আমার জবানবন্দি :
আছি মহা মুশকিলে , ঢাকায় যাওয়ার সময় বাড়িতে দুই খরগোশ রেখে গিয়েছিলাম । একটাকে বিড়াল খেয়ে ফেলেছিল । অতঃপর আবার বাড়ি আসার সময় , একটা নিয়ে এসেছিলাম ।
এইবারের ঈদে বাড়ি এসে দেখি খরগোশের সেই এলাহী অবস্থা । আমার মহান পিতা তার , ছেলের রেখে যাওয়া অপূর্ণ জীবন্ত শখের দেখাশোনা করছে । আম্মুর সাথে এই নিয়ে প্রত্যহ ঝগড়া । আব্বু এই দুই খরগোশের জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে কচি ঘাস আনতে যায় । উনারা যেদিন ডিম বা বড় মাছ খান সেদিন খরগোশ কিছু খেতে পারবে না বলে , বাজার থেকে কাচকি মাছ আনেন । আর আম্মু গজ গজ করতে করতে রান্না করেন । মাছ খাওয়াতে , খাওয়াতে আব্বু এদের মাংশাসী থুক্কু মাছাশি বানিয়ে ফেলছে !! আর এই দুইটারও যে বাজে অভ্যাস হয়েছে , কই শুনেছিলাম গাজর খরগোশের খুব পছন্দ , এরা সবজির ধারও ধারে না , বেশ খুশি মনেই মাছ খায় !! বাড়ি খরগোশের ল্যাদাময় , আব্বু মহাউৎসাহে পরিষ্কার করেন ।
দিনে দুই-তিনবার এইগুলোকে ছাড়া হয় , তখন আবার আব্বু বসে বসে গালে হাত দিয়ে এগুলো পাহারা দেয় । ভদ্রবেশি এই দুই শয়তানের নাচতে নাচতে খাওয়া-ঘুমানো আর ল্যাদানোমুতানি বাদে অন্য কোন কাজই নেই। আরেকটা আছে সেটা হল , বাড়িটাকে ওয়াসার খুড়াখুড়ির ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলা , নতুন নখ উঠেছে ব্যাবহার না করলে চলে নাকি !!!! আমার কাছে এদের আরেকটা জিনিস ভাল্লাগে ছোট্ক-বাট্টু লেজ টা ! ছোট কিন্তু দৌড় দেওয়ার এইটাই তোলে হেভি নাচ মারে !! আব্বুর এত আদর-যত্নে একেকটার চেহারাও হয়েছে দেখার মত ।
আমার সাথে ফোনে কথা বলার সময় , আম্মু এইগুলোর ভিআইপি কেয়ার ,এবং সৌন্দ্যের বর্ণনা দেবেন আর খেচখেচি করবেন খরগোশ নাকি এই বাড়িতে যে ভাগ্য নিয়ে এসেছে , এইরকম ভাগ্য নাকি আম্মুরও নেই !!
মাঝে মাঝে ভাবি পুত্র-পুত্রী বিহীন বাড়িতে , একটু কষ্ট করে হলেও খরগোশ দুটি থাকুক না ওদের আনন্দের উৎস হয়ে ।।
খরগোশের জবানবন্দী ; গ্রহচারী সাহেবের কথার জবাব দেওয়ার আগে নিজের পরিচয় দিয়া লই । আমি নিউজিল্যান্ড বংশদ্ভূত , বাংলাদেশি খরগোশ । কাটাবনের কোন দোকানে এনার নিকট আমি বিক্রিত হই । আমার মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অথচ সাদা ধবধবে খরগোশ আপনি কোথাও খুজে পাবেন না । সুতরাং আমার যত্ন-আত্নি ও হওয়া চাই রাজকীয় । তদে যে বাড়িতে আছি উনার বদনাম করব না ভদ্রলোক আমাদের যথেষ্টই আদর করেন । তবে শিক্ষক কিনা , মাঝে মাঝে আমাদের ছাত্র ভাবিয়া শিক্ষা দানের চেষ্টা করেন , আমি খরগোশ , মানবের শিক্ষা লইয়া কি করিব ? তাই আমি উনাকে এতটা পাত্তা দেই না । আরেকটা কষ্টের বিষয় , আমার সাথের মর্দটা খরগোশটা বিড়ালের হাতে মারা যাওয়ার পর , নতুন যে পিচ্চি খরগোশটা এনেছিল , ওই শালার বেটা পেটুক , খাইয়া দুইদিনেই আমার সমান হয়ে গেছে , এখন আবার আমার সাথে পাট নেয় ! ইচ্ছা করে খামচিয়ে গাল ছিড়ে দেই ! আরি বেটা পাট নে ঠিকাছে , সম্মান তো কর !!
কথা হল কথা না , মাটি খুড়া-খুড়ির ব্যাপারে গ্রহচারী সাহেব যে মন্তব্য করেছেন তা হতাশাজনক । উনি শিক্ষিত মানুষ উনার বোঝা উচিত ছিল , নখওয়ালা জীব মানেই খুড়াখুড়ি করবে তা ওয়াশাই হওক কিংবা চাঁদ । আরেকটা বিষয় একেকজনের রুচি একেক রকম , আমার ফরমালিনওয়ালা গাজর খেতে ভাল্লাগে না , খেলে পেট উল্টিয়ে বমি আসে , সুতরাং মাছ খাওয়াই উচিত নাকি ?? আর আমি মাছ খেলে উনার গায়ে লাগে কেন ?? ইশরে উনি ঢাকায় সবসময় ডিম্ব গ্রহণ করেন বলেই হয়ত আমাদের মৎস গ্রহণের উনার এত আপত্তি !!
যাই-হওক নাকে তাজা ঘাসের গন্ধ পাচ্ছি , যাই খেয়ে আসি ।
ঐ বদমাইশ খরগোশ ব্যাটার বিরুদ্ধে আমার বলার কিছুর নাই ! আমার মাথায় আপাতত যা ঘুরছে তাহল , ব্যাটারা কি বোবা ? নাহলে এদের ডাক কি ??
(বি: দ্র : মোবাইল ইউজার বলে ছবি দিতে পারলাম না)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩৫