somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : ফিরে দেখা ২০১৫

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। পদ্মার তীরে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের এ শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে ২০১৫ সালটি। somewhereinblog পাঠকদের জন্য ২০১৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা নিয়ে তুলে ধরা হলো।

শীতকালীন ছুটি শেষে বছরের শুরুতেই রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বছরজুড়ে দেশব্যাপী শুরু হয় হরতাল-অবরোধ। এতে ২০১৫ সালের শুরুতে শীতকালীন ছুটি শেষে ১২ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ক্লাশ-পরীক্ষা স্বল্পমাত্রায় শুরু হয়।

৯ এপ্রিল রাজশাহী মহানগর পুলিশের মতিহার থানা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আন্দোলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের রাবি শাখার নেতা-কর্মীরা। পরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে দীর্ঘ ১০৫ দিন ধরে বন্ধ ছিল পরিবহণ ব্যবস্থা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে ১৫ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি রুটে মোট ১৬টি বাস চালু করা হয়। পরে সব রুটেই বাস চলাচল শুরু হয়।

এদিকে একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনকে হুমকি দেন রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। ওমর ফারুক পরিচালিত শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগে জরিমানা করায় এ হুমকি দেওয়া হয় বলে উপাচার্য সাংবাদিকদের জানান। এর পর সাংসদ তার মেডিক্যাল কলেজর ওপর জরিমানা করায় উপাচার্যের টেবিল চাপড়িয়ে অশালীন ভষায় গালিগালাজ করেন। সেই সঙ্গে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর পরের দিন ১৬ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তার লিস্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্যকে গদি থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। একই কাতারে নাম লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগও। ঘটনার পরেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তবে এ ঘটনার দুই দিন পর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি বাদ দিয়ে ১৮ এপ্রিল সাত দফা দাবিতে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগ। ২১ এপ্রিল দাবি বাস্তবায়নের জন্য উপাচার্য বরাবর স্মরকলিপি দেয় তারা।

১৮ এপ্রিল পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খালেদ হাসান বিপ্লব গ্রুপের নেতা ও সৈয়দ আমীর আলী হলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সৈকত হোসাইনকে মারধর করে সভাপতি মিজানুর রহমান রানা গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া বিপ্লব গ্রুপের আরেক কর্মী হানিফের কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমনের (সভাপতির অনুসারী) সঙ্গে হলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈকত হোসাইনের বেশ কিছুদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল।

এরপর ১১ ডিসেম্বর আবারও দুই গ্রুপের মারামারি হয়। রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে স্ট্যান্ড করা মোটরসাইকেলের ওপর বসা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান ছাত্রলীগকর্মী সারোয়ার হোসেনকে মারধর করে। সারোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী। এর জের ধরে রাত সোয়া ৯টার দিকে হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানার সহযোগী ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি রানা চৌধুরী, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাকিম বিল্লাহ (বহিস্কৃত) ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পলাশের (বহিস্কৃত) সঙ্গে গোলাম কিবরিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও কিবরিয়া-রুনু গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে হলে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। হলের পাশে রাত পৌনে ১০টার দিকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।

উপাচার্যকে ডাবলু সরকারের হুমকির ঘটনা ১৭ এপ্রিল দৈনিক কালের কণ্ঠে বিস্তারিত প্রকাশ হওয়ায় পত্রিকাটির রাবি প্রতিনিধি রোকোন রাকিবের বিরুদ্ধে ১৯ এপ্রিল মানহানির মামলা করা হয়। এরপর ২৩ এপ্রিল কালের কণ্ঠের রাবি প্রতিনিধিসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য হুঁশিয়ারি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের তিনটি সংগঠন পৃথক বিবৃতিতে দ্রুত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

এরপর ১৫ জুন আবারও সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তরের রাবি প্রতিনিধি হাসান আদিবকে ‘দেখে নেওয়ার হুমকি’ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া ওই সাংবাদিককে গালিগালাজও করে তারা। রাজশাহীতে বেড়াতে আসা ঢাকার প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয়ের এক শিক্ষার্থীকে চাঁদার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে প্রায় ২০ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া ওই শিক্ষার্থীর বান্ধবী ও রাজশাহী কলেজে অধ্যয়নরত এক ছাত্রীর সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশের জের ধরে তাকে এ ধরনের হুমকি দেওয়া হয়।

