somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট বেলার খেলাগুলো ( একটি নস্টালজিক পোস্ট)

১২ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ তার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময় সম্ববত ছোটবেলাতেই পার করে। অন্যদের কার কি ধারণা আমি জানি না। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, শৈশব-কৈশোরই এখন পর্যন্ত আমার পার করা শ্রেষ্ঠ সময়। আজ ছোটবেলার খেলাগুলো নিয়ে লিখলাম। আপনারাও আপনাদের ছোটবেলার খেলাগুলো এখানে লিখতে পারেন। মূল পোষ্টে সংযুক্ত করে দেয়া হবে।

১: ছোয়া-ছুই : এই খেলায় একজনকে চোর নির্বাচন করা হত। সে বাকি সবাইকে দৌড়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করত। যাকে ছুঁতে পারত, সেই চোর হত।

২: কানা-মাছি : এটি অনেক জনপ্রিয় একটি খেলা ছিল। এই খেলায় একজনকে নির্বাচন করে, তার চোখে কাপড় বেধে দেয়া হত। তারপর সে দেখতে পাচ্ছে কিনা, নিশ্চিত হওয়ার জন্য চোখের সামনে আঙ্গুল ধরা হত। এরপর 'কানা-মাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছো" এই ছড়া বলতে বলতে সবাই তাকে গুতো দিত। সে যাকে ধরতে পারত, তার চোখেই আবার কাপড় পরানো হত।

৩: লুকোচুরি/ পলাপলি : এই খেলাটাও অনেক জনপ্রিয় একটা খেলা ছিল। লুকোচুরি খেলেননি ছোটবেলায় এমন হয়ত খুব কমই আছেন। এখানেও একজনকে চোর নির্বাচন করা হত। সে একদিকে মুখ করে বা চোখ বন্ধ করে ১-৫০ কিংবা ১০০ পর্যন্ত গুণত। ততক্ষণে সবাই লুকিয়ে পড়ত। গণনা শেষ হলে সে সবাইকে খুঁজে বেড়াত। যাকে প্রথম দেখত তার নাম ধরে ১ টিপ, ২ টিপ এভাবে বলত। যদি কারও নামে ভুল করত কিংবা নাম বলার আগেই কেউ এসে তাকে ছুঁয়ে "টিলো" বলত , সেই আবার চোর হত। অন্যথায় যাকে '১ টিপ' বলা হয়েছে সেই চোর হত।

৪: বরফ-পানি : এই খেলাটি অনেকটা "ছোয়া-ছুই" খেলার মতই। তবে চোর এখানে যাকে ধরত সেই স্থির হয়ে থাকত, যতক্ষণ না অন্য কেউ এসে তাকে ছুয়ে মুক্ত করত। একাধিকবার যদি কাউকে বরফ করা হত, সেই চোর হত। 'কুমির ভাই তোর জলে নেমেছি' এটি বলে কুমিরকে ক্ষেপানো হত।

৫: কুমির-কুমির : এখানে একজনকে কুমির বানানো হত। একটা নির্দিষ্ট জায়গা থাকত কুমিরের। সেখানে সবাই দৌড়ে যেত। এর মধ্যে 'কুমির' কাউকে ধরতে পারলে সেও 'কুমির' হয়ে যেত।

৬: সাত পাতা : এই খেলাটিও অনেক মজার একটি খেলা ছিল। এখানে যে চোর থাকত সে সবাইকে ৭টি পাতার নাম বলত সংগ্রহ করে আনার জন্য। দম নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকত। পাতা সংগ্রহ করে আনা হলে মাটিতে গর্ত করে একটি নির্দিষ্ট জায়গা সেই পাতাগুলো লুকানো হত। চোর যার ৭টি পাতা খুঁজে পেত, সেই চোর হত।

৭ : ইচিং-বিচিং : এটা সাধারণত মেয়েরাই বেশি খেলত। একটি দাগের দু'পাশে দু'পা দিয়ে লাফাতে হত। আর বলতে হত 'ইচিং-বিচিং-চিচিং চা, প্রজাপতি উড়ে যা'। দাগে পা পড়লে আউট হিসেবে গণ্য হত।

