somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কোন অযুহাতে দেশে হানা-হানী সৃষ্টি বা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা তা কতটা গ্রহনযোগ্য এবং এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভংগী বা নির্দেশনা কি ?

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে কারনে এই পোস্ট লেখার ইচছা - গত কিছুদিন যাবত নানা অযুহাতে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতী তৈরীর প্রেক্ষাপটে এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের শুভবোধের উদয়ের উদ্দেশ্যে -
উৎসর্গ - ব্লগার সাসুম এবং ব্লগার এভো ভাইকে -


ছবি - thedhakatimes.com

মানুষ আল্লাহর প্রিয় ও সেরা সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তিনি মানুষকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।আর তাই মানুষ হত্যাকে তিনি কবিরা গোনাহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। হত্যার অপরাধে হত্যাকারী শেষ বিচারের দিন মহান আল্লাহর আরশের ছায়া থেকে বঞ্চিত হবেন।যে কোন অযুহাতে বা কারনে অবৈধ হত্যাকাণ্ড পৃথিবী ধ্বংসের চেয়েও মারাত্মক এবং তা মহাপাপ (তবে কিছু হত্যা যেমন - যুদ্ধকালীন এবং বিচারের শেষে সেগুলো ভিন্ন ব্যাপার । যুদ্ধ ঘোষনা করার দায়িত্ব শুধুমাত্র রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের বা আইনসম্মত শাসকের এবং বিচারের সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পর আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামীর ব্যাপার বতীত ) । মানুষ হত্যা মানবতা হত্যার শামিল। সে কারণে যখন কোথাও কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, সেখানে আল্লাহর অভিশাপ নাজিল হয়।

যে কোন অযুহাতে দেশের শান্তিময় পরিবেশকে ভীতিকর করে তোলা, জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করা, যেকোনো উপায়ে নিরপরাধ কাউকে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা, অথবা অপরাধী কোনো ব্যক্তিকেও বেআইনিভাবে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা হারাম। অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কোরআনে কারিমে "সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার " নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে," এ কারণেই বনী ইসরাঈলের উপর এ বিধান দিলাম যে, নরহত্যা বা যমীনে ধ্বংসাত্মক কাজ করার কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করল , আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল । আর অবশ্যই তাদের কাছে আমার রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলেন, তারপর এদের অনেকে এর পরও যমীনে অবশ্যই সীমালংঘনকারী"। ( সূরা আল মায়েদা,আয়াত - ৩২ )।


ছবি - ekushey-tv.com

মানুষ হত্যা এবং হত্যাকারীদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভংগী

হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতায় তুলে ধরে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন," যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন" (সুরা নিসা ,আয়াত - ৯৩)।

এ ছাড়াও আল কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, " আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতিত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। তাদের শাস্তি কেয়ামতের দিন দ্বিগুন হবে এবং সেখানে তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৮-৭০)।

উল্লেখিত আয়াতের আলোকে ইসলামে সকল অবৈধ হত্যাকাণ্ড হারাম ও মারাত্মক কবিরা গোনাহ। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে কাউকে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাদের শাস্তির বিষয়টিও উঠে এসেছে কুরআন শরীফে। তাই যে কোনো কারনে যে কোন হত্যাকাণ্ড ঘটানো থেকে সকল মানুষের বিরত থাকা জরুরি। যে কোন অন্যায়ের প্রতিবিধান বা শাস্তি প্রদানের দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের । আর তাই যে কোন অযুহাতেই (ধর্ম অবমাননা কিংবা আস্তিক- নাস্তিক প্রশ্নে) আইন ভংগ করা, না ধর্মে- না দেশের প্রচলিত আইনে গ্রহন ও সমর্থনযোগ্য। ইসলামের বিধানের তোয়াক্কা না করে, মানবতাকে পায়ে দলে, পশুত্বের কোন স্তরে পৌঁছলে এমন কাজ (হত্যাকাণ্ড) মানুষের দ্বারা সম্ভব তা অনুমানযোগ্য নয়।

ইসলামে হত্যার বিচার - বদলা বা কিসাস

এখন আসুন দেখি কিসাস কি ?

