somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ভাগ্যবতী

০১ লা জুন, ২০০৯ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বরং কোনও ওল্ডহোমেই চলে যাই শিপন।
এসব তুমি কী বলছ মা! আমাদের সঙ্গে থাকতে তোমার সমস্যা কোথায়? এই ফ্ল্যাটটা তো ছোট না; তা ছাড়া তুমি আমাদের সঙ্গে থাকলে জেরিনের আপত্তি নেই। ও তোমাকে কত রেসপেক্ট করে-তুমি জান।
সে আমি জানি রে- ওর মত মেয়ে হয় না। তবুও। তোরা নতুন বিয়ে করেছিস। এখন তোদের প্রাইভেসি দরকার। আমি সবসময় ড্রইংরুমের টিভি দখল করে বসে থাকি। তোরা অফিস থেকে ফিরে বিরক্ত হোস।
কে বলল! না!
ঠিক আছে বিরক্ত হোস না- মেনে নিলাম। আরেকটা টিভি যে কিনবি সে টাকা কোথায়? অফিস থেকে লোন করে বিয়ে করলি। সেই টাকা আগে শোধ করতে হবে না? শেলটেক এখনও সাত লাখ টাকা পায়। সেই ইন্সলমেন্ট।
তাই বলে ওল্ডহোমে চলে যাবে?
হ্যাঁ রে। আমিও ... আমিও শেষ সময়টা একটু নিরিবিলি কাটাতে চাই। এই বয়েসে একা একা বসে আকাশপাতাল ভাবতে বড় ভালো লাগে রে শিপন; বয়স না-হলে বুঝবি না।
মউ শুনে কী বলবে বল তো মা? মিছেমিছি জেরিনের দোষ দেবে।
না রে, তুই যা ভাবছিস তা ঠিক না । মৌ এই যুগের মেয়ে। ও ঠিকই বুঝবে কেন আমি আলাদা হতে চাচ্ছি। ও এ নিয়ে জেরিনকে দুষবে না দেখিস। আর ওরা তো আর ফিরছে না দেশে। ৮/৯ মাস হয়ে গেল একটা ফোনও করে না, মেইলও করে না। মৌকে নিয়ে তুই ভাবিস না।
এই ফ্ল্যাট কেনার টাকা তুমিই তো দিলে মা-আর তুমিই এখন তোমার ফ্ল্যাটে থাকবে না?
ফ্ল্যাট কেনার টাকা আমি একা দিইনি-তুই সেটা ভালো করেই জানিস শিপন। ফ্ল্যাট কেনার টাকা তোর বাবাও দিয়েছে। আমিও দিলাম কিছু। তোর বাবার মতন কষ্ট করে ইনকাম করে তো আর দিইনি। ওয়ারিতে তোর নানাবাড়িটা বিক্রি হল। এত দিন ছায়া দিয়েছিল বাড়িটা। ছায়াটা এখন ভাগ হল। আর ছেয়েমেয়ের সঙ্গে মায়ের অত হিসেবের কথা ওঠে কেন? তা ছাড়া মউ ওর ভাগটা নিল না। একমাত্র ভাই বলে তোকে দিয়ে দিল।
তারপরও ভেবে দেখ মা।
কত আর ভাবব রে শিপন। এসব নিয়েই তো সারাদিনই ভাবি।
শোন মা, সমাজ বলে একটা জিনিস আছে; তুমি চলে গেলে চারিদিকে লোকে ছিঃ ছিঃ করবে না?
না রে। এখন এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। লোকের হাতে এত সময় কই বল? লোকে আগে পরের ব্যাপারে ঘামাত-এখন আর গা করে না। একেক সময়ের একেক ধাত।
জেরিন তোমাকে কিছু বলেছে? আমাকে সত্যি করে বল ত মা।
তখন বললাম না যে-ওর মতো মেয়ে হয় না
আকারে ইঙ্গিতে?
এই সংসারটা জেরিনের শিপন। তোর বাবার মারা যাওয়ার দিনই আমার সংসার শেষ হয়ে গেছে।
তাহলে তুমি আর আমাদের সঙ্গে থাকছ না?
আমি একরকম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি। শুধু-
বল।
তোর বাপের মৃত্যুবার্ষিকীটা নিয়মিত করিস বাবা। ঘরে মিলাদ না-দিলেও পাড়ার মসজিদে পাঁচশ টাকা দিস।
ঠিক আছে। ও নিয়ে তুমি ভেবো না মা।
আর একটা কথা।
বল।
আমার লাশটা সম্ভব হলে ঝিকরগাছা নিয়ে গিয়ে তোর বাবার কবরের পাশে কবর দিস।
মা।
হ্যাঁ। আমি সে সবের সমস্ত খরচ তোকে দিয়ে যাব।
মা! তুমি এখন চুপ করো তো মা। চুপ কর ...