২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত মতিহার হলের ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং প্রকৌশলীদের দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মের কারণেই এমনটি হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে হলের নিমার্ণকাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন হলের শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের ফাটলের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

চলতি বছরে প্রাক্তন এক সিন্ডিকেট সদস্যসহ তিনজন শিক্ষক মারা যান। এর মধ্যে একজন সড়ক দুর্ঘটনায়, একজন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এবং অন্যজন বার্ধক্যজনিত কারণে। ৯ ডিসেম্বর আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ ওয়াই কে এম জাহাঙ্গীর, ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. সরওয়ার জাহান (৬৩) ও ৯ আগস্ট প্রাক্তন সিন্ডিকেট সদস্য ডা. সৈয়দ সাফিকুল আলম মারা যান।

শুধু শিক্ষক না কয়েকজন শিক্ষার্থীও মারা গেছেন। ৪ আগস্ট নাটোরের হালতিবিলে বেড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান, ৯ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ইমন ও এবং ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম মারা যান।

বছরের ১৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল পুনর্নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল ঘোষণার দাবিতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, কর্মবিরতি, অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করে তারা। ১৫ ডিসেম্বর শিক্ষকদরে দাবি না মেনে পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। এতে আবারও আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চার বড় ক্ষেত্র। তবে সাধারণ মানুষের মতো সংস্কৃতিকর্মীরাও শিকার হন নির্যাতনের। ৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটের সিলসিলা রেস্টুরেন্টের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের প্রাক্তন সভাপতি ও গণশিল্পী সংস্থার সদস্য বাসুদেবকে পিটিয়ে আহত করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী সাদ্দাম হোসেন সজীবসহ তার সহযোগীরা। এ ঘটনার পর সংস্কৃতিকর্মীদের লাগাতার মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা আন্দোলনের মুখে ১৮ জুন উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে ছাত্রলীগকর্মী সাদ্দাম হোসেন সজীবকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

৮ জুন পারস্পরিক শিক্ষা বিনিময় সহযোগিতা বৃদ্ধি লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন এবং দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য অধ্যাপক ড. তালাত আহমদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির আওতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকগণ জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকগণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে পারবেন। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য উভয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিনিময় প্রোগ্রামের আয়োজন করবে। প্রয়োজনে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ যৌথভাবে গবেষণা করতে পারবেন এবং সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, শিক্ষাভ্রমণ, প্রকাশনাসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উন্নয়নমূলক কর্মকা- করতে পারবেন। এ চুক্তির আওতায় এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকগণ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্নশিপ এবং স্যাবাটিক্যাল গবেষণাও করতে পারবেন।

এরপর ১০ আগস্ট বানেশ্বরগামী বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি হয়। ছাত্রলীগ কর্মী রেজাউল করিম রাজু এবং অন্য দুই শিক্ষার্থী ফোকলোর বিভাগের চতুর্থ বর্ষের কাওসার আহমেদ ডলার ও আইন বিভাগের মাস্টার্সের মিন্টু আহমেদের মধ্যে এ হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে অটোরিকশা চালকদের মারধরের ঘটনায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে জড়িদের শাস্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করলে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি থেকে সরে আসে।

২৫ আগস্ট কলা অনুষদ থেকে পৃথক করে চারুকলা অনুষদ এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে নতুনভাবে শারীরীক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন করে চারুকলা বিভাগকে অনুষদের অনুমোদন দেওয়ায় এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট অনুষদের সংখ্যা ১০টি এবং শরীরচর্চা বিভাগসহ বিভাগের সংখ্যা হয় ৫১টি।

এদিকে ‘যোগ্যতা’ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজে (আইবিএস) অবৈধভাবে ভর্তির দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন মুনের ছাত্রত্ব বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের সভাপতিত্বে ২৪ আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষকদের সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা যায়, ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে এমফিল ডিগ্রি নেওয়ার জন্য আইবিএসে ভর্তি হন ইব্রাহীম হোসেন মুন। ভর্তির যোগ্যতা না থাকলেও তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের একক সিদ্ধান্তে নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল।