সারা বিশ্বে বর্তমানে মানুষে মানুষে হানাহানি, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা এবং এ সংক্রান্ত অন্যায় অপরাধের প্রবণতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জীবিতরাও উৎকন্ঠিত থাকে কখন কী থেকে কি হয় - এই ভেবে। কেউ এখন আর এ থেকে নিজেকে নিরাপরাধ এবং নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সচেতন মহল তাই এর প্রতিরোধের নানা রকম উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এতদসংক্রান্ত অপরাধের প্রতিকার নিয়ে আল-কুরআনের একটি পন্থা হলো " কিসাস "। মূলতঃ মৃত্যুর বিনিময়ে মৃত্যু, কিংবা কোন ধরণের জখমের বিনিময়ে অনুরুপ জখমের পরিভাষা হলো " কিসাস " বা " অনুরুপ প্রতিশোধ "। ইসলামী অপরাধ আইনের গরুত্বপূর্ণ এই পরিভাষাটি সরাসরি কুরআন ও হাদিসে ব্যবহৃত হয়েছে।

অন্যায় ও অবৈধভাবে হত্যা মহাপাপ এবং যে কোন অযুহাতে তা গ্রহনযোগ্য নয়। তা হোক ইচ্ছাকৃত হত্যা কিংবা ভুলবশতঃ হত্যা ।আবার হত্যাকারীও দুপ্রকার ১। ইচ্ছাকৃত, ২। ভুলবশতঃ। সকল প্রকারের হত্যার ব্যাপারে ইসলামের প্রথম পার্থিব বিধান হচ্ছে, কিসাস (রক্ত মূল্য) ওয়াজিব। আর পরকালের বিচার বা পরবর্তী বিচারের ভার স্বয়ং আল্লাহর ।

কিসাস সম্পর্কে (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত - ১৭৮ ) এ বলা হয়েছে," হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায় দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কিছুটা মাফ করে দেয়া হয় তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে। এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব"।

এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট - এই আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম লেখেন যে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগে দু’টি গোত্রের মধ্যে লড়াই হয়েছিল। তাদের উভয় দলের লোকই নিহত হয় কিন্তু কেসাস নেয়ার পূর্বেই উভয় গোত্র মুসলমান হয়ে যায়। তখন তারা প্রতিজ্ঞা করে যে, আমাদের একজন নারী হত্যার করণে আমরা তাদের একজন পুরুষ হত্যা করব এবং একজন গোলামের পরিবর্তে একজন স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করবো তখন এই আয়াত নাজিল হয়।

ইসলামী অপরাধ আইনে তিন ধরণের অপরাধের কথা বলা হয়েছে। যথা -

১। কিসাস (অনুরুপ প্রতিশোধ),
২। হুদুদ (আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি),
৩। তা’যির (ভীতি প্রদর্শন মূলক শাস্তি)।

এসকল শাস্তির মূল উদ্দেশ্য হলো - (১) অপরাধীকে শোধরানো, (২) ক্ষতিগ্রস্থদের সান্তনা এবং (৩) অন্যান্যদেরকে এ জাতীয় কাজে অনুৎসাহিত করা।

কিসাসের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন," হে ঈমানগারগণ, তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কিসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়ে, তাবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে তার জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। আর হে বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্নগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে জীবন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর"। (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৭৮-১৭৯)

কিসাসের ব্যাপারে আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা আরো বলেন," আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম" (সূরা মায়েদাহ, আয়াত - ৪৫)।