এ্যাই, চলনা নেক্স মান্থে নেপাল যাই-তোমার না ছুটি পাওনা আছে?
হু।
সেবার হানিমুনে নেপাল গেলাম- অথচ পলিটিকাল আনরেস্টের জন্য পোখরা যাওয়া হল না। শুনেছি পোখরা নাকি কাঠমুন্ডুর চেয়েও সুন্দর। এবার চল-কয়েক দিন কাঠমুন্ডু ঘোরাঘুরি করে পোখরা যাই। সিনথিয়ারা দু-মাস আগে পোখরা গেল। সিনথিয়ার সঙ্গে কথা হলেই কথাটা বারবার বলে। ফেসবুকেও পোখরার ছবিগুলি সিনথিয়া আপলোডও করেছে । দেখলে কী যে খারাপ লাগে। যাবে?
চল।
ইস্, আমার আবার পাহাড় দেখতে ইচ্ছে করছে। সেই পাহাড়গুলো কী সুন্দর আর শব্দহীন। মনে আছে তোমার শিপু?
হুু।
জানই তো-কলেজ জীবনে আমি কবিতা লিখতাম-তারপর বিবিএ পড়ার চাপে কবিতা মাথায় উঠল। তারপর কাঞ্চনজঙ্গা দেখে আবার কবিতার ঝোঁক ফিরে এল; অবশ্য ইংরেজিতে। বাংলা আর কেন জানি আসে না -মনে হয় বিবিএর বইগুলি সব ইংরেজিতে সেইজন্য। আহ্ নেপাল। ওহ্, দ্যাট লোনলি মাউন্টেইন। এই ফাঁকা ফ্ল্যাটের মতন শুনশান পাহাড় । জান, আমার এমনই স্বপ্ন ছিল- এমন ফাঁকা ফ্ল্যাটে থাকব আমি আর আমি যাকে ভালোবাসি-সে।
হু।
তোমার মাটা যে কী ভালো মহিলা-সবাই যদি তোমার মায়ের মত হত। সিনথিয়ার শ্বাশুড়িটা না এমন ঝামেলা করছে-ঘাড় থেকে নামানো যাচ্ছে না। কেস করার হুমকী দিচ্ছে। বেচারা সিনথি এখন কী করে। জান, সিনথিরা নতুন একটা ডিভান কিনেছে। আমরাও তো ড্রইংরুমটা আরও ভালোভাবে সাজাতে পারি। পারি না? তুমিই বল।
হ্যাঁ, পারি।
আমাদের ড্রইংরুমে অবশ্য ডিভান আছে। তাহলে কাটাবন থেকে একটা বড় অ্যাকুয়ারিয়াম কিনে আনলে কেমন হয়?
ভালো হয়।
আচ্ছা একটা বুকশেলফ বানালে কেমন হয়? নাকি অটবি থেকে কিনব? ওদেরগুলা যা সুন্দর।
কেনা যায়।
এই শিপু?
বল।
একটা ৩৪ ইঞ্চি স্যামসঙ প্লাজমা টিভির দাম কত হতে পারে?
কেন?
আহা, আজ হোক কাল হোক একটা প্লাজমা টিভি কিনতে হবে না। নইলে লোকে কী বলবে। বলবে আমরা ক্ষ্যাত আর দরিদ্র।
শুনেছি স্যামসঙ ভালো না।
স্যামসঙ ভালো না?
না।
তা হলে এলজি? সেদিন সনি সেটম্যাক্সে দেখলাম এলজির অ্যাড। কত হতে পারে দাম?
এক-দেড় লাখ মনে হয়।
এত! বল কী!
হ্যাঁ।
তা হলে এককাজ কর।
কী।
নেপাল বাদ। অ্যাকুয়ারিয়াম-বুকশেলফও বাদ- টিভিই কিনি।
ওকে।
সেদিন সিনথি বলল: ওরা নাকি ২৭ ইঞ্জি ফিলিপস এলসিডি কিনবে।
হ্যাঁ। ওর এক দুলাভাই নাকি ট্রান্সকমে আছে। ইন্সটলমেন্টে কিনবে সম্ভবত।
কিনুক। ফিলিপস ফালতু। ফিলিপস ইস্ত্রি শুধু ভালো; আর হট ওয়াটার কেটলি। এই?
