somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ফিরে দেখা - সাল ২০২০ " - করোনা-আপনজন এবং উপলব্ধি।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





নতুন বছর ২০২১ সাল দরজায় কড়া নাড়ছে। বিদায় নিচ্ছে বহুল আলোচিত ২০২০ সাল। কালের গর্ভে বছরটি বিলীন হতে চলেছে। তবে ইতিহাসের পাতা থেকে ২০২০ সালকে কোনো দিন মুছে ফেলা যাবে না। বছরটা যারা বেঁচে পার করছেন, তারা যতদিন বেঁচে থাকবেন একেবারে আলাদা করেই এর কথা মনে রাখবেন। কারণ, এমন দুর্ভোগ আর দুঃসময়ে ভরা বছর এই প্রজন্ম বোধহয় আর দেখবে না।

২০২০ সাল পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে নানা কারনে।তবে এ সাল বেশী বেশী মানুষের স্মরণে থাকবে শুধু নেতিবাচক খবরের জন্য।এ সাল মানুষের জন্য খুব বেশী ইতিবাচক খবর না থাকলেও নেতিবাচক খবরের অভাব ছিলনা ।আর মানুষে মানুষের মাঝে সম্পর্ক যে কত ঠুনকো এবং বিরুপ অবস্থা ও পরিস্থিতিতে আপনজনেরা কতটা নিষ্ঠুর এবং পরিবর্তন হতে পারে তা করোনা আমাদের ভালভাবে দেখিয়ে দিয়েছে।করোনা পুরো পৃথিবীতে রেখে যাচছে তার ছাপ ।আর তাই এ বছরকে বলা চলে করোনা মহামারির বছর ।আর তাইতো সময় এসেছে মানুষকে তার জীবন-যাপন, আপনজন তথা সার্বিক ভাবে নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবার।

তাই বলে ২০২০ সালে যে ইতিবাচক খবর কিছুই নেই,তা নয়।আসুন দেখি ২০২০ সালে দেশের কিছু ইতিবাচক খবর -



১।দৃশ্যমান পদ্মা সেতু - "দেখ দেখ বিশ্ববাসী, নয় বাংলা কারও দাস বা দাসী - তারা নিজেরাই পদ্মা সেতু করতেছে নির্মাণ"-পদ্মা সেতু সরকারে অগ্রাধিকার একটি প্রকল্প এবং বাংগালী জাতীর গর্ব ও অহংকারের একটি বিষয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়মনোবল, সাহসিকতা ও দক্ষ নেতৃত্বে এবং প্রকল্প সম্পর্কিত সকলের নিরলস ও কঠোর পরিশ্রমে তা ২০২০ সালে আমাদের মাঝে দৃশ্যমান।২০১৭ সালে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসাতে আনা হয়েছিল বিশ্বের বৃহৎ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান ই’। ৩ বছর ৯ মাসে ৪১টি স্প্যান বসানো শেষে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে এই ডিসেম্বরে এটি চলে গেছে চীনের উদ্দেশ্যে।আর যাওয়ার আগে দিয়ে গেছে দেশবাসীকে স্বপ্ন পুরনের পথে একধাপ এগিয়ে।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।প্রায় ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থে নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সড়ক ও রেল সেতু।পদ্মাসেতু শুধু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক লাইফলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করবে না, এটা পুরো অর্থনীতিকে আক্ষরিক অর্থে একসূত্রে গাঁথার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ও অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। সরকারের সেতু বিভাগের সচিব ১১ ডিসেম্বর দাবি করেন, পদ্মা সেতুর ফলে দেশের জিডিপি বাড়বে ১.২৬ শতাংশ এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে ২ শতাংশ।এই সেতু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা ডাইমেনশনে যে চমকপ্রদ গতিশীলতার সঞ্চার করবে, তা নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায়। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের আঞ্চলিক বৈষম্য দ্রুত নিরসনে এই সেতু অভূতপূর্ব অবদান রাখবে। আর এই স্বপ্নের সেতু ২০২০ সালেই মানুষের মাঝে বাস্তবে ধরা দিয়েছে।



২। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে - করোনার কারণে মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছে। কারণ, দেখা গেছে, আগে থেকে বিভিন্ন রোগে ভোগা মানুষকেই করোনা ভাইরাস বেশি কাবু করতে পেরেছে। তাই সুস্থ জীবনযাপনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন জীবনযাপন করে। হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢাকে। দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, শহরের অলিগলি আগের চেয়ে বেশি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হয়। আমার ধারণা, মানুষ এই পরিবর্তিত অভ্যাসগুলো অন্তত কয়েক বছর মেনে চলবে।

৩।পৃথিবীর দূষন কমেছে - করোনার কারণে পৃথিবীটা আরো বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে কার্বন নিঃসরণ সাত ভাগ কমেছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নতুন রেকর্ড৷ মানুষের যাতায়াত, বিমানযাত্রা, পর্যটন ইত্যাদি বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে কার্বন নিঃসরণ কম হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরেই কথা হচ্ছে। কিন্তু অনেক উদ্যোগ নিয়েও যথেষ্ট ফল পাওয়া যাচ্ছিলো না। করোনার কারণে কিছুটা হলেও সেটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া মানুষের সমাগম কম থাকায় শহরের রাস্তায় বন্যপ্রাণীর ঘোরাফেরা, কক্সবাজার সৈকতে কচ্ছপের দেখা পাওয়ার মতো মন ভালো করা খবর করোনার কারণেই পেয়েছি আমরা।

৪।পাপ কাজ এবং অপচয় কমেছে - সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং যানবাহন-বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রনের কারনে বিশ্বব্যাপী মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন প্রমোদ স্থান,বার-ক্লাব,পতিতালয়,সমুদ্র সৈকত বন্ধ বা ব্যবহার সীমিত করার কারনে মানুষের পাপ কাজের প্রবণতা এবং সুযোগ কমেছে এবং তার ফলে মানুষের অপচয় করার সুযোগ ও সীমিত হয়েছে ।অবশ্য এটাও ঠিক, জন - জীবন নিয়ন্ত্রনের ফলে অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে এবং মানুষদের আয় রোজগারও কমে গেছে।

৫।দূর্নীতির বিরূদ্ধে প্রশাসন ও সরকারের সারাবছর অভিযান - বছরের প্রথমেই দুর্নীতিবাজদের কোন ছাড় দেয়া হবেনা এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘ আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই দুর্নীতিবাজ যেই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না"। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান থাকবে, যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন৷ সাধারণ মানুষের হক যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে৷'' আর তাই ২০২০ সালে পুরো বছর জুড়েই আালোচনায় ছিল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান। এর ফলে দেশে বড় ছোট অনেক দুর্নীতিবাজ গ্রেফতার হয়েছে এবং আইনের আওতায় এসেছে।এদের মাঝে ড্রাইভার আবদুল মালেক , ঠিকাদার জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূইয়া কে গ্রেফতার ও জেল হাজতে প্রেরণের মাঝে দুর্নীতির বিরূদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থানই প্রকাশ করেছে এবং দল-মত নির্বিশষে দেশের বাইরে এবং দেশের সকল মানুষের নিকট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উদ্যোগ প্রসংসিত হয়েছে।

তারপরেও বছরজুড়ে দেশে আলোচনায় ছিল রূপপুরের বালিশ কাণ্ড, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালের পর্দা কেলেঙ্কারি, দুদকের সাময়িক বরখাস্তকৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ও সাময়িক বরখাস্তকৃত ডিআইজি মিজানুর রহমানের দুর্নীতি মামলা এবং কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিকের দুর্নীতির মতো কিছু ঘটনা এবং এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের দেশ ত্যাগ।অবশ্য সব বেআইনী ঘটনার পরপরই সরকার দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করছে।



** সারা বিশ্বে করোনার মহামারি -

২০২০ সাল বিশ্বব্যাপী চিহ্নিত হয়েছে একটি বিধ্বংসী বছর হিসেবে। অতিক্ষুদ্র অদৃশ্য এক ভাইরাস বছরজুড়ে পৃথিবীকে অস্থির করে রেখেছে। এখনো যার ত্রাস অব্যাহত আছে। এই ভাইরাস বিশ্বের সাড়ে ১৭ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সেই সাথে আট কোটিরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত। মহামারীর প্রভাবে অর্থনৈতিক খাতে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, মহামারীতে কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ১০০ কোটিরও বেশি শিশু এ কারণে স্কুলে যেতে পারেনি।বিশ্বের ১৮৮টি দেশে করোনাভাইরাস তার বিস্তার ঘটিয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট কোটি ছাড়িয়েছে। করোনায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৭ লাখ।বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ভারতে করোনা রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে দেড় লাখ মানুষ। ব্রাজিলে করোনা রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু দুই লাখ ছুঁইছুঁই। করোনা রোগী ও মৃত্যু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, রাশিয়া, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত প্রভৃতি দেশ।


ক্ষুদ্র এই ভাইরাস গত প্রায় একটি বছর মানুষের জীবনের স্বপ্ন ও পরিকল্পনার অনেক কিছুই চুরমার করে দিয়েছে। অনেক মানুষ চিরকালের জন্য তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেক মানুষ প্রিয়জনের সাহচর্য ছাড়া নিঃসঙ্গ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই করুণ অসহায় মৃত্যু যেমন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপজুড়ে, তেমনিও হয়েছে আমাদের বাংলাদেশ, প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বজুড়ে। যদি বলতে বলা হয় ২০২০ সালে পৃথিবীর বর্ষসেরা ঘটনা কোনটি কিংবা আলোচিত বিষয় বা চরিত্র কোনটি? তাহলে যে কেউই একবাক্যে বলবে করোনাভাইরাস মহামারী। বিবিসি, সিএনএনসহ বিশ্ব মিডিয়া খুললেই যে শব্দ কানে বাজে তা হচ্ছে, ‘করোনাভাইরাস প্যানডেমিক’।



করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে দেশে চলেছে লকডাউন। তাই মানুষকে থাকতে হয়েছে ঘরবন্দী। কোটি কোটি মানুষ কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে। বছরটি শেষ হয়ে গেলেও প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবা শেষ হয়ে যায়নি। বরং নিত্যনতুন রূপ ধারণ করে নিজের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে করোনাভাইরাস। ঘন ঘন রূপ বদলানো এ ভাইরাসের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। এ শত শত সাধারণ রূপান্তর ইতোমধ্যে ঘটেছে। এর মধ্যে মারাত্মক দু’টি ঘটেছে এই গত সপ্তাহে। একটি রূপান্তরের ধরন চিহ্নিত হয় যুক্তরাজ্যে, অন্যটি দক্ষিণ আফ্রিকায়। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি যুক্তরাজ্যেও চিহ্নিত হয়েছে। ফলে ভাইরাসের আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ কোনোভাবেই কাটছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগ বিগত ১০০ বছরের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বড় ধরনের স্বাস্থ্যসঙ্কট।

নতুন ভাইরাসকে বলা হচ্ছে সার্স-কোভিড-২। পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২। নাম অনেক বড় হলেও ভাইরাসটি কিন্তু অতিক্ষুদ্র। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১২০ ন্যানোমিটার অর্থাৎ ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ। সহজভাবে বলা যায়, একটি আলপিনের ডগায় ১০ কোটি এ ভাইরাস কণা অনায়াসে স্থান করে নিতে পারে। এর থেকে মাত্র কয়েক শ’ ভাইরাস কণা সংক্রমিত করতে যথেষ্ট। আর একবার সংক্রমিত হলে এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ওই রোগকেই বলা হয় ‘কোভিড-১৯’।

** বাংলাদেশে করোনাভাইরাস -

বছরের শুরুতেই মানুষকে হতবাক করে দেয় মহামারি করোনাভাইরাস।চীন থেকে শুরু হয়ে দেশে দেশে যখন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছিল তখন বাংলাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠায় ছিল কবে বাংলাদেশে সনাক্তের খবর পাওয়া যাবে।মার্চের ৮ তারিখে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের নিয়মিত ব্রিফিং এর জানানো হয় বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর।ইন্সটিটিউটের তৎকালীন পরিচালক মেহেরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান "এতদিন আপনাদের যা বলে এসেছি আজ আর তা বলতে পারছি না। বাংলাদেশে তিনজন সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন পুরুষ, একজন নারী"।

এর পর শুরু মানুষের মনে ভয়, আতঙ্ক সঙ্গে বিভ্রান্তি। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।বেশি সংক্রমিত এলাকায় লকডাউন করা হয়। সব ধরণের পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করা হয় ।এরপরে দফায় দফায় পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের তরফ থেকে করণীয় সম্পর্কে ঘোষণা এসেছে।বেড়েছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। টিকা আবিষ্কার হলেও এখন পর্যন্ত তা বাংলাদেশে আসে নি।মানুষের কাছে সাবধান থাকার জন্য বার বার হাত ধোয়া, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা আর মুখে মাস্ক পরা - এগুলোই এখন পর্যন্ত একমাত্র করণীয়।মানুষের কাছে এই ভাইরাস বিরাট আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

**করোনার নেতিবাচক প্রভাব**

-করোনার নিষ্ঠুরতায় মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়েছে বহুগুণ। বিচলিত মানুষ যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষকে বোকা ও অসচেতন করছে এ অদৃশ্য জীবাণুর ভয়াবহতা। এর ফলে স্বার্থপরতা বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মানুষের মাঝে। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ ক্রমান্বয়ে নানা কুসংস্কারে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া নির্দেশনা ও বিনা পয়সার অবাধ জ্ঞান বিতরণ প্রক্রিয়া এ কুসংস্কারকে আরও বেশি উসকে দিচ্ছে।

১।সারা দুনিয়ার প্রচলিত সব অবস্থা ও পরিস্থিতির লন্ডভন্ড - করোনা সারা দুনিয়ার সব কিছু লন্ডভন্ড করে ফেলছে। যে শহর কখনো ঘুমাত না সেই শহরকেও দীর্ঘমেয়াদে ঘুম পাড়িয়েছে,বিমান পরিবহন তথা সকল পরিবহন বন্ধ ,বছরব্যাপী স্কুল, কলেজ ,বিশ্ববিদ্যালয় তথা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,প্রমোদ প্রতিষ্ঠান এবং প্রমোদ এলাকা বন্ধ করে দিয়ে এক অন্যরকম দুনিয়া দেখিয়েছে করোনা আধুনিক যুগের মানুষকে।করোনা আরো দেখিয়েছে সুপার পাওয়ার তথা দুনিয়ায় প্রচলিত জ্ঞান,বিজ্ঞান,ক্ষমতা তথা মানুষ কত অসহায় এখনো প্রকৃতির কাছে।আর এসব কিছুই ভোগবাদী মানুষকে স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।



২।মানুষে মানুষে দূরত্ব ও অবিশ্বাস বাড়িয়েছে - বর্তমান সমাজে এমনিতেই মানুষের সাথে মানুষের মতের-মনের মিল ও বিশ্বাস কম ।আর এর মাঝে করোনা সে দূরত্ব ও অবিশ্বাস আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন স্বামী - স্ত্রী কে বাবা-ছেলেকে , মা-মেয়েকে মানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করছেনা ।সামান্য হাচি-কাশির উপসর্গ দেখা দিলেই সবাই তার সাথে দূরত্ব তৈরী করে ফেলছে ।করোনা আসলে হয়েছে কি হয়নি তাও ভেবে দেখার সময় নেই কারো।এ এক অসহ্যকর পরিবেশ ।কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা । এ যেন সবাই এক একজন বিচছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা।যেখানে মানুষে-মানুষের সহমর্মিতা ,সহযোগীতা একের বিপদে বা সুখে-দুখে অন্যের সহায়তা সহযোগীতা সব অনুপস্থিত ।

৩।সুখ এবং সুখের সংগা পালটে দিয়েছে - করোনা আমাদেরকে সুখ এবং সুখের উপকরন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।বর্তমান সমাজে মানুষ সবাই বৈধ অবৈধ যে কোন ভাবেই এবং যেভাবে সুখের পিছনে ছুটে চলেছিল তাতে করোনা যতি টেনে দিয়েছে।মানুষের নিকট এখন জগতের আর সব সুখ থেকে শারীরিক সুস্থতা যে স্রষ্টার পক্ষ থেকে কত বড় নেয়ামত বা কত প্রয়োজন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।কারন , একটু হাচি বা কাশি দিলেই চারিপাশের লোকজন তথা আপনজনেরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বা দেখাচছে তাতে মানুষ এখন পার্থিব ধন-সুখ-সম্পদ থেকে শারীরিক সুস্থতাই যে সবচেয়ে বেশী সুখের-সম্পদ তা উপলব্ধি করতে পেরেছে।আর এ সুখ যে কতবড় নেয়ামত তা উপলব্ধি করার জন্য কেউ যদি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ এবং বার্ন ইউনিটে শুধুমাত্র এক ঘন্টা কাটিয়ে আসেন তাহলে তা আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।সর্বোপরী করোনাকালে ধন-সম্পদ,টাকা-পয়সা কতটা মূল্যহীন তা হাসপাতালে থেকে হাসপাতালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া,আপনজনদের আচরন সর্বোপরী সমাজের সবার প্রতিক্রিয়া তা শুধু করোনা রোগীর প্রতিই নয় স্বাস্থ্যসেবা খাতের সম্পর্কীয় মানুষদের সাথে বাকীদের ব্যবহার ও মানুষদেরকে সুখের উপায় ও উপকরন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।



** আপনজন এবং করোনা -

করোনা মানুষকে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশী ভাবতে বাধ্য করছে তা হলো মানুষে মানুষের সম্পর্ক তথা আপনজনদের সম্পর্কে। যে আপনজনদের জন্য আমরা ন্যায় অন্যায় ভূলে যে কোন অন্যায় এবং যে কোন উপায়ে তাদের সুখের জন্য যে কোন খারাপ কাজ করতে ভাবিনা সেই আপনজনরা ই বিপদে আপনার-আমার কতটা কাজে আসে তা নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে করোনা।কারন করোনা হয়েছে বা তার উপসর্গ দেখা গেছে এ জানা মাত্রই যেভাবে আপনজনেরা তাদের ছুড়ে ফেলেছে বা ত্যাগ করেছে তাতে আপনজনদের নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ এনে দিয়েছে করোনা।

** দাফন-কাফন তথা লাশ সৎকারে সমাজ এবং আপনজনদের বাধা প্রদান -

করোনার ভয়ে মৃতদেহ দাফন বা সৎকারে আত্মীয়রা ভার্চুয়াল জানাজা পড়ছেন ঠিক আছে; কিন্তু মৃতদেহ রেলস্টেশনে, হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন কেন? চলতি পথে গাড়িতে কোনো যাত্রী মারা গেলে তাকে রাস্তার পাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে যেতে হবে- এমন পৈশাচিক অবস্থা তৈরির জন্য করোনাকে দায়ী করা হলেও দায়ী হচ্ছে সেইসব মানুষ, যারা স্বার্থপরতার চরম অবস্থানে চলে গেছে। এমনকি মারা যায়নি অথচ করোনা হয়েছে ভেবে এক মাকেও সন্তান ও জামাই মিলে জঙ্গলে ফেলে আসার অমানবিক সংবাদ জানা গেছে।

বেহুঁশ মানুষ নিজে বাঁচার জন্য জীবন-জীবিকাকে সমার্থক ভাবতে গিয়ে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে বনের পশুর পর্যায়ে চলে গেছে। ভোগবাদী মানুষ শুধু দুনিয়ার খেয়াল নিয়ে মত্ত থাকার ফলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি কখনও নেয় না। ফলে মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে বাস্তবতা বুঝতে পেরে সবকিছুতে হুঁশ হারিয়ে ফেলে। ভোগবাদীরা জীবনটাকে ভোগ-বিলাসে মত্ত রাখায় সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নির্দিষ্ট পথে অবস্থান করে না। ফলে শুধু দুনিয়ার খেয়াল তাদের অন্ধ ও বেশি স্বার্থপর করে তোলে। মৃত্যুভয় তাদের বেশি আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। নিজে বাঁচার জন্য তারা বেশি তৎপর হয়ে ওঠে।



করোনা বিপর্যয় শুরু হওয়ার পর এ রোগে মৃতদের দাফন করা নিয়ে নানা ঘটনা জানা গেছে। রাজধানী ঢাকায় কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যান, তাদের কোন কবরস্থানে দাফন করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেকের মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে এলাকাবাসী লাশ গাড়ি থেকে মাটিতে নামাতে দেয়নি। এ জন্য ঝগড়া-বিবাদ, রাজনীতি, কুসংস্কার, ভয়ভীতিসহ নানা বিষয় হাজির করে তালগোল পাকানো হয়েছে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়ের গাঁওয়ের নাউজান গ্রামের জনৈক পাটোয়ারী শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে মারা গেছেন। নিছক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তার লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে তার নিজ গ্রামের লোকজন।

