লেখাটির মূল সূত্র
৩১ জুলাই ২০০৯ তারিখ বিকেলে প্রিয় ব্লগার জিন্নাত উল হাসান ভাইয়ের সাথে আমরা কয়েকজন আড্ডায় বসতে পারার সুযোগ পেয়েছিলাম।
মূলত যারা উনার বাংলা ব্লগের নিয়মিত পাঠক তাদের কিছু কমন সমস্যা বিশেষ করে অনলাইন আয় করতে গিয়ে কিছু সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্য নিয়েই এই আড্ডাটি হয়েছিলো।
সেই সাথে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডোমেইন, হোস্টিং এবং ওয়েব ডেভোলপমেন্টের উপরও আলোচনা ছিলো।
উনার লেকচার শীটের শিরোনাম ছিলো-
-------------------অনলাইনে আয় : স্বপ্ন আর বাস্তবতা-------------------
হাসান ভাই আগেই জানিয়েছিলেন তিনি রুটিন মেনে কোনো লেখা লিখতে পারেন না। কিন্তু আলোচনায় দেখলাম তিনি যথেষ্ট গুছানো। যেমন, লেকচার শীটটা যথেষ্ট পরিমার্জিত এবং পরিচ্ছন্ন এবং তিনি কথাও বলেছেন অনেক সহজ করে ও সাজিয়ে।
এবং একটু ব্যতিক্রম করে। যেমন, অন্য কেউ হলে হয়তো আমাদের মতো নতুনদের উপদেশ দিতেন, এভাবে করো, ওভাবে করো না, এমনভাবে করলে তো কিচ্ছুই পারবা না ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিনি আড্ডা শুরু করতে গিয়ে বললেন, আমি আয়ের নিশ্চয়তা দিই না বা দিতে পারি না। শুধু কৌশলগুলো বলতে পারি। বাকীটা আপনাদের ইচ্ছে ও চেষ্টা।
এই সাধারণ দুটি কথা বলেই তিনি বলে গেলেন, কীভাবে তিনি ব্লগিং করেন, কীভাবে শুরু করলেন এই সব...
তিনি লেকচার শীটের একটি পাতায় সূচিপত্রের শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে_
কেন ব্লগিং করি?
আমার যা আছে
কি কি বিষয়ে ব্লগিং করি?
তিনি এভাবে না বলে তো বলতে পারতেন,
কেন ব্লগিং করবে বা করবেন?
আপনাদের/তোমাদের যা লাগবে
কি কি বিষয়ে ব্লগিং করবে/করবেন?
দুই.
আমরা যারা নতুন, তাদের সবারই ইচ্ছে নিজের একটা ওয়েবসাইট থাকবে যে ওয়েবসাইটে এমন এমন সুযোগ সুযোগ-সুবিধা থাকবে যা অন্য আর কোথাও নেই...।
সেই সাথে এই ওয়েবসাইট থেকে আমরা আয় করবো।
হ্যাঁ, অনলাইন থেকে আয় করা যায় তবে বলা যতো সহজ ততো সহজ নয়।
আবার এভাবেও বলা যায়, চেষ্টা করলে, শ্রম দিলে অবশ্যই সম্ভব।
তিন.
অনলাইন আয়ের বিষয়টা হচ্ছে লেগে থাকার ব্যাপার। অনেক দিন লেগে থাকতে হয়।
শুরুতে ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেস-এ ব্লগ খুলে শুরু করা যেতে পারে। তারপর যখন অল্প-বিস্তর আয় শুরু হয় তখন ডোমেইন-হোস্টিং কিনে শুরু করা যায় বৃহৎ পরিসরে...
চার.
এডসেন্স-ই একমাত্র অবলম্বন নয়। আরও অনেক আছে। এডব্রাইট, চিটিকা, কনটেরাসহ আরও অনেক কিছু।
এর মধ্যে আমাজন এসোসিয়েটস আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আমাজন এসোসিয়েটস-এ রেজিস্ট্রেশন করে তাদের পণ্য যদি আপনি বিক্রি করে দিতে পারেন তাহলে কমিশন পাবেন। এজন্য আপনাকে খুব বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে হবে, তা নয়।
তাদের কিছু পণ্যের লিংক আপনার ব্লগে বা ওয়েবসাইটে রাখবেন। পাশাপাশি ঐ পণ্যটার একটা চমৎকার রিভিউ লিখে রাখুন। রিভিউ লেখার সময় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কথাও মাথায় রাখতে হয়।
আড্ডায় এসেছেন এমন এক নতুন ব্লগার ভাইয়ার ল্যাপটপ নিয়ে ব্লগ আছে। আমাজন এসোসিয়েটস থেকে তিনি লিংক নিয়ে সেখানে রেখে তিনটি ল্যাপটপ বিক্রি করে পেয়েছেন ৬১ পাউন্ড। অথচ গুগল এডসেন্সে ৬১ পাউন্ড জমা করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়।
পাঁচ.
অনলাইন আয়ের আরেকটা ব্যাপারও আমার খুব ভালো লেগেছে। সেটা হলো, অন্য ওয়েবসাইটের লিংক আপনার ওয়েবসাইটে রেখে আয় করতে পারেন। আড্ডায় আসা আরেক ভাইয়া এরকম একটা সুযোগ পেয়েছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান এক ব্যক্তির একটা ওয়েব সাইটের লিংক তার ব্লগে দুমাস রাখার জন্য পেয়েছেন ১০ ডলার।
এমাউন্টটা কম মনে হতে পারে, কিন্তু সুযোগটার কথা চিন্তা করুন।
ছয়.
হাসান ভাইয়ের আড্ডায় আমি শিখেছি অনেক অনেক। হয়তো আমি বর্ণনা করে বুঝাতে পারছি না।
সাত.
তখন রাত সাড়ে এগারোটা। আড্ডা শেষ করে ওয়ান্ডার ল্যান্ডের বিপরীত পাশ দিয়ে হাঁটছি আমরা। হাসান ভাইয়ের সাথে টুকটাক কথা বলছি।
হঠাৎ থেমে গিয়ে সবার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে পড়লেন হাসান ভাই।
বললেন, আজকের আড্ডা থেকে যদি আদৌ কিছু শিখে থাকেন তাহলে তা নিজের মাঝে আবদ্ধ করে রাখবেন না দয়া করে। অন্যজনের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন। তাহলেই কেবল এর স্বার্থকতা।
সত্যিই অসাধারণ কথা।
ধন্যবাদ হাসান ভাই। ধন্যবাদ আপনার চিন্তা-চেতনাকে।
আর অবশ্যই ধন্যবাদ সামহোয়্যারইনব্লগকে, যার মাধ্যমে হাসান ভাইয়ের মতো ব্যক্তিত্বের সাথে আমার পরিচয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:৪৪