somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের দীর্ঘায়িত সমীকরণ

১৫ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.[/sb
‘ভাই আগুনটা প্লীজ...’ মোড়ের ইলেকট্রিক থামের আবডালে দাঁড়ানো পুলিশের লোকটা আগন্তুকের বাড়ানো হাতের দিকে একটু বিস্ময় নিয়ে তাকায়, হাতের জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে একটু তাকিয়ে কি ভেবে আবার পকেট থেকে লাইটারটা এগিয়ে দেয় কিছু না বলেই। ফস করে ঠোঁটে ভেজানো সিগারেটে আগুন ধরায় পার্থ, আড়চোখে দেখে লোকটা তাকে মেপে নেয়ার চেষ্টা করছে। একরাশ ধোঁয়া শূন্যে ভাসিয়ে ‘থ্যাঙ্কস’ বলে লাইটারটা ফেরত দেয় পার্থ, হাঁটতে শুরু করে পিচঢালা পথ লাগোয়া কংক্রিট স্ল্যাবের ফুটপাথ ধরে। বসের টেবিলে রিজাইন লেটারটা রেখে বিকেলে অফিস থেকে বেরুলেও এখনও সেই ফর্মাল পোশাকেই আছে, পুলিশের লোকটা তাই হয়তো আর কিছু বলেনি।

বিলবোর্ডের নিয়ন লেড ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে রাত নয়টা। ফুটপাথের কংক্রিট স্ল্যাবগুলো ক্রমশ বেশি ফাঁকা হয়ে আসছে সামনের দিকে, অমনোযোগে ফাঁক গলিয়ে পা ভেতরে ফসকে যেতে পারে ভেবে ও রাস্তায় নেমে পড়ে। কানের পাশ দিয়ে সাঁই করে একটা জীপ ধেয়ে গেল! বুকটা কেঁপে উঠল হঠাৎ, মরণযন্ত্রণার চাইতে এই মৃত্যু ভয়টা সম্ভবত বেশি আতঙ্কজনক। গাড়িটা গায়ের উপর দিয়ে চলে গেলেইত পারত, পৃথিবীর ওজনটা অনেক বেড়ে গেছে, কিছুটা হালকা হত। রাস্তার এদিকে আবার পাশ ঘেঁষে একটু পরপর ট্রাক পার্ক করে রেখেছে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীদের নিরুপায় চালকেরা। অনেকেই এসব অবৈধ পার্কিং এর জন্য দায়ী করে চালকদেরকে, বেচারারা এক্ষেত্রে অনেক নিরুপায়। ট্রাক মালিকের গাড়ির চাহিদা অনুযায়ী পার্কিং ব্যবস্থা থাকেনা তাই রাস্তার পাশেই অস্থায়ী গ্যারেজ, এজন্য আবার টহল পুলিশদের সাথে বনিবনা থাকে মালিকপক্ষের। এর পরেও মাঝেমধ্যে লোক দেখানো ঠ্যাঙ্গানির শিকার হয় এই চালক আর তাদের সহযোগীরা।

চাঁদের আলো ঠিকরে বেরুতে শুরু করেছে এতক্ষণে। অপর্যাপ্ত বাতির অভাবটা মিটিয়ে দেয়ার মত যথেষ্ট আলো রাস্তার উপর খেলা করছে। পার্থ হেঁটেই চলছে অনেকক্ষণ, হাতের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে কখন তা মনে নেই। রাস্তার পাশে একটা ট্রাকের পাশে বসে বসে কি যেন খুঁজছে একটা ছোট বালক। হাঁটার গতি থামিয়ে পার্থ বালকটার পাশে গিয়ে বসে। শস্য পরিবাহী ট্রাক থেকে ঝরে পড়া গমের দানা কুড়াচ্ছে ও, একটা একটা করে গম কুড়িয়ে পাশের ছোট পাত্রে টুক টুক রাখছে। পার্থকে পাশে বসতে দেখে একটু আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে আবার ধীরে ধীরে আপন কাজে মন দেয়। বালকটার গায়ে জামা বলতে একটা ছেঁড়া প্যান্ট ছাড়া আর কিছুই নেই, মাথার চুল উষ্কখুষ্ক। কি ভেবে যেন পার্থও গম কুড়াতে শুরু করে একটা একটা করে। বাচ্চাটা তার দিকে মুখ তুলে তাকায় একটু, এরপর একটু এলোমেলোভাবে গম খোঁজে, মনে হচ্ছে সেও অনেক কিছু ভাবছে। অনেকটা ভাবলেশহীন হয়ে কিছুক্ষণ গম কুড়ায় পার্থ। প্রায় সবগুলা গম কুড়ানো শেষ হয়ে গেছে, বালকের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, সে পাত্রটা নাড়াচাড়া করছে আর পার্থ গমের শেষ দানাটা তুলে তার পাত্রে দিয়ে হাত ঝেড়ে আবার হাঁটা শুরু করে।

