somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহুরে ফোকলোর

০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স একজামের দিন পকেটে করে অতিরিক্ত ৬০০ ডলার কাশেম নিয়ে গেলাম । বাংলা টাকায় যার পরিমান দাড়ায় প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা । ক্যাশ কে কাশেম বলা শিখিয়েছিল হাতিরপুলের মোবাইল মাকের্টের এক ভাই । কাশেম বলতে, ক্যারি করতে তার নাকি সুবিধা হত ।

সারারাত টেনশন । লাইসেন্স পাব কি পাব না । সকালবেলা ঘুম থেকে উঠবা মাত্র দোয়া দরুদ পড়লাম । ঈমানে মোজাম্মেল আবার কেউ বর্তমান মোজাম্মেল সাহেব রে ভাববেন না দয়া করে । যিনি ৬৭ কোটি টাকার মেশিনে মুক্তিযোদ্ধারে ঢুকাইয়া রাজাকার বানিয়েছে ।

তারপর ঈমানে মোফাচ্ছেল । দোয়া কুনুত আয়াতুল কুরশি, দোয়া ইউনুস । দোয়া ইউনুস পড়ে মাছের পেটে নবী ইউনুস বেচে ছিল । আর আমার সামান্য ড্রাইভিং পাশ হবেনা । এইসব দোয়া দরুদ আর সাথে গোটা বিশেক সুরা আমার প্রয়াত আব্বা শিখিয়েছিলেন । চাকুতে যেমন ধার না দিলে ভোতা হয়ে যায় বা বাইরে ফেলায় রাখলে মরিচা পড়ে সেইরকম আমারো দোয়া দরুদ গুলো নিয়মিত না পড়াতে মরিচা পড়ে থাকে । তবে এমন বিশেষ বিপদের দিন গুলোতে এসব দোয়া দরুদের মরিচাও কাটে সাথে মুশকিলে আসান হয় । তবে প্যাচ খাইলে এসব দোয়া দরুদে কাজ হয়না । কাশেমের ব্যবহার ছাড়া মুসকিলে আসান হয়না ।


তো মুশকিলের নেই শেষ । মাঝে গাড়ীর এমন মুশকিলে ঠিক করাতে নিয়ে গিয়ে গেলাম গ্যারেজে । বেশ কিছু সময় বসে থাকতে হবে । কেননা সেখানে আমার আগে বেশ কয়েকটা গাড়ী ছিল । সেখানে পরিচয় হল আরব দেশের এক ভদ্রলোকের সাথে । জুম্মার নামাজ পড়ার সুবাদে ভদ্রলোকের খোমা আমার বিশেষ পরিচিত ছিল । তিনি জানতে চাইলেন আমি কোথা হইতে আগত ? আমি আমার সাকিন, ভায়া সব জানালাম ।

তিনি বললেন তুমি কি হিন্দু ?
আমি বল্লাম না । কেন বলতো ?
ভদ্রলোক বল্ল না শুনেছিলাম তোমাদের দেশে অনেক হিন্দু ।
বল্লাম হ্যা আছে । হিন্দু আছে । ক্রিচিয়ান আছে, বুদ্ধিষ্ট আছে । এথিস্ট আছে । সবাই মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করি । কিন্তু তারপরেও কিছু ধান্দাবাজ খারাপি করে ।

তবে তোমাদের মিডলইষ্টের কিছু দেশে অন্য ধর্মের মানুষদের তো মানুষ মনে করা হয়না । পাঠ্য পুস্তকে শেখানো হয় তারা ছোট জাত । লঘু দন্ডে তাদের কতল ও করা যায় ।

মামা একশ একশোতে ছিল পরে দেখলাম নামল । সাথে যোগ করে আরও বল্লাম আজকে জুম্মার নামাজে আমি তোমাকে দেখলাম মসজিদের দেয়ালে হেলান দিয়ে পা সামনে দিয়ে বসে আছো ।

ও বল্ল হ্যা আমি ওখানেই বসি । ওরে বল্লাম আমার দেশের মসজিদের দেয়ালে হেলান দিয়ে পা সামনে সোজা করে দিয়ে বসলে তুমি চপেটাঘাত বা তীব্র ভৎসনা খাবার সম্ভাবনা আছে । আমি আরও বল্লাম তোমরা তো নামাজের সিজদার সামনে দিয়েও হেটে যাও এখানে ? এইটা কি তোমরা মিডল ইষ্টেও যাও ?

