somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আশরাফ আল দীন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

এক বাংলাদেশ

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাংলাদেশ। আমার আপনার সকলের অতিপ্রিয় জম্মভূমি এই বাংলাদেশ। পৃথিবী নামক এই গ্রহের অন্যকোন দেশ বা রাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোন তুলনা হয়না। কিছু কিছু বিষয়ে, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কিছু উপাদানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সকলের চেয়ে আলাদা। যেমন ধরুন, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন রাষ্ট্র নেই যেখানে একখন্ড অবিচ্ছিন্ন ভূখন্ডে এতগুলো লোক এইভাবে ঘন বসতিতে চাপাচাপি করে বাস করছে হাজার বছর ধরে, যারা একই ভাষায় কথা বলে এবং যাদের গাত্রবর্ণ, আনন্দ-উৎসব আর সংস্কৃতি এক। এমনকি ধর্ম-বিশ্বাসও প্রায় একই বলা যায় এই বিচারে যে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র সংখ্যক সংখ্যালঘু যারা আছে তারাও হাজার বছর ধরে একসাথেই জীবন-চর্চায় ব্যস্ত অত্যন্ত আপন ভাই-বেরাদরের মত। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা হানাহানিতে হাজার বছরেও এদেশে, অন্য যে কোন দেশের তুলনায়, কোন রক্তই ঝরেনি। এটা কম গর্বের কথা নয়। বাংলাদেশকে তাই বলা যাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বর্গভূমি।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় ঔপনিবেশিক শাসকদের সাথে স্বার্থের গাঁটছড়া বেঁধেছিলো যেসব অত্যাচারী জমিদার তারা প্রধানত সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের হলেও, অত্যাচারিত বৃহৎ জনগোষ্ঠী বা মুসলমান প্রজারা কখনোই ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যলঘু প্রজাদের, সংখ্যালঘু জমিদারদের সাথে মিলিয়ে-মিশিয়ে শত্রু জ্ঞান করেনি। বরং নিজেদের দলে টেনে নিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। ফলে বিরোধ হয়নি, দাঙ্গা হয়নি। এমনকি নিকট অতীতে ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের সময় নষ্ট রাজনীতিবিদদের কারণে যখন সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, তখনও আজকের বাংলাদেশ নামে চিহ্নিত ভূখন্ডের কোথাও কলকাতা, বিহার, গুজরাট বা আহমেদাবাদের মত রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেয়ার মতো কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সংখ্যালঘু প্রতিবেশীদের নিজ বাড়ীর অন্দর মহলে লুকিয়ে রেখে হানাদার পাকিস্তানীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। এই সম্প্রীতি বরাবরই ছিল কারণ ধর্মীয় সুশিক্ষার কারণেই জেলে-মুচি-কামার-কুমারদেরও মুসলমানরা ঘৃণা করতে শেখেনি, যদিও সংখ্যালঘু সমাজেও তাদের হেয় জ্ঞান করার নিয়ম আছে।
আজো দেখতে পাই, রাজনৈতিক গুঁটির চালে যখন বাংলাদেশের কোথাও কোথাও সংখ্যালঘুদের মন্দিরের উপর আক্রমণ পরিচালনার ফ্যাশন শুরু হয়ে গেছে, তখনো দেখা যাচ্ছে মুসলমান ধর্মভীরু যুবকরা দলবেঁধে রাত জেগে প্রতিবেশীদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে কোন কোন স্থানে। সুতরাং বাংলাদেশের বাস্তবতার ভেতরেই বপন করা আছে সুদৃঢ় ঐক্যের বীজ। আফ্রিকার দেশগুলোর মতো এখানে যুদ্ধংদেহী কোন গোত্র নেই, প্রাচীন ইউরোপের মতো এখানে সাংস্কৃতিক বিদ্বেষ ও বিরোধপূর্ণ কোন দল-উপদল নেই। আর প্রাচীন আরবের মতো প্রতিহিংসা পরায়ণ বংশগুলোর শতবর্ষের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস বা স্পৃহাও নেই।
এরপর জনগনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির আর একটি মাত্র উপাদান থাকে, তাহলো রাজনৈতিক মতপার্থক্য। একেও যদি আমরা গণতান্ত্রিক আচরণের মধ্যে আবৃত রাখি তা হলে আর কোন বিরোধ, বিভেদ বা প্রতিহিংসার সূত্র অবশিষ্ট থাকে না। তাই ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের একটাই শ্লোগান হতে পারে “এক বাংলাদেশ”। তিনটি প্রধান ও পৃথক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে মালয়েশিয়া যখন ঐক্যের শ্লোগান দেয়- ‘ওয়ান মালয়েশিয়া’। অসংখ্য ভিন্নধর্মী জাতি-গোষ্ঠীর দেশ ভারত যখন ঐক্যের মোহে বলে : ‘মেরা ইন্ডিয়া’। তখন একই ভাষা-কৃষ্টি ও সভ্যতার ধারক একটিমাত্র জনগোষ্ঠী হয়েও বাংলাদেশ কেন পারবে না ঐক্যের শ্লোগান দিতে- ‘এক বাংলাদেশ’।
নিজেরাই নিজেদের শত্রু না সেজে, জাতিকে নানা অভিধায় বিভক্ত করার ধ্বংসাত্মক খেলায় মত্ত না হয়ে আধুনিক বিশ্বের সভ্যতার প্রতিযোগিতায় সর্বশক্তি ব্যয় করার মানসে, জনগনের জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এখনই আমাদের বলতে হবে ‘এক বাংলাদেশ’।


আশরাফ আল দীন
রচনাকাল: ১১ মার্চ ২০১৩
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×