রাস্তার ধারের ছোট টং দোকানে হাতটা ধুয়ে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে নেয় পার্থ। গতি পরিবর্তন হয় এবার, মূল রাস্তা ছেড়ে একটা আবাসিক এলাকার সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে যায়। মনের মধ্যে একটা বিশাল শূন্যতা নিয়ে অনেকটা পা টেনে চলছে ও। গন্তব্য রাস্তার ঐ প্রান্তে, সময় বয়ে যাচ্ছে ঢিমেতালে। আজ নিভিনের বিয়ে, সেই সাথে তার জীবনের একান্ত পরাজয়। মৃত্যুর আগে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে পাশবিক স্বাদ নেয়ার প্রবল ইচ্ছাতেই তার এই পদযাত্রা। জীবন সমীকরণে এই চলকটির মান নিতান্তই শূন্য বলে প্রমাণিত।

পরিবারের বড় সন্তান হওয়ার একটা প্রকট যন্ত্রণা আছে, চাইলেই মনের ইচ্ছা পূর্ণ করা যায়না। নিভিনকে নিয়ে তার সাজানো স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্যই সে পড়াশোনার কাঙ্ক্ষিত পর্যায় শেষ না করেই দ্রুত জব নিয়ে ফেলে একটা। নিভিনের বিয়ে দেয়ার জন্য তার পরিবারের তোড়জোড় টের পেয়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস লাইফ শুরু করতে পারলেও শেষ রক্ষাটা আর হলনা। বাধ সাধল নিভিনের পরিবারের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত আর নিজের পরিবারের অনড় অবস্থান। পার্থের বাবা-মা ছেলের পছন্দের কথা শুনে অনেক আগ্রহ নিয়েই নিভিনের বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেছেন, নিভিনের বাবার নিজস্ব পছন্দের সাথে তার পার্থক্য এতটাই প্রকট যে সেখানে দুটো মানুষের মানবিক পছন্দের কোন মূল্য নেই। আর পার্থের বাবা-মার একটাই কথা, মেয়ের বাবা-মার অপছন্দে তাঁরা কিছু মেনে নেবেননা। তাই দুজন পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে আবার ফিরে আসতে হয়েছে পার্থের পিছুটানে, নিভিন সেদিনের পর থেকে প্রচণ্ড নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।

আমার প্রিয় স্বপ্নগুলো, ঢুবেছে সমুদ্দুরে।।
দুঃখগুলো বাঁধি আমি, এ হৃদয়ের অন্তঃপুরে।।
আমার যত ভালোবাসা, বিলীন বালুচরে
ইচ্ছেরা বন্দি আছে, গহিন পাতাল ঘরে।।
দুঃখগুলো বাঁধি আমি, এ হৃদয়ের অন্তঃপুরে।।


