পরীক্ষা নিয়ে মোটামুটি সবারই কম বেশি ঝামেলা পোহানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। আবার এমনও হয়েছে যে পরীক্ষার হলে বন্ধুর কাজ কর্ম দেখে টাস্কি খেয়েছেন। আমি তেমন কিছু ঘটনাই আপনাদের সাথে শেয়ার করব। ঘটনার নায়ক আমার কিছু বন্ধুবান্ধব।
এস এস সি পরীক্ষা-২০০৫ যারা ঢাকা বোর্ড থেকে দিয়েছেন বা প্রশ্ন দেখেছেন তারা নিশ্চই খেয়াল করেছিলেন যে বাংলা দ্বিতীয় পত্র প্রশ্নটা তুলনামুলক কঠিন হয়েছিল। আমাদের পরীক্ষার সীট পড়েছিল আবার আমাদের এলাকারই একটা বালিকা বিদ্যালয়ে। তো আমরা আগে থেকেই জানতাম সেখানে একজন ঢাকা ভার্সিটির বাংলায় থেকে সম্মান করা ম্যাডাম রয়েছেন। তিনি নাকি আবার খুবই কড়া গার্ড দেন তাও শুনেছিলাম। এই জন্যেই একটু একটু ভয় পাচ্ছিলাম তাকে দেখে। যা হোক রচনামূলক অংশের পরে নৈর্ব্যক্তিক অংশের প্রশ্ন পত্র পাওয়ার পরে আমরা মোটামুটি সবাই টাস্কি খাইলাম। বলাবাহুল্য আমাদের শহরে হাতে গোনা অল্প কিছু ভাল স্টুডেন্ট থাকে আর বাকিরা সবাই আমার মত আবুল টাইপ এর। তো এর মধ্যে ম্যাডামকে লক্ষ্য করলাম যে তিনি প্রশ্ন পড়ছেন আর হাসছেন। এক পর্যায় তিনি বলেই বসলেন যে তোমাদের এত সময় লাগছে কেন? প্রশ্নতো ক্লাস সেভেন এর স্ট্যান্ডার্ড হয়েছে। আমরাতো হাবুডুবু খাচ্ছি আর খাচ্ছি। হটাত খেয়াল করলাম শামিম নামের আমার একটা ফ্রেন্ড সবার আগে খাতা জমা দিতে উঠে দাড়াল। ওর সীট আমার ঠিক পিছনে। ম্যাডাম যেই আসলেন খাতা নিতে শামিম খাতা দিয়ে বলল “ম্যাডাম আপনেতো কইলেন প্রশ্ন সোজা আইছে ন্যান আমি খাতা দিয়া দিলাম আর এইখানে খারাইলাম। আপনে পারলে ৪০ টার কারেক্ট উত্তর কনতো” ম্যাডাম হতভম্ব হয়ে দাড়িয়েই রইল আর আমরা ভেবেছিলাম বেচারার এস এস সি পরীক্ষা মনে হয় এবছর শেষ!! নাহ শেষ পর্যন্ত ম্যাডাম কিছু না বলেই চলে গেলেন। হয়ত ধাক্কা সামলে কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না!
সেই এস এস সি পরীক্ষাতেই আবার শামিম। ম্যাথ পরীক্ষার দিন আবার ক্যাচাল বাধাল। তখনই শেষ হয়ে যেত ওর পরীক্ষা কিন্তু ওর ভাগ্য ভাল যে তখনি আমাদের একজন শিক্ষক চলে এসেছিলেন। যাহোক আসল কাহিনী বলি। শামিম এমনিতেই ম্যাথ এ একটু দুর্বল। সাধারন একটা ম্যাথ করতেও ওর ঝামেলা হত। যাহোক তো আবার ওই পরিক্ষাতে একজন স্যার মন্তব্য করলেন প্রশ্ন সোজা হয়েছে। কথা শামিম মাটিতে পড়তে দিলনা। সাথে সাথেই স্যার কে উদ্দেশ্য করে ভাবলেশহীন ভাবে বলল “স্যার আপনে যে কইলেন প্রশ্ন সোজা... এহন তো আপ্নেরে এই অংকডা করতে দেওয়ার কাম!!!” স্যার তো খেপলেন খেপলেনই সাথে সাথে ওর কাছে চলে এলেন ওর খাতা নিয়ে যাবেন এবং বহিস্কার করবেন। কিন্তু কপাল ভাল যে আমাদের একজন শিক্ষক এসে কোন রকমে ওকে রক্ষা করল সেবারের মত। এর পরের পরীক্ষা গুলতে অবশ্য ও আর কোন ঝামেলা করেনি।
এইচ এস সি ইংলিশ পরীক্ষার কথা। তো আমাদের তখন একটা সিস্টেম ছিল যে প্রশ্ন কর্তা একটা গল্প শুরু করবেন ছাত্রদের সেটা শেষ করে খাতায় লিখে দিয়ে আসতে হবে। এখন এই সিস্টেম আছে কিনা কে জানে তবে শুরু থেকেই আমার এক ফ্রেন্ড দেবাশিষ... আমরা যাকে দেবা বলে ডাকি ও এই গল্পের সিস্টেম অপছন্দ করত। যাহোক ঠিক কি গল্প এসেছিল আমার মনে নেই তবে দেবা’র ঘটনা মনে আছে। দেবা ওটা শেষে লিখছিল। এক সময় শেষ ঘন্টা পড়ল কিন্তু তখনও ওর গল্প লেখা শেষ হয়নি। শিক্ষক এলেন খাতা নিতে। স্যার দেবার খাতা চাইলে দেবা বলল “স্যার ১ টা লাইন।” বলেই খাতায় গল্পটার শেষ লাইনে লিখল “to be continued”!!!
নাহ ভাই হাত ব্যথা হয়ে গেছে। এবারে আরেকটা কাহিনী বলেই লেখা পোস্ট করে দিব। এটা ঘটিয়েছে আমার আরেক ফ্রেন্ড কনক। ওই পোলা একটা আযব চিড়িয়া। আমরা গিয়েছিলাম একটা ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি পরীক্ষা দেবার জন্যে। সঙ্গত কারণেই কোন ইউনিভার্সিটি তা বলছিনা। পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পরে কনক এর সাথে আলাপ করছিলাম পরীক্ষা নিয়ে। ওকে জিজ্ঞেস করা মাত্রই ও বলল “আমার খাতা দেইখ্যা আমারে র্যা ব দিয়া ধইরা লইয়া যাইবে...” ওকে কারণ জিজ্ঞেস করলে যা বলল তা শুনে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছি...!!! ওখানে একটা প্রশ্ন ছিল “নখ কাটলে ব্যথা লাগেনা কেন?” তো কনক যে উত্তরটি লিখল তা হল “কই? আমার ব্যথা করেতো!” !!!
একই পরীক্ষায় আরেকটা প্রশ্ন ছিল “অঙ্গসংস্থান বিদ্যার জনক কোন বিজ্ঞানী?” ও যে উত্তর দিয়েছিল তা শুনে আমি ভিরমি খেয়েছিলাম। ওর উত্তরটা ছিল... “মোঃ কামরুজ্জামান কনক”!!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