ভদ্রলোক উওরে জানালেন হ্যা ।
বল্লাম - আমার দেশে এইটাতেও তুমি চপেটাঘাত বা তীব্র ভৎসনা খেতে পার ভদ্রলোক হাসলেন । আমাদের দেশের মসজিদের আদব বেশ কড়া । পরে আমাকে বললেন তুমি কি কোরআন পড়তে পার ?
উওরে বল্লাম না ।
সে বল্ল তাহলে সুরা জান ?

মেজাজটা সপ্তমে উঠল । হালায় কয় কি ? হুযুরের যে নিয়ত আমরো সেই নিয়ত । আমারে কি সেই পার্টি ভাবল ?
পরে সূরা হাশরের এক প্রস্থ বল্লাম সে একটু অবাক হল কোরআন শরীফ পড়া না জেনে আমি এমন সূরা জানি কি করে ?
বল্লাম ছোটবেলাতে আমার শ্রদ্ধেয় ও প্রয়াত পিতাজি পাছায় পিটিয়ে শিখিয়েছেন । তিনি ফজরের নামাজের পর এই সুরা পড়তেন । এরপর আমাদের এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিন ফজরের নামাজের পর তিনিও এই সুরা পড়তেন । মনের অজান্তে আমার মনে পড়ল প্রয়াত লতিফ হুযুরের কথা । ভাল মানুষ ছিলেন । ফজরের নামাজ লতিফ হুযুরই পড়াতেন মকবুল হুযুরের পরিবর্তে । মকবুল হুযুর দুরে থাকতেন তাই আসতে পারতেন না ।

এইবার আমি ওকে বল্লাম তুমি কি সুরা হাশর মুখস্ত বলতে পারবে ? বা তোমার কি কোরআন মুখস্থ ?
সে উওরে বল্ল না ।
আমি মনে মনে ভাবলাম দেশে শুনতাম মক্কার হাজী হজ্ব পায়না তারমানে ঘটনা সত্য । আর বাংলা জানলেই যে আমি জীবনানন্দ দাশের সব কবিতা বা শামসুর রহমানের সব কবিতা আমার মুখস্থ থাকবে, বিষয়টা যেমন তেমন না । তেমনি আরবী জানার মানে কোরআন শরীফ মুখস্থ থাকবে বিষয়টা তেমন না ।

পরে বল্লাম তোমাদের গোত্রের ভেতরে মারামরি গুলো কি আজও আছে ?
ও বল্ল সেটা কেমন ? ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হল পাট নিচ্ছে ।
পরে বল্লাম - ধর তোমার ছাগল আমার গাছের পাতা খেয়েছে এইটা নিয়ে দশ বা পনের বছর ধরে মারামারি দুই গোত্রের । নবীজির আগে ও নবীজির পরেও ছিল এখনো কি আছে এই ধরনের মারামারি ?
ও হেসে দিয়ে বল্ল তুমি এইগুলো জানলা কি করে ?
এইবার আমি কাষ্ট হাসি দিলাম ।

ও বল্ল এই করেই তো আমরা শেষ হলাম ।
আমি বল্লাম খালি কি তোমরা ? আমরাও । আমাদের পাচ শতক জমির মামলা ৫০ বছর ধরে চলে । পার্টি শক্তিশালী হলে দুই পখ্খের দু চারজন পাচজন মারাও যায় ।

যাক গাড়ীর মাফলারের কাজ শেষ হবে হবে অবস্থা আমি বিদায় নেবার আগে বল্লাম বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ হিন্দু এই ইনফরমেশন তোমাকে দিল কে ?
ও বল্ল আমি শুনেছিলাম । আরও বল্ল তোমাদের কালচার অনেকখানি হিন্দুয়ানী সেটাও শুনেছিলাম ।

উওরে - বল্লাম নবীজীর আগেও অমুসলিমরা কাবা শরীফের চারিদিকে ঘুরত । এখন মুসলিমরা ঘোরে । মহরম কে পবিত্র মাস শুধু ইসলামেই ঘোষনা করা হয়নি এইটাও নবীজীর আগে সেখানকার বসবাসরত গোত্রের প্রধানরা মানত । এখন ইসলামে মানা হয় । ছাগল পাতা খেলে, যে তারা দশ বছর যুদ্ধ করত সেটা তারা মহরমে বন্ধ রাখত । এখন তাহলে ইসলাম ধর্মে এই নিয়ম গুলো যে এসছে তাহলে সেটাকে কি বলবা ?