২.
সারা বাড়ি বিয়ের উৎসবে জল্মল করছে, নিভিনের বাবা একমাত্র মেয়ের বিয়েতে আয়োজনে কোন ছাড় দিচ্ছেন না। কমিউনিটি সেন্টারের গিঞ্জি পরিবেশের তুলনায় খোলামেলা যায়গাই উনার বেশ পছন্দ তাই বাড়ির সামনের খেলার মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করা হয়েছে। শহরের নামি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ সব কিছু ম্যানেজ করছে, তাদের লোকবলের আনাগোনা বাড়ির অন্তঃপুরেও এসে মিশছে। আত্মীয় স্বজন সবাই আজ বাড়িতে, কাজিনরা সবাই নিভিনকে ঘিরেই রাখছে সারাক্ষণ। নিভিন অপেক্ষা করছে তার বান্ধবীর অবনীর জন্য, সে আসবে এক চিলতে মুক্তির সুধা নিয়ে।

নিভিনের স্পষ্ট মনে পড়ে পার্থ প্রথম যেদিন প্রপোজ করেছিল তার পর থেকে একটি দিনও তারা যোগাযোগ না করে থাকতে পারেনি কিন্তু আজ প্রায় ১০-১২ দিন হয়ে গেল তার সাথে একটু কথাও হয়না। নিজেদের স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য সবকিছুই গুছিয়েই নিয়েছিল পার্থ শেষটা একদম এলোমেলো হয়ে গেল। নিভিন বাবা-মাকে বুঝানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে, কিছুতেই উনারা নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলাতে রাজী নন। তাই দুজনে পরিকল্পনা করেছিল পালিয়ে যাবে, এর মধ্যে কিভাবে যেন পার্থের বাবা জেনে ফেলেন। এমন কিছু উনারা মেনে নেবেন না বলায় পার্থ তাকে অনিশ্চয়তার হাতে সপে দিয়েছে। খুব ইচ্ছে করছে তার কন্ঠ শোনার জন্য কিন্তু পরক্ষনে আবার নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে নিভিন। কি দরকার কাটা ঘায়ে নুনের চিটা দেয়ার, সে তো নিরুপায় হয়েই পিছুটান নিয়েছে, হয়তো ছেলেদেরকে এমনটাই করতে হয়, অথবা পৃথিবীটা এমনই স্বার্থপর! এই স্বার্থপর পৃথিবীতে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার মত বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও নিজের মধ্যে খুঁজে পায়না নিভিন, যা হওয়ার নয়।

সেই কখন থেকে বউটি সেজে বসে আছে নিভিন, সবাই তাড়াহুড়ো করছে তাকে বিয়ের আসরে নেয়ার জন্য কিন্তু সে অবনীর জন্য অপেক্ষার কথা বলে চেপে বসে আছে। ভেবেছিল এই পরিস্থিতি মেনে নিতে অনেক কষ্ট হবে কিন্তু নিজেই নিজেকে চিনতে পারছেনা নিভিন, একদম কান্না পাচ্ছেনা। চোখের কোনে ঠিকই কাজল রেখা তার মতই স্থির, জানলার বাইরের পৃথিবীটা দেখার লোভও আজ জাগছেনা তার। বরপক্ষের দেয়া প্লাটিনামের ঘড়িটা হাতের সাথে মানিয়ে গেছে বেশ, জীবনটা মানিয়ে নেয়াও যদি এমন সহজ হত!! নয়টা বাজে প্রায়, ঠোঁটের কোণে খানিকটা তাচ্ছিল্লের হাসির রেখা ফুটিয়ে মাথা তুলে জানালার বাইরের দিকে তাকাতেই দরজা খোলার শব্দ শোনে।