৮: ওপেনটি বায়োস্কোপ : এই খেলায় দুজন দুহাত উপরে ধরে গেইটের মত বানাত। বাকি সবাই একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে সেই গেইটের ভিতরে ঘুরে ঘুরে ঢুকত। যে দুজন হাত উচু করে রাখত তারা একটি ছড়া বলত।
"ওপেনটি বায়োস্কোপ,নাইন-টেন টেস্কোপ
সুলতানা-বিবিআনা, সাহেব বাবুর বৈঠক খানা
বৈঠক খানায় গিয়ে, পান-সুপারি খেয়ে
পানের আগা মরিচ বাটা,স্প্রিংয়ে ছবি আকা
যার নাম রেণুমালা, তাকে দিব মুক্তার মালা"
মুক্তার মালা বলার সময় যে সেই দুজনের হাতের নিচে পড়ত, তাকেই মুক্তার মালা দেয়া হত।

৯: পলানটুক/ ফুলটোকা : এই খেলাটি দুদলে ভাগ হয়ে খেলতে হত। একজন করে দলনেতা থাকত। তারা যেকোন কিছুর একটা নাম নিত। যেমন, ফুল, ফল ইত্যাদি। দুদল এর সদস্যরা নির্দিষ্ট দূরত্বে মুখোমুখি বসত। সদস্যদের প্রত্যেকের আলাদা নাম ছিল। যেমন, জবা, চামেলি, বকুল অথবা আম, জাম, লিচু ইত্যাদি। এক পক্ষের দলনেতা অপর দলের সদস্যকে পিছন হতে হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরত এবং তার নিজ দলের কোন এক সদস্যকে ডাকত( আয়রে আমার জবা ) । সে এসে কপালে
টোকা দিয়ে গিয়ে তার জায়গায় গিয়ে বসত। তখন যার চোখ ধরা হয়েছে তাকে বলতে হত কে তাকে টোকা দিয়ে গিয়েছে।

১০: এ লন্ডি লন্ডন : এটাও কিছুটা লুকোচুরির মত। তবে এখানে চোর দেয়ালের দিকে মুখ করে গুণত, আর অন্যরা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে তার দিকে আসত। গুণা শেষে পিছন ফিরে তাকানোর সময় কাইকে যদি নড়তে দেখত, সেই চোর হত। আর যে সবার আগে আসতে পারত সে হত প্রথম। এটার ছড়া ছিল - এ লন্ডি লন্ডন, ঘড়ি বাজে টনটন, ১....২....৩ )

১১: নাটবল্টু : এখানে একজনকে চোর বানানো হত। সে কোমর বাকা করে, মাথা নিচের দিকে রাখত অনেকটা নামাযে রুকু দেয়ার মত। অন্যরা তারা পিঠের উপর দুহাত রেখে লাফ দিয়ে অন্য পাশে যেত। কারও পা যদি চোরের গায়ে লাগত, তখন সে চোর হত।

১২: ঝিক/চারা : এটি সাধারণত সমান কোন সিমেন্ট বা ছোট ইটের টুকরা দিয়ে খেলা হত। কেউ একজন ঝিক ছুড়ে মারত, অপরজনকে সেটিতে লাগাতে হত। অনেক জায়গায় এর সাথে আবার সিগারেটে কিংবা ম্যাচ এর প্যাকেট দেয়া হত। গ্রামে অনেককে দেখতাম আমের বারা (আঁটি) দিয়েও খেলত।

১৩: কক ফাইট (মোরগ লড়াই) : এই খেলায় সবাই এক পা পিছন দিতে হাত ধরে রাখত এবং অপরজনকে গুতো দিয়ে ফেলার চেষ্টা করত। অনেকে আবার কনুই দিয়ে মারত। যে পড়ে যেত সে আউট হিসেবে গণ্য হত।

১৪: চড়ুই-পাখি : এই খেলা সম্পর্কে আশা করি কিছু বলা লাগবে না !
'চড়ুই পাখি বারটা
ডিম পেড়েছে তেরটা
একটা ডিম নষ্ট
চড়ুই পাখির কষ্ট'

১৫: রস-কস : এটি সাধারণত ঘরে কিংবা স্কুলে ক্লাসের ফাকে খেলতাম। এটিও অনেকটা চড়ুই-পাখির মত। আঙ্গুল গুণে গুণে 'রস, কস, সিঙ্গাড়া, বুলবুলি, মস্তক' বলা হত। সবার শেষে যার আঙ্গুল বাকি থাকত তাকে দুর্ভোগ পোহাতে হত। অর্থাৎ, সবাই একে একে তার হাতের তালুতে হাত দিয়ে আঘাত করত। যে মিস করত সে বাদ হয়ে যেত।

