আমি বৃষ্টির দিনে ঘর থেকে বের হইনা । সারাদিন টপ টপ পড়তেই থাকে । বেরুলেই ভিজে যাব, আমার আবার গায়ে একফোঁটা পানি পরলেই জ্বর আসে । সবচেয়ে বিচ্ছিরি ব্যাপার হলো পথ ঘাট সব কাঁদায় কর্দমে একাকার । বাইরে বেরোলেই পায়ে কাঁদা লেগে একশেষ । বৃষ্টির দিনে অবশ্য, কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানো অতিরিক্ত রকমের আরাম দায়ক । আর খিচুড়িইলিশ জিনিসটার জন্মই বোধহয় বৃষ্টির দিনকে উপলক্ষ্য করে ।
আমি বৃষ্টিদিনে ঘর থেকে বের হইনা । বৃষ্টিদিনে অনেক অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া কারোর প্রত্যাবর্তন ঘটে । যে জলঅণু হাজার বছর আগে পৃথিবীতে ছিল, হাইড্রোলজিক সাইকেলের খেলায় সে আবার আবির্ভূত হয় পৃথিবীতে, যেখানে সে হয়তো ছিল প্রবাহমান কোন জলধারার অংশ, হয়তো গৃহস্থের কলসীর তলানির ফেলে দেয়া শেষ বিন্দুটুকুর পরম আত্মীয়, হয়তো কোন প্রখর বেগে নির্গত কোন স্রাবের অংগ অথবা হয়তো প্রচীন কোন নারীর চোখের কোণের বিম্বিত কারূকার্য্যের একটি পুতি । তাই প্রতিটি বৃষ্টিদিন, পরাবাস্তবিক ঐতিহাসিকতায় তাৎপর্য্যমন্ডিত । তাই আমি বৃষ্টিদিন পালন করি । বৃষ্টির ফোঁটা যখন হাতে নিই, হাত থেকে গড়িয়ে পরতে থাকে মাটিতে, তখন প্রগাঢ় অনুভব করি, জলঅণুগুলো আবার ফিরে আসবে পৃথিবীতে , হাজার বছর পরে, তখন আমি আর হাত পাতবো না । বৃষ্টিদিন আমার অন্তঃকরনে মৃত্যময়তা গাঢ় করে মাখিয়ে দেয় । আমি বিষন্ন থেকে বিষন্নতর হয়ে উঠি । কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি, কোথায় যাবো ?
শব্দ শৈল্যতায়, বেশ ভাব ব্যাপকতা হয় । আরোহন ও হয় বৈকী ! প্রথম প্যারায় বৃষ্টির দিন শব্দ যুগলে আর দ্বিতীয় প্যারায় বৃষ্টিদিন শব্দে, "র" এবং " " মোচনের পরে একই শব্দ যুগল নিয়ে গঠিত শব্দে ভাব ব্যাপকতা বেড়ে গেছে । বৃষ্টির দিন শব্দটি শুনলেই কেমন যেন সংকীর্ণ দ্যোতনা মানসে ফুটে উঠে এবং সেই কারনে, বৃষ্টির দিন শব্দ যুগলের প্রয়োগ সংকীর্ণ পরিমন্ডলে মানানসই , ঠিক উল্টোদিকে বৃষ্টিদিন শব্দের অবস্থান । যখনই যূথবদ্ধ হ লো, তখনই নিজেকে অভিজাত করে তুললো । অনেক দার্শনিকতা ও নিগূঢ়তা তার মধ্যে অব্যক্ত হয়ে গেল ।
সুতরাং, আসেন, আমরা সবাই শব্দে ছুরি চালাই, ভাবকে ব্যাপক করি, ভাবের আরোহন ঘটাই ।