স্কুল লাইফে ভয়ংকর একটি ত্রাসের নাম ছিল মোখলেস ওয়ান স্যার । স্যার কখনো কারও গায়ে হাত তুলতেন না কিন্তু যেদিন যাকে ধরতেন পুরো ক্লাসটা তাকে দিয়েই শেষ করতেন।
ক্লাস এইটে স্যার বাংলা ক্লাস নিতেন ।
একদিন ক্লাসে-
"জোঁক গল্পের লেখক কে?"
"আবু ইসহাক"
"লেখক পরিচিতি বল "
"জ্বী স্যার। আবু ইসহাক 1926 সালে শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । বাংলা সাহিত্য বিস্তারে তার ভুমিকা অনেক। উমম.... উমম... তিনি অনেক মেধাবী ছাত্র ছিলেন........"
"কিরে এটা কোথায় লেখা আছে দেখা।"
বই উল্টিয়ে দেখে মাথা নিচু করে বললাম-
"লেখা নাই স্যার ।"
"তাহলে তুই জানলি কি করে তিনি মেধাবী ছিলেন ? ....উনি কি তোর বন্ধু ?"
"নাহ স্যার "
"তাহলে কি তোকে চিঠি লিখে জানিয়েছে ?"
আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। স্যার আবার বললেন-
"তুই যে পেকে গেছিস তোর বাসার লোকজন জানে ?"
"কি রে জানে ?"
"না স্যার ।"
ক্লাসে তখন পিনপন নিরবতা । সবাই বুঝে গেছে আজ পুরো ক্লাস আমার উপর দিয়েই যাবে ।
স্যার আবার শুরু করলেন-
"কিরে কথা বলছিস না কেনরে ?"
"স্যার উনি মেধাবী ছিলেন বলেই এত বড় লেখক হয়েছেন।"
স্যার বিরাট আশ্চর্য্য হয়ে বললেন-
"তোতা পাখির মুখে দেখছি কথা ফুটেছে। কিরে তোতা দেখেছিস ?"
"না স্যার ।"
"এই তোরা কেউ তোতা দেখেছিস ?"
"না স্যার ।" সবাই সমস্বরে বলল।
"কেনোরে তোদের সাথেই তো একটা তোতা পাখি আছে দেখ দেখ।"
এরপর বলা শুরু করলেন তোতা পাখির সাথে আমার কি কি মিল আছে ।
এই ঘটনার পর থেকে আমার নাম হয়ে গেল তোতা পাখি ।
আরেকটি ঘটনা :
ক্লাস সিক্সে সমাজ ক্লাসে একদিন ।
স্যার ধীমানকে পড়া জিজ্ঞেস করলেন। ধীমান পারল না। এরপর আমাকে। উত্তরটি বলে খুব খুশি খুশি মুখ নিয়ে দাঁড়িযে আছি।
ধীমানকে দেখিয়ে স্যার বললেন-
"ওর কান ডলে দে ।"
বন্ধু হয়ে কি বন্ধুর কান ডলে দেওয়া যায়? আমি চুপচাপ দাঁড়িযে থাকলাম।
স্যার আবার বললেন-
"কিরে কান ডলে দিবি না ?"
"না স্যার ।"
এবার ধীমানের দিকে তাকিয়ে বললেন-
"তুই কান ডলা দিতে পারিস ?"
"জ্বী স্যার" ধীমান চরম উত্সাহ নিয়ে বলল ।
"দে ওর কান ডলে দে ।"
আমি দেখলাম ধীমান দাঁত কেলিয়ে আমার দুকান চেপে ধরে বনবন করে ঘোরাতে শুরু করল।
সেই কান ডলার ব্যাথা আজও অমাবস্যা পূর্ণিমার রাতে টের পাই। :-(