একবার এক ক্লায়েন্টের কিছু কাগজপত্র ফ্রান্সে পাঠাতে হবে । ফেডেকসে খোজ নিয়া জানলাম দুই পাতার কাগজ ফ্রান্সে পাঠাইতে খরচ হইবে প্রায় ৪২০০ টাকা । তো আমি দেশোপ্রেমে উজ্জিবিত হইয়া উক্ত ক্লায়েন্টস কে বলিলাম ভাই, কাগজপত্র গুলো বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠাই কম টাকাতে পাঠানো যাবে, সাথে দেশের ও লাভ হবে ।
ক্লায়েন্টস উওরে বললেন - আপনি কি পাগল হলেন ? বিদেশের ডাক দেশের পোষ্ট অফিস দিয়ে পাঠাবেন ? ওরা আমার এই গুরত্বপুর্ন কাগজ হারিয়ে ফেলবে ।
ঘটনার কিছুদিন পর দেখলাম সেই একি ভদ্রলোক রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে একটি টিভি চ্যানেলে দেশপ্রেমের ওয়াজ ফরমাইতেছেন ।
আর একবার এক ক্লায়েন্টস তার নুরজাহান রোডের বাসার ছাদে নিয়ে গিয়ে তার নিজের হাতের লাগানো নানারকম ওষুধী, ফল, ফুলের গাছ দেখালেন । জানালেন তিনি নিজের হাতে কি করে এগুলোর পরিচর্যা করেন । তারপর বললেন তিনি নিজেকে সবসময় পরিচয় দেন কৃষক ওমুক হিসেবে । তার এই কাজ কে তিনি দেখেন দেশাপ্রেম হিসেবে । তার লাগানো গাছ থেকে অকসিজেন বের হচ্ছে । এটা খাটি দেশোপ্রম । আমি সব শুনে ঘাড় নাড়তে থাকলাম । তার নামের সাথে কৃষক মিলিয়ে ফেসবুকে পেজ আছে । আমাকে ঢুকে দেখতে বললেন । লাইক দিতে বললেন । দুই বা তিনদিন পর তার বাসায় আবার যাচ্ছি । নীচে বাইক রাখবার সময় একজন সালাম দিল । পরনে ঢিলেঢালা শার্ট প্যান্ট ঘাড়ে গামছা হাতে নিড়ানী, শাবল, দা আর ট্রান্সপারেন্ট প্লাস্টিক ব্যাগে মাটি । আমি ওয়ালইকুম সালাম দিয়ে বল্লাম চিনতে পারলাম না ।
ঢিলেঢালা প্যান্ট শার্ট পড়া ভদ্রলোক বললেন আপনি ওমুক স্যারের বাসায় যাচ্ছেন ? বল্লাম হ্যা ? আমি স্যারের বাসার বাগানের কাজ করি । সব গাছ আমার লাগানো । আমি যত্ন নেই মাসিক টাকার বিনিময়ে । পরে পকেট থেকে কার্ড বের করে দিয়ে বললেন স্যার যদি আপনার বা কারও লাগে আমাকে জানাতে পারেন । ঢাকা শহরের সব এলাকাতে আমার কাস্টমার আছে । আমি যার কাছে গিয়েছি তার ছাদ বাগানের গাছের অকসিজেন, দেশোপ্রেম, কৃষক ওমুক ফেসবুক পেজ এতখনে সব পরিস্কার হল । সাথে মনে পড়ল নুরজাহান রোডের পেছনের বাশবাড়ির জসিমের কথা । ভদ্রছেলে ছিল । গাজা বেচত । পেশার কথা কেউ জিগ্যেস করলে বলত পেশা আর কি? গান্জা বেচি এ্ইটাই পেশা । অনেকদিন জসিমের সাথে দেখা হয়না খবর জানা হয়না । ব্যবসা কি করতে পারতেছে না জেলে কে জানে ?
তো, ২০১০ সালে এমন দেশোপ্রেমে উজ্জিবিত হইয়া আমার লালমাটিয়ার ডি ব্লকের বাসার সামনের রাস্তার নীচের গ্যাসের লাইনের বুদবুদ দেখিয়া ফোন করেছিলাম লালামটিয়ার গ্যাসের অফিসকে । ফোন অপারেটর উওরে জানাল আপনার মত এমন বহুজনের ফোনকল সারাদিনে রিসিভ করিয়াছি । সেই রিসিভ ফোনকলের অগ্রাধিকার সিরিয়াল অনুয়ায়ী আপনার বাসার সামনে যাওয়া হইবেক । এত উতালা হওয়ার কিছু নাই । পরবর্তী প্রায় দেড় দু বছর আর, উতালা হইনি । বারান্দায় দাড়িয়ে নিয়মিত দেখেছি । পুরানা কথা হঠাৎ মনে পড়ল ।
এটার সাথে কোন এসির (বিশেষগ্য) স্যাটেলাইট কানেকশন দিয়ে আবার নারায়নগন্জের মসজিদের সাথে মেলাবেন না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১০