কিসাস মূলতঃ কয়েকটি অপরাধকে অন্তর্ভুক্ত করে -

১। হত্যা (ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত উভয়ই) ।
২। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানবতা বিরোধী অপরাধ যা মৃত্যু কিংবা মৃত্যুর কারণ হতে পারে ।
৩। ভুলকৃত হত্যা ।
৪। ভূলক্রমে মানবতা বিরোধী এমন অপরাধ যা মৃত্যু কিংবা মৃত্যুও কারণ হতে পারে।

উক্ত আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যেমন -

১। ন্যায় বিচার সবার জন্য।
২। ক্ষতিগ্রস্থদের অধিকার আছে বৈধ উপায়ে প্রতিশোধ নেবার ।
৩। সমবস্থার প্রতিশোধের বাইরেও শর্তসাপেক্ষে টাকা ও সম্পদের ক্ষতিপুরুণও চাইতে পারবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি কিংবা তার উত্তরাধিকারীরা।
৪। ন্যায় বিচার অবশ্যই আল্লাহর দেয়া বিধান মোতাবেক হতে হবে।
৫। আল্লাহর দেয়া বিধান উপেক্ষাকারীদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি ।
৬। কিসাসের মধ্যেই অন্যদের জীবনের নিরাপত্তা রয়েছে।


ছবি - daily-bangladesh.com

এখানে কিন্তু কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে বা মনে রাখতে হবে - তা হলো -

১। কিসাসের শাস্তি কিন্তু কোন ব্যক্তি দিতে পারবে না। এটির মূল দায়িত্ব দেশের সরকার বা বিচার ব্যবস্থার উপরে (যে কোন অন্যায়ের শাস্তি এবং বিচারের ভার রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের এবং দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক এবং আইনের সকল বিধি-বিধান অনুসরন পূর্বক - যথা - অপরাধীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, আইনী সাহায্য, পক্ষ-বিপক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন,বিচারে পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং আপিল করার সুযোগ এবং সবশেষে আদালত কর্তৃক প্রদেয় সাজার বিরুদ্ধে আপিল বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাজা মওকুফ বা বহাল রাখা ) পরেই তা কার্যকর।

২। প্রত্যেক অপরাধেরই শাস্তি হতে হবে। এটি এমন না যে, আপনজনেরা শাস্তি পাবে না কিন্তু অন্যরা পাবে। অর্থাৎ কোন বৈষম্য করা যাবে না ।

৩। অনুরুপভাবে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির অধিকার আছে প্রতিশোধ নেবার ।

৪। দিয়্যতের (টাকা বা সম্পদের বিনিময়ে প্রতিশোধ) ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি আগে থেকেই থাকতে হবে ।

৫। অপরাধী যদি ক্ষতিপুরুণ দিতে অসমর্থ হয় তাহলে তার পরিবার এবং পরিবার অসমর্থ হলে সমাজের উপর, এমনকি পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রের উপরেও বর্তাবে ।

৬। যে কোন ক্ষতিপুরুণ অবশ্যই নির্ধারিত নিয়ম-নীতির মাধ্যমে এবং বৈধ উপায়ে আদায় করতে হবে। এটি ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠির সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়ে বরং বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত হবে।


এখানে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে, হত্যাকারীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে কিভাবে জীবনকে বাঁচানো যায়? উত্তরে বলা যেতে পারে -

১। যখন কোন অপরাধী ঠিক সমপরিমাণ শাস্তি পাবে তখন সমাজের অন্য কেউ ঐ অপরাধে জড়াতে চাইবে না এটাই মানব প্রকৃতি। সুতরাং একজনের মৃত্যুদন্ডের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের অনেকের জীবনকে নিরাপদ করা সম্ভব হবে।

২।যদি " হাতের বিনিময়ে হাত", " পায়ের বিনিময়ে পা ", " চোখের বিনিময়ে চোখ ", বা অন্য কোন অঙ্গের বিনিময়ে যদি অনুরুপ শাস্তি অপরাধীকে দেয়া যায় তাহলে ঐ অপরাধী সমাজের জন্যে ন্যায় বিচারের একটি জীবন্ত শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে। তখন অন্যান্যরা সেই কাজের ভয়াবহতা সরাসরি অনুভব করবে এবং এই ধরণের কোন অন্যায়ের সাথে কখনও সম্পৃক্ত করতে চাইবে না।