যাক, মামা মনে হল আবার ব্রেক দিল ।
ব্রেক দিয়ে বলে তুমি কি ইথিস্ট ?
উওরে বল্লাম - বল্লাম না, তুমি মসজিদে হেলান দিয়ে পা সোজা করে বস ।
তখন মামা আবার সম্বিত ফিরে পেল ।

পরে ভদ্রলোক কে বল্লাম শোন এই দেশে আসবার আগে আমি শুনছিলাম আমেরিকা, ক্যানাডা তে ১০ মিনিট কারেন্ট গেলে নাকি কয়েকশো রেপ হয় । তো এই্খানে দুইদিন দেখলাম প্রায় তিনঘন্টা করে কারেন্ট ছিলনা । কারেন্ট আসবার পর পরেরদিনের বেশ কটা পত্রিকা ইন্টারনেটে চেক করলাম । সকালে দৌড়াতে বের হলাম । কফি শপে গেলাম । মানুষের চেহারাতে কোন উব্দেগ নেই । দুচিন্তার লেশ নেই । তো কিছু গল্প এম্নি বুচ্ছ ।

সিরিয়াস পরিবেশ কে হালকা করার জন্য বল্লাম শোন - আগে আমরা যেতাম তোমাদের দেশে কামলা দিতে । এখন তোমরা আসতেছো এইসব দেশে কামলা দিতে তাহলে আমরা যাব কই ?
উওরে ও বল্ল আমার তো সব ছিল বন্ধু । যুদ্ধ আমাকে রিফিউজি বানিয়েছে এই দেশে ।
মনে পড়ল আমার ফার্মগেটের সেই ফকিরের কথা । জ্যামের মাঝে আমার কাছে সাহায্য চাইলে বলেছিলাম আপনি ঢাকায় এসে সাহায্য চাচ্ছেন কেন?
উওরে ফকির বলেছিল নিজের পরিচিত এলাকায় ভিখ্খা করি কেমনে বাবা । আমার তো সোনার সংসার ছিল । এই নদী না হামাক পথে বসাইলো । দুই প্রান্তের দুইজন মানুষের গল্পের কত মিল ।


গাড়ীর কাজ শেষ হল । ভদ্রলোক কে বিদায় দিয়ে চলে এলাম ।
এখন সময় পেলে জুম্মার নামাজে কালে ভদ্রে গেলে, ভদ্রলোকের সাথে দেখা হলেই কুশলাদী জানতে চান ।
আমি আগ বাড়িয়ে বলি কাইফা হালুকা ?
তারপরে বলি ইয়া ইখোয়ানী আলা তুখলু হাংগামা বিল খইরা ।
প্রথমটা শুনে সে হাসে পরের টা শুনে বলে তোমার শব্দ গুলো এরাবিক কিন্তু ভাষা এরাবিক না ।




ঢাকাতে এমন মুশকিলে দোয়া দরুদ বেশি পড়তে হত । আবার সরকারী অফিসের বিষয় হলে দোয়া দরুদে কাজ হতনা সে খেত্রে তাহাজ্জুদ বা ফজর পড়তে হত । আবার মাঝে মাঝে সেটাও বিফলে যেত ।

ঢাকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স একজাম দেবার আগে বিআরটিএর সামনে থেকে প্রফেসরস এর গাইডের মত বই কিনেছিলাম । জিগজ্যাগ ট্রেনিং, ব্যাকে এসে পার্কিং ট্রেনিং নিয়েছিলাম । রিটেন একজাম নিল সেটাতে পাশ করলাম । রোড সাইনের ইন্টারভিউ নিল সেটাতে পাশ করলাম । ব্যাকে এসে পার্কিং করলাম । দুপুরে বিআরটিএর বাবুরা খাওয়া শেষে জোহারের নমাজে গেল । ভাবলাম নমাজ পড়ে এলে মনটা নরম হবে । না নরম হলনা ।

