তোকে তুই বলব না তুমি বলব এ নিয়ে আমার কোন সংশয় না থাকলেও তোর দেখি এ নিয়ে বড়ই দ্বিধা। গতবার তোর সাথে দেখা হয়েছে তাও কমপক্ষে ৫/৬ বছর পর, তুই দেখি বেশ বুড়িয়ে গেছিস। আমাকে তুই বলবি না তুমি এ নিয়ে তুই দারুণ সংশয়ে। ভালমতো কথাই বলতে পারছিলি না। হায়রে বন্ধু, মানুষ কি এভাবেই দূরে সরে যায়।
মনে পড়ে, সেই শৈশবে বানের জলে কলার ভেলা ভাসানোর কথা। বানের পানিতে মাছ ধরার জাল বসিয়ে দু'বন্ধুর ভেলায় চড়ে বেড়ানো। কোন দিক দিয়ে যে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা গড়াতো টেরই পেতাম না। এখন যান্ত্রিক শহরে অফিস, ব্লগিং, সিনেমা, থিয়েটার থাকার পরও সময় কাটতে চায় না। তখন সময় কত দ্রুত আমাদের হাতছাড়া হয়ে যেতো!
ইক্ষুর দিনে অন্যের ক্ষেত থেকে ইক্ষু চুরি করে খাওয়া, নাইটশো সিনেমা দেখে ফেরার পথে তরমুজ ক্ষেত থেকে তরমুজ চুরি করা, গভীর রাতে বাড়ী ফেরে দরজা বন্ধ পেলে খড়ের গাদায় রাত কাটানো। অন্য পড়ার সাথে ফুটবল ম্যাচ নিয়ে মারামারি। আমি কিছুই ভুলিনি। কিন্তু তুই ভুলে গেছিস অথবা মনে করতে চাস না। বন্ধু চাইলেই কি এসব ভুলে যাওয়া যায়।
আমি সজ্ঞানে কোন দিন তোর রিক্সায় উঠিনি। আমাকে দেখলে তুই উদাস হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকিস। যেনবা দেখিসনি। কেন রে বন্ধু? লজ্জায় না ক্ষোভে? নাকি তুই নিজকে ছোট ভাবিস? বন্ধুত্বের শপথ, তুই নিজেকে যতটুকু ছোট ভাবিস তারচেয়ে অনেক বেশী ছোট হয়ে যাই যখন দেখি যাত্রী নিয়ে তুই প্যাডেল চাপছিস। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। বন্ধু তোর তো নিজেকে ছোট ভাবার কিছু নেইরে। নিজের রক্ত ঘাম করে তুই সংসারের ঘানি টানছিস। তোকে আমাদের মতো মুখোশপরা ভদ্রলোক সেজে ৯টা- ৫টা অফিস করতে হয় না।
জানি এ লেখা তোর কোনদিনই পড়া হবে না। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ব্লগ এসব কৃত্রিম শব্দগুলো থেকে তুই অনেক দূরে। বন্ধু কী, বন্ধুত্ব কী বা বন্ধু দিবস এর তাৎপর্য এসব ভারী ভারী শব্দ জানার প্রয়োজন তোর নেই। তবুও আজ বন্ধু দিবসে হাজারো কৃত্রিম বন্ধুর ভীড়ে তোর কথা খুব করে মনে পড়ছেরে। ভাল থাকিস বন্ধু, চিরকাল।