১৬ : কুতকুত : এই খেলা মূলত মেয়েদের খেলা হলেও বাড়িতে গেলে কাজিনদের সাথে খেলতাম। কুতকুত অনেক ধরনের ছিলো। ৪,৫,৯ ঘরের গুলো মনে আছে।

১৭: বোম বাস্টিং : এই খেলা টেনিস বল দিয়ে খেলা হত। যে যাকে পারত পিঠের মধ্যে টেনিস বল দিয়ে মারত। একে 'পিঠ ফাডান্তিস' ও বলত।

১৮: সাত চারা : ইটের উপর ৭টি চারা/ঝিক রেখে দূর হতে বল দিয়ে মারা হত। বল দিয়ে সেগুলো ফেললে অপরপক্ষ সেগুলো আবার তোলার চেষ্টা করত। এরই মধ্যে বল দিয়ে তাদের কারও গায়ে লাগাতে পারলে তারা জয়ী হত।

১৯: ৫ গুটি/ ধাপ্পা : এটাও মেয়েদের খেলা। তবে আমিও খেলেছি। এই খেলার অনেক গুলো ধাপ ছিল, ভুলে গেছি।

২০: ডাংগুটি : এই খেলাটা সম্পর্কেও নিশ্চয়ই অনেকের ধারণা আছে। দুজন কিংবা একাধিক হলে দুদলে বিভক্ত হয়ে এটি খেলা হত। খেলার সরঞ্জাম ছিল এক হাত সমমানের শক্ত একটি 'ডাং' এবং ক্রিকেটের "উইকেট"এর বেল সমমাপের 'গুটি'। মাটিতে ছোট একটি গর্ত করে সেখানে গুটি রাখা হত। তারপর তার নীচে ডাং ঢুকিয়ে জোরে দূরে মারা হত। কেউ যদি গুটি শূণ্যে ধরে ফেলতে পারত, তবে আউট ধরা হত। আর ধরতে না পারলে সেখান থেকে কুড়িয়ে ডাং এর কাছে ফেলতে পারলে সে মারার চান্স পেত। আর কাছে যদি না পড়ত, তখন ডাং দিয়ে গুটিটিকে তিন বার বাড়ি মেরে দূরে পাঠানো হত। এখানে মারার সময় কেউ যদি গুটিকে একাধিক শূণ্যের মধ্যে ডাং দিয়ে বাড়ি মারতে পারত, সেটার জন্য এক্সট্রা পয়েন্ট পেত। এভাবে যেখানে গুটিটি গিয়ে পড়েছে সেখান থেকে ডাং দিয়ে গুণে গুণে ঘর পর্যন্ত আনা হত। যার পয়েন্ট বেশি হত, সেই প্রথম হত।

২১: ঘুড়ি: ঘুড়ি উড়াতে আমি পটু ছিলাম না। ভাল ঘুড়ি উড়াতে পারতাম না। তবে আমার মা খুব ভাল ঘুড়ি বানাতে পারত। আমি আমার মায়ের কাছ থেকেই ঘুড়ি বানানো শিখেছিলাম।

২২: চোর-পুলিশ : কাগজে-কলমে এই খেলাটিও অনেক জনপ্রিয় একটি খেলা ছিল। চোর, পুলিশ, বাবু, ডাকাত। চোরের পয়েন্ট ৪০, ডাকাতের ৬০, পুলিশের ৮০ আর বাবুর ছিল ১০০। কি মনে পড়েছে? কাগজে কলমে আরেকটি খেলা ছিল। গ্রামে বেড়াতে গেলে এই খেলাটি খেলতাম। "যদু, মধু, রাম, সাম"।

২৩: মি : এই খেলাটি সবাই হাত ধরে গোল হয়ে খেলত। 'মি' বলে সবাই হাত ছেড়ে লাফ দিয়ে পিছনে সরে যেত। তারপর একজন আরেকজনের পায়ে পা লাগাতে পারলে সে আউট হয়ে যেত।

২৪: যুদ্ধ যুদ্ধ : ছোটবেলার একটা সময় বান্দরবানে কাটিয়েছি। তখন 'টিপু সুলতান' নামে একটা এপিসোড হত। সেটার দেখাদেখি আমরাও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। বড় ভাইয়েরা পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে আনত, তারপর সেগুলো দিয়ে তলোয়ার বানাত। আমাদেরকেও বানিয়ে দিত। কাঁঠাল পাতা দিয়ে বানাতাম মুকুট। কাশফুল মুকুটের সামনে জুড়ে দিতাম। তারপর শুরু হত যুদ্ধ। আহ ! কি সেই সময়গুলো।

এছাড়া আর এক রকম যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। সেটা হল গোলাগুলি। এক দলের উপর আরেক দল ছোট ছোট ইটের টুকরা (বোমা) ছুড়ে মারতাম, বড় ভাইদের থাকত স্টেনগান। কি সুন্দর করে বানাত বাশ দিয়ে। আমরা অবশ্য সেগুলো পেতাম না। কাগজের পিস্তলই ছিল পিচ্চিদের ভরসা !

