somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তবের পাটাতনে স্বপ্ন দেখার অপরাধ ( ব্লগার শয়তান ভাইয়ের প্রতি নিবেদিত )

১২ ই জুন, ২০০৯ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যার যায় সে বোঝে। আমি হয়তো আপনার ব্যাথা ঠিক বুঝতে পারব না। তবে একদিন কলেজে ক্লাস করতেছি। হঠাৎ এক মামা (পিয়ন) আইসা বলে তোমারে ভাইস প্রিন্সিপাল আপার অফিসে ডাকতাছে। ব্যাগ গুছাও। আমি কিছুই বুঝলাম না। অফিসে যাইয়া দেহি আমার মা পাগলিনীর মত কানতাছে। আমি জিগাই কি হইসে? কয় তোর বাবারে সন্ত্রাসীরা মাইরা ফালাইছে। আমাগোর জমি জমা নিয়া অনেক ভেজাল আছে। সেই সূত্রে এই কাহিনী। আমি পোলাডা আসলেই মানুষ না, একটা অমানুষ, রোবট। আমার কোন বিকার হইল না। আমার হইল প্রতিশোধের চিন্তা। ঠান্ডা মাথায় প্রতিশোধের চিন্তা। আমার মাথায় তখন ঘুরতাছে যে আমার এক ফ্রেন্ডরে সাথে নিয়া ওর পরিচিত এক খালাত ভাইয়ের কাছ থিকা একটা শটগান কিনতে হইব। কয়েকদিন ধইরাই শুনতে ছিলাম ওর খালাত ভাই নাকি শটগান বেচব একটা। ৪৫ হাজার টাকা দাম। আমার বাপে মরে নাই। শক্ত সমর্থ মানুষ। তার কথা তো পড়ছেনই। অনেক সহ্য করতে পারে। আমার কলেজ আছিল উত্তরায়। মারে নিয়া গেলাম র‌্যাব অফিসে। রিক্সায় কইরা যাইতে ছিলাম। আমার মাথা পেশাদার খুনির মতই ঠান্ডা। আমি মোটেও বিচলিত হই নাই। আমি তখন খালি চিন্তা করতে ছিলাম আমার প্রতিশোধের প্লান নিয়া। জীবনে প্রথম বাস্তবের রূঢ়তার সম্মুখীন হইছিলাম। র‌্যাব অফিসে গিয়া দেখি আমার বাপে একটা সি এন জি তে বইসা রইছে আমার এক ভাগ্নির লগে। তার সারা জামা রক্তে ভেজা। মাথায় একটা ওড়না দিয়া পেচানো। রক্তে জব জব করতাছে ওড়নাটা। আমি বুঝলাম আমি আমার বাপেরে হারাই নাই। র‌্যাবের কার্যালয়ে আমার বাপে অভিযোগ করতে চাইল। কিন্তু তাগোর কোন বিকার নাই। আমি একচোট ঝাড়লাম উপস্থিত র‌্যাব সদস্যগুলিরে। কইলাম তোমাগোর এই আইন , সংবিধান আগুনে পুড়াইয়া দেও। এই সবের কোন দরকার নাই। আমার দেশটার অবস্থা যে কত খারাপ সেদিন বুঝছিলাম। র‌্যাব কি করব। তারেক রহমানের নজর আমাগোর জমির উপর। স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য বি এন পি নেতা ডাইরেক্ট র‌্যাবেরে ফোন দিছে, সরকারের উপর মহল থিকা ফোন দিছে। তারা কেউ যায় নাই ঘটনাস্থলে। আমাগো সেই জমিটা শেষ পর্যন্ত বেদখল হইল। কারো কাছ থিকা একটুকুও সাহায্য পাই নাই। কোন সাংবাদিকও কিছুই করে নাই। হাতে টাকা আছিল না। বাপেরে ঢাকা মেডিকেলে ঢুকাইছি। টেকা ছাড়া কিছুই হয় না ঐখানে। বাপেরে মেডিকেলে ফালাইয়া ওষুধের দোকানে দোকানদারের কাছে সাহায্য চাইছি। কেউ সাহায্য করে নাই। আমি ছিলাম একা। পুরা আইন, প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব ছিল আমাগোর বিপক্ষে। কেউ আসে নাই। না পুলিশ, না র‌্যাব, না ওষুধের দোকানদার, না সাংবাদিক। আমার জন্মের দিন আমি না খাইয়া কাটাইছি। বাপে আসতে পারে নাই সময়মত। মার পেটে উলটা হইয়া গেছিলাম। আমি জন্ম থিকাই উলটা। মার পেট কাইটা আমারে বাইর করছে। আমার মা তার জীবনের বিনিময়ে আমার জন্ম নিশ্চিত কইরা গেছিলেন। তিনি ফিরা আসছিলেন। এ আমার মত পোড়াকপাইল্যার পরম সৌভাগ্য। আমার কাছে আসমান, জমিন, বেহেস্ত, স্বর্গ, পুরা দুনিয়া একদিকে আর আমার মা একদিকে। আমার রাশিফলের পঞ্জিকায় আমার জন্মের সেই দিন লেখা ছিল "কষ্ট"। আমারে ঢাকা মেডিকেলের এক নোংরা জায়গায় ফালাইয়া রাখছিল জন্মের পরে। সারা রাইত না খাইয়া, ময়লায় গড়াইয়া আমার গায়ে ঘা হইয়া গেছিল সেইসময়। আমার মার কাছে যখন আমারে আনল তখন আমার মা আমার চেহারা দেইখা কয় এইডা আমার পোলা না। পরে আমার বাপের হাতের আঙ্গুলের সাথে আমার আঙ্গুলের গঠন মিলাইয়া নিশ্চিত হইছে আমি তার পোলা। আসল প্রসংগ থিকা সইরা গেছি অনেকটা। যা বলতে চাইছিলাম, আমি জন্ম থিকাই পৃথিবীর কঠিন রূপ দেইখা অভ্যস্ত। সঠিকভাবে বলতে গেলে জন্মের আগে থিকাই। যাক বাদ দেই এই কথা। তা এই আমি সেইদিন আবার দেখলাম পৃথিবীর এক রূপ। ঠিকভাবে কইতে গেলে বাংলাদেশের সত্যিকার রুপ। আমার বাপে মরে হাসপাতালে আমি কিছুই করতে পারি না। আকজন পুত্রের কাছে এর থিকা যন্ত্রণার আর কি আছে। আর বলতে ইচ্ছা হইতাছেনা পরের কাহিনী। সেই রাত আর তার পরের রাতও আমি আমার জন্মস্থান ঢাকা মেডিক্যালের ফ্লোরে কাটাইছিলাম। ঢাকা মেডিক্যাল বোধহয় কেবল যন্ত্রণা আর কষ্ট নিয়াই আমার কাছে আসতে পছন্দ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের দুর্নীতি এর চরম খারাপ রূপ আর জোট সরকারের বল্গাহীন প্রভাব বিস্তারের ভয়ংকর অবস্থা আমি দেখতে পারছিলাম। দেখতে পারছিলাম বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যতই স্বাধীনতার বড়াই করুক না কেন তারা কতটা পরাধীন। আওয়ামী সরকারও আমাগোরে কম বাশ দেয় নাই। আগে আমার বাপ মায় নৌকায় সীল মারত। ডলা খাইয়া স্বতন্ত্রতে সীল দিছিল যে কিনা ছিল বি এন পির এক দলছাড়া পরে আবার দলে ঢুকছে। স্বাধীনতার পর এত বছরে তাগোর হুশ হইছে। চারদিক থিকা বাশ খাইয়া এইবার না ভোট দিয়া আইছে। আপনে আমার অনেক আগেই সত্যিকার কঠিন জীবন দেখছেন ভাই। আপনে যে টিকে থাকার সংগ্রামে টিকতে পারছেন তার জন্য আপনারে আমি অভিনন্দন দিয়া ছোট করতে চাই না। বাস্তবের রূঢ়তায় আমাদের মাথায় স্বপ্ন আসে না ভাই আসে ৪৫ হাজার টাকা দামের শটগান কিনার কথা। স্বপ্ন দেখা তখন একটা বিলাসিতা হইয়া দাঁড়ায়। আপনারে লাল সালাম। আর কেউ জানি এই অবস্থায় না পড়ে আপনার মত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৬
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×