ছোটবেলায় ও বেশ হাবা টাইপ ছিল। আমরা ওকে ক্ষেপিয়ে অনেক মজা পেতাম, ওকে জরিনা বললে সাথে সাথেই শুরু হতো!! যদিও ও আমার থেকে ৮/৯ বছরের ছোট। ওর নাম জাহিন, আমার কাজিন। ওর যখন বয়স ১১ বছর তখন ওর ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। সেবার ও খুলনায় আসার পর খালি মাথার পিছনে ব্যথা বলে কাদতো। তারপর বাসায় যাবার পর খালু মানে ওর আব্বু(ডাক্তার) ওকে টেস্ট করান এবং ওর রোগ ধরা পড়েছিল। প্রথম যখন ওর অসুখের কথা শুনি তখনকার আঘাতটা এখনও মনে করলেও ভয় লাগে।
একথা প্রথমে নানীকে বলা হয়েছিল না কারণ আমার সবচেয়ে ছোটমামা্ ১৫ বছর বয়সে ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছিলেন। যখন মামা অসুস্থ ছিলেন তখন নানীকে বলতেন মা আমি বাচতে চাই, কিন্তু আজ থেকে ৩৮ বছর আগে কিছুই করা যায় নি। নানী সারাজীবন এই দু:খ নিয়ে কাটিয়েছেন।
যে কথা বলছিলাম, আমার কাজিনকে যখন চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন নানীকে বলতেই হয়েছিল। তারপর ও সুস্থ হয়ে ফিরে আসলো। আমরা সবাই ভাবলাম এবার বুঝি আমরা পার পেয়ে গেলাম, ওর সমস্যা মিটে গেছে। কিন্তু না ওর এবার নতুন আরেক সমস্যা শুরু হল, ঘাড় থেকে হাত পর্যন্ত প্রচন্ড ব্যথা আর আরেকটি অপারেশন। এই অপারেশনের পর ছোট্ট আমার এই বোনটার রগে টান লেগে বাম পাশটা প্রায় অবশ হয়ে গেছে। ডাক্তার ওকে বিভিন্ন এক্সারসাইজ করতে দিয়েছে। সবই করে কিন্তু কোন উন্নতি নাই। তারপরও ও হরমোনের সমস্যার জন্য ওষুধ খেয়েছে প্রায় একবছর।
এখন ও আর আগের মত নাই অনেক বুদ্ধি হয়েছে। আমরা ওকেই এখন নানী বলি। ওর অনেক কিছুই ইচ্ছা করে আমরা বুঝি কিন্তু ও নিজেকে ইদানীং গুটিয়ে নিয়েছে, লোকজনের কথার জ্বালায়। ও তেমন লোকজনের সামনে বের হতে চায় না। আমি নিজেই একবার একজনকে বলতে শুনলাম ওর সামনে বলতে, “বাচবে না মনে হয়!!” তবুও আমাদের বাসায় আসলে আমরা চেষ্টা করি সব ধরনের মজা করে ওকে আনন্দে রাখতে।
ওর একবছর গ্যাপ গেছিলো। কিন্তু ও থেমে থাকে নি, ক্লাস ফাইভে ও এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। ওকে সাইন্স পড়াতে চাইছিলো না খালা কারণ ওর শরীর প্রায়ই খারাপ থাকে। কিন্তু ও নিজেই সাইন্স নিয়েছে। আমি প্রায়ই নিজের পড়াশুনার ব্যাপারে বলি, এত কষ্ট করতে আর ভাল লাগে না। যখন ওর কথা ভাবি তখন আর কিছু মনে হয় না।
আমার বিশ্বাস এই ছোট্ট আপুটা আমার একদিন অনেক বড় হবে। আপনারা ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন।