somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেবতিক এই উপন্যাস না লিখলেও পারতেন

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জেবতিক যেমন তার উপন্যাসখানা না লিখলেও পারতেন তেমনি আমিও এই লেখাটি না লিখলেও পারতাম। অনেক দোনমনা করে লিখেই ফেললাম। ন্যাংটো রাজার গায়ে চমৎকার রেশমী পোষাক আবিস্কার করে ও তার সৌকর্যে মুগ্ধ হয়ে যে বা যারা স্তুতি করেন তাদের কোন ক্ষতি না হলেও রাজার ন্যাংটোত্ব কিন্তু ঠিকই প্রলম্বিত হয়। এ কারণে দারুন কিছু লেখার স্রষ্টা জেবতিকের উপন্যাসের ব্যাপারে নিস্পৃহ থাকা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে না।

’ধুলি মাখা চাঁদের’ ডাকে সাড়া দিয়ে অর্থাৎ খরিদ করে এবং পাঠ করতে আরম্ভ করে কোন বাঁধা পেতে হয় না। এক নিঃশ্বাসেই পড়ে ফেলা যায়, কারণ কোন কিছুই ভাবায় না, পোড়ায় না। উপন্যাসটি নায়ক প্রধান। আনিস এবং দীপুকে কেন্দ্র করে এর গল্প আবর্তিত হয়েছে। বদরুল, তওহীদ, মির্জা, জয়ীতা, সেঁজুতি সহ আরো কিছু চরিত্র এসেছে। পেশীশক্তি নির্ভর রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসে আনিস। কিন্তু অন্ধকার জীবনের পুরোনো ঘটনাপ্রবাহের জের তাকে ছাড়ে না। উচ্ছাস নামের একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী দীপু। সাংস্কৃতিক জগতকে ঘিরেই তার যত স্বপ্ন, প্রেম আছে একটি অনুষঙ্গ হয়ে। উচ্ছাসের বিকশিত রূপ আতঙ্কিত করে তোলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও মৌলবাদীদের। নানা ঘটনার ঘনঘটা পেরিয়ে দীপু জীবন দেয়। পুরোনো অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েও আনিস ব্যর্থ হয় দীপুর জীবন বাঁচাতে।

এরকম ঘটনা নিয়ে আরো কয়েক গন্ডা উপন্যাস লেখা হয়েছে। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। জেবতিক এটাকে কতখানি শিল্পিত করতে পেরেছেনে, বা জীবনবোধ ও সময়কে তা কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছে সেটাই মূখ্য। এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই এবং জেবতিকের লেখা যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য এ উপন্যাসে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোন কিছুর সুযোগ নেই। ছাত্র রাজনীতির মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এ উপন্যাসের অন্যতম অনুঘটক। এ নিয়ে আলাপ পাড়তে গেলে অবশ্যই লেখকের কিছু ইতিহাস বোধের পরিচয় দিতে হয়। আমাদের তরুণরা তো আর এমনি এমনি বিপথগামী হয়নি। তার অনিশ্চয়তা, প্রতিদিনকার অস্থিরতা ও সাংস্কৃতিক দৈন্যতার যে রূপ এখন বাস্তব; সে বাস্তবের পেছনে আর কোন বাস্তব নেই? লেখক চরিত্র গুলোর মুখ নি:সৃত সংলাপ দিয়ে লাইনের পর লাইনের মনোটোনাস ঘটনার বর্ণনা দিয়ে যাবেন কিন্তু সময় ও বাস্তবের কাঁটাছেড়ায় পাঠককে অংশগ্রহণ করাবেন না আদৌ, এরকম উপন্যাস অন্য কেউ লিখতে পারেন কিন্তু জেবতিক কেন?

যদি মেনে নেই, এটি একেবারেই বর্ণনাধর্মী উপন্যাস যেখানে গল্পটাই মুখ্য তাতেও সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। জেবতিকের উপন্যাসের শেষাংশে যখন দীপু মারা গেল, এ জায়গাটির বর্ননায় লেখকের দায়সারা ভাব রীতিমত পীড়া দিয়েছে। ’মেয়েরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল বা কেউ একজন বলল, দীপুকে মেরে ফেলেছে শুয়োরের বাচ্চারা, আনিস টের পেলো তার পায়ের নীচে মাটি সরে যাচ্ছে’ এরকম দু’চার লাইন দিয়ে উপন্যাস শেষ করা হল। শেষ হল ’তাকে ডেকেছিল ধুলিমাখা চাঁদ’ এর ডাক। দূর্মুল্যের বাজারে নগদ আশি টাকা খরচ হয়েছে বলে নয়, ’ধুলিমাখা চাঁদের ডাক শেষ করে চাঁদ খুঁজে না পেয়ে শুধু ধুলি ঝাড়তে হয়েছে বলেও নয়; আমি চিন্তিত একজন সম্ভাবনায়, সৃষ্টিশীল লেখকের গাঁজোয়ারি মানসিকতায়।

এ কারণেই এ লেখার শেষ একটি পূনরোক্তি দিয়ে, ’ আরিফ জেবতিক এই উপন্যাসটি না লিখলেও পারতেন।’


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:০৬
৪৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×