সকালে অভ্যেসমত দালাল প্রথম আলো পড়েছি। আগে একাধিক পত্রিকায় চোখ বুলানোর খাসলত থাকলে আজকাল একেবারেই নেই। দালাল সংশ্লিটতা যত কম হয় ততই ভাল। কিন্তু ঘটনাচক্রে দুপুরে যুগান্তর পত্রিকায় একবার চোখ পড়েই মনে হল, পুরোনো মাথা খারাপের রোগটা আবার ফিরে আসবে আজ। অসভ্য এই পত্রিকাটি 'বালুমহাল দখলকারী চক্রের নৃশংস হাতে প্রাণ যাওয়া ছয় ছাত্রের লাশের ছবি ছেপেছে। হ্যা, আমি বালুমহাল দখলকারীই বলবো, গ্রামবাসী নয়। সাধারণত আমরা এবং আমাদের মিডিয়া এ ধরণের গণপিটুনির নৃশংসতাকে গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর নামে চালিয়ে দেই। আমি খুব ছোটবেলা থেকে এরকম একাধিক ঘটনা দেখেছি। এলাকাবাসী হয়তো ক্ষেপে ওঠে বা তাদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলা হয় কিন্তু তারা কখনোই খুনী নয়। খুনী থাকে এরমধ্যে ৫-৬ জন, ঠাণ্ডা মাথার খুনী। এইসব লোকগুলি তাদের খুনী-পিশাচ সত্তাকে সুপ্ত রেখে অন্য দশজন স্বাভাবিক মানুষের মত ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ পেলেই প্রকাশিত হয় তাদের আসল চেহারা। কোথাও একজন ছিচকে চোর বা একজন পকেটমার ধরা পড়লে তারা ঝাপিয়ে পড়ে, অন্যরা যখন কিল-ঘুষি মারে বড়জোর তখন তাদের হাতে চলে আসে ইট বা লোহার রড বা ধারালো দা। আর তাদের লক্ষ থাকে শিকারের মাথা। এইগুলো পুরোদস্তুর খুনী, এরা কখনোই জনতার প্রতিনিধি নয়।
দখল করা সম্পত্তির মায়া দখলদারদের একটু বেশিই থাকে, এবং এসব দখলী সম্পিত্ত ঘিরে নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেশি হয়। ছোটবেলায় মনে আছে প্রায়ই চিংড়ী ঘেরে মাছ চোর ধরা হত এবং অধিকাংশ সময় তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হত। এইসব চোররা কারা ছিল? যাদের জমিতে ঘের করা হত তারা। খাল সহ শত শত বিঘা জমি দখল করে ঘের করতো প্রভাবশালীরা। ঘের দেয়ার পর ওখানে যাদের জমি পড়ে যেত তাদের কারোরই নিজেদের জমিতে জাল ফেলানোর অধিকার ছিল না। গতকাল ও দেখা যাবে কিছু দখলদার কায়েমী স্বার্থবাদী'র হাতে জঘন্যতম উপায়ে খুন হল কয়েকজন কমবয়সী তরুণ, আর দোষ চাপানো হল পুরো গ্রামবাসীর উপর।
শবে-বরাতের রাতে এই বয়সী পোলাপান দল বেধে ঘুরতে বের হয় এটা সমস্ত বাংলাদেশে খুবই কমন চিত্র, ঐ গ্রামের মানুষ এটুকু বুঝবে না? আমার নিজেরও বাড়ীর বাইরে প্রথম রাত জাগার সুযোগ হয়েছিল শবে-বরাতের রাতে, আজ থেকে ১৭ বছর আগের ঐ রাতে আমি প্রথম সিগারেট খেয়েছিলাম। আর তারুণ্যেরে এই খুব স্বাভাবিক এ্যাডভেঞ্চারের ফলে চলে গেল ছয়টি তরতাজা প্রাণ।
এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব কারা দিয়েছে তার প্রত্যক্ষদর্শী আছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, তার কাছেও যাবতীয় তথ্য আছে। কিন্তু সরকার এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন বলে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যথারীতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন যে, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। রাষ্ট্র যখন কোন ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে তখন তার খুব পরিস্কার মেসেজ আছে, অর্থাত বিষয়টা নিয়ে সরকার মাথা ঘামাবে না। ঘামানোর কথাও নয়, সরকার এখন মূলত মাথা ঘামাবে সামনের নির্বাচন ও তার ম্যাকানিজম নিয়ে। সেই ম্যাকানিজমে খুব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভূমি দখলকারী, নদী দখলকারী, বালুমহাল দখলকারী সহ অন্যান্য সকল প্রভাবশালী দখলবিদরা। কারণ এই দখলকারীরা জানে কিভাবে ভোটের বাক্সও দখল করতে হয়। এরা যেদিকে হেলবে ক্ষমতা ও সেদিকেই হেলবে। ছয়জন ছাত্রের জীবন এখানে কিছুই না।
আজকে কিছুই হয়নি কিন্তু মন চায় আগামীকালই একটা প্রতিবাদের ঝড় উঠুক। কোন রাজনৈতিক ছাত্র-সংগঠন এই ছাত্র-হত্যার বিরুদ্ধে এখনো কোন প্রতিবাদ জানায়নি বলে হতাশ হয়েছি কিন্তু আকাঙ্ক্ষা এই যে সে হতাশা আগামীকালই কেটে যাক। প্রতিবাদ হলে এই হত্যার বিচার হতে পারে অন্যথায় একেবারেই নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৩১