কাশেম ছাড়া মানে ক্যাশ ছাড়া নো আলাপ । মমিন মোচলমানের দেশের এমন একপেরিয়েন্সের কারনে এখানে যেহেতু খেষ্টান, ইহুদী, নাসারা, ধর্মহীন মানুষের দেশ তাই বুক পকেটে ৬০০ ডলার কাশেম রাখতে বাধ্য হলাম । চাহিবা মাত্র দেওয়ার, দেওয়ার সামান্য পরিবেশ তৈরি হলেই বা সামান্য চোখ টিপি মারলেও যেন দেয়া যায় । কেননা বন্দুকের গুলি মিস হতে পারে কিন্তু লাইসেন্স মিস করা যাবেনা ।

হাইস্কুলে পড়বার সময় বুক পকেটে থাকত যত্ন করে রাখা চিঠি । চিঠিতে সামান্য মিল্লাত ঘামাচি পাউডার দেয়া থাকত যাতে সেই চিঠি থেকে যৎসামান্য গন্ধ বের হয় । যাক, সময়ের ফেরে কত কি বদলায় ।


একজাম নিতে এলেন ভদ্র মহিলা । তিনি ইংলিশে জানালেন তিনি আমার ইনসট্রাকটর তিনি আমার চালনা দেখবেন ভাল হলে পাশ করাবেন না হলে ফে আর ল পাশ । আমি ভদ্রমহিলার চেহারার দিকে তাকিয়ে মিশেল ফুকোর ডিসকোর্সে এনালাইসিস করছিলাম । আর বুক পকেটে ৬০০ ডলারের অবস্থানটা ঠিকঠাক আছে কিনা আবার পরখ করে দেখলাম ।

ওই যে, দেশের ভয় । হঠাৎ দেখলেন টাকাটা নাই । শুধু চা খেতে গেলেন দোকানে । তারপর পকেটে হাত দিয়ে দেখেন সর্বনাশ হয়ে গেছে । এমন ভয়ের পরিবেশেই আমাদের জন্ম বেড়ে উঠা । রাতে ভয় । দিনে ভয় । বাঘের ভয় । আর সবচেয়ে বড় ভয় মানুষের ভয় । মানুষের ভয় নিয়ে জাহাংগীর নগর বিশ্বাবদ্যালয়ের খুরশিদা ম্যাম ক্লাশে বলতেন পৃথিবীতে যত মানুষ বন্য হিস্র পশুর হাতে মারা যায় তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় মানুষের হাতে ।

এখানে মেয়েরা জিন্সের প্যান্টের পেছনের ছেড়া পকেটে আইফোন রেখে দিব্বি চলাফেরা করে । আর আমাদের দেশের মেয়েরা পার্টসে মোবাইল রাখে সেই পার্টসকেও চিলের মত ছো মেরে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী । এমন ছিনতাইয়ের সময় কত জন মারা যায়, পংগু হয় । চিলের মত ছো মেরে নিয়ে যাওয়া ছিনতাই কারী জানে না । আর সরকার বাহাদুর তো মদিনা সনদে সিংগাপুর হয়ে লস এন্জেলেসে ।

ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন তুমি কি রেডি ?
উওরে হ্যা সন্মোধন করার পর গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে বসলাম । তারপর তিনি আমাকে ডিরেকশন দিতে থাকলেন ।
ঢাকাতে মারজানা এমন ডিরেকশন দিত ওর আব্বুর সাদা গাড়ীটা চালানোর সময় । ওই আমাকে ঢাকার ড্রাইভিংয়ের হাতেখড়ি করিয়েছিল । আমি গাড়ীটার নাম দিয়েছিলাম ডেসপ্যারাডো । বেশির ভাগ দিন আমি চালিয়ে নিয়ে যেতাম অফিস থেকে । মারজানা পাশে বসে ডিরেকশন দিত ।
মারজানা অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এলে বলেছিলাম আমার গাড়ী চালাবি ?
উওরে বলেছিল মাফ চাই । আর না বহুত চালাইছি ।