কী?
সত্যি স্যামসঙ ভালো না?
ফারহান তো তাইই বলে। ওদের টিভির চেয়ে নাকি মোবাইল ভালো। ওয়াইডস্ত্রীন টিভি নাকি ফেইড হয়ে যায়।
ইস্, স্যামসঙ এর কালারটা কত ভালো। এলজিরটার কেমন যেন...এ্যাই
বল।
টিভি কিনব না।
কেন?
আমার মোবাইল লাগবে।
কেন নকিয়া কি হল? সেদিন না ফাইভ এইট জিরো জিরোটা কিনলে?
নকিয়া আর ভাল্ লাগছে না।
ভাল লাগছে না?
না।
ফেসবুকের স্ট্যাটাস আপডেট করা যায় বলে কিনলে-
তখন-তখন। এখন আর ভাল্ লাগছে না। আচ্ছা, শিপন?
বল?
আমার এই ফাইভ এইট জিরো জিরোটা এখন বিক্রি করলে কত পাওয়া যাবে?
বেচবে? সত্যি?
হ্যাঁ। কত পাওয়া যাবে?
জানি না। দেখি। শামসের সঙ্গে কথা বলে। ও সেকেন্ডহ্যান্ড মোবাইলের ব্যবসা করে।
শোন।
বল। যে কিনবে তাকে আবার শামস বলে না যে আমারটায় বেশিক্ষণ চার্জ থাকে না।
আচ্ছা। বলব না।
নকিয়া ভালো সেট। আমরটাই খারাপ পড়ছে।
আমারও তাইই মনে হয়।
এটা বেচে কিছু টাকা অ্যাড করে নতুন একটা কিনব।
কি কিনবে? নোকিয়া?
না। স্যামসঙ স্টার। থ্রিজি। টাচ ফোন।
হ্যাঁ। সেদিন আই পি এলের সময় অ্যাড দেখেছি। ঝাক্কাস।
ঢাকায় পাওয়া যাবে?
মনে হয়।
কাল্ তাহলে বসুন্ধরায় চল।
কাল্ না তোমার মাবাবাকে রাতে খেতে বললে?
ক্যান্সেল!
ওকে যা বল।
আম্মুকে কাল সকালে ফোন করে দেব। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে।
তুমি যা বল।
এই তো আমার লক্ষ্মী ছোনা। সব সময় আমার কথা শোনে। শোনো -
বল।
কাল আমাদের বসুন্ধরা যাওয়া ক্যান্সেল।
কেন? কী হল আবার?
আমার একটা জরুরি কথা মনে পড়েছে।
কী?
বলছি। মোবাইল কিনব না। মোবাইল কিনব আরও দুয়েক মাস পরে।
তা হলে?
ল্যাপটপ কিনব।
ল্যাপটপ?
হ্যাঁ। ল্যাপটপ। লেনোভো। একেবারে নতুন। থিঙ্ক প্যাড-জি সিরিজ।
থিঙ্ক প্যাড-জি সিরিজ তো ঝাক্কাস। একেবারে কে-ক্লাস। কোথায় দেখলে?
এখনও দেখিনি।
তা হলে?
আমার এক কলিগ বিক্রি করবে। জিনিসটা তার কাজিনের। মাত্র সাত মাস ইউজ করেছে। এতক্ষণ মনে পড়েনি।
চাচ্ছে কত?
সিক্সটি ফাইভ।
মাত্র। সস্তাই তো।
হু। এই শিপু।
বল?
তোমার মায়ের সেই টাকাটা তোমার কাছে আছে না?
আছে।
১ লাখ? না?
না। না।
তাহলে!
এক লাখ পয়ত্রিশ।
বল কী! এক লাখ পয়ত্রিশ।
হ্যাঁ। এক লাখ পয়ত্রিশ।
কাল বুধবার। আমাকে ওখান থেকে ফিফটি তুলে দেবে। ধার। পরে আমার ফেরৎ দিয়ে দেব।
ও কে। দেব। এখন এসব কথা বাদ দাও।
কেন?
এসো এদিকে।
হি হি।



নাঃ, আপা, আমার ডাকনাম বানু না। আমার ডাকনাম পরী। ভালো নাম সিতারা বানু। আমার মায়ের নাম ছিল আসমা বানু। আর আমার নানীর নাম ছিল জোহরা বানু। ছোটবেলায়-আমরা তখন ঢাকার পুরানা পল্টন থাকতাম- আমার নানা তখন আমার নানীকে আদার করে ডাকত নয়নতারা বলে।
ও। আপনারা কি ঢাকাতেই বর্ন অ্যান্ড ব্রটাপ?
