এখন আমি মেডিকেলের মর্গে পড়ে থাকা একটা মৃতদেহ। আজ বিকাল বেলা আমি আত্নহত্যা করেছি। জানি আত্নহত্যা মহাপাপ, তারপরও করেছি। আমার জীবনটা কেন এমন হল? আমার কি খুব বেশি চাওয়া ছিল? খুব কি আকাঙ্খা ছিল? অথচ আমার পাওয়া ছিল খুবই সামান্য।
আমার জীবনটা আমার জন্ম থেকে শুরু হয়নি তার আগের থেকে আমার শিকড়, আমার বাবা থেকে।
আমার বাবা গ্রামের সাধারন ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে রাজনীতি জড়িয়ে ক্ষমতা পাওয়ার লালসায় খুনের সাথে জড়িত হয়েছিলেন। তারপর তার পড়াশুনা আর এগোয় নি। আমার বাবা গ্রামে ফিরে যান, মাকে বিয়ে করেন কিন্তু রাজনীতিটা উনি ছাড়তে পারেন নি। একসময় দেশে যখন যৌথবাহিনী খুব ধরপাকড় শুরু করলো, তখন আমরা স্বপরিবার ঢাকাতে চলে এলাম। এখানে আমার বাবা পুরোপুরি বেকার, গ্রাম থেকে খুব সামান্যই টাকাপয়সা আমাদের সংসার চালানোর জন্য আনা হতো। ঢাকাতে জীবনযাত্রার এই লাগামহীন চালের সাথে খাপ খাওয়ানো খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া আমাদের কিছু সচ্ছল আত্নীয় স্বজন আমাদের কিছু সাহায্য করতো। কিন্তু অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়াটা খুবই অপমাণজনক লাগতো আমার কাছে।
তারপরও খেয়ে না খেয়ে চলে যাচ্ছিল আমার এই জীবন। খুব স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। কিন্তু যখন ভর্তি ফরম কিনব তখন আমার বাবার হাত একেবারে শূন্য। আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থাই তখন ঠিকমত হচ্ছিল না। নিজেকে বুঝ দিলাম আমি খুব মেধাবী না, চান্স নাও পেতে পারি। ফরম কিনলে শুধু শুধু খরচ হত। এরপর যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম ছাড়লো, আমি বাবার কাছে টাকা চাইলে বাবা দিতে পারল কিন্তু আমার বখে যাওয়া ভাই ওটা কেড়ে নিয়ে গেল।
সাইন্স পড়ার অনেক খরচ। আমি সাইন্স পড়লে আমার ভাইয়ের পড়ার খরচ জুটবে না বলে আমি সাইন্স পড়িনি। মায়ের ইচ্ছা ছিল তার ছেলেকে ডাক্তার বানাবে, আমি তো মেয়ে!
ভাইটা আমার বখে গেছে, আমার টাকাটাও যখন আজকে নিয়ে গেল, তখন আমার মনে হচ্ছিল এত ছোট হয়ে কোন উদ্দেশ্যবিহীন জীবনের চেয়ে মৃত্যু অনেক সহজ। তাই গলায় ওড়না পেচিয়ে নিজেকে মুক্ত করলাম।
আমি কি মুক্ত করতে পেরেছি নিজেকে? নাকি নতুন বেড়াজালে আটকে ফেললাম? আমার মৃত্যুটা আমার জন্যই স্বাভাবিক হলো না, আমার আত্নাটাও আল্লাহ্' র কাছে মাফ পাবে না।
আমার জীবনের প্রথম অধ্যায় এখানেই শেষ হল আর শুরু হল দ্বিতীয় অধ্যায় যা আরো ভয়ংকর।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৫