জাতীয় স্বার্থের পক্ষে সোচ্চার থাকায় সবসময়ই কৌশলে বামপন্থীদের উন্নয়ন বিরোধী হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। কথিত উন্নয়নের সুবিধাভোগীরা সকলেই এ কাজ করে থাকেন। বলা বাহুল্য, এসব উন্নয়নের কোনেটিই জনগণের স্বার্থে নয়। জনগণের পক্ষের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে কখনোই দেশের বামপন্থীরা বাধা সৃষ্টি করেননি।
যখন বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে পাইপলাইনে করে ভারতে গ্যাস রপ্তানির চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার তখন বামপন্থীরা বাধা দিয়েছিল। বিএনপি লীগ সহ সুবিধাভোগী সকল বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এরা দেশের ভালো চায় না-এরা উন্নয়ন বিরোধী। সবার চেয়ে সরেস ছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি বলেছিলেন, এরা মাটির নীচে রেখে দিয়ে গ্যাস পচিয়ে ফেলতে চায়। খুব দ্রুতই ডান বাম নির্বিশেষে সকলে বুঝে ফেলেন, গ্যাস রপ্তানী হয়ে গেলে কত বড় বিপদে পড়তাম আমরা। এক পর্যায়ে এখনকার প্রধানমন্ত্রী বলতে বাধ্য হন যে পঞ্চাশ বছরের মজুদ না রেখে তার সরকার গ্যাস রপ্তানী করবে না।
ব্যাপারটা এই নয় যে বামপন্থীরা শুধু রপ্তানীতে বাধা প্রদান করেই চুপ হয়ে গিয়েছিল। জাতীয় স্বার্থে জ্বালানী সম্পদ বিশেষ করে গ্যাস কীভাবে কাজে লাগানো উচিত হবে তা নিয়ে বামপন্থীরা নানারকম দাবি দাওয়া, সুপারিশ চালিয়ে গেছেন। সেগুলো শুধু রাজনৈতিক দাবি দাওয়া নয়, গবেষণালব্ধ বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের মত। দেশের খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞদের মত নিয়েই বামপন্থীরা তাদের অবস্থান তৈরি করেছেন। সেসব মতকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করেছে সবগুলি সরকার। সময়মত পদক্ষেপ না নেয়ায় স্থলভাগের গ্যাস যথাযথভাবে উত্তোলন করা যায়নি, গ্যাসের সংকট তৈরি হয়েছে, শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং পিন্ডি চাপানো হয়েছে আবারো সেই বুধোর ঘাড়ে- অর্থাৎ বামপন্থীরা উন্নয়ন বিরোধী।
ফুলবাড়ি কয়লাখনিতে এশিয়া এনার্জির সাথে চুক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোয্য। বামপন্থীরা কখনোই কয়লা উত্তোলনের বিরোধিতা করেননি, কেবল অসম ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির বিপক্ষে দাড়িয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষার কথা বলেছে। সেই অবস্থান যে জনস্বার্থের পক্ষে তা ফুলবাড়ির জনগণ প্রমাণ করেছে- এ নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই। সমুদ্রবক্ষে গ্যাস ব্লক ইজারা চুক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোয্য।
এখনকার সবচেয়ে আলোচিত প্রসংগ সুন্দরবনের অদূরে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প। জনস্বার্থ তথা জাতীয় স্বার্থের বিরোধী হওয়ায় বামপন্থীরা আবারো আন্দোলনে নেমেছে। এখন বামপন্থীদের চিত্রিত করা হচ্ছে এই বলে যে এরা বিদ্যুৎ চায় না, এরা আবারো দেশকে লোডশেডিং এর যুগে ফেরত নিয়ে যেতে চায়। অথচ গত সাত আট বছর বিদ্যুৎ সমস্যার টেকসই সমাধানের পক্ষে সরব ছিল এই বামপন্থীরাই। বামপন্থীরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছে মাত্র কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করলে উৎপাদন ক্ষমতা এখনকার চেয়ে দ্বিগুন করা যায়। কে শুনে কার কথা! তাহলে কুইক রেন্টালের নামে লুটপাট হবে কীভাবে? জনগণের পকেটের হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেয়া হয়েছে কেবল পরিস্থিতি সামাল দিতে। কিন্তু বাস্তব অবকোঠামোর কোনো উন্নয়ন এতে হয়নি। আর এখন রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়ে সুন্দরবনকে ধ্বংস করে পুরো দেশকে ভয়াবহ ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে সেই উন্নয়নের নামেই। যারা বিরোধিতা করবেন তারা উন্নয়নবিরোধী!
আহারে উন্নয়ন! এই উন্নয়ন আমরা খাবো না মাথায় দেব?