মহল্লার রাস্তা চালানো শেষে ভদ্রমহিলা আমাকে উঠালেন হাইওয়েতে । আমি আড় চোখে বার বার তার চেহারার দিকে তাকানোর চেস্টা করছিলাম । কোন ইশারা ইংগিত পাই কিনা । পাইবা মাত্র কাশেম হ্যান্ডওভার করবো ।

সব টেষ্ট শেষে ফিরে এলাম শুরুর পয়েন্টে ।
ইন্সট্রাকটর ভদ্রমহিলা বললেন ভুল করেছ কিছু !
আমার হুলকুম শুকায় গেল । আবার সেই ফুকোর এনালাইসিস । চেহারা, চোখ কোন ইশারা রেডি ৬০০ ডলার - কাশেম । এরচেয়ে কম কাশেমে সিংগাপুর হয়ে লসএন্জেলেসে মানুষ খুন হয় । আমি দশ বছর গাড়ী চালিয়েছি সিংগাপুর ভায়া লসএন্জেলেসে । সামনে ছিল ট্রাক । ডানে পাশে ছিল লেগুনা । বাম পাশে ছিল রিকশা । পেছনে ছিল মুড়ির টিন গলা ছিলা মুরগীর মত চামড়া ছিলা বাস । তোমরা এখানে বল সেডান কার । আমাকে বলত প্লাস্টিক । সেই প্লাস্টিক গাড়ীতে ফুলের টোকা পড়েনি । কোন মামলা খাইনি । দশ বছরে ।

মহিলা উৎরে দিলেন তুমি পাশ করেছ । ভিতরে গিয়ে এড্রেস কনফার্ম কর । দিগ বিজয়ী হাসি দিলাম । নার্ভাস নাইনটিতে ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করার মত লাফিয়ে উঠলাম । যেই মহিলার কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলাম তাকে গিয়ে জানালাম । সে বল্ল তোমার হাসি দেখেই আমি বুঝেছি তুমি পাশ করেছ ।

অফিসের ভিতরে ঢুকবার আগ মুহুর্তে আবার বুক পকেটে হাত দিয়ে পরখ । হ্যা কাশেম ঠিক আছে । সিংগাপুর ভায়া লসএন্জলেসের ড্রাইভিং লাইসেন্স অফিসে সেবার গাড়ীর ব্যাংক নাম কর্তনের জন্য গেলাম । গাড়ীর ব্যাংক লোন শোধ হবার পর । ওয়েবসাইট ঘেটে সকল কাগজ ও এই ডিপামেন্টর প্রধান কে ? মোটামুটি সব তথ্য জেনে গিয়েছিলাম । আর সাথে ছিল দোয়া কালাম । দোয়া ইউনুস পড়ে বুকে ফু ।

টিনের চালার অফিসে ঢুকবা মাত্র ব্যস্তু বাবু কাগজে লিখছিলেন । বাবু কাঠের চেয়ারে বসা । চেয়ারে কোন টাওয়েল নেই । টাওয়েল না থাকায় বুঝলাম বড় বাবু না । তাকে গলা খাকারি, সালাম, কালাম দিয়ে প্রথমে এটেনসন নিলাম । তারপর বাবু মুখ তুলে তাকালেন । আসবার হেতু জানালাম । বাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে আমাকে নিয়ে বাইরে বারান্দায় এলেন ।
ইতিউতি তাকিয়ে বললেন নিজে করবেন না আমগো ধারে করাইবেন ?
উওরে বল্লাম নেজে করলে কি আর আপনাগো ধারে করলে কি খরচ ?

