আমার ফটোগ্রাফির পথ চলার রাস্তা অনেক দীর্ঘ। আমি অনেকগুলো রাস্তা হেঁটেছি কখনো একলা কখনো কারোর ইশারায় দেখিয়ে পথ ধরে। কখনো হোঁচট খেয়েছি ভুল রাস্তাতে হেঁটেছি বহুবার। একেক পথ শেষে অর্জন করেছি নতুন অভিজ্ঞতা। আমি ফটো তুলতাম ঝোঁকের বশে বাবার দেখিয়ে দেয়া পথে। সেটি বহু পুরানো দিনের কথা। তাও অনিয়মিত বছরে একবার কি দু'বার।
২০১১ এর প্রথম দিকে আমার সত্যিকার প্রফেশলান ফটোগ্রাফির চর্চার ভূতটা চাপিয়েছিল আমার সহপাঠী মুনীম। আমি বরাবর ডিজিটাল ক্যামেরাতে সন্তুষ্ট থাকতাম। ও আমাকে বলেছিল "টিটিএল" ফটোগ্রাফি গ্রুপের কথা। পরে জানতে পারলাম সেখানে কোন এক শনিবার সারা দিন ভর ফটোগ্রাফির বেসিক কোর্স করতে গিয়ে ফটোগ্রাফির টেকনিকাল বিষয়গুলো মাথা উপর দিয়ে গেল। সেখানে ইন্সট্রাক্টর হিসাবে পেলাম দারুন হৃদয়ের মানুষ ও অহংকারহীন ফটোগ্রাফার সাউদ আল ফয়সাল ভাই। উনি সেদিন দারুন সব প্রেজেন্টেশানের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন ফটোগ্রাফি অসংখ্য অজানা বিষয়গুলো । সে থেকে ভূত ঢুকে গেল ফটোগ্রাফির। সেদিনের কোর্স শেষে ফয়সাল ভাই জানালেন সামনে একটা ফটো সাফারী আছে সেখানে যেতে লিচুর দেশ দিনাজপুরে। সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম।
আমার বন্ধুসুলভ বড় ভাই অনুপম ভাইকে রিকোয়েস্ট করলাম একটা সেকেন্ড হ্যান্ড প্রফেশলান ক্যামেরার বিক্রির জন্যে উনি আমার জন্যে ক্যানন এক্স টিই আই (৪০০ডি) এর ব্যবস্থা করলেন।
দিনাজপুরে গিয়ে আমি পরিচিত হলাম দারুন সব ফটো ব্যাক্তিত্বদের সাথে হাসিন ভাই, রিপন ভাই, সুদীপ্তদা। হাসিন ভাই আমাকে প্রথম জানালেন কোথায় কি ফটো তুলতে হবে। আমি ওয়াইড লেন্স সম্পর্কে সেদিন পরিচিত হলাম। তখন আমি সবে অটো থেকে ম্যানুয়াল মুডে ফটো তোলা শেখা শুরু করলাম। বিভিন্ন গ্রুপের সাথে ফটো ওয়াকে যেতাম, ফটো আড্ডাতে যেতাম। একসময় ফটো প্রদশর্নীতে ছবি চলে গেল খুবই অবাক হলাম। আগ্রহ বেড়ে গেল।
একসময় উপলব্ধি করলাম আমার ফটোগ্রাফি চর্চা একটা জায়গাতে আটকে আছে। একগাদা বই কিনে ফেললাম। ভিডিও টিউটোরিয়াল জোগাড় করে শুরু করে দিলাম পড়াশুনা। আমি অনেক সিনিয়র ফটোগ্রাফারদের কাছে এটা ওটা জানতে চেয়েছি সবাই গম্ভীর হয়ে বলেছিল, নেটে পাবেন আবার, কেউ বিরক্ত হয়েছিল। তখন থেকে বুঝতে পেরেছিলাম মুক্ত চিন্তার ফটোগ্রাফির চর্চা বলে কিছু নেই। সেই চর্চা একদল অহংকারী ফটোগ্রাফারদের বেড়াজালে বন্দী।
২০১২ সালে আমি হাসিন ভাই ফটো তুলতে তুলতে নিজের মতন ফটোগ্রাফির গ্রুপ খুলে ফেললাম এবং নাম দিলাম গ্রাসহপার্স। আমাদের স্বপ্ন ছিল যেখানে সবাই মুক্ত চিন্তার ফটোগ্রাফি চর্চা করবে। এর আগে কোনদিন আমি কোথাও মুক্ত চিন্তার চর্চা করতে পারি নি। আমি শুরু করলাম তুমুলভাবে ফটোগ্রাফি চর্চা। অনেক তরুন প্রতিভাবান মুখ পেয়ে গেলাম পারভেজ, শাহাদাত, তুষার, শারমিন, তনয়, মুক্তার, মইন, জিশান, স্বপ্নীল, মেহেরুন, ফাহাদ, সাকিব, হুমায়রা, সুদিপ্ত, রানা, মাহফুজ আনাম, বীজু, মাসুম, সাব্বির এরকম অনেক মুখ। এরা আমার ফটোগ্রাফির চলা পথে কোন না কোন ভাবে আলো দেখিয়েছিলেন, দেখাচ্ছেন।
অতঃপর জানতে পারলাম আরো অনেকগুলো গ্রুপের কথা তাদের মধ্যে অন্যতম শুধুই বাংলা, শখের ফটোগ্রাফি, ওল্ড ঢাকা ফটোগ্রাফি, ফটোফি গ্রুপের কথা সুদীপ্ত সালাম ভাইয়ের কথা, পরিচিত হলাম নীলয়, অনুপম, পবিত্র পাপী, ফয়সাল আরো অনেকের সাথে।
শুধুই বাংলার সোহান ছেলেটার সাথে পরিচয় বেশী দিনের নয়, ও দারুন উচুঁ মনের মানুষ ও ফটোগ্রাফার। আমাকে সেদিন একগাদা ফটোগ্রাফি বিষয় ভিডিও টিউটোরিয়াল দিল এত ভালো লাগলো সেগুলো দেখে। ওর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা দ্বিগুন বেড়ে গেল। আমার ধারনা ছিল যারা উচুঁ মাপের ফটোগ্রাফার তারা উচুঁতে থাকতে পছন্দ করেন তারা আমাদের মতন নিচুসারির ফটোগ্রাফারদেরকে কিছু শেখাতে অপমানবোধ করেন।
তারপর দারুন লেখক মাহীর এমন অনেক প্রতিভাবান আছে যাদের নাম লিখতে বিশাল ইতিহাস হয়ে যাবে।
অনেকের সাথে দেখা হচ্ছে পথে ঘাটে। অনেকের সাথে দেখাই হচ্ছে না। ভুলে যাচ্ছি কারোর নাম কারো চেহারা। ওরাও আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে না। এইভাবে আজও আমি হেঁটে চলছি। সম্মুখে অনেক লম্বা রাস্তা বাকি সেগুলো আমাকে একাই পেরুতে হবে।
২২ই মার্চ, ২০১৩
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৮৪/৩৬৫
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪০