somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" ডারউইনের বিবর্তনবাদ " - মানুষ কি এপ-প্রাইমেট (বানর) থেকে এসেছে বা পৃথিবীতে মানুষের শুরু কিভাবে হয়েছে? এ ব্যাপারে ধর্ম ও বিজ্ঞানেরই বা কি অভিমত ?(কৌতুহল ও ফিরে দেখা - ১)।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ এবং যাদের কিছু মন্তব্যের সূত্র ধরে এই পোস্ট লেখার ইচছা - ব্লগার সাসুম ভাই ও ব্লগার এ আর ১৫ ভাই ।


ছবিঃ মানব বিবর্তনের ধারার আধুনিক ছবি (উৎস ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক)

পরিবর্তন একটি চলমান এবং প্রতিনিয়ত ঘটমান একটি প্রক্রিয়া।জীব মাত্রই পরিবর্তনশীল যার ফলে প্রতিনিয়ত তার আকার-আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটে।তবে প্রতিটা জীবের মূল যে বৈশিষ্ট্য তা অনেকটাই ঠিক থাকে।আর বিবর্তন বা অভিব্যক্তি হলো এমন একটি জীববৈজ্ঞানিক ধারণা যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জীবের গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমপরির্তনকে বুঝায়। কোনো জীবের বংশধরদের মাঝে যে জিনরাশি ছড়িয়ে পড়ে তারাই বংশপ্রবাহে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। জিনের পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবের নির্দিষ্ট কোনো বংশধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হতে পারে বা পুরনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে।বিবর্তনের মূল ভিত্তি হচ্ছে বংশপরম্পরায় জিনের সঞ্চারণ। যা একটি জীবের বংশগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য দায়ী, তা-ই জিন। যদিও একটি প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যের যে পরিবর্তন সাধিত হয়, তা খুবই সামান্য।

আধুনিক বিজ্ঞানের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তার অন্যতম ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব।তিনি তার এই তত্ত্বে দেখাতে চেয়েছেন, প্রাণীরা সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।চার্লস ডারউইনের "অন দ্য অরিজিন অফ স্পেশিস " নামে বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। তিনি তার এই গ্রন্থে বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, "এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয় "। তার এই প্রক্রিয়াকে ইংরেজিতে বলা হয় ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন যার মাধ্যমে একটি প্রাণীর জনগোষ্ঠী থেকে নতুন প্রজাতির উদয় ঘটে। বিবর্তনবাদের এই তত্ত্বটি আমাদের পৃথিবীর পশুপাখি ও উদ্ভিদ জগৎ সম্পর্কে বুঝতে বড়ো ধরনের ভূমিকা রেখেছে।

মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব কি বলে -

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চড়ে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বন-মানুষেরা অনেক অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং আলাদা আলাদা ধারা বা লিনিয়েজ তৈরি করেছে। সে হিসেবে আমরা আধুনিক বানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নই। আমরা আসলে এসেছি বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত এপ / প্রাইমেট থেকে। (সহজ করে বলতে গেলে, মানুষ প্রথমে মানুষ হিসাবে সৃষ্টি বা তৈরী হয়নি। সে অন্য প্রাণী থেকে পরিবর্তীত হতে হতে মানুষ হিসাবে যাত্রা শুরু করেছে বা মানুষ হয়েছে।তবে বানর থেকে পরিবর্তীত হয়ে মানুষ হয়েছে এটা তারা যেমন মানেন না আবার তেমনি কোন প্রাণী থেকে পরিবর্তীত হয়ে মানুষ হয়েছে এ ব্যাপারেও তাদের কাছে সঠিক ধারনা নেই ) ।

এখন আমরা দেখি মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে ইসলাম ধর্মে কি বলে -



মহান আল্লাহ পাক রাববুল আলামিন এই পৃথিবীতে প্রায় ১৮,০০০ মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন ।আর এই সকল সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ট হল মানুষ। মানুষকে আল্লাহ পাক তৈরী করেছেন সুন্দর আকার এবং আকৃতিতে আর তাকে দিয়েছেন চিন্তা করার এবং স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ।এই চিন্তা করার এবং স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ পাক তার আর কোন সৃষ্টিকে দেননি ।মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন - "নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, যাতে আমি তাকে পরীক্ষা করি, এই জন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন" (সুরা আল ইনসান -আয়াত- ২ )।

মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরো বলেন-"হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে"। (সূরা হজ্জ - আয়াত ৫)।

পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টির মূল উপাদান পানি। এই মৌলিক উপাদান পৃথিবীর সব জীবদেহের মধ্যে বিদ্যমান।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন -"অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে"। (সূরা তারিক - আয়াত ৫-৭)। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ আরো বলেন, "আর প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে" (সুরা আম্বিয়া, আয়াত - ৩০)। পবিত্র কোরআনে আরো বলেন "অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে"। (সুরা আস সাজদাহ -আয়াত ৮)।জীববিজ্ঞানের মতে, সাগরের অভ্যন্তরের পানিতে যে প্রটোপ্লাজম বা জীবনের আদিম মূলীভূত উপাদান রয়েছে তা থেকেই সব জীবের সৃষ্টি। আবার সব জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষ গঠনের মূল উপাদান হচ্ছে পানি। ভিন্নমতে, পানি অর্থ শুক্র বা বীর্য।

আসুন আমরা দেখি মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে -


ছবি - webneel.com

সাধারনভাবে আমরা দেখি যে, নর-নারীর যৌন মিলনের ফলে মানুষের জন্ম বা মানব সন্তানের জন্ম। মানব সন্তানের জন্মের জন্য নারীর ডিম্বাণু এবং পুরুষের শুক্রাণুর প্রয়োজন হয়। তার মানে হল - নারীর ডিম্বাণু এবং পুরুষের শুক্রাণু মিলেই মানব শিশুর জন্ম হয়।মানব জন্ম অর্থ্যাৎ মানব ভ্রুন সম্পর্কে বিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে (Embryology) বা ভ্রূণতত্ত্ব বলে। আল কুরআন এবং হাদীসে ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কিত বর্ণনাগুলোকে একত্রিত করে ইংরেজীতে অনুবাদের পর কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রূণতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান এবং আধুনিক ভ্রূণতত্ত্বের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডঃ কিথ মুরকে সেগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলা হয়। ডঃ মুর ভালভাবে সেগুলো অধ্যায়নের পর বলেন, "কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে ভ্রূণতত্ত্ব (মানব জন্ম) সম্পর্কে যা এসেছে, ভ্রূণবিদ্যার ক্ষেত্রে আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সেগুলোর অধিকাংশের পূর্ণ মিল রয়েছে, কোন অমিল বা বৈসাদৃশ্য নেই।

ডঃ কিথ মুর কুরআন নিয়ে রিসার্চ করার পূর্বে 'The Developing Human' নামক একটা বই লিখেছিলেন। কিন্তু কুরআন থেকে জ্ঞান সংগ্রহের পরপরই তিনি তার ঐ বইয়ের ৩য় সংস্করণ প্রকাশ করেন। বইটি একক লেখকের সর্বোত্তম চিকিৎসা বই হিসেবে পুরষ্কার লাভ করে। বইটি বিশ্বের অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং ১ম বর্ষের মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের জন্য ভ্রূণবিদ্যায় পাঠ্যবই হিসেবে গৃহীত হয়েছে। ভ্রুণবিদ্যা সম্পর্কিত কুরআনের তথ্যগুলো ডঃ কিথ মুরকে এতটাই অভিভূত করেছিল যে, অমুসলিম হয়েও দাম্মামে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি কুরআনকে " সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত " বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন!


ছবি - webneel.com

নর-নারীর যৌন মিলন ছাড়াও মানব সন্তানের জন্ম দেবার আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে " টেস্ট টিউব বেবি" কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেওয়া কোনো শিশু । এ কৌশলের একটি হচ্ছে আইভিএফ। এ পদ্ধতিতে স্ত্রীর পরিণত ডিম্বাণু ল্যাপারেস্কোপিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে বের করে আনা হয়। তার পর সেটিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়।একই সময়ে স্বামীর অসংখ্য শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা থেকে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় সবচেয়ে ভালো জাতের একঝাঁক শুক্রাণু।এই ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের পরিবেশ অনুরূপ একটি ইনকিউবিটরে।টেস্ট টিউব বেবির ক্ষেত্রে স্ত্রীর ডিম্বাণু ও স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে সেটি একটি বিশেষ পাত্রে রেখে বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয় নিষিক্তকরণের জন্য।নিষিক্তকরণের পর সৃষ্ট ভ্রূণকে স্ত্রীর জরায়ুতে সংস্থাপন করা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা। সূচনার এই সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়টাতে শিশু একদম স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতোই মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। তার মানে হল - এখানেও নর-নারীর মিলন ছাড়া মানব শিশুর জন্ম হয়নি।

মানব সন্তানের জন্ম দেবার আধুনিক আরেকটি পদ্ধতিতে আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান এবং তা হল " মানব ক্লোন "।মানব ক্লোনিং হলো একটি মানুষের জেনেটিক্যালি হুবহু প্রতিকৃতি তৈরি করা। মোটকথা,কৃত্রিমভাবে একটি মানুষ তৈরি করা। মানব ক্লোনিং খুবই জটিল এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া । বিজ্ঞানীদের অনেক দিনের গবেষনার ফল হলো এই ক্লোনিং। এই ক্লোন পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিতে গেলেও পুরুষের জীব কোষের বা শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণুর প্রয়োজন। অর্থাৎ একজন পুরুষের জীব কোষ বা শুক্রাণু ব্যতীত একজন নারী সন্তান জন্ম দানে অক্ষম। কেননা নারীর ডিম্বাণু ক্রোমোসোম (XX) এবং পুরুষের শুক্রাণু ক্রোমোসোম (XY) পুত্র-কন্যা সন্তান গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

যদিও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশেই ভবিষ্যত প্রজন্মকে ক্ষতিকর প্রভাব হতে রক্ষা ও মানব জাতির কল্যাণের জন্য মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এর পর ও কোন কোন দেশ বা সংস্থা গোপনে এটি পরিচালনা করছে বলে শোনা যায়। এর মাধমে বিখ্যাত বা কুখ্যাত কোন মৃত বা জীবিত ব্যক্তিকে পুনরায় সৃষ্টি করা হতে পারে বা বিকলাঙ্গ শিশু তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী।তবে,চাইলেই যে মানব ক্লোনিং করে যে কারো পুনর্জন্ম ঘটানো সম্ভব তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হবে। প্রথম ক্লোন ভেড়া জন্মগ্রহণ করার আগে ২৭৬ টি ভ্রুনের মৃত্যু ঘটে। এখন যদি মানব ক্লোনিং করা হয় তবে অবশ্যই কিছু না কিছু অপরিপক্ব শিশু ভ্রুণ মারা যাবে যা মানবিক দিক দিয়ে কখনো এটাকে সমর্থন করা যায় না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ভ্রুণ হত্যা একটি মারাত্মক অপরাধ। তবে,যে কেউ চাইলেই তার নিজের পছন্দসই প্রাণীর ক্লোন করিয়ে নিতে পারে। এক্ষেত্রে, এটি খুবই ব্যয়বহুল।আর তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবীর নানা দেশে মানব ক্লোনিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেন্টার ফর জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটির মতে, বিশ্বের ৪৬ টি দেশে ক্লোনিং নিষিদ্ধ, এবং ৩২ টি দেশে রি-প্রোডাক্টিভ ক্লোনিং (মানব ক্লোনিং) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্লোনিং এখনো নিষিদ্ধ হয় নি। যুক্তরাষ্টের ১৫ টি রাজ্যে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে কোনো কিছু জন্মদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এবং ৩ টি রাজ্যে সরকারী অর্থায়নে এটি নিষিদ্ধ।

আর এত সব আলোচনা থেকে যা দাড়ায়,তার মানে হল - ধর্ম এবং আধুনিক বিজ্ঞানের মতে,নারী-পুরুষের (নারীর ডিম্বাণু এবং পুরুষের শুক্রাণু) মিলনের ফলেই মানব শিশুর জন্ম বা মানুষের জন্ম হয়েছে।এ ছাড়া আর কোন ভাবেই মানুষ জন্ম নিতে পারেনা বা সম্ভব না।


আদি মানব আদম (আঃ) কি থেকে সৃষ্টি?

বিজ্ঞানের দাবী কে সত্য হিসাবে ধরে অনেকেই একটি প্রশ্ন করেন বা মনে প্রশ্ন জাগে, " যদি নারী-পুরুষের মিলনের ফলেই সকল মানুষের জন্ম হয় তাহলে সকল ধর্মমতেই যদি আদম (আঃ) আদি ও প্রথম মানব ও হাওয়া (আঃ) আদি মানবী হয় তবে হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) এবং হযরত ঈসা (আঃ) কি থেকে বা কিভবে সৃষ্টি হয়েছেন" ? (কারন,ধর্ম মতে আদি ও প্রথম মানব আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) মা-বাবা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছেন এবং ঈসা (আঃ) বাবা ব্যতীত মার্তৃগভে জন্ম নিয়েছেন )।

এখানে প্রশ্ন " আদম (আঃ) যদি প্রথম মানুষ হবে, তাহলে তাঁর কি পিতা-মাতা নেই? অথবা পৃথিবীতে তাঁর উদ্ভব কিভাবে হলো? মূল প্রশ্ন হলো - পৃথিবীতে প্রথম মানুষের পদযাত্রা শুরু হলো কিভাবে"? এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এভাবে - "যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন"।(সুরা আস সাজদাহ - আয়াত - ৭)। আল্লাহ আরো বলেন - "আপনি তাদেরকে (মানুষকে) জিজ্ঞেস করুন, তাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আমি অন্য যা সৃষ্টি করেছি? আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে"। (সুরা সফফাত - আয়াত ১১)।আল্লাহ আরো বলেন," তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। (সূরা আর রাহমান,আয়াত - ১৪)।

তার মানে হল - আদি মানব আদম (আঃ) মাটি থেকে সৃষ্টি।

হযরত হাওয়া (আঃ) কিভাবে সৃষ্টি?

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, হযরত আদম (আঃ) মাটি থেকে সৃষ্টি, কিন্তু মা হাওয়া (আঃ) কি দিয়ে সৃষ্টি? কারণ, আলকুরআনে বলা হয়েছে, - এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আদম (আঃ) যখন একা ছিলেন, তখন হাওয়াকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,"তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন"। (সুরা যুমার -আয়াত ৬)।

কুরআনে আরো বলা হয়েছে -"মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী"। (সুরা নিসা - আয়াত ১)।আল কুরআনে আরো বলা হয়েছে-"এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন"। (সুরা রূম -আয়াত ২১)।

মহান আল্লাহ হযরত আদম (আঃ) এর পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে একেবারে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তবে সব সময় বাকাই থাকবে। সূতরাং তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ও উপদেশমূলক কথাবার্তা বলবে"।

হযরত ঈসা (আঃ) কিভাবে সৃষ্টি?

এখন হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্ম সম্পর্কে ও প্রশ্ন হতে পারে,বাবা মায়ের মিলন ছাড়া অর্থ্যাৎ বাবা ছাড়া তিনি কিভাবে জন্ম নিলেন বা তার জন্ম কিভাবে। মহান আল্লাহ এ প্রশ্নের সমাধান পবিত্র কুরআনে যথাযথভাবে দিয়েছেন। তিনি বলেন,"নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকটে ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মত। তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন অতঃপর তাকে বলেছিলেন, হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেল"। (সূরা আল ইমরান -আয়াত ৫৯)।

হজরত মরিয়ম (আঃ) এর পুত্র হজরত ঈসা (আঃ) জন্ম সম্পর্কে কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, - "আর বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত মরিয়মের কথা, যখন সে তার পবিরবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, অতঃপর সে তাদের নিকট থেকে নিজেকে আড়াল করল। তখন আমরা তার কাছে আমাদের রূহকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল ।মরিয়ম বলল, “আল্লাহকে ভয় করো যদি তুমি মুত্তাকী হও, আমি তোমা হতে দয়াময়ের শরণ নিচ্ছি।” সে বলল, “আমি তো তোমার প্রতিপালক প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য।” মরিয়ম বলল, “কেমন করে আমার পুত্র হবে? যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই।” সে বলল, “এই রূপেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেছেন - ইহা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমি উহাকে এই জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ; ইহা তো এক স্থিরকৃত ব্যাপার।”অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল ও তাকে নিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল। প্রসববেদনা তাকে এক খর্জুর-বৃক্ষ তলে আশ্রয় লইতে বাধ্য করল। সে বলল, হায়! ইহার পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম ও লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম। ফেরেশতা (জিবরীল) তার নিম্নপাশ হতে আহবান করে তাকে বলল, ‘তুমি দুঃখ করো না, তোমার নিম্নদেশে তোমার প্রতিপালক এক নদী সৃষ্টি করেছেন। আর তুমি তোমার দিকে খেজুর-গাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, সেটা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে।। সুতরাং আহার করো, পান করো ও চক্ষু জুড়াও। মানুষের মধ্যে কাউকে যদি তুমি দেখো তখন বলো, “আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের রোজার মান্নত করেছি সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সহিত বাক্যালাপ করব না।” অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হলে; উহারা বলল, “হে মরিয়ম! তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসে আছো। ‘হে হারুনের বোন,তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিলেন না ব্যভিচারিণী।”তখন মারইয়াম সন্তানের প্রতি ইংগিত করল। তারা বলল, যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব? সে (শিশু ঈসা নবী আঃ) বলল, “আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়াছেন, আমাকে নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন সালাত আদায় করতে ও যাকাত দিতে । আর আমাকে আমার মাতার প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগ্য। আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হব।” এ-ই মারইয়াম-এর পুত্র ঈসা। আমি বললাম সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করছে।(সূরা মরিয়ম, আয়াত: ১৬-৩৪)।

এখন আমরা দেখি মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের বিশ্লেষণ বা বিস্তাারিত -


ছবি - sachalayatan.com

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুসারে, কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়। মানুষ সৃষ্টি হয়নি, বরং আজকের হোমো সেপিয়েন্স এ রুপ নিয়েছে মাত্র। বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ আর পৃথিবীতে বিদ্যমান অন্যান্য নরবানরেরা অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং ভিন্ন উৎসজাত অন্যান্য শাখাগুলো থেকে অতীতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে বিদ্যমান শিম্পাঞ্জি ও গরিলা থেকে আলাদা ধারা বা বংশানুক্রম তৈরি করেছে। অর্থ্যাৎ বানর জাতীয় কোন সাধারণ পুর্বপুরুষ থেকেই মানুষের জন্ম হয়েছে।

আমরা যদি এভাবে দেখি ," এখানে বানর জাতীয়" বলতে প্রাইমেট বুঝানো হচ্ছে বা হয়েছে , মাঙ্কি (বানর) নয়। শুধু মানুষই নয়, শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং ওরাংওটাং-এর মতো প্রাণীকূলেরও উদ্ভব ঘটেছে সেই একই সাধারণ পূর্বপুরুষ (common ancestor) থেকে। তার মানে দাড়াল,একসময় তাদের সবার (মানুষ-বানর-গরিলা-শিম্পাঞ্জি-ওরাংওটাং) এক কমন (সাধারণ) পূর্বপুরুষ ছিলো। সহজ ভাবে বললে এরা সবাই একই পূর্বপূরুষ থেকে উদ্ভুত হয়েছে।