২৫: টুনটুনি পাখি : এই খেলায় একজন হাটু গেড়ে বসে এবং দুহাত প্রসারিত করে রাখে। অন্যরা একে একে হাতের উপর লাফ দিয়ে পার হয় এবং নিচের ছড়াটি বলে। চোরের হাতে কারও পা লেগে গেলে সে চোর হত।
'টুনটুনি পাখি
নাচোতো দেখি
নারে বাবা নাচবো না
পড়ে গেলে বাচবো না
বড় আপুর বিয়ে
লাক্স/কসকো সাবান দিয়ে'

২৬: নাম মনে নেই : এটিও উপরের খেলাটির মতই। তবে এখানে চোর দুজনও হতে পারে। তারা মুখোমুখি বসে পা বিছিয়ে। এখানে প্রথমে এক পা , তারপরে আরেক পা, তারপর এক হাত, এরপর আরেক হাত এভাবে উচ্চতা বাড়াতে থাকে। অন্যরা ধাপে ধাপে এসবের উপর লাফ দিয়ে পার হত। যার পা চোরের গায়ে লাগত সেই চোর হত।

২৭: কিংকং : এই খেলাটি কিছুটা বোম বাস্টিং খেলার মতই। তবে এখানে একজন চোর থাকে যে বল ছুড়তে পারে। সে ছাড়া বল হাত দিয়ে আর কেউ ধরতে পারে না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বল ধরে দূরে সরিয়ে দিতে পারবে। তবে কেউ যদি 'সারেন্ডার' বলত, তাকে মারা হত না। এভাবে শেষ পর্যন্ত যে টিকে থাকত, সেই রাজা হত।

২৮: ক্রিকেট (খাতায়) : এই খেলাটি সাধারণত ক্লাসের ফাকে খাতায় খেলা হত। দুজন দুটো টিম সিলেক্ট করে ৫ কিংবা ততোধিক প্লেয়ার নিত। তারপর খাতায় গোল বৃত্ত একে সেগুলো কে চার, ছয়, দুই. তিন, সিঙ্গেল, বোল্ড, ক্যাচ, স্টাম্পিং এমন করে আলাদা ঘরে লিখা হত। তারপর চোখ বন্ধ করে বৃত্তের মাঝখানে একজন কলম ধরত আর অপরজন খাতা ঘুরাত। এরপর যে কলম ধরত সে অনুমান করে একটি ঘরের উপর কলম রাখত। এভাবে রান হলে রান, আউট হলে আউট হিসেব করা হত।

২৯: খাতার আরও কিছু খেলা :
শব্দ বানানো : এই খেলায় নির্দিষ্ট ঘরে একজন একজন করে একটি করে অক্ষর লিখত। যে পরের শেষ অক্ষর লিখত সে পয়েন্ট পেত। যেমন, একজন লিখল o, অন্যজন তার পাশে যদি N লিখত, তাহলে সে দু পয়েন্ট পেত।
ঘর মিলানো : ডট ডট দিয়ে সমদূরত্বে কিছু লাইন আকা হত। তারপর এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুকে একবার করে রেখা টেনে সংযুক্ত করা হত। এভাবে শেষ পর্যন্ত যে যতগুলো ঘর বেশী পূরণ করতে পারত সে জয়ী হত।
কাটাকুটি : এই খেলাটি ছিল ৯ ঘরের একটি খেলা। একই সারিতে যে তিনটি X বা O বসাতে পারত সে জয়ী হত।
.............................................................
ব্লগারদের সংযুক্তি