না। না। আমরা যশোরের । যশোরের ঝিকরগাছার। ফিফটি সেভেনে আব্বা ঢাকায় বদলী হয়ে এলেন। প্রথমে আমরা থাকতাম গেন্ডারিয়া। গেন্ডারিয়ায় সেই সময় বিক্রমপুর মানে মুনশীগঞ্জের লোকজনে ভরতি ছিল। ওরা একটু অন্যরকম।
কেমন?
পরে শুনেন।
আচ্ছা। এখন বলেন।
আমাদের বাড়িঅলা ছিল বিক্রমপুরের এক কাপড়ের ব্যবসায়ী-আব্বার সঙ্গে ওনার বনিবনা হল না। আব্বা পরে নানার সঙ্গে কথাবার্তা বলে পুরানা পল্টন মসজিদের কাছে একটা তিনরুমের বাসা ভাড়া নিলেন। মসজিদের কাছে যে বটগাছ আছে-তার খুব কাছে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, চিনি চিনি। আমার এক দূর সম্পর্কের খালার বাড়ি ওখানেই।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
তো। পুরানা পল্টনে থাকতেই নানা মারা গেলেন। নানীও। নানা মারা যাওয়ার আগে ঝিকরগাছার সম্পত্তি বেচে আমার আব্বাকে বারো হাজার টাকা দিয়েছিল। দেশের ধানী জমি বেচলেও ভিটেমাটি বিক্রি করেনি। এখনও আমাদের পুকুর ভিটেবাড়ি উঠান নিজস্ব কবরস্থান আছে।
আপনি ভাগ্যবতী।
তাই?
হ্যাঁ।
তো, ঝিকরগাছার সম্পত্তি বেচা টাকায় আব্বা উয়ারিতে জমি কিনলেন। সাড়ে সাত কাটা। বাড়ির কাজে হাত দিলেন অবশ্য আরও পরে- সিক্সটি সিক্স-এ।
ও। আপনার দাদাবাড়ি কি যশোরেই?
হ্যাঁ। মনিরামপুর। আমার দাদী মারা গেলে আমার দাদা আবার বিয়ে করেছিলেন। আমার আব্বা সৎ মায়ের সংসারে অনাদরে মানুষ হচ্ছিল । কী কষ্ট! কী কষ্ট! খেতে দিত না, পরতে দিত না। শেষমেশ অতিষ্ট হয়ে আব্বা ঝিকরগাছায় খালার বাড়ি পালিয়ে যায়। আব্বা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। তারপর ওখানে খালার কাছেই মানুষ। আমার মা আর আমার আব্বা আপান খালাতো ভাইবোন। আমার নানা-যার কথা তখন বললাম- তিনি সম্পর্কে আমার আব্বার খালু।
ও।
আমাদের ওয়ারির র‌্যাঙ্কিন স্ট্রীটের সেই বাড়িতে কত যে গাছ ছিল আপা কী বলব। আম-জাম-কাঁঠাল-কামরাঙা-লিচু। বেলগাছও ছিল। বেলগাছের ছায়ায় ভরদুপুরে আমরা ভাইবোনেরা বসে থাকতাম। ঝিরিঝিরি বাতাসে ইকড়িমিকড়ি রোদের ভিতর বসে থাকতে কী যে ভালো লাগত আমাদের কী বলব। বড়পা নুন আর কাঁচা মরিচ মেখে কতবেল ভর্তা করত। আমরা জিভের পানি মিশিয়ে খেতাম। হায়,তখন বুঝিনি দিনগুলি সব পদ্মপাতার জলবিন্দুর মতন ফুরিয়ে যাবে। আর কোনদিনই ফিরে পাব না। সেই বাড়িই বিক্রি হল বছর পাঁচেক আগে। আমার ভাইয়েরা সব বিদেশ থাকে। এক ভাই অবশ্য দেশেই থাকেন- তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সাইন্সের অধ্যাপক।
বাপের বাড়ি বিক্রির টাকার ভাগ পেয়েছেন?
হ্যাঁ পেয়েছি। ইসলামিক মতেই পেয়েছি। সেই টাকায় তো চার বছর আগে ফ্ল্যাট কিনলাম। ভাগ্যিস আমার স্বামী ফ্ল্যাটটা দেখে যেতে পেরেছেন।
ফ্ল্যাটটা কি আপনার নামে আপা?