বাবু জানাল এইডা টেবিলের কাজ । টেবিলে টেবিলে স্যারগো ধারে সাইন লাগবে । আপনে করলে করান । আমারে দেলে হাজার পাচেক দেতে হইবে । কারন টেবিলের কাজ বুঝেন তো ।

আমি বল্লাম ডিরেক্টর হান্নান সাহেব কি আছেন এখনো এটার প্রধান ?
বাবু রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বল্ল স্যার কে চেনেন ?
উওরে বল্লাম ঢাহা ভার্সিটির জসিম উদ্দিন হলের বড় ভাই । ডাহা মিথ্যা । কিন্তু আমি জানি হান্নান কি পাশ এই বাবু জানেনা ।
বাবু বল্ল আগে বলবেন না । এত মোড়ান লাগে । লন দেহি আন্নের কাগজ ।
বাবু টেবিলে এসে বসে সব কাগজ দেখে সিরিয়াল টা ঠিক করে একটা স্টাপলার লাগিয়ে দিলেন ।
বাবুর কাজ এটাই ।

বল্লাম এখন কোথায় যাব ? বাবু বল্ল এত নম্বর রুমে যান ।
আমি বল্লাম হান্নান ভাইয়ের কাছে কখন যাব ?
বাবু বল্ল সবার শ্যাষে ।

উল্লেখিত রুমে গিয়ে সাইন করে সেখান থেকে আর এক রুমে সাইন সেরে শেষ জনাব হান্নান সাব ।
মনে মনে বল্লাম এইবার এইবার খুকুর চোখ খুল্ল ।
মন বলছে এইবার ঘুঘু তোমার বধিবে পরান । জনাব হান্নানের রুমের দরজায় । রুমে ঢুকবার আগে এক পরিচিত আমলা বন্ধুরে ফোন দিয়ে হেতু জানালাম । সে বল্ল সমস্যা হলে জানাস । সাহস বাড়ল । দোয়া ইউনুস পড়ে বুকে ফু দিয়ে ঢুকে পড়লাম হান্নান সাহেবের রুমে ।
সব সাইন করল । শেষ কাগজে সাইন করতে গিয়ে ভুল ধরল । আপনার ওয়াইফের সাইন এখানে হবে ওনি এক ইন্চি নীচে সাইন করেছে । ফুকো এনালাইসিস করে বুঝলাম নীচের বাবু জানিয়েছে ।

বল্লাম দেখুন এই সাইন আজকে গিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবেনা । আমার দিনটা মাটি হবে । ঢাকা থেকে প্লেনে ব্যাংকক যেতে লাগে তিনঘন্টা । মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে আটকায় গেলে তিনঘন্টাই লাগে । আপনি সাইনটা করে দিন । হান্নানের সাহেবের বক্তব্য এই গাড়ী বিক্রীর সময় এই সিগনেচার যিনি করেছেন তাকে আসতে হবে ।
উওরে বল্লাম ওনি সুস্থ আছেন আসতে পারবেন ।
মনে হল আমার উপরে রাজ্যের রাগ নিয়ে ফাইলে সাইন করলেন ।
নীচে এসে গাড়ী চেক করিয়ে ফিরবার সময় মনে হল নার্ভাস নাইনটিতে ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করলাম । কাশেম ছাড়া এই কাজ করা চাট্টি খানি কথা না ।


কাশেম চেক করে ঠিকানা মত গেলে মহিলা জানালেন তোমার এইটা কি সঠিক ঠিকানা । বল্লাম হ্যা । এই ঠিকানাতে আমরা লাইসেন্স পাঠিয়ে দেব । আপাতত এই কাগজে চালাতে পারবে । আবার সেই ফুকো এনালাইসিস কোন ইশারা, টেবিল ওয়ার্ক বাবদ কাশেম লাগবে । সেই ব্যস্ত বাবুর কপালে কালো দাগ ছিল । কাশেম চাইতে ছাড়ে নাই ।
মহিলাকে ধন্যবাদ জানালাম । মহিলা সেফ ড্রাইভিং বলে উইশ করল ।

সিংগাপুর ভায়া লসএন্জেলেসে ব্যাংক কর্তন কাজের বেশ কিছুদিন পর পত্রিকাতে দেখেছিলাম সেই হান্নান কট খেয়েছে । আর গাড়ী বিক্রীর সময় যেতে হয়নি । যদিও কাগজের এক ইন্চি নীচে যিনি সিগনেচার করেছিলেন তিনি সুস্থ ছিলেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৯
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×