অনেক দিন আগের কথা, তখন ২০০৩ সাল, ১৭ বছরের এক কিশোরের তখন চঞ্চল সময়। নতুন করে শিখছে সাম্যবাদ, বিপ্লবের গল্প, মার্ক্স, লেলিন, রাশিয়া, কিউবা, চীন, মাও। সেই সাথে বাংলার বিপ্লবের ধারা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ। ক্ষুদিরাম, মাষ্টার দা, জালিওয়ালানবাগ, নকশাল...মনে হত যদি একটা বিপ্লব পেলে কি না হত...বিপ্লব পাইনি কিন্তু তাই বলে বিপ্লবের গল্প থামেনি...
সেই অসম্ভব সুন্দর সময়ে আকাশের চাঁদ পেয়েছিলাম এক ভরদুপুরে, এক বন্ধু এসে আমার সে উতসাহে তেল ঢেলে দিল...জানাল সে এক বিপ্লবিকে সাহায্য করছে তার ডায়রিটা ঠিক ঠাক করার জন্য...আমার কিছু জানার ছিলনা শুধু নিঃশ্বাস বন্ধ করে জানতে চেয়েছিলাম আমার কিছু করতে দেয়া যায়...বন্ধু জানাল শুধু ওর সাথে নিয়মিত গেলেই হবে।।একা কাজ করতে ওর ভাল লাগেনা...মনে মনে আমার নাচ কে আর দেখে...
মাত্র মাস দুয়েকের কথা বোধহয়...শুক্রবার সকাল দশটায় যেতাম, মাত্র ঘন্টা দুয়েক বা তিনেক,
ডাকতাম বাকিদের মত দাদু বলেই,তখন খুব বেশি দেখতে পেতেন না, আমরা পড়ে শোনাতাম ধীরে ধীরে, তারপর তিনি বলতেন আর আমরা দুজন ভাগ করে লিখতাম...খুব আস্তে কথা বলতেন, শরীরে যে খুব শক্তি ছিলনা। খুব ধীরে মাঝে মাঝে চেষ্টা করতেন আতসী কাঁচ দিয়ে পাতাগুলো দেখতে, হয়ত পড়তে পারতেন না শুধু রঙ দেখে বুঝতে চাইতেন কোন সময়কার লেখা... আফসোস সবগুলো দেখার সুযোগ পাইনি...তার কিশোর, বিপ্লবের সময়, জেলখানার সময়, মাশষ্টারদার সাথে বিপ্লবের সময়গুলো ওই ডায়রিগুলোতে বাঁধা ছিল থরে থরে। যত সময় না লেখা হত ডায়রি তার চেয়ে বেশি হত গল্পই...দেখা যেত এক একদিন আর লেখাই হয়না খালি গল্পই শুনি মুগ্ধ হয়ে...। মাঝে মাঝে যেন ফিরে যেতাম সে সত্তর বছর আগের সময়ে...সেই ডায়রি আমাদের আর লেখা হনি শেষ পর্যন্ত...একদিন খেলাঘর ভাঙ্গল।
কোন এক কারনে ভুল বুঝলেন আমাদের...আমাদেরও আর যাওয়া হলনা, অনেকদিন পর্যন্ত তার ঊপর অভিমান ছিল আমার।।তাই আর দেখা করিনি কোনদিন...তবুও মনে পড়ত সে মাস দুয়েকের গল্পগুলো......
আজ নেই তিনি...।আর কখনো না জানা গল্পগুলো করা হবেনা...বলা হবে না কি ভীষন তেষ্টা নিয়ে সে সতের বছরের ছেলেটা বসে থাকত...বলা হবেনা অনেক অভিমান জমা ছিল এ ছেলেটার।
এখন তার যে আরও বেশি দকার ছিল এ প্রজম্নের...বিপ্লবে,চেতনায়।
বিদায় দাদু।
বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী
বিজয় আসবেই।কাল না হোক পরশু হলেই হবে।
জয় বাংলা।