somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনুবিস: প্রাচীন মিশরের শেয়ালমুখো দেবতা

২৫ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রাচীন মিশরীয় দেবতা আনুবিস। মৃত্যু, সমাধি সৌধ এবং মমির দেবতা ছিলেন আনুবিস। দেবতা আনুবিসের শরীর মানুষের মতো অথচ মাথা শেয়াল মতো- যা এক গা ছমছমে অন্ধকার রহস্যময়তা সৃষ্টি করে। উপকথা মতে প্রাচীন মিশরে দেবতা আনুবিসই প্রথম মমি তৈরি করেছিলেন- যা এক অভিনব পরকালবাদী ধর্মবিশ্বাসের জন্ম দেয় এবং পরবর্তী যুগের সেমিটিক ধর্মমতগুলিকে প্রভাবিত করে ...





মিশরীয় শেয়াল। দেবতা আনুবিসের শরীর মানুষের মতো অথচ মাথা শেয়াল মতো। এর কারণ কি? প্রাচীন মিশরের মানুষ বিশ্বাস করত শেয়াল-এর ভিতরে বাস করে পবিত্র আত্মা । বিড়ালের মতোই প্রাচীন মিশরে শেয়ালও ছিল পূজনীয়।


দেবদেবীর সৃষ্টি নিয়ে প্রাচীনকালে মিশরীয় পুরোহিতরা সৃষ্টিতত্ত্ব রচনা করেছিল। সেই সঙ্গে রচনা করেছিল দেবতাদের কুলপুঞ্জী। সেই কালপঞ্জীতে দেবতাদের আত্বীয়স্বজন কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন মিশরের দেবদেবীরা একে অন্যের সঙ্গে সর্ম্পকিত ছিল। প্রাচীন মিশরীয় সৃষ্টিতত্ত্বে দেবদেবীর জন্ম হয়েছিল মিশরীয় নগর হেলিয়াপোলিস এ।



মানচিত্রে প্রাচীন হেলিয়াপোলিস এর অবস্থান। এখানেই আনুবিসের উপাসনা কেন্দ্রটি রয়েছে। মিশরীয় সৃষ্টিতত্ত্বে ৯ জন আদি দেবদেবীর কথা বলা হয়েছে। একত্রে এদের বলা হয় Ennead। আনুবিস এননিয়াডের অন্যতম।

আনুবিস এর জন্ম নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। তবে সবচে নির্ভরযোগ মত হল- আনুবিসের বাবা ছিলেন দেবতা ওসিরিস এবং মা দেবী নেপথিস। উপকথামতে দেবতা ওসিরিস কে খুন করেছিল তারই ভাই সেথ। হত্যার পর দেবতা ওসিরিস-এর মৃত দেহটি চৌদ্দ টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ।
তারপর?
তারপর দেবী আইসিস সেই বিচ্ছিন্ন দেহখন্ড জড়ো করেছিল।
তাকে সাহায্য করেছিল আইসিস-এর বোন দেবী নেপথিস। নেপথিস সম্পর্কে সেথ এর স্ত্রী এবং বোন। ( এভাবেই প্রাচীন পুরাণগুলি বিচিত্র এবং রোমাঞ্চকর ...)
যা হোক। কেবলমাত্র এক দিনের জন্য দেবতা ওসিরিস-এর পুনুরুত্থান ঘটেছিল। এবং ওই দিনেই নেপথিস আর ওসিরিস-এর মিলন হয়। এবং আনুবিস এর জন্ম হয়। কেননা বলা হয়েছে- আনুবিস-এর বাবা ওসিরিস এবং মা দেবী নেপথিস ...



আনুবিস

যা হোক। আনুবিস তার বাবা ওসিরিস মৃতদেহটি মমি করে রাখে ...
আর এভাবে প্রাচীন মিশরে ঘটে যায় এক যুগান্তকারী ঘটনা ।
কেননা, প্রাচীন মিশরে এটিই প্রথম মমি। এরপর প্রাচীন মিশরে এই বিশ্বাস ছড়িয়ে যায় যে চিরন্তন পরকালের জন্য একটি ভৌত শরীর অনিবার্য । যেহেতু ভৌত শরীর বাদে আত্মার থিতু হবার আর কোনও স্থান নেই। ভৌত শরীরের অভাবে আত্মা চিরদিনের জন্য স্থানচূত্য হয়ে যাবে। এ কারণেই মৃতদেহটি যত দিন সম্ভব টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। এই টিকিয়ে রাখার পদ্ধতিই -‘মমি’।