এখানে মূল প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা 'বানর' বলতে ঠিক কি বুঝব। যারা এ প্রশ্নটি করেন তাদের অনেকেই ভুলভাবে ভেবে থাকেন যে, জঙ্গলে গাছের ডালে কিংবা চিড়িয়াখানায় খাঁচার রডে ঝুলে থাকা আধুনিক বাদঁর (মাঙ্কি) বা শিম্পাঞ্জিগুলো থেকেই বুঝি মানুষের উদ্ভব হয়েছে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। বিবর্তন তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চড়ে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বনমানুষেরা অনেক অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং আলাদা আলাদা ধারা বা লিনিয়েজ তৈরি করেছে। সে হিসেবে আমরা আধুনিক বানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নই। আমরা আসলে এসেছি বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত প্রাইমেট থেকে।


ছবি - shutterstock.com

** তাহলে দেখা যাচছে, মাঙ্কি বা বানর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি, বরং সঠিকভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ প্রজাতিরও উদ্ভব ঘটেছে বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের বানর জাতীয় কোন সাধারণ পুর্বপুরুষ থেকে। এখানে 'বানর জাতীয়' বলতে প্রাইমেট বুঝানো হচ্ছে, মাঙ্কি নয়। শুধু মানুষই নয়, শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং ওরাংওটাং-এর মতো প্রাণীকূলেরও উদ্ভব ঘটেছে সেই একই সাধারণ পূর্বপুরুষ (common ancestor) থেকে। প্রাণের বিকাশ এবং বিবর্তনকে একটা বিশাল গাছের সাথে তুলনা করা যায়। একই পূর্বপূরুষ থেকে উদ্ভুত হয়ে বিবর্তনের ওই গাছটির (জাতিজনি বৃক্ষ) বিভিন্ন ডাল পালা তৈরি হয়েছে । এর কোন ডালে হয়তো শিম্পাঞ্জির অবস্থান, কোন ডালে হয়ত গরিলা আবার কোন ডালে হয়ত মানুষ। অর্থাৎ, একসময় তাদের সবার এক সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিলো, ১.৪ কোটি বছর আগে তাদের থেকে একটি অংশ বিবর্তিত হয়ে ওরাং ওটাং প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। তখন, যে কারণেই হোক, এই পূর্বপুরুষের বাকি জনপুঞ্জ নতুন প্রজাতি ওরাং ওটাং এর থেকে প্রজননগতভাবে আলাদা হয়ে যায় এবং তার ফলে এই দুই প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে তাদের নিজস্ব ধারায়। আবার প্রায় ৯০ লক্ষ বছর আগে সেই মুল প্রজাতির জনপুঞ্জ থেকে আরেকটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং পরবর্তিতে ভিন্ন ধারায় বিবর্তিত হয়ে গরিলা প্রজাতির উৎপত্তি ঘটায়। একইভাবে দেখা যায় যে, ৬০ লক্ষ বছর আগে এই সাধারণ পুর্বপুরুষের অংশটি থেকে ভাগ হয়ে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির বিবর্তন ঘটে। তারপর এই দুটো প্রজাতি প্রজননগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন থেকেই একদিকে স্বতন্ত্র গতিতে এবং নিয়মে মানুষের প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে, আর ওদিকে আলাদা হয়ে যাওয়া শিম্পাঞ্জির সেই প্রজাতিটি ভিন্ন গতিতে বিবর্তিত হতে হতে আজকের শিম্পাঞ্জিতে এসে পৌঁছেছে ।