অবনীকে খুব অস্থির মনে হচ্ছে, তার অস্থিরতা দেখে নিজের মধ্যে প্রচণ্ড একটা আতঙ্কের অস্তিত্ব টের পায় নিভিন। ও কি কাজটি করতে পারেনি! অবনী পাশে বসে জড়িয়ে ধরে নিভিনকে, চোখে চোখ রেখে কিছু একটা বলতে গিয়ে আবার থেমে যায় মেয়েটা। ‘কই?’ নিভিন নিচু স্বরে অবনীকে জিজ্ঞেস করে, অবনী মাথা নেড়ে ওকে কিছু একটা বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু ওর চোখের ভাষার কাছে হার মেনে চুপ হয়ে যায়। নিভিন বুঝতে পারে অবনী তার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছেনা। মনটা হঠাৎ বিষণ্ণতায় ভরে ওঠে, অনেক কান্না পাচ্ছে ওর, কেন এতগুলো মানুষের চাওয়ার কাছে নিজের চাওয়াকে বিলিয়ে দিয়ে মানিয়ে নিতে পারছেনা! পাশে রাখা সেলফোনটা হাতে নিয়ে বাটন চেপে চেপে একটা এসএমএস টাইপ করে নিভিন।
‘তোমরা সবাই কি একটু বাইরে যাবে?’
নিভিনের অনুরোধে রুমে থাকা সবাই উঠে বের হয়ে যায়, পাশে এখনও অবনী বসে আছে মাথা নিচু করে। ‘অবনী, তুই চাস না আমি বেঁচে যাই!’
নিভিনের প্রশ্নটা অনেক পাগলামি মেশানো, অবনী ওর চোখের দিকে নির্মল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা, বদলে যাওয়া কষ্টের নাম স্মৃতি। নিভিন পারবেনা তার কষ্টকে স্মৃতি বানিয়ে বেঁচে থাকতে, কিন্তু এটা হতে দেয়া যায়না।
‘নিভিন, পার্থ’দাকে আরেকটা ফোন দিবি?’ নিভিনের চোখ থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই জানতে চায় অবনী। নিভিন মাথা নেড়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। জীবন সমীকরণে এই চলকটির মান নিতান্তই শূন্য বলে প্রমাণিত।
‘তাহলে ভুলে যা, দুজনের জন্যই সেটা বেটার’ অবনীর কথায় যেন বিস্ফোরিত হয় নিভিন, চোখে এক ঝলক আগুনের ফুলকি নিয়ে তীব্র একটা ধাক্কা দেয় অবনীকে। অবনী তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়, মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিভিন ব্যাল্কনির দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরুচ্ছে। তারপর ঝুপ করে একটা শব্দ!

৩.
সিটি কর্পোরেশনের টিউব লাইটের তীব্র আলোয় চাঁদের আলো মাটিতে আর পড়ছেনা, রাস্তায় মানুষের সমাগম দেখা যাচ্ছে প্রচুর, এর মধ্যে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে হাঁটছে পার্থ। টিউ টিউ শব্দের মর্মান্তিক চিৎকার ফেলে পাশ দিয়ে চলে যায় একটা এ্যাম্বুলেন্স, নীরবতায় ছেদ ফেলে মাথা ঘুরিয়ে সে একটু তাকায় তাকে পেছনে ফেলে যাওয়া এ্যাম্বুলেন্সটার দিকে। কি যেন ভেবে আবার নিজের পথে ফিরে, পাশের দোকান থেকে আরেকটা সিগারেট জ্বালিয়ে দূরের আলোকসজ্জার দিকে তাকায় ও। ওদিক থেকে আসা মানুষগুলির মধ্যে এক ধরণের উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করে, হুট করে পুরো এলাকা নিস্তব্ধ করে আলোকসজ্জার সব কটি বাতি নিভে যায়। পার্থের বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত মোচড় খেয়ে যায়, এক পলকে ওদিকে তাকিয়ে বুঝে নেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণই ব্যর্থ। দোকানী ছেলেটা পাশ থেকে বলে, ‘ঐ বাড়ির বিয়ের কনে তিন তলার বারান্দা থেকে নিচে ঝাঁপ দিয়েছে’। পাগলের মত মাথা ঘুরিয়ে ছেলেটার মুখের দিকে তাকায় পার্থ, আবার পেছনে যেদিকে এ্যাম্বুলেন্সটা গেছে সেদিকে কিছু একটা খোঁজে। পকেটের সেলফোনটা বের করে স্ক্রিনে দেখে নিভিনের বান্ধবী অবনীর ফোন, রিসিভ করে কিছু বলার আগেই অপর প্রান্ত থেকে অবনীর উৎকণ্ঠা মেশানো কণ্ঠ ভেসে আসে। ‘পার্থ’দা, আপনি কোথায়?’
‘আমি! নিভিনের কি হয়েছে?’
‘নিভিনকে স্কয়ার হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে’ বলে অবনী চুপ হয়ে যায়।
‘আসছি’ বলে ফোনটা কেটে দেখে বাসা থেকে বেশ কটা মিসড কল আর একটা এসএমএস। ফোন সাইলেন্ট থাকায় কিছুই টের পায়নি পার্থ। এসএমএসটা নিভিনের নাম্বার থেকে, ‘ami chole jacchi, 1ta bou ene uncl aunt-k happy rekho’
হঠাৎ বাতাসের বেগ বেড়ে গেছে, রাস্তার পাশের গাছপালার দুলুনি দেখে মাত্রাটা বেশ বুঝা যাচ্ছে। পার্থ রাস্তায় নেমে উল্টা দিকে ফিরে হাঁটতে থাকে তীব্র বাতাস উপেক্ষা করে। বাতাসের সাথে হালকা বৃষ্টির ঝাপ্টা এসে চোখে মুখে পড়ছে, হাতের সিগারেট বহু আগে পড়ে গেছে পথে। মূল সড়কে আসার আগেই ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে, জামা কাপড় সব ভিজে একাকার হয়ে গেছে, চুলের পানি কপাল বেয়ে থুঁতনি পেরিয়ে মাটিতে পড়ছে সেখানে হয়তো সমস্ত কষ্টও মিশে গেছে।

