এটা কঠিন সত্য যে ধূমপান একেবারে ছেড়ে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আপনি কি জানেন, অনেক ধূমপায়ীই মঙ্গলের জন্য ধূমপান ছাড়তে চায় কিন্তু সে চেষ্টা সফল হওয়ার আগে দুই বা তিনবার ব্যর্থ হয়? সিগারেটের মূল উপাদান হচ্ছে নিকোটিন। এর আসক্তি হেরোইন বা কোকেইনের মতো। মঙ্গলের জন্য লাখ লাখ মানুষ ধূমপান ছেড়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া কঠিন কাজ হলেও সম্ভব। দরকার শুধু চেষ্টার।
ধূমপান ছাড়ার পাঁচটি টিপস:
বিশেষ একটি দিন ঠিক করুন দিনটির আগের দিন সব সিগারেট, অ্যাশট্রে এবং লাইটার ফেলে দিন, আপনার বাড়িতে কাউকেই ধূমপান করতে দেবেন না। একটি কাগজে লিখে রাখুন কেন আপনি ধূমপান ছাড়তে চান এবং লিস্টটি সংরক্ষণ করুন রিমাইন্ডার হিসেবে।
আপনার পরিবার, বন্ধুএবং সহকর্মীর সহযোগিতা নিন:
গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যের সহযোগিতা পেলে ধূমপান ছাড়া সহজ। আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ধূমপান ছাড়ার তারিখটি জানান এবং তাদের সহযোগিতা করতে বলুন। অনুরোধ করুন তারা যেন আপনার চারপাশে ধূমপান না করে অথবা সিগারেট অফার না করে।
ধূমপানের বিকল্প খুঁজুন এবং প্রতিদিনের রুটিন বদলান:
যখন ধূমপান করার ইচ্ছে হবে, এমন কিছু করুন, যাতে আপনার মন অন্য কিছুতে ব্যস্ত থাকে। বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন, হাঁটতে বের হয়ে যান অথবা সিনেমা দেখতে হলে চলে যান। চিনিমুক্ত চুইংগাম বা ক্যান্ডি খান আপনার ধূমপানের আকাঙ্খাকে কমানোর জন্য। প্রচুর পানি ও জুস খান। এর সঙ্গে আপনি আপনার প্রতিদিনের রুটিন বদলাতে পারেন। কফির পরিবর্তে চা পান করুন। সকালের নাশতা একই জায়গায় প্রতিদিন খাবেন না। কর্মস্থলে যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করুন।
ধূমপান ছাড়ার ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন:
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিছু ধূমপায়ীর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যদি সে ধূমপান ছেড়ে দেয়। যেমন- বিষন্নতা, ঘুমাতে সমস্যা, বিরক্তবোধ বা অস্বস্তিবোধ করা এবং পরিষ্কার চিন্তা করতে না পারা। কিছু ওষুধ এসব উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। অধিকাংশ নিকোটিনের মাত্রা রক্তে ধারাবাহিকভাবে কম পরিমাণ অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কাজ করে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন কোন ওষুধটি আপনার জন্য সঠিক।
নিকোটিন প্যাচ:
এটি ত্বকে লাগানো হয় এবং ত্বকের মাধ্যমে দেহে নিকোটিন অবমুক্ত হয়।
নিকোটিন গাম/লজেন: মুখের ভেতর আবরণীর মাধ্যমে রক্তে নিকোটিন অবমুক্ত হয়। নিকোটিন নেজাল স্প্রে: নাকে স্প্রে করলে নিকোটিন শ্বাসের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। নিকোটিন ইনহেলার: মুখ ও গলার মাধ্যমে নিকোটিন রক্তে প্রবেশ করে। বিউপ্রোপিওন: এটি একটি বিষণœতাবিরোধী ওষুধ। যেটি নিকোটিন পরিহারজনিত লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে এবং ধূমপানের আকাঙ্খা কমায়। ভ্যারেনিক্লিন (চ্যানটিক্স): ওষুধটি নিকোটিন পরিহারজনিত লক্ষণ এবং ধূমপানজনিত তৃপ্তি কমায়।
পুনঃ ধূমপানের প্রবণতা থেকে সতর্ক থাকুন:
অধিকাংশ ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়ার প্রথম তিন মাসের মধ্যেই আবার ধূমপান শুরু করে, এতে আশাহত হবেন না। মনে রাখবেন, অনেকের ক্ষেত্রেই এটি ঘটে কিন্তু সফল হয় নিজের মঙ্গলের জন্য।
আপনি চিন্তা করুন, কোন বিষয়গুলো ধূমপান ছাড়ার জন্য সহায়ক ছিল এবং কোনগুলো ছিল না। এগুলো বের করতে পারলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিছু কিছু অবস্থা আপনার ধূমপানের আকাঙ্খা বাড়ায়। যেমন ধূমপায়ীদের সান্নিধ্যে থাকা, শরীরের ওজন বাড়া, চাপ বা স্ট্রেস, অথবা বিষণœতায় থাকা; তাই এগুলো মোকাবিলার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।