আরেকটি মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেছে পাটগ্রাম থানার আমবাড়ি গ্রামে। যে গ্রামের এক মেয়ে টঙ্গীতে পোশাক কারখানায় কাজ করত, ঈদের ছুটিতে ট্রাকে চড়ে বাড়িতে ফেরার সময় ভোররাতে রংপুর ক্যাডেট কলেজের কাছে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ১৬ ঘণ্টা পর অনেক লুকোচুরি শেষে তার বাবাকে খবর দেয়া হয়। এরপর পুলিশকে খবর দিলে নিয়মানুযায়ী মেডিকেল কলেজে নিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশের সিলমারা সাদা প্লাস্টিক কভারে ভরে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিলে বাবা লাশ নিয়ে গ্রামে চলে যান। এর পরের ঘটনা অনেক করুণ, অনেক ঘৃণার। লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়; কিন্তু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রামের মধ্যে লাশ দাফনে বাধা দেন। লাশ তাদের গ্রামে নিয়ে এলে লাশবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হবে বলে ভয় দেখিয়েছেন। মেয়ের বাবা নিরুপায় হয়ে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে দাফনের জন্য লাশটি দিয়ে দেন। এ জন্য তিনি একটি লাশবাহী গাড়ির ড্রাইভারকে পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করেন; কিন্তু ওই ড্রাইভার লাশটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর না করে গভীর রাতে রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর কাছে তিস্তা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। একজন অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার কী করে পাঁচ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে একটি ময়নাতদন্ত করা লাশকে ঠিকানায় পৌঁছে না দিয়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিল? এ কি তার বিবেক?

আপন মামার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল বিধান সরকারের (৪৭)। নিয়মিত মামার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি যাওয়ার আগে তাই প্রথমেই মামা বাড়ি যেতেন তিনি। এবারও গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য রাতে অসুস্থ হয়ে মামার ঘরেই মৃত্যু হয় তার। তবে তার মৃত্যু করোনায় কিনা তা নিশ্চিত হতে না পেরে ভয়ে মামা তার সৎকারে অস্বীকৃতি জানান। গ্রামের স্থানীয় যারা সৎকার করেন তারাও দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যান। পরে প্রশাসন তার সৎকারের ব্যবস্থা করে।এগুলি ছাড়াও আরো এরকম আরও অসংখ্য করুন ঘটনার তৈরী হয়েছে এবং দেখেছে মানুষ এই বছরে।

একটি লাশ যদি একজন করোনাক্রান্ত রোগীর হয়েই থাকে, তাহলেও তাকে কোনো এলাকার মাটিতে দাফন করতে বা সৎকার করতে বাধা দেয়ার যুক্তি কী? আসুন, করোনার এ ভয়াবহ সময়ে দুর্ভাগ্যবশত যারা আমাদের ছেড়ে আমাদের আগে পরপারে চলে যাচ্ছেন, তাদের মরদেহ দাফনে বাধা না দিয়ে বরং সাধ্য অনুযায়ী সম্মান দেখাই। সব মানুষই এ নশ্বর পৃথিবী থেকে চলে যাবে- কেউ আজ, কেউ বা আগামীকাল। সুতরাং শুধু সন্দেহবশত লাশ দাফন নিয়ে এত ভয় ও নিষ্ঠুরতা কেন?


২০২০ সালে যাদের আমরা হারিয়েছি বা যারা এ পৃথিবী থকে চির বিদায় নিয়েছেন-

২০২০ সাল, সারা পৃথিবীতেই বিষাদের বছর হিসেবে ইতিহাসে থেকে যাবে। এই বছরে মাহমারি করোনার শিকার হয়ে মারা গেছেন সারা দুনিয়ার অনেক মানুষ ও তারকা। বাংলাদেশেও শোকের পর শোক নেমেছে মৃত্যু ও করোনার কারণে।নূর হুসাইন কাসেমী( হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব),শাহ আহমদ শফী(বাংলাদেশে ইসলামি জাগরণের নেতা ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি, দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক),ইসরাফিল আলম(রাজনীতিবিদ),এমাজউদ্দিন আহমদ(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য),নুরুল ইসলাম বাবুল( শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী),সাহারা খাতুন( প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী),লতিফুর রহমান( শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী),বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান( সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র),মোহাম্মদ নাসিম( বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী), আলাউদ্দীন আলী (সুরের যাদুকর),মতিউর রহমান (প্রযোজক ),আলী যাকের(টিভি অভিনেতা),এন্ড্রু কিশোর(প্লেব্যাক সম্রাট), সাদেক বাচ্চু (অভিনেতা) সহ আরো অনেক গুনী মানুষকে আমরা হারিয়েছি এই ২০২০ সালে। আসুন আমরা সবাই তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং যারা বেঁচে আছি তাদের সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