৪.
তিন দিন পর জ্ঞান ফিরেছে নিভিনের, বেডের পাশে বসে আছে তার বাবা মা, পার্থের বাবা আর অবনী। ঘটনার আকস্মিকতায় পাত্রপক্ষ খুব হতাশ, নিভিনের বাবার পূর্ব পরিচিত মানুষ হওয়ায় ব্যাপারটা খানিক সামলানো গেছে। তারা পাত্রীর সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করতে চাইলে নিভিনের বাবা নিরুপায় হয়ে সবকিছু খুলে বলেন তাদেরকে।
মাথার ব্যান্ডেজ এখনও খোলা হয়নি নিভিনের। চোখ মেলে পার্থের বাবাকে বিচানার পাশে বসা দেখে নিভিন চমকে ওঠে ও। চোখ ঘুরিয়ে পার্থকে খুঁজতে চেষ্টা করে, আশেপাশে আর কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। নিভিনের চোখে চোখ পড়তেই অবনী মাথা নিচু করে নেয়, নিভিন অন্য পাশে মাথা ঘুরিয়ে চোখের পাতা মিলিয়ে নেয়।
সেদিন রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তার পাশে পড়ে যায় পার্থ, বৃষ্টি থামলে অজ্ঞান অবস্থায় পুলিশের লোকেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ২ দিন জ্বরের ঘোরে কাটিয়ে জ্ঞান ফিরলেও উঠে বসার কোন শক্তি এখনও পাচ্ছেনা। সেই থেকে ওর মা ছেলের শুশ্রূষা করছেন, জেনারেল হাসপাতাল থেকে পরের দিনেই ক্লিনিকে নেয়া হয়েছে তাকে। কলহিস্ট্রি দেখে বাসায় খবর জানায় পুলিশের লোকেরাই।
নিভিনের বাবা এই বিষয়ে আর কিছুই বলছেন না, মেয়ের অবস্থা দেখে আম্মুই অবনীর সহায়তায় পার্থের বাবাকে ওর কথা জানায়। পার্থের বাবা আর নিজের বাবাকে পাশাপাশি দেখে নিভিন তার স্বপ্নের ভেলায় পাল তুলে নীরব একটা আনন্দে মেতে থাকে।


গানঃ আমার প্রিয় স্বপ্নগুলো
কণ্ঠশিল্পীঃ সাবরিনা
এ্যালব্যাম টাইটলঃ সূর্য ছোব বলে
উৎসঃ doridro.কম

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:০২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×