৩০: রুমাল চোর : এটি অনেক জনপ্রিয় একটি খেলা ছিল। রুমাল চোর নাম হলেও আমরা সাধারণত স্যান্ডেল দিয়েই খেলতাম। এখানে সবাই গোল হয়ে বসত। যে চোর হত, সে সবার পিছনে ঘুরে ঘুরে যে কোন একজনের পিছনে স্যান্ডেলটি রেখে দিত। আর একবার ঘুরে আসার আগেই স্যান্ডেল যদি যার পিছনে রাখা হয়েছে, সে পেয়ে যেত তবে সে উঠে স্যান্ডেল নিয়ে ঘুরা শুরু করত। আর না পারলে চোর এসে তার পিঠে দুম দুম কিল বসিয়ে দিত এবং তাকে মুরগী বানিয়ে সবার মাঝখানে বসিয়ে রাখা হত। (ব্লগার 'জু ন'-চতুর্মাত্রিক")

৩১: কাং : গোল একটা চাকতি থাকতো। অনেক গুলা বক্স থাকতো। চাকতি দিয়ে বক্স গুলাকে বিভিন্ন কায়দায় ফেলতে হতো। (ইমন কুমার দে)

৩২: চড়ুইভাতি : এই খেলাটি খেলেননি এমন কেউ হয়তো নেই। এখনো বাচ্চারা এই খেলাটি খেলে। নিজেরাই নিজেদের সংসার পেতে, রান্না বান্না করে। কি যে মজার এক খেলা। (ইমন কুমার দে)

৩৩ : দড়ি টানাটানি : এখানে বড় একটি দড়ি নিয়ে দুদলে ভাগ হয়ে দড়ির দু-প্রান্ত ধরে টানা হত। শক্তি পরীক্ষার মত। যারা দড়ি নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে আসতে পারত, তারাই জয়ী হত। ( ফাইরুজ)

৩৪: বৌ-চি : এই খেলায় বৌ তার দলের জন্য নির্দিষ্ট ঘর থেকে দূরে আরেকটা ঘরে অবস্থান করত। আর প্রতিপক্ষের দলের খেলোয়াড়দের কাজ ছিল বৌ যাতে তার ঘর থেকে দৌড়ে তার দলের ঘরে পৌছতে না পারে। আর বৌ-এর দলের একজন করে সদস্য দম নিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ছুয়ে দেয়ার চেষ্টা করত। ছুয়ে দিলে সে বাদ। তাই ছোয়া বাঁচাতে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রাও এদিক সেদিক দৌড়ায় আর তার ফাঁকে বৌ চেষ্টা করে এক দৌড়ে তার দলের নির্দিষ্ট জায়গায় চলে আসতে। বৌ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের কোন রকম ছোঁয়া ছাড়া নির্দিষ্ট স্থানে চলে আসতে পারলে বৌ-এর দল জয়ী আর যদি আসার সময় প্রতিপক্ষের কোন খেলোয়াড় ছুঁয়ে দেয় তবে প্রতিপক্ষ জয়ী। (ইনক্রেডিবল)

৩৫: নাম না জানা : আরেকটি খেলা খেলতাম। কিভাবে খেলতাম তেমন মনে নাই। তবে ছড়াটা মনে আছে- টগর মগর ঘী মলি, ঘী দে (দিয়ে) বেগুন চচ্চড়ি ....... , তারপর আরেকটি খেলা খেলতাম তাতে বলতাম এলপাত বেলপাত উঠাও তোমার সোনার হাত, আরেকটি খেলা ছিলো যেটাতে বলতাম থাল মাজি থাল মাজি উপুড় করো ......। আর ছোট বেলার সবচেয়ে মজার যে খেলাটি ছোটদের সাথে খেলা হয় সেটা হলো ছোট্ট বাবুটার হাত টেনে তালু পেতে বলা হতো ভাত দিলাম পোলাও দিলাম গোস্ত দিলাম ...এবার একটি বিড়াল আসছে গুড়ম্যও গুড় ম্যও গুড় ম্যও বলতে বলতে দু আঙুল হাতের উপরে হাটিয়ে নিয়ে তার বগলে সুড়সুড়ি দেয়া (মাধুকরী - আমার ব্লগ)