না। না। ফ্ল্যাট আমার ছেলের নামে। আমার স্বামী ছিল শিপন-মানে আমার ছেলে বলতে অজ্ঞান। বলত, ছেলেই তো জীবনের আশাভরসা-শেষজীবনে দেখবে। শিপনের আব্বা সরকারি চাকরি করতেন। রেলওয়েতে। এলপিআরে গিয়ে পয়ত্রিশ লাখের মতন পেলেন; তবে তার সবই ফ্ল্যাটের পিছনে গেল।
বলেন কী!
হ্যাঁ। প্রথমে ওরা বলল গ্যারেজসহ পয়ত্রিশ লাখে হয়ে যাবে-১৮৫০ স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট-বড়জোর দু-তিন লাখ এদিক-সেদিক হতে পারে।
আপনার ফ্ল্যাট কোথায় আপা?
শান্তিনগর। ইর্স্টান প্লাসের কাছে।
ও।
পরে ওরা বলল, রডের দাম বেড়ে গেছে- ফ্ল্যাটের পজেশন বুঝে নিতে আরও সাতে সাত লাখ টাকা বেশি লাগবে। দিলাম। তারপর ৬ মাস পরে বলল বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের দাম আরও বেড়ে গেছে; আরও সাড়ে এগারো লাখের নিচে নাকি ফ্ল্যাটের পজেশন পাব না। দিলাম। এই করে করে ফ্ল্যাটের দাম পঞ্চাশ লাখ ছাড়িয়ে গেল। ওরা আরও সাত লাখ টাকা পায়। শিপনের আব্বার সব টাকা ফুরিয়ে গেল- বাইপাস হল না। ইন্ডিয়া যাওয়ার কথা ছিল। যাওয়া হল না। কী আর করা-ফ্ল্যাট না নিয়ে বসে থাকা তো যায় না। মানসিক চাপ। আমার স্বামী বুকে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়েই মারা গেলেন।
আপনার শুনেছি একটা মেয়েও আছে।
হ্যাঁ।
মেয়েকে ফ্ল্যাটের ভাগ দেবেন না? আপনি পেয়েছেন যখন-
মউ-মানে আমার মেয়ে-ওই নিল না। বলল, একটাই ভাই-আর আল্লা তো আমাদের অনেক দিয়েছেন; বিদেশে সুখে আছি।
কই থাকে আপা আপনার মেয়ে ?
বস্টন ।
ও।
জামাইয়ের অবস্থা কেমন?
ভালোই। ছেলেটার ওষুধের ফার্মেসী আছে। আসলে আশরাফের ফ্যামিলি অনেক আগে থেকেই ওখানে সেটলড।
ছেলের সঙ্গে থাকতে অসুবিধা-মেয়ের সঙ্গে থাকলেই তো পারতেন। মেয়ে নিল না?
থাক। ওরা ভালো থাক। একবার গেছিলাম। মেয়ের যখন বাচ্চা হল। দুইরুমের ঘরে থাকে। বস্টন খুব কস্টলি শহর আপা। আর আমার জামাই আবার ভীষনই হিসাবি। আর ওরা তো আর ফিরছে না দেশে। ৮/৯ মাস হয়ে গেল একটা ফোনও করে না, মেইলও করে না।
ও। তো আমি একজনকে চিনি আপা। সেই ভদ্রমহিলার তিন ছেলেমেয়ে। ছেলেমেয়েরা সব কানাডা অস্ট্রেলিয়া আর লন্ডনে থাকে। সারা বছর ধরেই এই মেয়ে সেই ছেলের কাছে খুব ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভদ্রমহিলা। কী কপাল একবার ভাবেন।
হু। সবার কী একই রকম ভাগ্য হয়?
তা ঠিক।
অনেক ভাগ্যে এখানে এসেছি।
তা ঠিক।
আপন ছায়া হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন বৃদ্ধনিবাসের ছায়া নিচ্ছি।
আপনি ঠিকই বলেছেন আপা।
আমার শেষ ছায়া হবে যশোরের ঝিকরগাছার একটা গ্রামের আমগাছের তলায়। আমার স্বামীর কবরের পাশে। যার জন্য আমার ছেলেকে টাকাও দিয়ে এসেছি।
আপনি ভাগ্যবতী আপা। আমার তো সেই সামর্থ নেই। মরে গেলে এরাই যা করার করবে। আপনি সত্যিই ভাগ্যবতী আপা।
ভাগ্যবতী?
হ্যাঁ।
কে জানে?

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৪৯
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×