তিনটি ছবির সিক্যুয়াল, একজন তরুণী গার্মেন্ট কর্মী ও জিন্স পরা পুলিশ কর্মকর্তা। ধর্ষক যেভাবে এগিয়ে যায় সেভাবে চট্টগ্রামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা গার্মেন্টের মেয়েটিকে পিষে ফেলার চেষ্টা করছে। শেষ ছবিটিতে মাটিতে শুয়ে পড়া মেয়েটির পায়ের উপর বুটসুদ্ধ উঠে দাড়িয়েছে সে। মেয়েটির চোখের ভয়-আতঙ্ক ততক্ষণ অবশিষ্ট নেই, মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে মানুষ যেভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়! এই রাষ্ট্র একটি রূপান্তরিত ড্রাকুলা। বছরের পর বছর ঘাড়ে অনবরত লুটেরা ড্রাকুলাদের কামড়ে তার এই রূপান্তর। কিন্তু রাষ্ট্রের খাওয়ার মত এত রক্ত কই? না খেতে পেয়ে গার্মেন্টের অপুষ্ট মেয়েগুলির শরীরে রক্ত আর নেই তো, অথচ তাদের রক্তটুকুই যা ভরসা। সারা বছর রাষ্ট্রকে রক্ত-স্তন্য পান করিয়ে মাতৃদ্বের দাবীতে একদিন রাস্তায় নামার অবশিষ্ট ক্রোধ-ক্ষোভটুকু ধর্ষণ করে নি:শেষ করে যে জানোয়ার-তাকে হত্যা করতে হবে।
কারখানায় আগুন লাগার পর কলাপসিবল গেটগুলি লাগিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে মালিকপক্ষ। কেন এ কাজ করা হয় তার পক্ষে জোরালো যুক্তি আছে তাদের। কর্মীদের নেমে যাওয়ার হুড়োহুড়িতে মালিকের মূল্যবান সম্পদের ক্ষতিসাধন যেন না হয়! আর এভাবে জীবন্ত কয়লা হয়ে যায় একজন মা, বাবা, একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান। অর্থনীতিতে মা বাবা বলে কিছু নেই, আছে সস্তা শ্রমিক। তারা এতটাই সস্তা যে ইট কাঠ পাথরের দামও তাদের চেয়ে অনেক বেশি। প্রবৃদ্ধির গতি চক্রাকারে বাড়ে, ফুলে ফেপে ওঠে অর্থসম্পদ অথচ শ্রমিকদের বাচিয়ে রাখার মানসিকতাটুকুও তৈরি হয় না। বাজার দরের সাথে সঙ্গতিহীন অন্যায্য যে মজুরিকাঠামো ঘোষিত হয় তা বাস্তবায়নেও মাসের পর মাস টালবাহানা চলতে থাকে। মালিকের হিসাব সোজা। এত লোক আছে এ দেশে যে একপাশ থেকে মারতে শুরু করলেও সবার মরতে অন্তত একশ বছর লেগে যাবে। সম্পদের পাহাড় গড়ে চোখে ঠুসি লাগিয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়া যে জানোয়ার আগুনে জ্বেলে দেয় মনুষ্যত্ব-তাদের হত্যা করতে হবে।
২ মাসের বিরামহীন নির্যাতন-কারাবাসে বিপুল পরিমাণ প্রাণশক্তি ক্ষয় করিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিকদের কন্ঠ মন্টু ঘোষকে। গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের আরেক কন্ঠ মোশরেফা মিশুকে। কোর্ট একটি মামলায় মিশুকে দুইদিনের রিমান্ড দিয়েছে। আগামীকাল আরো হবে। এযাবত কারখানার গেটে তালা কিংবা ব্যবস্থার অভাবে শতশত শ্রমিক নিহত হয়েছে, কোন মালিকের বিচার হয়নি। হাজার কোটি টাকা বকেয়া রেখে কোন মালিক শাস্তি পায়নি। যৌন নিপীড়ন, মারপিট, মজুরি না দেয়ার অপরাধেও কোন মালিকের শাস্তির নজির নেই। এগুলোর প্রতিবাদ করলে শাস্তি দিতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা, আইন আর মাস্তানির অভাব নাই। রাষ্ট্রকে জানোয়ার বললে বা হত্যা করার আহ্বান জানালে নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রদোহিতা হয়, তাই এরকম কিছু বলছি না!