৩ সেপ্টেম্বর প্রকৌশল অনুষদ অন্তর্ভুক্ত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) নামে নতুন বিভাগ খোলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-সমাবেশ করে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (এপিইই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

৬ অক্টোবর মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের কাজী আল আমীনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তাকে মারধর কারে বলে অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল ইসলাম বনির বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার পরের দিন ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন চত্বরে ছিনতাইকালে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। আটককৃত জনি আহমেদ ওরফে সজীব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। অপর ছিনতাইকারী রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম নান্টুর ছেলে রাজন।

এরপর ১৩ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগিতায় বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট ‘জাতীয় উন্নয়নে আঞ্চলিক সাংবাদিকতা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।

চলতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সংস্কৃতিমুখর। এর মধ্যে দুই বাংলার নাট্যোৎসব, চলচ্চিত্র উৎসব ও ত্রিদেশীয় নাট্যোৎসব ছিল চোখে পড়ার মতো। ২৮ অক্টোবর ‘মিলি মৈত্রী বন্ধনে, গড়ি সংস্কৃতির সেতু’ স্লোগানে শুরু হয় আট দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী নাট্যোৎসব। এ উৎসবরে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। নাট্যোৎসবে ১০টি দল অংশ নেয়।

১৯৮৪ সালে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও দুর্নীতির কারণে বারবার বাধাগ্রস্থ হয়। অবশেষে ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অসম্পূর্ণ শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

এরপর ১৭ নভেম্বর ‘ফ্রেমে প্রেমে, দুই বাংলা’ শিরোনামে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আয়োজনে ভারতীয় হাইকমিশনের সহায়তায় শুরু হয় দুই বংলার চলচ্চিত্র উৎসব। সাত দিনব্যাপী এ উৎসবে দুই বাংলার বেশকিছু প্রামাণ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদশন করা হয়। এরপর ৫ ডিসেম্বর শুরু হয় ত্রিদেশীয় নাট্যোৎসব। উৎসবে ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের কয়েকটি দল অংশ নেয়।

এর আগে ৪ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসে আলোচনা সভায় দলীয় প্রার্থীদের নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্যের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

২২ নভেম্বর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লবের ওপর ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা সম্মেলনে শেষ হওয়ার এক ঘণ্টাখানেকের মধ্যে এ হামলার শিকার হন এই ছাত্রলীগ নেতা। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়লে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

এরপর ১০ ডিসেম্বর শহীদ হবিবুর রহমান হল থেকে চার শিবির কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। আটককৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্র্থী আব্দুল্লাহ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান ও আবু সাঈদ এবং গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদ্দাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ১৯ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

২০ ডিসেম্বর এক শিক্ষকরে বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আর এ আন্দোলন অব্যাহত রাখে। অন্যদিকে, এ অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক এটিএম রফিকুল ইসলাম। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক।

এর আগে ২০ ডিসেম্বর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে শাস্তির দাবিতে ভাষা বিভাগের (উর্দু) ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

বছরের শেষে ২৭ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা রাখার দাবিতে প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় উপাচার্য সহ প্রশাসন ভবনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অবশেষে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যা ৫টার দিকে প্রভোস্ট কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় হল খোলা রাখা হবে বলে সুপারিশ করা হয়। প্রভোস্ট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আবাসিক হলগুলো ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু আগামী ৮ জানুয়ারি বিসিএস পরীক্ষা থাকায় পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ জানুয়ারি হল খুলে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে প্রতিবাদে হল খোলা রাখার দাবিতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর ১৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় ২১তম সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটের এই সভায় ২০১৪-২০১৫ সালের ২৭০ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার সংশোধিত বাজেট এবং ২৯৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার ২০১৫-২০১৬ সালের মূল বাজেট প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমদ এই বাজেট পেশ করেন। বাজেট সংক্রান্ত আলোচনায় সিনেটরবৃন্দ শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি এবং আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় সংকোচনসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেন। এই সভায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে একটি ইনস্টিটিউট ও ১৩টি বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এতে সভাপতি ছিলেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। সভাটি সঞ্চালন করেন সিনেটের সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক। অধিবেশনে ৫৩ জন সিনেটর উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×