ছবি - m.dailyhunt.in

*** আবার,মানুষ বানর (মাঙ্কি) নয়। মাঙ্কি থেকে মানুষের বিবর্তনও হয়নি। কিন্তু প্রাইমেটকে বানরের শব্দার্থ হিসেবে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষও একধরনের প্রাইমেট বা বানর জাতীয় প্রানী ছাড়া কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে মাঙ্কি একটি অধিবর্গ বা প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ, আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্সে প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ শক্তভাবে এড়িয়ে চলা হয়। আমরা কোন মাঙ্কি অবশ্যই নই, তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা প্রাইমেট। আমাদের পাশাপাশি অবস্থিত একজোড়া চোখ, ত্রিমাত্রিক, রঙ্গীন, স্টেরিও দৃষ্টি, চোখের পেছনে বিশাল বড় একটা মাথা, আড়াই শত দিনের কাছাকাছি গর্ভকালীন সময়, বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পূর্বে একটা অস্বাভাবিক রকম বিশাল শৈশব, ল্যাটেরাল থেকে ক্রমান্বয়ে স্ক্যাপুলার ডোর্সাল অক্ষে পিছিয়ে যাওয়া (regression), পেন্ডুলার পিনেস এবং টেস্টস, অস্বাভাবিক বিকাশপ্রাপ্ত প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্স আমাদের বানায় বানরজাতীয় জীব বা প্রাইমেট, এটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি। মানুষ সহ সব বনমানুষই স্তন্যপায়ী প্রানীর অন্তর্গত প্রাইমেট বর্গে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাইমেটদের দু'শরও বেশি প্রজাতির সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। মানুষকে এই প্রাইমেট বর্গের মধ্যে হোমিনিডি অধিগোত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।

**** মাঙ্কি (বানর) থেকে আমরা বিবর্তিত না হলেও বানরজাতীয় সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আমাদের মানুষ প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে এটা মোটেই ভুল নয়। সাধারণ (Common) পূর্বপুরুষ নাম দেয়া হোক আর যাই দেয়া হোক - তারা যে আসলে বানর সদৃশ জীবই ছিলো তাতে কোন সন্দেহ নেই, কারণ, আমরা সবাই সার্বিকভাবে প্রাইমেটদেরই গোত্রভুক্ত । ( বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে ) ।

- আগামী পর্বে সমাপ্য -

============================================================
তথ্যসূত্র -

*উইকিপিডিয়া
*আলকোরআন,
** বিবর্তনের পথ ধরে, বন্যা আহমেদ, (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত ২০০৮)।
*** Stringer, C and Andrews, P, The complete Wrold of Human Evolution, Thames and Hudson Ltd, London, 2005।
**** ড. ম. আখতারুজ্জামান, বিবর্তনবিদ্যা, বাংলা একাডেমী (১৯৯৮), ২য় সংস্করণ, হাসান বুক হাউস (২০০৪)।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৬
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজা বাঁচাতে করণীয় এখন একটাই

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:২০


গাজা সমস্যার সমাধান একটাই: ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি। যুদ্ধবিরতি মেনে বন্দীদের মুক্তি দিন, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বাঁচান। নেতানিয়াহুর সাথে যুদ্ধে পারবেন না। ইতিহাস তাই বলে। ইতিপূর্বে প্রায় সকল শক্তিশালী মুসলিম দেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের করুণ পরিণতি: কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:০৮

সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের করুণ পরিণতি: কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়

প্রতীকি ছবিটি এআই দ্বারা তৈরিকৃত।

সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হয়ে আসছে। বিশেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

=চলে যায় নিরবে মাহে রমজান=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২০ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২৮



কী শান্ত ধীর পায়ে হেঁটে রহমতের মাস চলে যায় ঐ,
যায় চলে রমজান দিয়ে ঈদ আনন্দ হইচই,
দীর্ঘশ্বাসের লহর বুকে
তারে কাছে রাখতে, দাঁড়াতে পারবো না রুখে।

সে যায় আপন মহিমায়, সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Deep State : সরকারের ভিতর সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:১৬


বিশ্ব রাজনীতিতে "ডিপ স্টেট" শব্দটা যেন এক অদৃশ্য ভূতের মতো। সবাই এর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করে, কিন্তু কেউই প্রমাণ হাতে পায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ট্রাম্পের সময় থেকে এই শব্দটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাময়িক মৃত্যু

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪



লখনউয়ের হাসপাতাল মিরাকেল করলো! কিং জর্জেস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির চিকিৎসকরা ৬ মিনিটের জন্য রোগীকে মৃত করে অপারেশন, অসম্ভবকে সম্ভব করলেন!

১ বছর আগে হৃদযন্ত্রের ২টি ভালভ বদল করা হয়েছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×