৩৬: জোড় জোড়: (তেতুলের বিচি বা খেজুরের বিচি দিয়ে খেলা হয়)
ট্রাই খেলা - এটা একটা চাড়া (মাটির পাত্রের ভাঙ্গা অংশ বা লোহার প্লেট) দিয়ে খেলতাম, আর টাকা বানানো হত বেবী লজেঞ্চ এর মোড়ক দিয়ে।একজন তার চাড়া ছুড়ে মারত আর টাকা (লজেঞ্চ এর মোড়ক) মুট করে ধরে বলত সেখানে চাড়া ফেলার জন্য, অন্যরা সেই চাড়ার ৪ আঙ্গুলের মদ্ধে ফেলতে হত, ফেলতে পারলে প্রথম পক্ষ তার ধরা টাকা দিয়ে দিত। আর না পারলে ২য় পক্ষ তার সম পরিমান টাকা দিত।
ভর্তুক - এটা নরম মাটি দিয়ে খেলা হয়, প্রথমে একজন নরম মাটি দিয়ে একটা ছোট পাত্রের মত (বাটি) তৈরী করে মাটিতে ছুড়ে দিবে, ফলে বাতাস বের হওয়ার সময় জোরে শব্দ হবে আর গর্ত তৈরী হবে, তখন অন্যরা তাদের মাটি দিয়ে ঐ গর্ত পুরণ করবে। এর পর অন্য জন একই ভাবে পাত্র বানিয়ে মাটিতে ছুড়বে। এভাবে সবার মাটি এক জনের দথলে চলে যাবে। তখন খেলা শেষ।

ভিতর - বাহির : প্রথমে মাটিতে দাগ কেটে একটি ঘর তৈরী করে নিতে হয়। তারপর একজন সামনে দাড়িয়ে বলবে ভিতর, তখন সবাই এক লাফ দিয়ে ঘরের ভিতরে দাঁড়াবে, পরমুহুর্তেই বলবে বাহির, সবাই এক লাফে বাহিরে দাড়াবে, এভাবে ভিতর -বাহির, বলতে বলতে হঠাৎ ভিতর-ভিতর বা বাহির - বাহির বলবে, যারা লাফ দিয়ে উল্টো করবে তার বাদ যাবে, অবশেষে যে থাকবে সে জয় লাভ করবে। (যুবাইরআজাদ)

৩৭: দাড়িয়াবান্ধা: এই খেলায় প্রথমে মাটিতে দাঁগ কাটা (কোট) হয়। দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলা হয়। একদল প্রতি দাগে একজন করে পাহারা দেয়। অন্যদলের উদ্দেশ্য থাকে প্রথম থেকে শুরু করে একদম শেষ পর্যন্তু গিয়ে আবার প্রথমে ফিরে আসা (প্রতিপক্ষের কেউ যাতে কখনো ছুতে না পারে)। এতে বিভিন্ন রকমের পাস এর ও ব্যবস্হা থাকে। কেউ একজন যদি প্রথম ঘর থেকে শেষ পর্যন্ত যেতে পারে তাহলে সে রেড মার্কড হয় এবং যদি আবার তার শুরুর অবস্থায় ফিরে আসে তাহলে গেম হয়। বিজয়ী গ্রুপ আবার প্রথম থেকে খেলা শুরু করে। (ইমন কুমার দে)


খেলায় চোর নির্বাচন কিংবা টস করার ব্যাপারটিও অনেক মজার ছিল। কেউ একজন আঙ্গুল ফুটাত। ফুটানো আঙ্গুলটি যে ধরত, সেই চোর হত। অথবা তিনজন তিনজন করে হাতের পাতা একসাথে করেও এটি করা হত। লক্ষণীয় ব্যাপার হল এই , অনেক খেলাতেই চোর একটি কমন বিষয় ছিল। যদিও তার কাজ ছিল পুলিশের অর্থাৎ খোজাখুজি কিংবা কাউকে ধরা, কিন্তু তার নাম চোর হত কেন এটার ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।

উপরের খেলাগুলো ছাড়াও আরও অনেক খেলা ছিল। যেমন, গোল্লাছুট, মার্বেল, দড়ি লাফ, ছক্কা/লুডু, পুতুল খেলা, পাথর চুরি, মাংস চুরি ,এক্কা দোক্কা, হাডুডু। এছাড়া গতানুগতিক খেলার কথা বাদই দিলাম। বাবার চাকুরীর সুবাদে অনেক জায়গায় থাকা হয়েছে, সেই সুবাদে অনেক মানুষের সাথে মিশেছি, অনেক খেলাধুলা সম্পর্কে জেনেছি, খেলেছি। এখনকার ছেলে-পুলেরা হয়তো এসব খেলার কথা শুনে হাসবে।

>> অনেক খেলার নাম হয়তো জায়গাভেদে ভিন্ন হতে পারে। সেগুলো উল্লেখ করে দিন।

(উৎসর্গ - আমার ছোট ভাই ফারহানকে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৫৮
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×