মমি ও আনুবিস

আনুবিস-এর নামে এই অভিনব পরকালবাদী ধারণাটি প্রচলিত বলেই আনুবিস কে মনে করা হয় মৃত্যু, সমাধিসৌধ (পিরামিড) ও মমির দেবতা। শুধু তাই নয় .... মৃতের দেশে মৃতকে প্রবেশাধিকার দেয় আনুবিস । এ কারণেই শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আনুবিসের উদ্দ্যেশে প্রার্থনা করা হয় ...



প্রাচীন মিশরে সমাধিসৌধে যে সব পুরোহিত ধর্মীয় কৃত্য পরিচালনা করত তারা আনুবিসের স্মরণে শেয়াল-এর মুখোশ পরত ।


প্রাচীন মিশরের ধর্মবিশ্বাস ছিল আনুবিসকে ঘিরে। প্রাচীন মিশরে এমন ধারণা প্রচলিত ছিল যে ... কারও মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তি মৃতের দেশে প্রবেশ করে। সেই মৃতের দেশ কে বলা হত এবং সেই অথই শূন্যতাময় অন্ধকার দেশটি ছিল অত্যন্ত বিপদজনক স্থান। আনুবিস আত্মাকে স্বাগত জানাত এবং আত্মার যাত্রাপথে সুরক্ষা নিশ্চিত করত। এ কারণেই শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আনুবিসের উদ্দ্যেশে প্রার্থনা করা হয় ... মৃতের দেশে আনুবিস-এর ভূমিকা সম্বন্ধে জনৈক মিশরবিদ লিখেছেন, .... The final place in the Underworld was the Judgement Hall where the Court of Osiris decided on their fate. Anubis the God of the Dead would lead the dead in the Underworld at the Hall of Two Truths to a set of scales where his or her heart was weighed against the feather of truth and their fate would be decided - either entrance into the perfect afterlife or to be sent to the Devourer of the Dead

... এতে বোঝা যায় দেবতা আনুবিস-এর উপকথা কী ভাবে পরবর্তীকালের সেমিটিক ধর্মসমূহে প্রভাবিত করেছে। খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে হিব্রুভাষীরা প্রাচীন মিশরে ছিল। তারা আনুবিসের উপকথায় প্রভাবিত হয়ে থাকবে ...



আনুবিস-এর প্রার্থনাগৃহ। এটি ছিল হেলিয়াপোলিস-এ। (উপরে মানচিত্র দেখুন) ... মিশরীয় জনগনের বিশ্বাস ছিল হেলিয়াপোলিসে ছিল দেবতার বাস। কেবলমাত্র ফারাও ও পুরোহিত আনুবিস এর প্রার্থনাগৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারত। তবে প্রার্থনাগৃহে প্রবেশের আগে তাদের পাথরের গভীর জলাশয়ে প্রক্ষালন করে শুদ্ধ হয়ে নিতে হত। (পানির সঙ্গে শুদ্ধতার সম্পর্ক অনেক প্রাচীন ... এসব কারণে পরবর্তীকালে সেমিটিক ধর্মসমূহে মিশরের গুরুত্ব অনেক ...)



আনুবিস এর প্রার্থনাগৃহের অভ্যন্তরভাগ। এখানে সাধারণ জনগনের প্রবেশ নিষেধ ছিল। তারা কেবল উপহার নিয়ে প্রার্থনাগৃহের মূল ফটক অবধি আসতে পারত। পুরোহিত উপহার গ্রহন করত।

আনুবিস এর অন্য নাম আনপু এবং ইনেপু। স্ত্রীর নাম আনপুট। এদের কন্যার নাম কাবেচেট।



আনুবিস-মুখোশ। এই গা ছমছমে অন্ধকার রহস্যময়তার জন্য প্রাচীন মিশরের মৃত্যুর দেবতা আনুবিসকে নিয়ে আজও কৌতূহলের শেষ নেই ...

তথ্যসূত্র:

Click This Link

http://www.kingtutshop.com/freeinfo/anubis.htm

http://www.egyptianmyths.net/anubis.htm


ছবি: ইন্টারনেট
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×