somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্ল্যাক, বেল

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বশির ভাই।
সবাই ডাকে ব্ল্যাক বশির।
সেরের ওপর সোয়া সের আছে। বশির
ভাই কালোর ওপর সোয়া কালো।
আরেকটু কালো হলে রাস্তার পিচের
মানসম্মান যেত। পিচঢালা পথকে
ভালোবেসে পিচের চেয়ে একটু কম
কালো হয়েছেন তিনি।
তবে নাম ব্ল্যাক বশির হওয়ার কারণ,
বশির ভাইয়ের গায়ের রং না।
ব্ল্যাক বশির হওয়ার ইতিহাস আছে। এবং
ইতিহাস তৈরিতে তার মুখের কথার
একটা ভূমিকা আছে।
...আরে আমি তো ব্ল্যাক বেল্ট।
বশির ভাইয়ের মুখে ঘুরেফিরে সব সময় এই
এক কথা। মানুষের বেল্ট ঝোলে
কোমরে। বশির ভাইয়েরটা ঝুলে আছে
মুখে।
ঠিক গল্পের সেই ছাত্রের গরুর রচনা
লেখার মতো। ছাত্রকে যে বিষয়েই
রচনা লিখতে দেওয়া হয় না কেন, শেষ
পর্যন্ত তা গরুর রচনায় পরিণত হয়।
বশির ভাইও তাই। তার সব কথার শেষ
কথা, আরে আমি তো ব্ল্যাক বেল্ট। বেল্ট
দিয়ে তিনি সব সমস্যার সমাধান করতে
চান।
আমরা বলি, বশির ভাই, পাশের পাড়ার
বিল্টু তো বিটলামি করতেছে। কী
করি?
বলিস কী! ওই ছোকরা জানে না যে
আমি ব্ল্যাক বেল্ট।
জানে তো ভাই। তার পরও বিটলামি
করতেছে।
হুমম। ও বেল্ট দ্যাখছে। কিন্তু বেল্টের হুক
দ্যাখে নাই।
আমরা ব্ল্যাক বেল্টের হুক খোঁজার
চেষ্টা করি। কিন্তু বশির ভাইয়ের
কোমরে বেল্টই খুঁজে পাই না।
একদিন বিকেলে আমাদের বন্ধু সানি
খেলতে আসেনি।
বশির ভাই বললেন, সানি কই?
ওকে ওর বাবা হেভি প্যাদানি
দিছে। বলছে, এখন থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত
খেলা বন্ধ। যারা খেলতে আসবে,
তাদেরও নাকি কেলাবে।
বলিস কিরে!
বশির ভাই অবাক হন খুব।
আঙ্কেল কি জানে না, আমি ব্ল্যাক
বেল্ট?
আপনি ব্ল্যাক বেল্ট না গেরুয়া বেল্ট,
সেটা আঙ্কেল জেনে কী করবে?
বশির ভাই হাসেন।
আরে ব্ল্যাক বেল্টের মজাটাই তো
এইখানে। থাকবে আমার কোমরে আর
চাপ তৈরি হবে চাচার কোমরে।
চাচা এমনিতেই চাপে আছেন। হার্টের
রোগী।
উনাকে চাপ দিয়ে লাভ নেই ভাই।
ঠিক আছে। তোরা যখন বললি।
অদৃশ্য বেল্টে একটা বায়বীয় গেঁড়ো
দেন বশির ভাই।
এভাবে প্রায় সব বিষয়েই বশির ভাই
তার ব্ল্যাক বেল্টের গল্প হাজির করেন।
এবং এভাবেই ব্ল্যাক বেল্টের ‘ব্ল্যাক’
বশির ভাইয়ের নামের আগে জুড়ে যায়।
তবে বশির ভাই কবে কার কাছে কংফু-
কারাতে শিখেছেন, তা আমাদের
জানা নেই। তার কোমরে কিংবা
শরীরের অন্য কোনো জায়গায় ব্ল্যাক
বেল্টের অস্তিত্বও আমরা দেখিনি
কখনো।
গল্পের দৈত্যের মতো না দেখা
জিনিসেই ভয় সাধারণত বেশি।
আমরাও মাঝেমধ্যে পাড়ার অন্যদের ভয়
দেখানোর চেষ্টা করি। বশির ভাইকে
বললে কিন্তু খবর করে দেবে। উনি ব্ল্যাক
বেল্ট।
শুধু ব্ল্যাক না। ডিপ ব্ল্যাক।
আমাদের বন্ধু মন্টু বাড়িয়ে বলায়
ওস্তাদ। ব্ল্যাককে ও ডিপ ব্ল্যাক
বানিয়ে ফেলে।
কিন্তু বাঘের ছাল বিড়ালের গায়ে
চড়ালেই যেমন সে বাঘ হয় না, তেমনি
বশির ভাইয়ের কারণে ব্ল্যাক বেল্টও
তার গুরুত্ব হারায়।
মানুষটা যেহেতু বশির ভাই, তার
নামের সাথে ব্ল্যাক বেল্ট জুড়ে খুব
একটা পাত্তা পাই না আমরা।
একদিন বশির ভাইয়ের বন্ধু মতিন ভাই
তো বলেই ফেললেন, তোকে যে ব্ল্যাক
বেল্ট দিছে, সে একটা নাম্বার ওয়ান
আহাম্মক।
কী বললি তুই...
হ। শুধু আহাম্মক বললে কম বলা হয়। ওই
ব্যাটা একটা আন্ধা। কোনো কালার
সেন্স নাই। কালারে কেউ কালা বেল্ট
দেয়! কালার ওপরে কালা বেল্ট
দেইখাই তো কেউ তোর বেল্ট খুঁইজা
পায় না। পাইব কেমনে? বেল্ট তো
তোর মুখে।
তুই...তুই...তুই...কিন্তু বর্ণবাদী আচরণ করছিস
মতিন।
ক্ষেপে গিয়ে তোতলাতে শুরু করেন
বশির ভাই।
তা তুই আমারে বাদী-বিবাদী-
বর্ণবাদী যা খুশি বলতে পারিস। কিন্তু
ছোটবেলা থেকে আমি একটা জিনিস
শিখছি, সদা সত্য বলিবে। আর সত্য বলতে
গেলে...
থাক। আর বলতে হবে না।
মতিন ভাইকে থামিয়ে দেন বশির
ভাই।
মতিন ভাই থামলেও বশির ভাইয়ের গল্প
থেমে থাকে না।
তবে সবাইকেই কখনো না কখনো
থামতে হয়।
বশির ভাই থেমেছেন।
সেটাও একটা গল্প।
একদিন সন্ধ্যায় নাক-মুখ ফাটিয়ে বশির
ভাই হাজির।
কী হয়েছে? কী হয়েছে ভাই...
বশির ভাইকে ছিনতাইকারী ধরেছিল।
সাথে যা ছিল সব নিয়ে নিয়েছে।
তবে তাকে একদম খালি হাতে
ফেরায়নি। উপহার হিসেবে কিছু কিল-
থাপ্পড় দিয়েছে।
আমরা বললাম, ভাই, আপনি না ব্ল্যাক
বেল্ট? তাইলে কেমনে কী?
ফোলা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি
হাসেন বশির ভাই।
আরে ওই ব্যাটাদের কপাল ভালো।
আজকে সাথে বেল্টটা আছিল না..
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×