আমার নাম গোরা। কলকাতায় একটি কৃষি অফিসে কাজ করি।আমার কাজ হল বিভিন্ন কৃষক এর জমিতে গিয়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করা।সেই নমুনা ল্যাবে পাঠান,পরিক্ষার জন্য।সেই ল্যাব থেকে রিপোর্ট আসবে জমিতে কোন সার কতটা পরিমানে প্রয়োগ করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।একটু বেশি বলে ফেললাম মনে হয়,কারন আমার কাজ শুধু কৃষক এর জমি থেকে মাটি আনার মধ্যে সিমাবদ্ধ।
বরাবরের মত একদিন গেলাম অফিসে।সেদিন মনেহয় বুধবার ছিল।অফিসে গয়ে শুনি আজই যেতে হবে মাটির নমুনা আনতে,তাও আবার সরুপনগর। আমি প্রথমে চিনতে পারলাম না।বস ঠিকানা টি দিয়ে গেল।শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বনগাঁ লোকাল ধরতে হবে, তারপর গোবরডাঙ্গা অথবা মছলন্দপুর স্টেশন নেমে অটো ধরে যেতে হয়।আমি একটু আস্তে আস্তে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম।কিন্তু অফিসের লালমোহন বাবু বললেন,তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড় ভাই না হলে আজ আর বাড়ি ফিরতে পারবে না।তাই তখন তাড়াতাড়ি বেরোবার চেষ্টা করলাম কিন্তু ট্রেনে সেই দেরি বাধিয়ে দিল।দুপুরবেলা বনগাঁর দিকে ট্রেন একটু কম থাকে।অনেকক্ষণ বসে থেকে ট্রেনে চেপে বসলাম।গিয়ে নামলাম মছলন্দপুরে।সেখান থেকে অটো ধরে গেলাম সরুপনগর। সেখানে গিয়ে সেই কৃষক,যাদের জমি থেকে মাটির নমুনা নিতে হবে তাদের খুজে বের করতে একটু সময় লাগল।কৃষকদের নিয়ে মাঠেগিয়ে আমি আশ্চর্য হয়ে গলাম।আমার মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেরিয়ে এল ওরে মা গো এত বড় মাঠ আমি কোনদিনও দেখিনি।সত্যি আমি মাটি সংগ্রহ করতে অনেক মাঠে গেছি কিন্তু এত বড় মাঠ আমি জীবনে কোনদিনও দেখি নাই।
আরও আশ্চর্য হলাম যখন আমাকে হেটে ঐ বড় মাঠের মাঝখানে যেতে হল।যখন আমি কৃষকদের সাথে মাঠের মাঝখানে পৌছালাম তখন বিকেল হয়ে গেছিল।শীত শেষ, মাঠের ধান সব কেটে নেওয়া হয়ে গেছে।শুধু পড়ে আছে নেড়া।আমি তাদের সাথে গন্তব্যস্থানে গিয়ে মাটির নমুনা নিলাম।আমার কাজ শেষ হলে আমি আমার ব্যাগ পত্র গুটিয়ে রাস্তার দিকে রওনা হলাম।তখন প্রায় সন্ধা হয়ে এসেছে।রাস্তায় যেতে যেতে মনে হয় রাত হয়ে যাবে,তাই একটু তাড়াতাড়ি হাটা লাগালাম। কিন্তু রাস্তা পর্যন্ত আর যেতে হল না।তার আগেই সন্ধা নেমে গেল।রাস্তা আর বেশিদূর নয়, আমি চলছি এমন সময় একজন ৫০-৬০বছরের লোককে মাঠ এর আল দিয়ে পায়চারি করতে দেখলাম। আমি তার পাশ কাটিয়ে যেতেই সে আমাকে ডেকে দাড় করাল।তারপর আমাকে বলল তুমি কলকাতা থেকে এসেছ না?আমি বললাম হ্যা। তা আপনি জানলেন কি করে? সে বলল লোকজন বলাবলি করছে তাই।তাছাড়া তোমাকে অচেনা লাগল তাই।আমি তাকে বললাম আমার তাড়া আছে,আমাকে কলকাতা ফিরে যেতে হবে।উনি বলল এখন যেয়ে তো তুমি অটো পাবে না।আমি বললাম এখন তো বেশি রাত হয় নি তো মনে হয় পেয়ে যাব।কিন্তু আমি বুঝতেই পারলাম না তার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রাত হয়ে গেছে।তাই সেই লোকটি বলল তোমাকে এখন আর যেতে হবে না তুমি না হয় আমার বাড়ি আজ রাতটা কাটিয়ে যাও।আমার বাড়ি এই পাশেই।বেগতিক দেখে মনে করলাম তার বাড়িতে রাতটা কাটিয়ে যাওয়া ই ঠিক। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না রাতে আমার সাথে অমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে।তার বাড়ি হতে রাস্তার দূরত্ব আধ কিলোমিটার হবে।আমি মনে মনে ভাবলাম এই মাঠের মধ্যে বাড়ি বানিয়েছে কেন।বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখলাম বাড়িটি বেশ সুন্দর বেশ বড় একতালা বাড়ি। বাড়ির নামটাও বেশ সুন্দর, "শোভালয়"।বাড়ির সামনে ফুলের বাগান।পাশে ঘাট বাধান পুকুর।বাড়ি ঢুকতেই আমাকে আমার কামরা দেখিয়ে দিল।আমি জামা কাপড় নিয়ে গেছিলাম না তাই বাধ্য হয়ে তাদের লুঙ্গি পরতে হল।তার সাথে আলাপ করে বুঝলাম সে এখান কার স্কুলের প্রধান শিক্ষক। নাম সুরেন তালুকদার। তার একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। ছেলেটি ১২ শ্রেণী তে পড়ে আর মেয়েটি ৫ শ্রেণীতে।তার স্ত্রী মারা গেছে ৩ বছর হল।বাড়িতে একটি মাত্র চাকর নাম "মনোহর "।রাত যখন প্রায় দশটা তখন খাওয়ার জন্য ডাক পড়ল।তাদের জন্য ভাত আর আমার জন্য আটার রুটি।আমি তো দেখে অবাক। আমি তো কখনও বলি নি আমি রাতে রুটি খাই।ভাত খাই না,তাহলে মনোহর জানল কি করে?আমি অবাক হলাম।জিজ্ঞেস করতেই বলল এমনি বুঝে নিয়েছে।আমি আশ্চর্য হলাম, এ কখনও হয় নাকি।কিছু বললাম না।সবাই খাওয়া দাওয়া করা শুয়ে পড়লাম।মাঝরাতে কি একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।আমি বাইরে তাকালাম। বাইরে আলো জ্বলছে,আমি ভাবলাম এত রাতে আলো জ্বালিয়ে কি হচ্ছে।ভাল করে বাইরের দিকে তাকাতে যা দেখলাম তাতে আমার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল।এ আমি কি দেখছি, একটি কঙ্কাল বাগানের মধ্যে দাড়িয়ে কবিতা পাঠ করছে,আর দুটো কঙ্কাল দাড়িয়ে শুনছে।আর একটি কঙ্কাল গলায় দড়ি পরে গাছে ঝুলে দোল খাচ্ছে। আমি এই দেখে আমার মুখ থেকে আপনা থেকে চিৎকার বেরিয়ে এল।ভুত!ভুত! তারপর যা দেখলাম তা আর বলার মত নই।যে লঙ্কাল টি কবিতা পাঠ করছিল এবং যারা শুনছিল,তাদের মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত রক্ত মাংসে গড়া শরীর হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে।তারা হলেন "সুরেন তালুকদার, তার ছেলে ও মেয়ে"।ঝুকন্ত কঙ্কালটি মনে হয় বুঝতে পারে নি।তাই যখন সুরেন বাবু তাকে ডাক দিল,মনোহর তখন তার শরীরে মাংস চামড়া হতে শুরু করল।সারা রাত আর ঘুম এল না সকালে সবার আগে উঠে সব কিছু গুটিয়ে শোভালয় ছেড়ে চলে গেলাম।
যেতে যেতে শুনতে পেলাম আমাকে জোরে জোরে ডাকছে। বলছে গোরা দাদা চা হয়ে গেছে উঠে মুখ ধুয়ে নিন।মনে হয় মনোহর ডাকছে।মনোহরের ডাক শুনে আমি দিলাম দৌড়,আর দৌড়তে দৌড়তে মনে লরলাম, তারা ভূত বলে মনে হয় আমার নাম জানে আর এটাও জানত আমি রাতে ভাত খাই না রুটি।
মনে মনে বললাম আজকের মত বেচে গেছি।
পুরটা শুনলাম অটোয় উঠে অটোয়ালার কাছ থেকে।তাকে ঘটনাটি বলতেই সে বলল সুরেন তালুকদার, ৫ বছর আগে ডাকাত পড়ে বাড়ির সবাই কে মেরে টাকা পয়সা সব নিয়ে চলে যায়।মনোহর, তাকে একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলান অবস্তায় পাওয়া যায় আজ পর্যন্ত কেউ ওদের ভূত দেখেনি।আপনিই প্রথম দেখলেন।
আমি মনে মনে ভাবলাম আমার মধ্যে কি এমন আছে যে আমাকেই দেখা দিতে হল।
এই গল্পের পুর কাহিনী টা কাল্পনিক।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