** ২০২০ সালে বিশ্বের আলোচীত ও স্মরণীয় ঘটনা -



২০২০ সালে বিশ্বের আলোচিত স্মরণীয় ঘটনার মাঝে - মহামারিতে স্তব্ধ বিশ্ব,মহামন্দায় বেহাল বিশ্ব অর্থনীতি,মার্কিন নির্বাচন ও ট্রাম্পের হার,‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার,সাইক্লোন আম্পান,লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ,লাদাখ সংঘাত ও দিল্লির দাঙ্গায় অস্থির ভারত,ভারত- পাকিস্তান ‘অবিশ্বাস আর বৈরিতা’,ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন,বিশ্ব জুড়ে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি ,চীন-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি,জাপান-ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া মিলে ‘কোয়াড’ গঠন ,শান্তি চুক্তিতেও অশান্ত আফগানিস্তান,ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলেমানি হত্যা ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ঝনঝনানি,ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের লালিত স্বপ্নের ট্রাম্প কর্তৃক হিমাগারে প্রেরন,ইসরাইলের সাথে - বাহরাইন-সংযুক্ত আরব আমিরাতের শান্তি চুক্তি,ইয়েমেনের হুতিদের সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ,আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা,বিরোধপূর্ণ নাগোরনো-কারাবাখে যুদ্ধ,রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ডামাডোলে মিয়ানমারে নির্বাচন,অবশেষ যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকর,দর্শকপ্রিয় ফুটবলের জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনার বিদায় এবং রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল থাইল্যান্ড ইত্যাদি ।



**আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল দেশটির অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পরাজিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনই এত বিপুলসংখ্যক ‘পপুলার ভোট’ পেয়েছেন যা অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পাননি। জো বাইডেন পেয়েছেন আট কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার ৫০২ পপুলার ভোট। অন্য দিকে ট্রাম্প পেয়েছেন সাত কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৫৯৩ ভোট।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন। তিনি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন ৩০৬টি। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। কিন্তু তবুও এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানাননি, যা আমেরিকার গণতন্ত্রের একটি ঐতিহ্যগত রেওয়াজ হিসেবে চলে আসছে। জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগে ট্রাম্পের করা ৫০টিরও বেশি মামলা কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট তাকে ‘এবার থামুন’ বলে সর্বসম্মত এক ‘অর্ডার পাস’ করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ তৎপরতা থেকে বিরত হচ্ছেন না। আমেরিকায় ১০০ বছর আগে ১৯১৯ সালে নারীর ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। আর ১০০ বছর পর ভাইস প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় উচ্চতম পদে প্রথম একজন নারী, কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হয়েছেন।


করোনাকালীন উপলব্ধি

২০২০ সালে এক করোনা আমাদের সমাজের প্রচলিত অনেক কিছুকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে মানুষকে এক নতুন পরিস্থিতির মাঝে এনে দাড় করিয়েছে যা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা ছিল।মানুষে মানুষের সম্পর্ক যে কতটা ঠুনকো এবং মেকি তা করোনা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়েছে।দেখিয়েছে মানব জীবনের ফাক ফোকর গুলি বড় নির্মম ভাবে।আর এর ফলে মানুষকে তার নিজেকে নিয়ে এবং আশেপাশের সবকিছু নিয়ে ভাবতে হচছে নতুন করে।এ এক অন্যরকম উপলব্ধি ।



মানুষের অল্প সময়ের এক জীবন সুন্দর ও সফল করার জন্য বা ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য কি খুব বেশী কিছু প্রয়োজন হয়?আমার মনে হয় তা নয়। কিছু অভ্যাস এবং আচরনের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই সুখী হতে পারি বা ভাল ভাবে বেঁচে থাকতে পারি। আমাদের জীবনে সুখী হওয়ার জন্য যে সব জিনিষ সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারে সে গুলো এরকম ও হতে পারে বা আমরা এভাবেও যদি দেখি তাহলে হয়ত সুখী হতে খুব বেশী কষ্ট করতে হবেনা -

১। সর্বদা আপনি-আমি যা পেয়েছি তার হিসাব করি।অর্থ্যাৎ এক জীবনে আমি -আপনি কি কি পেয়েছি তার হিসাব করুন।দেখবেন জীবনে পাওয়ার হিসাব কম নয়।আর না পাওয়ার হতাশা বা তার হিসাব থেকে দূরে থাকুন।আপনি আমি সুস্থ্য আছি -শুধু এটাই পজেটিভলি দেখলে দেখা যাবে স্রষ্টার কাছ থেকে এবং জীবনে আমরা কত কিছু পেয়েছি।

২।কিছু জিনিষ বা আচরন মানুষকে অসুস্থ করে তোলে।যেমন - ভবিষ্যতের উদ্বেগ,অতিরিক্ত চিন্তা , অতিরিক্ত কথা,অতিরিক্ত ঘুম, অতিরিক্ত খাওয়া ,অতিরিক্ত আশা এবং মেলামেশা ( বিশেষ ক্ষেত্রে) ।তাই সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আশা-কাজ-আচরন পরিহার করতে হবে বা করা উচিত।

৩।দুশ্চিন্তা পরিহার করে রাতে চমতকার একটি ঘুম দিতে হবে।রাতে ভাল ঘুম হলে নিজের শরীর, স্বাস্থ্য ও মন সুস্থ্য ও সতেজ থাকবে এবং নিজেকে সজীব ও সুখী লাগবে।

৪।মনকে বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে সরিয়ে মনোযোগী করুন অর্থ্যাৎ সবসময় ইতিবাচক ও শান্ত থাকুন।শান্ত মন আপনাকে -আমাকে সঠিক পথ ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

৫। জীবন অনেক ছোট ও কঠিন।জীবনের জটিলতায় এবং নানা প্রয়োজনে আমাদের আপনজনদের সাথে থাকার সুযোগ আরও সীমিত।আর করোনা কালে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি এবং পাচছি।তাই যে সব মানুষকে পছন্দ করেন সে সব মানুষের সাথে বেশী বেশী সময় কাটান।এতে শরীর ভাল থাকবে এবং মনও আনন্দে থাকবে।আর আনন্দপূর্ণ মন জীবনে সুখ- শান্তি আনয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

৬।সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক,ইন্টারনেট থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন এবং কম ব্যবহার করুন।

৭।কিছু জিনিষ মানুষের জীবনে খুব দরকার যা মানুষকে তার মানষিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।যেমন - ধার্মিকতা ( যে যেই ধর্মের অনুসারীই হোক ধর্ম মেনে চলা উচিত) , ধর্মানুরাগ,দানশীলতা, বিশ্বস্ততা এবং অন্যের প্রতি সহায়তা বা সাহায্য করা । আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ সাধ্য অনুসারে এগুলো পালনের চেষ্টা করা উচিত।

৮।কিছু কাজ বা অভ্যাস মানুষের ত্যাগ বা পরিহার করা উচিত কারন এগুলি মানুষকে শারিরীক ও মানুষিক ভাবে অসুস্থ করে তোলে । যেমন - রাতে দেরী করে ঘুমানো এবং সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠা,নিয়মিত নামাজ না পড়া,অলসতা,বিশ্বাসঘাতকতা-অসাধুতা ইত্যাদি।

৯।কিছু কাজ বা অভ্যাস মানুষের প্রতিদিন পালন করা উচিত । যেমন -নিয়মিত নামাজ পড়া/গভীর রাতে নামাজ পড়া এবং স্রষ্টাকে বেশী বেশী স্মরণ করা ,রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং সকালে তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠা,অলসতা পরিহার,নিয়মিত দান সাদকা করা এবং বেশী বেশী তওবা করা বা আল্লাহর কাছে অনুতাপ করা।আর এসব অভ্যাস মানুষের জীবন জীবিকা সহজ করে তোলে।

সবশেষে, মানুষের জীবনে নিজের ইচছাশক্তি ও কিছু বিষয় ও নিয়ম অনুশীলন করলেই সহজেই সুখী হওয়া যায়।আর নিয়ম-কানুন ও অনুশাসন না মেনে নিজের ইচছামত চললে মানুষের একজীবনে সুখ অধরাই থেকে যায়।আর এসকল ছোটখাট বিষয়গুলি অনুসরনই হতে পারে আপনার-আমার জীবনে সুখের নিয়ামক।আর সুখ হল মানুষের মনের একটি পজেটিভ অবস্থা।তাই সবসময় মনকে বুঝুন এবং মনের কথা শুনতে চেষ্টা করুন ।

আর সবশেষে আসুন আমরা সবাই একযোগে বলি ,"GO CORONA GO"।


তথ্যসূত্র - সংবাদপত্র,সম্পাদকীয়,বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল এবং ছবি - গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×