মাত্র ৭ মাস হলো টরন্টোতে এসেছি, আমিও নতুন। তারপরেও আমার নতুন অভিজ্ঞতাই সবার সাথে শেয়ার করার জন্য এই পোস্ট। কারো উপকারে আসলে ভাল লাগবে। টরন্টো আসলে খুবই ব্যস্ত শহর। যারা এখানে আসছেন, সবাই ভালো কাজ পান। এনজয় করুন। ইনকাম শুরু হলে দেখবেন ১০ ডলার খরচ করলে ১০ ডলারই খরচ হচ্ছে, ৭৫০ টাকা নয়। ;)

-- আশিক মুর্শেদ
টরন্টো থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×