পরিশেষে বলা যায়, সত্যিকার অর্থেই যদি ইসলাম নির্দেশিত মৃত্যু ও এতদসংক্রান্ত কোন অপরাধের জন্যে সমপরিমাণ প্রতিশোধ (কিসাস) অপরাধী থেকে নেয়া যায় তাহলে বিশ্বজিত কিংবা রিফাতের মতো আর কেউ দূর্ঘটনার স্বীকার হবে না এবং সমাজ থেকে মানুষ হত্যার মত জঘন্য কাজ করার আগে সবাই দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে।

এ ব্যাপারে হাদীসের শিক্ষা

হত্যাকাণ্ড মারাত্মক বড় অপরাধ। কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম হত্যাকাণ্ডের বিচার-ফয়সালা করা হবে। হত্যাকাণ্ডের পরিণাম সম্পর্কে হাদিসে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। তাহলো -

১।রাসুল (সাঃ) বলেছেন, " কেয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথমে যে বিষয়ে ফয়সালা হবে; তাহলো রক্তপাত বা হত্যা" (বুখারি শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিশকাত শরীফ)।

২। প্রিয়নবি রাসুল (সাঃ) বলেছেন, " একজন মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে যে পর্যন্ত না সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়"। (বুখারি শরীফ, মিশকাত শরীফ)

৩। রাসুল (সাঃ) বলেছেন," নিরাপরাধ মানুষকে হত্যার অপরাধে আল্লাহ তাআলা সব অপরাধীকে এক সঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন"।

৪। অন্য হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,"একজন মুমিনের রক্তের মূল্য কাবা ঘরের চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদার"

৫। বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সাঃ) মুমিন নিরাপরাধ ব্যক্তির রক্তের মূল্যের ব্যাপারে নসিহত করে বলেছেন, " ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানের সময়, মাস ও স্থান যতবেশি মূল্যবান; আল্লাহর কাছে নিরাপরাধ মুমিন ব্যক্তির রক্ত আরও বেশি মূল্যবান"।

নিরাপরাধ মানুষ হত্যার পরিণাম

নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা বা রক্তপাত করায় ৫টি শাস্তির ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যার শাস্তি যে কত জঘন্য তা প্রমাণেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেছেন। আয়াতের তাফসিরে হত্যার ভয়াবহ শাস্তির কথাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যার একটি শাস্তির কথা উল্লেখ করাই যথেষ্ট ছিল। তাহলো-

> হত্যার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম।

> হত্যাকারী জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবেন।

> আল্লাহ হত্যাকারীর ওপর রাগান্বিত হবেন।

> আল্লাহ হত্যাকারীর প্রতি লানত তথা অভিশাপ দেবেন।

> হত্যাকারীর জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি।


ছবি - mandaldebjyoti.com

হত্যার প্ররোচক কারণ হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে ইসলাম। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,"তোমরা একে অপরের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে পড়ো না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইকে তিনদিনের বেশি ত্যাগ করা হালাল নয়"। (সহিহ বোখারি শরীফ )।


ইসলাম কোন অবস্থায়ই অন্যায় হত্যাকাণ্ডে সমর্থন করেনা । হত্যার মতো জঘন্য কবিরা গোনাহ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখতে হবে। হত্যাকাণ্ডের গোনাহের কথা তুলে ধরতে হবে। হত্যাকাণ্ড যে হারাম বা কবিরা গোনাহ, তা ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার করা মানুষের ঈমানি দায়িত্ব।মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হত্যার মতো জঘন্য কবিরাহ গোনাহ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন এবং কুরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৩১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×